সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............
‘স্যার’দের নির্লজ্জতাঃ
ঢাকা শহর জুড়েই নয়, সকল মফস্বল শহরেও মহান শিক্ষক অ্যারিস্টোটল, সক্রেটিস, প্লেটোর পুনরুত্থান যেন! ভাব খানা এমন যেনো-অগণিত ভক্ত শিষ্য জানান দিচ্ছে তাঁদের সেই মহাউত্থানের কথা। নগরীর আনাচে-কানাচে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুনে শোভা পাচ্ছে ‘স্যার’ শব্দযোগে তাঁদের নাম। আপামর নগরবাসী তা স্বচক্ষে দেখবে আর সে খবর ছড়িয়ে দেবে বিশ্বময়। এমনই ভাবটা তাঁদের। অথচ ঐ প্রচারণার কাজটা "স্যার"দের নিজেদেরই করা।
যেমন-" জি পি এ -৫ পাবার নিশ্চয়তা দিয়ে বাদল স্যার" এখানে পড়ান/ "মান্নান স্যার"-এখানে পড়ান/"ফারুক স্যার"-এখানে পড়ান/" জি পি এ -৫ পাবার নিশ্চয়তা দিয়ে পরিমল স্যার" ইংলিশ পড়ান...ইত্যাদি ইত্যাদি।
শিক্ষকতা শুধু পেশাই নয়, মহান ব্রতও বটে। সময়ের বিবর্তনে এখন শিক্ষকতা সব থেকে সফল ব্যবসা। শিক্ষকরাই এখন দক্ষ এবং যোগ্য ব্যবসায়ী! দেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া বিরাজমান এসব শিক্ষক নামধারীর বিরুদ্ধে কিছুই কি করার নেই? দিনের পর দিন শিক্ষকতা নামের এ মহান পেশাটিকে কীভাবেই না কলুষিত করছেন তাঁরা? শিক্ষক ব্যক্তিত্ববান হবেন। ব্যক্তিত্ব আসে মেধা থেকে।
সেমতে কোনো মেধাবী মানুষের/শিক্ষক এর পক্ষে কি নিজ নামের পাশে নিজেই ‘স্যার’ শব্দটি জুড়ে দিয়ে দিব্যি নিরুৎকণ্ঠ থাকা সম্ভব? শুধু পোস্টার-ব্যানারে কেন? কম্পিউটার কম্পোজে নিজে বই তৈরি করে প্রতি পৃষ্ঠায় 'স্যার' শব্দযোগে নিজ নামের ছাপ দিয়ে শিক্ষক নামধারী তাঁর প্রাইভেট শিক্ষার্থীদের কাছে দেদারসে বিক্রি করেন সে বই। এহেন কার্য্যক্রম শুধু নিন্দনীয় নয়, হতবুদ্ধিকরও বটে। শিক্ষকের ভিজিটিং কার্ডের কোনায় "A-৫ শিওর" লেখা থাকার কী এমন যৌক্তিকতা থাকতে পারে তা কোনোমতেই বোধগম্য নয়।
কিছুদিন পুর্বে ঢাকা কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ সিরাজুদ্দীন স্যারের সাথে কথা হচ্ছিল। স্যার খুব হতাশ হয়ে বলেছিলেন-"ঢাকা শহরের শিক্ষার্থীদের পড়া লেখা এখন সম্পুর্ণ ভাবেই নীল ক্ষেত,গ্রীণ রোড, ধানমন্ডি, জিগাতলা কেন্দ্রীক কোচিং সেন্টার এবং তথা কথিত আলোচ্য "স্যার" কেন্দ্রীক হয়ে পরেছে"।
আমার বড় ছেলেটা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করেছে এবং ছোট ছেলেটি এবছর কলেজে ভর্তি হয়েছে। একজন অবিভাবক হিসেবে আমি ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের সাথে সম্পুর্ণ একমত।
দুটো দল রয়েছে এসব শিক্ষক নামধারী প্রবঞ্চকদের। একদল নাম লিখিয়েছেন নামী-দামী স্কুল-কলেজের খাতায়; অন্যদল তথাকথিত কোচিং সেন্টারে। এদের কিছু ফিরিস্তি না দিলেই নয়।
নামী-দামী স্কুল-কলেজে কর্মরত থাকলেও শ্রেণী পাঠদান সূত্রে এদের অনেকেরই বিশেষ কোনো নামধাম নেই। দিনের পর দিন প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। কর্তব্যে অবহেলার দায়ে চাকরিও খুইয়েছেন কেউ কেউ। ফিজিক্স, কেমেস্ট্রি, ইংরেজি, গণিতের মতো বিষয়গুলোতে শিক্ষার্থীকে সার্বক্ষণিক চর্চায় থেকেই ভালো ফলাফল করতে হয়। অথচ অভিভাবকদের অসচেতনতায় এরা তথাকথিত কোর্স সিস্টেমের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে তিন মাসের মধ্যে কোর্স শেষ করে দেন।
যা নিতান্তই শুভঙ্করের ফাঁকি। কাজের কাজ হয় না কিছু্ই, শুধু মনোহারী কিছু কাগজপত্র হস্তগত আর শিক্ষক নামধারীর অন্যায্য তল্পি ভারী করা ছাড়া। ব্যর্থতার মাশুলটুকু শেষ পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ আর প্রবঞ্চিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবককেই গুনতে হয়।
ওদিকে তথাকথিত কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত আছেন তাঁদের অনেকের কথাই কী আর বলবো? ব্যবসায়িক কূট-কৌশল হিসেবে লুপ্তপ্রায় কো-এডুকেশন ব্যবস্থাকে যেন রীতিমত টেনে তোলার প্রচেষ্টায় নেমেছেন তাঁদের অনেকে। তাঁরা আবার ‘স্যার’ সম্বোধনে তুষ্ট নন।
বিশেষ ভাব জমাতে শিক্ষার্থীদেরকে দিয়ে ‘ভাইয়া’ সম্বোধন করানোর কালচার চালু করছেন তাঁরা। অনেকেরই আচরণ-পোশাক-পরিচ্ছদ রোমিও সুলভ। সমাজের কী আর থাকে শিক্ষক যখন "রোমিও" হন? যদি মানুষ গড়া না গড়ার প্রশ্ন ওঠে তবে এদের ভূমিকার কী মূল্যায়ন দাঁড়ায়- সমাজকে আজ হোক কাল হোক একদিন না একদিন তা উপলব্ধি করতেই হবে। এত যে অবক্ষয় চারদিকে, এত যে ভাঙন-অশুভের অশনিসংকেত; কে ধরবে হাল, তাতে কে হবেন পথপ্রদর্শক?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।