আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তথাকথিত আহলে হাদীসের আসল রূপ - পর্ব ০৫

মুফতী রফীকুল ইসলাম আল-মাদানীঃ আহলে হাদীস নামধারীদের মুহাদ্দিসগণ ও তাদের কিতাবগুলো কোথায়? ১। ছিহাহ্‌ ছিত্তাহ ( বুখারী, মুসলিম, নাসাঈ, আবু দাউদ, তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ ) এবং শরহে মায়া’নিল আসার, সুনানে বায়হাক্বী, মু’জামে তাবরানী, মুসতাদরাকে হাকেম, আল-মুখতারাহ, শরহুস্‌সুন্নাহ, মুসনাদে আহমাদ সহ হাদীসের যাবতীয় কিতাবের সংকলকগণ হয়ত স্বয়ং মুজতাহিদ ছিলেন অথবা অন্য কোন ইমামের মুক্বাল্লিদ ছিলেন। ক) ইমাম বুখারী (রহঃ) কে অনেকে মুজতাহিদ ইমামদের মধ্যে গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহঃ) “ আল-ইনসাফ ”, পৃষ্ঠা : ৬৭ আল্লামা তাজউদ্দীন সুবকী, “তবক্বাতুশ্ শাফেয়ীয়ার”, পৃষ্ঠা : ২/২ গাইরে মুক্বাল্লিদ আলেম নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান, “আবজাদুল উলুম”, পৃষ্ঠা : ৮১০ উনারা ইমাম বুখারী (রহঃ) কে শাফেয়ী মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য করেছেন। খ) ইমাম মুসলিম শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।

(গাইরে মুকাল্লিদ আলেম নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান, “আল হিত্তার”, পৃষ্ঠা : ১৮৬) গ) আল্লামা আনওয়ার শাহ্ কাশ্মীরী (রহ) “ফয়জুল বারী”-এর ১/৫৮ পৃষ্ঠায় ইবনে তাইমিয়্যার উদ্বৃত্তি দিয়ে ইমাম নাসাঈ এবং আবু দাউদকে (রহঃ) হাম্বলী মাযহাব অবলম্বী বলেছেন। অনুরূপভাবে গাইরে মুকাল্লিদ আলেম নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান, “আবজাদুল উলুম”, পৃষ্ঠা : ৮১০ পৃষ্ঠায় উভয়কে হাম্বলী বলে উল্লেখ করেছেন। ঘ) ইমাম তিরমিযী সম্বন্ধে শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দেহে দেহলভী “আল-ইনসাফের” ৭৯ পৃষ্ঠায় মুজতাহিদ তবে হাম্বলী মাযহাবের প্রতি আকৃষ্ট এবং এক পর্যায়ে হানাফী বলেও উল্লেখ করেছেন। ঙ) ইমাম ইবনে মাজাহ্কে আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী “ফয়জুল বারী”-এর ১/৫৮ পৃষ্ঠায় শাফেয়ী বলে উল্লেখ করেছেন। ২।

