আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না: সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী
‘‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট’র কোথাও নেই যে, এ আইনে মুক্তিযুদ্ধকালের অপরাধের বিচার হবে। এ আইন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আইন। ’’
‘আমি ৩৩ বছর এমপি ছিলাম। অনেক আইন রচনা করেছি। আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না।
এ আইনও (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট) আমি করেছি। আপনি তো আমার করা এ আইন পড়েও দেখেননি। ’’
নিজস্ব প্রতিবেদক
বার্তা ২৪ ডটনেট ঢাকা, ৪ এপ্রিল: সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না। ’’
মুক্তিযুদ্ধের সসময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩টি অপরাধের দায়ে অভিযোগ গঠনের আদেশের সময় আদালতের এজলাস কক্ষে
ট্রাইব্যুনাল চলাকালে নিজের করা আবেদনের শুনানি নিজেই করার দাবি জানান তিনি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আনা ২৩টি ঘটনার ৭৩টি অভিযোগ পড়ে শোনানোর পরেও তা নিজে পড়ে সিদ্ধান্ত নিতে মতামত প্রকাশ করেন।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক প্রসঙ্গক্রমে সম্প্রতি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীর করা মন্তব্যকে আদালত অবমাননাকর বলে উল্লেখ করেন। ট্রাইব্যুনাল বিচারের নামে নাটক ও প্রহসন করছে বলে অভিযোগ করে ফারহাত বলেছিলেন, ‘‘তাকে ফাঁসি দেয়ার সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া আছে। তাই বিচারের নামে এসব না করে পল্টন ময়দানে নিয়ে প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়া হোক। ’’
ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘‘ট্রাইব্যুনালের সমালোচনা হতেই পারে। তবে আদালত অবমাননাকর কোনো কথা বলা ঠিক নয়।
’’ এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি তার স্বামী। আমি এখানে উপস্থিত। আমার সামনে আমার স্ত্রীর সমালোচনার অধিকার আপনার নেই। ’’ বিচারপতি নিজামুল হক তখন বলেন, ‘‘কোনো ব্যক্তিই আদালত অবমাননা করতে পারেন না। ’’
ট্রাইব্যুনাল নিয়ম অনুযায়ী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আমলে নেয়া ২৩টি ঘটনায় ৭৩টি অভিযোগ পড়ে শোনানোর পর তার উদ্দেশ্যে জানতে চান, ‘‘আপনি কি অভিযোগগুলো শুনেছেন?’’
এ সময় তিনি বলেন, ‘‘না আমি শুনিনি।
’’ ট্রাইব্যুনাল এতে বিস্মিত হয়ে বলেন, ‘‘আইন অনুসারে এখন আপনি বলুন, এ সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে আপনি কি দোষী না নির্দোষ?’’
অভিযোগ গঠনের এ নিয়মকে উপেক্ষা করে ‘ফর হোয়াট’ বলে প্রশ্ন করেন তিনি। ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি আবারো উত্থাপন করলে তিনি বলেন, ‘আগে অভিযোগগুলো পড়বো, তারপর বক্তব্য দেবো। ’
‘এটি তো আইনে নাই’ বলে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন। পরে সালাউদ্দিন বলেন, ‘‘আমি ৩৩ বছর এমপি ছিলাম। অনেক আইন রচনা করেছি।
আমাকে আইন শেখাতে আসবেন না। এ আইনও (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট) আমি করেছি। আপনি তো আমার করা এ আইন পড়েও দেখেননি। ’’
এরপর চৌধুরী বলেন, ‘‘আমার কিছু আবেদন রয়েছে। সেগুলোর শুনানি আগে করতে হবে।
’’ আইন অনুসারে সেটা সম্ভব নয় বলে ট্রাইব্যুনাল জানালে তিনি বলেন, ‘‘গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর গাড়িতে চড়বেন, সেটা তো চলবে না। আগে আমার আবেদন শুনতে হবে। ’’
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক এ পর্যায়ে বলেন, ‘‘আবেদনগুলো শুনে রাখি। সিদ্ধান্ত পরে হবে। ’’
তার করা রিভিও আবেদনের বিষয়ে তিনি নিজেই নিজের শুনানি করতে চেয়ে আবারও ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে যুক্তি তুলে ধরেন এবং বলেন, ‘‘বার কাউন্সিলে এমন কোনো নিয়ম নেই যে কারো আইনজীবী নিয়োগ দেয়ার পর তাকে বাদ দিয়ে অন্য আইনজীবী নিয়োগ দেয়া যাবে না।
’’
‘ট্রাইব্যুনাল আইন অনুসারে নিযুক্ত আইনজীবী থাকলে নিজেই নিজের শুনানি করা যায় না বললে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী এবার ট্রাইব্যুনালের কার্যবিধি (আইনের কপি) তুলে ধরে বলেন, ‘‘এ আইন আপনি কয়বার পড়েছেন?’’
