আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকায় আমিঃ ২০১২ । রুমে রুমে টিভি

স্বাগতম ঢাকায় ডিসেম্বর মাস হচ্ছে অনুষ্ঠানের মরশুম। তাইতো দেশে আসার দুদিনের মাথায়ই পেয়ে গেলাম গায়ে হলুদ আর আর তৃতীয় দিনে বিয়ের অনুষ্ঠান। কিন্তু আগেই বলেছি আমার চারটে লাগেজ হারানো গিয়েছিল। আর সেই হারানো লাগেজেই ছিল সকলের পার্টি ড্রেস!তাই ছেলে মেয়েদের আবদারে নিকটস্থ মার্কেটে গিয়ে ড্রেস কিনে দিতে হলো। পারতপক্ষে দেশে আমি কোন কেনা কাটাই করিনা ওটা করে আমার গিন্নী।

কিন্তু এবার সে শুনালো অনেক দিন যাবৎ বিদেশে থেকে দামাদামি করে জিনিষ কেনা নাকি ভুলেই গিয়েছে। তাই তার ছোট বোনকে বারগেইনার হিসেবে সঙ্গে নিলাম। ছেলে মেয়েদের পোষাক একরকমের জঞ্জাটবিহীন ভাবেই কেনা হলো। কিন্তু শাড়ীর দোকানে গিয়েই ঘটলো চরম বিপত্তি। অনেক দেখাদেখির পর একটি শাড়ি দুই বোনের পছন্দ হলো।

দাম হাকলো ১৯ হাজার টাকা। গিন্নীরা বললেন এই শাড়ি এতো দাম? ৫হাজার হলে চলে! আমার কানটা লজ্জায় গরম হয়ে গেল। তাই ওদের ইশারা দিয়ে ঊঠতে চাইলাম,কিন্তু তারা ঊঠেনা আবার দোকানীও তাদেরকে ছাড়েনা। আমি ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাইরে চলে এলাম। বাচ্চারাও জীবনে এমন দামাদামি দেখেনি,তাই ছোট খালাকে কিপ্টে বলে হাসাহাসি চললো।

দেখলাম ক্ষানিক পরই দুইবোনে ৭ হাজার টাকা দিয়ে শাড়ীটা নিয়ে বেরুলো!!! এই হচ্ছে আমাদের দেশে ভদ্রলোকের মার্কেটিং করা! ছোটবেলা থেকেই আমরা পরিবারের সবাই একত্রে ড্রয়িং রুমে গাল-গল্প আর টিভি দেখে অভ্যাস। কিন্তু তিন বছরে অনেক পরিবর্তন চোখে পড়লো। ছোটভাইয়ের,আম্মার এবং ড্রয়িংরুমে পৃথক পৃথক তিনটি টিভি। আম্মা পছন্দ করেন জি বাংলা/ স্টার বাংলা, ছোটভাই ক্রিকেট,রেসলিং আর নিউজ এবং ড্রয়িং রুমে চলে ছোট বাচ্চাদের জন্য কার্টুন। আমার চক্ষু ছানাবড়া,এখানে কেউ বাংলাদেশী নাটক বা অনুষ্ঠানে তেমন আগ্রহী নয়।

আম্মাকে গিয়ে ধরলাম বাংলাদেশে এতো চ্যানেল থাকতে এই কলকাতার নাটক নিয়ে পড়ে আছেন কেন?উনার এক কথা ওটা ভাল লাগে আর বিজ্ঞাপন কম। ছোট ভাইয়েরও টক শো আর নাটকে অনীহা। পিচ্চি গ্রুপ সর্বদাই কার্টুন দেখে তাই বলার কিছু নেই। কিন্তু এই আমলের পিচ্চিরা কার্টুন দেখে হিন্দি শিখে যাচ্ছে। ডোরিয়েমন হিন্দি ভার্ষন দেখে কটকটে হিন্দি বলা শুরু করেছে।

এরা সবাই কটকট করে হিন্দি বলা শিখেছে! তাহলে দাড়ালো কি,একই বাড়ীতে তিনরুমে বসে আমরা টিভি দেখছি। শত বছরের বাঙ্গালী পারিবারিক বন্ধন হালকা হয়ে যাচ্ছে। যে ভাই সারাটা দিন অফিস করে বাইরে থেকে আসছে। সে খাওয়া দাওয়া শেষ করেই নিজ কামড়ায় চলে যাচ্ছে। এক ঘন্টা দু ঘন্টা টিভি দেখা আর ভাই-বোন নিয়ে পরস্পরের ভাব আদান –প্রদানের জায়গা থাকল না।

বাংলাভাষার পর যেই ভাষা ইংরেজী হওয়ার কথা সেখানে ছোট্ট থেকেই হিন্দি শিখতে দিচ্ছি। অন্যদিকে আবারো আমরা ব্রিটিশ আমলের বাংলা সংস্কৃতিতে আমাদের মা বোনদের ঠেলে দিচ্ছি। এক কথায় আমার দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক খবর না নিয়ে আমরা বিদেশী সংস্কৃতির নিকট আত্মসমর্পন করছি। (চলব) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।