অনুরূপ ভাবে বুখারী শরীফের বিশেষ-বিশেষ ব্যাখ্যাগ্রন্থের প্রণেতা, যেমনঃ ক) ফাত্‌হুল বারী প্রণেতা ইবনে হাজার আসক্বালানী - শাফেয়ী খ) উমদাতুল ক্বারী প্রণেতা বদরুদ্দীন আইনী - হানাফী গ) ইরশাদুস্‌ সারী প্রণেতা শিহাবুদ্দীন ক্বাসতালানী - শাফেয়ী ঘ) ফয়জুল বারী প্রণেতা আনওয়ার শাহ্‌ কাশ্মীরী - হানাফী ঙ) লামিউদ দারারী প্রণেতা রশীদ আহমদ গাংগুহী - হানাফী । (রাহীমাহুমুল্লাহু তাআ’লা) ৩। অনুরূপ ভাবে মুসলিম শরীফের বিশেষ-বিশেষ ব্যাখ্যা গ্রন্থ প্রণেতা, যেমনঃ ক) আল-মুফহিম প্রণেতা আব্দুল গাফের ফারেসী খ) আল মু’লিম প্রণেতা আবু আব্দুল্লাহ আল-মাযরী গ) ইকমালুল মু’লিম প্রণেতা ক্বাজী আয়ায ঘ) আল মিনহাজ প্রণেতা ইমাম নববী প্রমুখ এবং নাসাঈ, আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের প্রবীণ ব্যাখ্যাকারগণ সবাই কোন না কোন মায্‌হাবের মুক্বাল্লিদ ছিলেন। যা সর্বজন স্বীকৃত ও তাদের জীবনী গ্রন্থ সমূহে এবং অধিকাংশ কিতাবের প্রচ্ছদেই উল্লেখ রয়েছে। ৪।

এছাড়া হাদীসের বর্ণনাকারীদের জীবনী সম্বলিত বিশেষ বিশেষ গ্রন্থ প্রণেতা, যেমনঃ ক) “ আল-কামাল ফী আসমাইর রিজাল ” প্রণেতা হাফেয আব্দুল গনী আল-মাক্বদাসী খ) এবং ৩৫ ভলিয়মে মুদ্রিত “ তাহযীবুল কামাল ” প্রণেতা হাফেয আবুল হাজ্জাজ আল মিযযী গ) ১২ ভলিয়মে মুদ্রিত “ ইকমালু তাহযীবিল কামাল ” প্রণেতা হাফেয আলাউদ্দীন মুগলতাঈ আল হানাফী ঘ) ২৫ ভলিউমে মুদ্রিত “ ছিয়ারু আলা’মিন নুবালা ” প্রণেতা হাফেয শামছুদ্দীন যাহাবী ঙ) ১২ ভলিউমে মুদ্রিত তারিখে বাগদাদ প্রণেতা খতীবে বাগদাদী চ) ৭০ ভলিউমে মুদ্রিত তারিখে দামেশক্ব প্রণেতা হাফেয ইবনে আসাকিরসহ তারাজীমের প্রায় পাঁচ শতেরও অধিক সমস্ত কিতাবেরই সংকলকগণ কোন না কোন মায্‌হাবের মুক্বাল্লিদ বা অনুসারী ছিলেন। এখন প্রশ্ন হল, যারা নিজেদেরকে আহ্‌লে হাদীস বলে দাবী করে এবং এ দলের নির্ধারিত ফরম পূর্ণ করলেই “ আহলে হাদীস ” নামের সার্টিফিকেট লাভে ধন্য হয় (!) হাদীস তথা ইল্‌মে হাদীসের জগতে তাদের কোন অবদান নাই কেন? তারা তাক্বলীদ করাকে শির্‌ক্‌ বলে, সুতরাং তাদের ভাষ্য মতে তাক্বলীদ করে এমন মুশরিকদের সংকলিত হাদীসের কিতাবসমূহের উপর তাদের আস্থা ও নির্ভরতা হয় যে কোন হাদীসের ভিত্তিতে? তাই আমি তাদেরকে বলব লা-মায্‌হাবী হিসাবে তোমাদেরকে মায্‌হাব অবলম্বী কারও মাধ্যম ব্যতীত হাদীস বর্ণনা করতে হবে। তবেই হাদীসের ক্ষেত্রে “ আহ্‌লে হাদীসের ” দৌরাত্ন্য ও চাতুরী ধরা পড়বে। আর মুসলমানরা বুঝতে সক্ষম হবে যে, “ আহ্‌লে হাদীস ” নামের অন্তরালে ইসলামপ্রিয় সাধারণ মুসলমানদেরকে দ্বীন থেকে সরানোর দুরভিসন্ধি আর ঈমান হরণের গভীর ষড়যন্ত্র বৈ আর কোন উদ্দেশ্য তাদের নেই। সব কিছু মিলিয়ে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, তাদের এ নাম অবলম্বন, লবণের কৌটায় চিনি আর বিষের বোতলে মধুর লেবেল লাগানোরই নামান্তর।