এসময়, ‘‘আইনগুলো আমার তৈরি’’ বলেও উল্লেখ করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।
তিনি আরো বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট’র কোথাও নেই যে, এ আইনে মুক্তিযুদ্ধকালের অপরাধের বিচার হবে। এ আইন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের আইন। ’’
তিনি ট্রাইব্যুনালের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আপনি অভিযোগ বলতে গিয়ে ১৯৪৭ সাল থেকে টেনেছেন। প্রসিকিউশন জেয়াদ আল মামুন টেনেছেন পলাশীর যুদ্ধ থেকে।
দালাল আইন চালু হয় ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর। তাহলে কেন একাত্তরের অপরাধের বিচার হবে?’’
ট্রাইব্যুনালকে তিনি বলেন, ‘‘আপনি সংবিধানসম্মত বিচার করছেন না। সংবিধান অনুসারে আইনের বিষয় আপনি এড়িয়ে চলছেন। আপনি আমার সব আবেদনই বাতিল করবেন। ’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি এমপি।
আমি রাজনীতিবিদ। আপনি আমার অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারেন না। ’’ ট্রাইব্যুনাল এর জবাবে বলেন, ‘‘রাজনীতিবিদদের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। ’’
এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গ টেনে তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন তথা বিচার বিলম্বিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘‘তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আমি সহায়তা করতে চাই।
’’
ট্রাইব্যুনাল এ সময় বলেন, ‘‘আপনি তো সহযোগিতা করছেন না। আপনি অসংলগ্ন আচরণ করছেন। ’’
এ সময় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করতে থাকেন, ‘‘আপনিই আমার প্রতি নির্দয় আচরণ করছেন। আপনি আমার অধিকার কেড়ে নিতে পারেন না। ’’ আইনের কপি উঁচিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘‘এভাবে অভিযোগ গঠন আপনি করতে পারবেন না।
এটি কারো করুণা বা দয়া নয়, আমার অধিকার। আপনি আমার এ অধিকার কেড়ে নিলে আমাকেও আমার স্ত্রীর মতো বলতে হবে, নাটক বা প্রহসন না করে পল্টন ময়দানে নিয়ে আমাকে ফাঁসি দিয়ে দিন। ’’
শেষ পর্যন্ত অবশ্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী অভিযোগ গঠনের নিয়ম অনুসারে দোষী না নির্দোষ- বিচারকের এ প্রশ্নের জবাব দেননি। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে তার উত্তর ছাড়াই অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, দেশান্তর করা, লুটপাট, অপহরণ করে চট্টগ্রামের গুডস হিলে নির্যাতন করা ইত্যাদি ২৩টি অভিযোগ আমলে নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট এর ৩২(২) এর এ, সি, জি এবং এইচের ধারাগুলো অনুসারে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ২৯ এপ্রিল থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করতে প্রসিকিউশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বার্তা২৪ ডটনেট/এফএইচ/জিসা ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।