আমি: হ্যালো, এটা কি ০১৭১১১১১১১১।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ: জ্বি, কে বলছেন?
আমি: আমাকে আপনি চিনবেন না, আপনাকে আমি দেখেছি মনির চায়ের দোকানের সামনে, অডিটরিয়ামে নাটকের অনুশীলনের পর চা খাচ্ছিলেন।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ: তো।
আমি: তো, আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই। আপনার কথা বলার ভঙ্গি খুব সুন্দর।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ:আমি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলি না।
আমি: কথা না বললে চিনবেন কেমন করে? আসুন আমরা চিনি একে অপরকে।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ: হাস্যকর।
আমি: এখানে হাস্যকরের কি দেখলেন? আসেন আমরা কথা বলি একে ওপরকে চিনি।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ:না।
আমি: আপনার প্রিয় বই কি?
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ:আজব!!কেন?
আমি: আমি আপনাকে চেনার চেষ্টা করছি। প্লিজ বলেন?
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ: ওকে। সমরেশের সাতকাহন। আমার প্রিয় লেখকও সমরেশ।
আমি: বুঝলাম, আপনি খুব একটা ভাল পাঠক না কারন সমরেশের ভাল পাঠক কখনই সাতকাহনের নাম বলবে না।
তার আরও ভালো লেখা আছে সেগুলোর নাম বলবে।
অপরিচিত মেয়ের কন্ঠ:এটা আমার ব্যপার, আমার কি ভালো লাগবে আর কি লাগবে না এটা আমার ব্যাপার। কেন আপনার কোনটা ভালো লাগে? (এ জন্যই আমি আগের কথাটা বলেছি, সরি সমরেশ বাবু, আপনার সাতকাহন আমার ভালো লাগে। )
প্রথম দিন কথা এভাবেই শুরু হয়ে ছিল, তারপর ধীরে ধীরে কথা বলার গভীরতা বৃদ্ধি পেল। কথা বলতে বলতে এক ভাল লাগা শুরু হল আমাদের মাঝে।
আনুষ্ঠানিক ভাবে দেখা করার দিন ঠিক করলাম, দেখা হল আমাদের। বটতলার এক চায়ের দোকানে প্রতিদিন অগনিত কাপ চা খাওয়া হত আর গল্প করতাম কোন বিষয় ছাড়াই। সময় গড়ানোর সাথে সাথে সম্পর্কের গভীরতা টের পেলাম আমরা দু'জনই কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারলাম না। মোবাইল কোম্পানী গুলোর ভালো লাভ হল সেই সময়টা আমাদের দু'জনের কাছ থেকে। রাত জেগে কথা বলা ছিল আমাদের নেশা, কথা না হলে তো ঘুমই হত না আমাদের।
বাবা, মা কে লুকিয়ে কথা বলার জন্য অনেক রাত জেগে থাকতে হত আমাদের।
কিছুদিন যেতেই আমিই ইনিয়ে বিনিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করলাম মনের অবস্থা। কিন্তু সে ছিল ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না টাইপ মেয়ে। সে কিভাবে মচকালো সেই ঘটনাটা আমি এখানে গোপন রাখলাম। তবে আমিই তাকে প্রথম ভালোবাসার কথা প্রথম বলি।
আমি তাকে ভালবাসি শুনে সে হয়েছিল নিশ্চিন্ত আর আমার চিত্ত হয়েছিল উন্মত্ত। আমার উন্মত্ত চিত্তকে শান্ত করার বদলে সে আমার ভালবাসাকে যাচাই করাতেই ছিল ব্যস্ত। ভাগ্য খুব ভাল ছিল বলেই হয়তবা তাকে মচকাতে খুব একটা দেরী হয়নি আমার।
শুরু হল নতুন এক জীবন। শুধুই ভালবাসা, কথা বলা, রাগ করা, অভিমানে খাওয়া বন্ধ করা, রেস্টুরেন্টে বসে চা খাওয়া, চিঠি চালাচালি, মুঠোবার্তা আদান প্রদান আরো কত কি।
১লা বৈশাখে, ১ লা ফাল্গুনে তাকে নিয়ে ইউনিভার্সিটি না গেলে তো সে কথা না বলার ধর্মঘট শুরু করে দিত আমার সাথে। আমার জীবন থেকে কষ্টগুলোকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিল তার ভালোবাসা। দুঃখ, কষ্ট কিন্তু পেতাম, যা ছিল ভালোবাসার। ভালোবাসার দুঃখ, কষ্ট গুলোও ভালো লাগত।
চাকরীও পেয়ে গেলাম পড়ালেখা শেষ করে, বাকি ছিল শুধু বিয়ে।
আমরা স্বপ্ন দেখতাম আমাদের বিয়ে নিয়ে। স্বপ্ন ছিল নীলগিড়িতে (বান্দরবনে) দুজনে কাটাব এক রাত হাজার তারা দেখে, মেঘেদের খেলা দেখে। স্বপ্ন ছিল সেন্টমার্টিনে কাটাব দুজনে, প্রবালে বসে পানিতে পা ডুবিয়ে, রাত হলে ক্যাম্পফায়ার করব বিশাল সমুদ্রকে সামনে রেখে। স্বপ্ন ছিল প্রতি বর্ষার প্রথম দিনে তাকে ১০০ কদম ফুল এনে দেব। স্বপ্ন ছিল ছেলে হলে নাম রাখব "সমুদ্র" আর মেয়ে হলে রাখব "কবিতা"।
আমাদের সুন্দর জীবন অসুন্দর হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি। সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেল। আমি অসুখের বর্ননাও দিতে চাচ্ছি না এখানে। শুধু এটুকু বলব সে আমার সামনে আমাকে ছেড়ে চলে গেল, আমার সব স্বপ্নকে স্বপ্ন রেখে। মনে নেই চোখ ভিজে গিয়েছিল নাকি, মনে নেই কতক্ষন ছিলাম তার নিথর দেহের পাশে, শুধু মনে আছে সে যাওয়ার আগে আমাকে বলেছিল "ভালবাসি তোমাকে"।
তার চোখের কোন থেকে রূপালী পানি গড়িয়ে পড়ল বালিশের উপর। আমার চারিদিক তখন বিষম শুন্যতা গ্রাস করে, আমি হারিয়ে যাই নিকষ অন্ধকারের মাঝে।
স্বপ্ন গুলো স্বপ্নই রয়ে গেল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।