সালাফী দাবীর বাস্তবতাঃ ১। সালাফী শব্দটির মুল হচ্ছে “ সালাফ ”, যা সাধারনতঃ অতিবাহিত বা পূর্ববর্তী অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ( আল-মু’জামূল অসিতঃ পৃষ্ঠা – ৪৪৩ ) আর যারা অতিবাহিত বা পূর্ববর্তীদের অনুসরণ-অনুকরণ করে তারাই হলো “সালাফী ”। যেহেতু ইসলামী ইতিহাসের প্রথম তিন যুগের মহামনীষীগণ, অর্থাৎ সাহাবা (রাঃ), তাবেঈন ও তাবে তাবেয়ীগণই রাসূল (সঃ) এর ভাষায় পূর্বসুরী হওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট ও প্রকৃত অধিকারী। তাই, যে তাঁদের অনুসৃত আদর্শ ও ব্যাখ্যার আলোকে কুরআন হাদীসকে আঁকড়ে ধরবে সে-ই হবে সত্যিকারার্থে “ সালাফী “ তথা পূর্ববর্তীদের অনুসারী।

২। সাহাবী ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি সুপ্রসিদ্ধ হাদীসে মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেনঃ “ আমার সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত, আমার যুগের উম্মত। (অর্থাৎ সাহাবাগণ সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত) অতঃপর শ্রেষ্ঠ উম্মত তাঁরা, যাঁরা সাহাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হবে (অর্থাৎ তাবেয়ীগণ) অতঃপর শ্রেষ্ঠ উম্মত তাঁরা, যাঁরা ২য় যুগের উম্মত তথা তাবেঈগণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হবে, (অর্থাৎ তাবে-তাবেয়ীগণ)অতঃপর এমন জনগোষ্ঠির আগমন ঘটবে যারা সাক্ষ্য দিলে তা গ্রহণ করার উপযুক্ত হবে না, আমাদের জন্য বিশ্বস্ত হবেনা, অঙ্গীকার রক্ষা করবে না, এক কথায় তাদের মধ্যে কেবল অসৎ ও অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটতে থাকবে। ” ( বুখারী শরীফ, ফাজায়ালে সাহাবাঃ হাদীস নং-৩৬৫০, বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেখুন ফাতহূল বারী - পৃ: ৭/৬ ) এ হাদীসের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, ইসলামী ইতিহাসে অনুসরণীয় পূর্ববর্তী স্বর্ণযুগ বলতে উপরোল্লিখিত তিনটি যুগই বুঝায়। আর এ তিন যুগের সমাপ্তি ঘটেছে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর সূচনালগ্নে।

৩। তাই হাফেয যাহাবী (রহঃ) লিখেন, “ পূর্ববর্তী যুগ বলতে হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর সূচনা লগ্নই বুঝায়। ” ( মিজানুল ই’তেদালঃ পৃ - ১/৪ ) ৪। সাহাবা, তাবেয়ী ও তদসংশ্লিষ্ট আইম্মায়ে মুজতাহিদগণই আমাদের যোগ্য পূর্বসূরী। তাই কুরআন-হাদীসের সঠিক মর্ম অনুধাবনের ক্ষেত্রে তাদের আদর্শ, মতামত ও ব্যাখ্যার অনুসরণ যারা করবে একমাত্র তাঁরাই সালাফী দাবী করার অধিকার রাখে।

