আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ত্যাগ

"কি রে তোরকি লোভ হয় নাকি?" "কার না লোভ হয়?" "সত্যিইতো বলছিস। আমরাতো ছিলাম, না'রে?" "যা বেটা তোর দ্বারা সম্ভব নাকি? তুই পারতিস?" "আরে না পারলেও একভাবে হয়ে যেত। তুই কি দেখছিস কেউ পারে নাই?" "তা অবশ্য ঠিকই কইছিস। তয়, দেহটা দেখছিস? শালা জিনিস একাণ। যেন বায়না দিয়ে বানাইছে।

" "তুই বুঝলি কেমনে?" "ঐ বেটা এ কি বুঝতে বাকি থাকে। শরীলের দিকে তাকালে ইতো বুঝা যায় জিনিস খান কেমন হবে। " কালভার্টের উপর দাঁড়িয়ে দুজনে কথা বলছিল। দুজনের চাপা উত্তেজনা। গ্রামের সবার মুখে মুখে এখন এই একটিই প্রধান খবর।

বিশেষ করে যুবকদের কাছে। কারণ, রাইমাকে দেখতে সুদর্শন মনে হয়। বুক পরিপূর্ণ ভরাট। অঙ্গের প্রতি বিন্দু যেন ফুটে ওঠা কাশফুলের মসৃণতা। দীর্ঘ দেহ, লম্বা চুল।

তাকে দেখলে যে কারোই কামনা জাগতে পারে। রাজুতো মেনেই নিতে পারছে না। রাইমা নির্বাক তাকিয়ে আছে। তারায় তারায় আকাশ আলোকিত। তার দিকে তাকিয়ে আছে অনাগত কালের নতুন অতিথি।

তার চোখে নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন। তার স্বপ্ন সমাজের চোখে দাবানল, ধর্মের চোখে অন্যায়, অবিচার। রাইমা কিছু বলতে চায়। কিন্তু সে বলা সমাজ শুনবে না। রাইমা সমাজ ত্যাগ করল।

কিন্তু সন্তান ত্যাগ করল না। সমাজ ও স্বামীকে সে ঘৃণা করল। সে একা আর তার সন্তান। তার জন্য একটা নতুন সমাজ। রাইমার স্বামীর কথা মনে পড়ল।

কত সহজেই এতো মধুর সম্পর্কটা মুছে গেল। যে একদিন বলেছিল, “তুমি ছাড়া আমার জীবন ব্যর্থ। ” আজ তাকে তার জীবনের কোনই প্রয়োজন নেই। প্রতিশ্র“তি এমনই হয়। চোখের পানি নীরবে গড়িয়ে গেল।

ভাগ্য কেন যে তার প্রতি এমন করল সে তা বুঝল না। তার করুণ পরিণতির জন্য কে দায়ী? স্বামী তাকে ডিভোর্স দিয়েছিল বাচ্চা হয়না বলে। সমাজ তাকে ত্যাগ করল বাচ্চা হবে বলে। তার জন্য কোনটি প্রযোজ্য? আজ তাকে সমাজ ত্যাগ করল। গ্রাম শালিশ তাকে চরম, অশ্রাব্য গালিগালাজ করেছে।

তার স্বামী যে তাকে ত্যাগ করল সে প্রশ্ন কেউ করল না। মনিস একটু বলতে চাইছিল কিন্তু তাকে সে সুযোগ দিল না। বরং এই কলঙ্কের বোঝায় তাকেই ভরী করতে চাইল। তার দিকে অনেকেই কৌতূহল চোখে তাকাল। রাইমা বাড়ি ফিরল না।

রাস্তায় বেরিয়ে পড়ল। সে চেনা মানুষের বাইরে চলে যাবে। রাস্তাই তার সীমানা, তার স্বামীর সান্ত্বনা। তার কোন ভয় নেই। এই ভরা যৌবনের প্রতি কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।

যৌবনের উপর যে সম্মান তা সমাজ তাকে দিয়ে দিয়েছে। তার নিয়ন্ত্রণহীন যৌবনের প্রতি আর কোন ঘৃণা নেই বরং ভাগ্য বলে মনে করে। স্বামী তাকে কি দিয়েছে? কেবল সোহাগ। কেবল সোহাগ দিয়ে সংসার চলে না। সংসারের জন্য সন্তানের দরকার।

সন্তান হলো সংসার টিকে রাখার দলিল। কিন্তু রাইমা যখন সংসার ত্যাগ করল তখন এলো সন্তান। অথচ্ এতটুকুর জন্য মিথ্যা দেবতার কাছে কতই না কেঁদেছে, কত দেয়ার প্রতিশ্রুতি করেছে। সব মিথ্যে। রাইমার মেলামেশার হারটা একটু বেশি হয়ে যায়।

ওতো জানতো ওর কোনদিন বাচ্চা-কাচ্চা হবে না। আর বাচ্চা ছাড়া মেয়েদের সংসার অনেক কঠিন। তাই জীবনটাকে অন্য ভাবে উপভোগ করতে চেয়েছিল। সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে করতে থাকে অসমাজিক কাজ। কারণ সে জানতো তার জীবন এভাবেই শেষ হয়ে যাবে।

কিন্তু তার আঙ্গুল চুষতে গলায় খোজা লাগল। আজ সে তার স্বামীকে পেলে দেখিয়ে দিতে পারতো সে মা হতে পারবে কিনা। তার যৌবনের জোর আছে কিনা। রাইমা গ্রামের ছোট রাস্তা ছেড়ে শহরের বড় রাস্তার দিকে মোড় নিল। গ্রামের দিকে আর পিছন ফিরে তাকাল না।

১৪/০৪/২০১১ইং, যোগেশ সরকারের বাড়ি, কেরাণীগঞ্জ, ঢাকা-১৩১০। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।