আর যারা তাঁদের অনুসরণ করে না বা তাঁদের প্রতি বিরাগ ও বৈরী ভাব পোষণ করে অথবা তাঁদের পরবর্তী নিকৃষ্টতম যুগের কারও অনুসরণ করে তারা কোন ক্রমেই সালাফী দাবী করার অধিকার রাখে না। বর্তমান তথাকথিত “ সালাফী ” নামধারীদের সালফে ছালেহীন বা সাহাবা, তাবেয়ীন ও তদসংশ্লিষ্ট ইমামদের সংগে কতটুকু সম্পর্ক রয়েছে (?), তা তলিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাদের প্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের পকেট-পুস্তিকা ও চ্যালেঞ্জ-বিবৃতিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, “ যারা পবিত্র কুরআন ও হাদীসের ভিত্তিতে জীবন সমস্যার সমাধান খুঁজে নেবে তারাই সালাফী বা আহলে হাদীস, তারাই মুক্তিপ্রাপ্ত দল, জান্নাতের অধিকারী। ” ( দ্র: আহলে হাদীস আন্দোলন কি ও কেনঃ পৃ: ৪-১৩) তাদের এহেন বক্তব্য বাহ্যত খুবই আকর্ষণীয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই ধরা পড়বে যে তারা অত্যন্ত সুচতুরতার সাথে বিষ মিশ্রণ করে দিয়েছে।

কেননা তাদের এ বক্তব্যে সাহাবায়ে কিরামগণের অনুসৃত আদর্শও যে দ্বীন ও শরীয়তের অন্তর্ভূক্ত এ কথাকে অতি ধূর্ততার সাথে অস্বীকার করা হয়েছে। ৫। তথাকথিত আহলে হাদীস আন্দোলনের বাংলাদেশের বর্তমান মূখপাত্র জনাব ড. আসাদুল্লাহ আল-গালিব তার লিখিত “ আহলে হাদীস আন্দোলন কি ও কেন “ পুস্তিকার প্রারম্ভিকা থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত, বিশেষ করে ৪ ও ১৩ নং পৃষ্ঠায় এ কথাই বুঝানোর প্রয়াস চালিয়েছেন যে, আহলে হাদীস আন্দোলন পূর্বসূরী কোন ব্যক্তিবর্গের আনুগত্য করা নয় বরং একমাত্র কুরআন ও হাদীসেরই ইত্তিবা’ করা। ৬। এ জন্যই এ মতবাদের পরিচয় দিতে যেয়ে ভারতবর্ষের অন্যতম হাদীস বিশারদ শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলভী (রহঃ) লিখেনঃ “ তারা না ক্বিয়াস মানে, না সাহাবা ও তাবেয়ীদের অনুসৃত আদর্শ মানে, যেমন মতবাদের প্রবক্তা ছিলেন দাউদে যাহেরী ও ইবনে হাযাম যাহেরী।

” ( হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহঃ পৃ: ১/১৬১) অথচ রাসূল (সঃ) এর পবিত্র হাদীস হলঃ “ আমার তরীক্বা এবং আমার পরবর্তী সত্যের আলোকবর্তিকা হিদায়াতপ্রাপ্ত সাহাবাদের তরীক্বা আঁকড়ে ধরা তোমাদের জন্য একান্ত জরুরী। ” ( তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল ইলম, বাবু মা-জায়া ফিল আখজে বিসসুন্নাহঃ পৃ:৫/৪৩, হাদীস নং-২৬৭৬ ) অনুরূপভাবে অনেকগুলো ভ্রান্ত দলসমূহের বাহিরে, মুক্তিপ্রাপ্ত একটি দলের পরিচয় দিতে যেয়ে প্রিয় নবী (সঃ) ইরশাদ ফরমানঃ “ আর আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, কেবল একটি মাত্র দল ব্যতিত অপরাপর সবাই দোযখী হবে, (এতদশ্রবণে) সাহাবায়ে কিরামগণ (রাঃ) আরজ করেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! মুক্তিপ্রাপ্ত এ দলটির পরিচয় কি? তদুত্তরে মহানবী (সঃ) ইরশাদ করলেনঃ যারা আমার এবং আমার সাহাবাদের তরীক্বার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। ” ( তিরমিযী শরীফ, কিতাবুল ইলম, বাবু মা-জায়া ফি ইফতিরাক্বে হাজিহিল উম্মাহ হাদীস নং-২৬৪১ ) লক্ষনীয় যে, প্রথমোক্ত হাদীসে মহানবী (সঃ) তাঁর তরীক্বার সঙ্গে সঙ্গে সাহাবাদের তরীক্বাকেও আঁকড়ে ধরতে নির্দেশ করেছেন। তেমনিভাবে দ্বিতীয় হাদীসেও মহানবী (সঃ) তার তরীক্বায় প্রতিষ্ঠিতদেরকে যেমনিভাবে মুক্তিপ্রাপ্ত দলে গণ্য করেছেন অনুরূপভাবে সাহাবাদের (রাঃ) তরীক্বা বা আদর্শে প্রতিষ্ঠিতদেরকেও মুক্তিপ্রাপ্ত দলেই গণ্য করেছেন। তাই উপরোক্ত হাদীস দুটো এবং এ ধরনের আরও অসংখ্য হাদীসের আলোকে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, সাহাবাগণের তরীক্বা বা অনুসৃত আদর্শ আমাদের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়, তাঁরাই আমাদের প্রথম সারির “ সালফ “ বা পূর্ববর্তী সুতরাং যারা তাঁদের অনুসরন করবে তারা সালাফী।

আর যারা তাদের অনুসরন করবে না তারা “ সালাফী “ দাবী করার অধিকার রাখে না। বরং তারা “ খেলাফী “ ও ভ্রান্ত দাবীদার মাত্র। কিছু কথাঃ তাফ্সীর বিশারদগণের মাযহাবঃ ১। তাফ্সীরে আহকামুল কুরআন প্রণেতা আবু বকর জাস্সাস্ (রহঃ) (মৃঃ ৩৭০ হিঃ) ২। তাফ্সীরে বাহরুল উলূম প্রণেতা নাছর বিন মুহাম্মাদ সামারকান্দী (রহঃ) (মৃঃ ৩৭৫ হিঃ) ৩।

তাফ্সীরে মাদারিকুত তান্যীল প্রণেতা আল্লামা আব্দুল্লাহ্ বিন আহমাদ নাসাফী (রহঃ) (মৃঃ ৭০১ হিঃ) ৪। তাফ্সীরে রুহুল মাআ’নী প্রণেতা আল্লামা আলূসী (রহঃ) (মৃঃ ১২৭০ হিঃ) ৫। সউদী আরবের রাবেতা কর্তৃক রাজকীয়ভাবে প্রকাশিত ছাফ্ওয়াতুত্ তাফ্সীর ৬। আহকামুল কুরআন প্রণেতা কুম্মী (রহঃ) (মৃঃ ৩০৫ হিঃ), উসমানী (রহঃ) (মৃঃ ১৩৯৪ হিঃ) সহ বিভিন্ন তাফসীরগ্রন্থ যেমনঃ তাফ্সীরে আহমাদী, মায্হারী, ইরশাদুল আক্বলুস্ সালীম, তাজুত্ তারাজিম ইত্যাদির প্রণেতাগণও সবাই হানাফী মায্হাবের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ৭।

আল্ অসীত প্রণেতা ইমাম ওয়াহিদী (রহঃ) (মৃঃ ৪৬৮ হিঃ) ৮। মাআলিমুত্ তান্যীল প্রণেতা ইমাম বগবী (রহঃ) (মৃঃ ৫১৬ হিঃ) ৯। মাফাতীহুল গাইব প্রণেতা ইমাম রাযী (রহঃ) (মৃঃ ৬০৪ হিঃ) ১০। তাফ্সীরে বায়যাবী প্রণেতা ক্বাযী বায়যাবী (রহঃ) (মৃঃ ৬৮৫ হিঃ) ১১। লুবাব প্রণেতা আল্লামা আলাউদ্দিন খাযেন (রহঃ) (মৃঃ ৭৪১ হিঃ) ১২।

আল্ বাহরুল মুহীত প্রণেতা ইবনে হাইয়ান (রহঃ) (মৃঃ ৭৪৫ হিঃ) ১৩। তাফ্সীরুল কুরআনুল আযীম প্রণেতা ইবনে কাসীর (রহঃ) (মৃঃ ৭৭৪ হিঃ) ১৪। দুররে মানসূর প্রণেতা ইমাম সুয়ূতী (রহঃ) (মৃঃ ৯১১ হিঃ) প্রমুখ ইমামগণ শাফেয়ী মায্হাবের ছিলেন। ১৫। আহকামুল কুরআন প্রণেতা ইস্মাঈল বিন আয্দী (রহঃ) (মৃঃ ৩৫৩ হিঃ), ইবনে আরাবী (রহঃ) (মৃঃ ৫৪৩ হিঃ) ১৬।

আল্ মুহাররারুল ওয়াজীয প্রণেতা আবু মুহাম্মদ আন্দুলুসী (রহঃ) (মৃঃ ৫৪৬ হিঃ) ১৭। আল্ জামিউল আহ্কাম প্রণেতা ইমাম কুরতুবী (রহঃ) (মৃঃ ৬৭১ হিঃ) প্রমুখ মালেকী মায্হাবের ছিলেন। ১৮। কিতাবুল জাওয়াহির প্রণেতা আবদুল ওয়াহিদ সিরাজী (রহঃ) (মৃঃ ৪৮৬ হিঃ) ১৯। যাদুল মাসীর প্রণেতা জামালুদ্দীন বাগদাদী (রহঃ) (মৃঃ ৫৯৭ হিঃ) ২০।

আল্ লুবাব প্রণেতা আবু হাফ্স উমর (রহঃ) (মৃঃ ৮৮০ হিঃ) ২১। আল্ ইসতিগনা বিল কুরআন প্রণেতা ইবনে রজব (রহঃ) (মৃঃ ৭৯৫ হিঃ) প্রমুখ হাম্বলী মায্হাবের ছিলেন। ( দেখুনঃ এ সমস্ত কিতাবের প্রচ্ছদ; উপরন্তু বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় আত্তাফসীর ওয়াল মুফাসসিরীন লিহুসাইন যাহাবী, আত্ তাবক্বাতুল মুফাসসিরীন) সবচেয়ে মজার কথা হল, লা মায্‌হাবী বা আহলে হাদীসরা মায্‌হাব অনুসরণকারীদেরকে শিরকপন্থী, কাফের, বিদয়াতী প্রভৃতি ভাবে আখ্যায়িত করতে থাকে। অথচ দেখা যায়, হাদীস সংকলক হতে শুরু করে যেসব রাবী হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং যাঁরা তাফসীরের বিশাল বিশাল কিতাব লিখেছেন, তাদের গুটিকয়েক বা একেবারেই নগণ্য ছিলেন মুজতাহিদ, বাকীরা সবাই ছিলেন কোন না কোন মায্‌হাবের মুক্বাল্লিদ। এখন প্রশ্ন হল, যাদেরকে তারা শিরকপন্থী, কাফের বা বিদয়াতী বলে থাকে, তাদের কাছে থেকে তারা কিসের ভিত্তিতে হাদীস গ্রহণ করে থাকে?? কিসের ভিত্তিতে তারা সেসব তাফসীরগ্রন্থ বা হাদীসের কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে থাকে?? তাদের ভাষ্যমতে তো তারা কাফিরদের দেওয়া হাদীসই গ্রহণ করে তার উপর আমল করে !! আল্লাহ পাক আমাদের সত্য বুঝার ও মানার তওফীক দান করুন।

আমীন। (চলবে ইনশাল্লাহ) ৪র্থ পর্বঃ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.