আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম আলোর সংবাদ অসত্ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত - বিএনপি : আইএসআই’র টাকা দেয়ার খবর বানোয়াট : বিবিসিকে দুররানি

আমি বাংলার গান গাই আইএসআই বিএনপিকে টাকা দিয়েছে বলে দৈনিক প্রথম আলো যে খবর প্রকাশ করেছিল তাকে ‘পুরোপুরি অসত্য, ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও বানোয়াট’ বলে অভিহিত করে বিএনপি বলেছে, রিপোর্টটি খুবই অসত্ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গতকাল এক প্রতিবাদপত্রে বিএনপি বলেছে, ‘ওই মনগড়া সংবাদটির প্রতিটি বর্ণ আমরা প্রত্যাখ্যান করছি এবং এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ’ ওই সংবাদের জন্য প্রথম আলোকে ক্ষমা চাইতে বলেছে বিএনপি। প্রথম আলো পত্রিকায় গত ৪ মার্চ ‘১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদাকে পাঁচ কোটি রুপি দেয় আইএসআই’ শিরোনামে ওই খবরটি প্রকাশিত হয়। এদিকে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই-এর সাবেক প্রধান জেনারেল আসাদ দুররানি বলেছেন, বিএনপিকে অর্থ দেয়ার খবর সম্পূর্ণ বানোয়াট।

গতকাল প্রথম আলো সম্পাদককে লেখা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘আপনাদের পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সূত্র হিসেবে দুবাই থেকে প্রকাশিত ‘খালিজ টাইম’ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ওই পত্রিকায় তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়ে সম্পাদককে চিঠি দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে এ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে আমি স্পষ্টভাষায় বলেছিলাম, অভিযোগটি সম্পূর্ণ বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও অপপ্রচারণামূলক। ’ প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘আমরা আশা করেছিলাম, সত্যতা যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ভাষায় অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে দেয়ার পর হীন-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারণাটি প্রথম আলো পত্রিকা প্রকাশ করবে না। ’ বিএনপি বলছে, পাকিস্তান সুপ্রিমকোর্টে আলোচ্য মামলাটির কার্যবিবরণীর ভিত্তিতে সেখানকার সংবাদমাধ্যমে বিশদ সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হলেও তার কোনোটিতেই বেগম খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপি সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই।

আদালতে আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান আসাদ দুররানি যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাতে পাকিস্তানের কিছু দল ও রাজনীতিবিদকে ১৯৯০ সালের সাধারণ নির্বাচনে অর্থ প্রদানের বিষয়ে স্বীকারোক্তি রয়েছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম অর্থের পরিমাণসহ অর্থ গ্রহণকারীদের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া কিংবা বিএনপি সম্পর্কিত কোনো অভিযোগ প্রকাশিত হয়নি জানা সত্ত্বেও প্রথম আলো ভিনদেশি একটি পত্রিকায় কোনো সূত্রের উল্লেখ ছাড়াই প্রকাশিত একটি অভিযোগের ভিত্তিতে খুবই বিস্ময়করভাবে প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বসহকারে সংবাদটি প্রকাশ করেছে। এটা অবশ্যই হীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, খালিজ টাইমসে প্রকাশিত অসত্য প্রতিবেদনটিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে ভারতের দুটি পত্রিকায় যে ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারিত হয়েছে সে দুটির রচয়িতা দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী প্রথম আলো পত্রিকার নয়াদিল্লি সংবাদদাতা।

এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে খুবই পরিকল্পিতভাবে যোগসাজশের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সুনাম ক্ষুণ্ন করাই ছিল এ প্রচারণার প্রকৃত উদ্দেশ্য। প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘সাংবাদিকতার মৌল নীতিমালা সম্পূর্ণ বরখেলাপ করে এমন সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে প্রথম আলো দেশের শীর্ষ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল এবং এর নেতার সুনাম ও সামাজিক মর্যাদাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে অপপ্রচারণার একটি হাতিয়ারও তুলে দেয়া হয়েছে। ’ প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘এরই মধ্যে দুররানি নিজেই বাংলাদেশের একাধিক পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাত্কারে পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের জবানবন্দিতে খালেদা জিয়ার ও বিএনপি প্রসঙ্গে তিনি কোনো কথাই বলেননি। তার কাছ থেকে যাচাই না করে এ ধরনের ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রচার করায় তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এরই মধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় পুরো অভিযোগটিকে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছে। ’ বিএনপি বলছে, আমরা স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিলাম, বিদ্বেষপ্রসূত ও উদ্দেশ্যমূলক এই খবরের অসত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পর প্রথম আলো এর জন্য অন্তত দুঃখ প্রকাশ করে পেশাগত সততা ও সাংবাদিকতার মৌলনীতির প্রতি আনুগত্যের প্রমাণ রাখেব। দুঃখের বিষয়, আজ আমাদেরই প্রকাশিত অসত্য সংবাদটির তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হচ্ছে। প্রতিবাদপত্রে বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, প্রথম আলো ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবে। ’ বিএনপিকে অর্থ দেয়ার খবর সম্পূর্ণ বানোয়াট- বিবিসিকে আসাদ দুররানি : পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই-এর সাবেক প্রধান জেনারেল আসাদ দুররানি বলেছেন, বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে আইএসআই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে অর্থ দিয়েছিল বলে সম্প্রতি যে খবর বেরিয়েছে তা সম্পূর্ণ বানোয়াট।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাত্কারে জেনারেল আসাদ দুররানি বলেন, পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের শুনানিতে এরকম কোনো কথাই তিনি বলেননি। উল্লেখ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদপত্র খালিজ টাইমস এবং ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল এ মাসের গোড়াতে খবর দেয় যে পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের এক শুনানিতে দুররানি বিএনপিকে নির্বাচনের জন্য ৫০ কোটি (পড়ুন ৫ কোটি) রুপি অর্থ দেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। এ খবর প্রকাশের পর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে এ নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য। বিএনপি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক বিবৃতিকে বিএনপিকে আইএসআই-এর অর্থ দেয়ার খবর নাকচ করে দিয়েছে।

বিবিসি বাংলার মাসুদ হাসান খান রাওয়ালপিন্ডিতে জেনারেল দুররানিকে টেলিফোনে জিজ্ঞেস করেন, আদালতের শুনানিতে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকে আইএসআই টাকা দিয়েছে, একথা তিনি বলেছেন কি না। জবাবে জেনারেল দুররানি বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো কথাই আদালতে বলেননি। খালেদা জিয়া ছাড়া বিএনপির অন্য কাউকে আইএসআই অর্থ দিয়েছে কি না এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি মনে করতে পারছি না। আমার বিশ্বাস কেউ সেটা করেনি। ’ তিনি বলেন, এটি একটি ভুয়া খবর এবং এটা সাংবাদিকতার নীতি বিরোধী।

কিন্তু কেন এ খবর ছাপানো হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। জেনারেল দুররানিকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতিকদের আইএসআই অর্থ দিয়ে থাকে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। তাদের তরফ থেকেও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। এ ধরনের কোনো লেনদেন হয়েছে এমন কোনো কথাবার্তা হয়েছিল বলে আমার মনে পড়ে না। ’ পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টের শুনানিতে বাংলাদেশের প্রসঙ্গে কোনো কথাবার্তা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জানা মতে সুপ্রিমকোর্টের শুনানিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কোনো কথাবার্তা হয়নি।

আমি শুনানিতে যে বক্তব্য দিয়েছি, তার দলিল আদালতেই আছে, যেটা আদালত বিবেচনা করছে। সে কারণেই আমি বলতে পারি, এ অর্থ দেয়ার বিষয়ে আদালতে কেউ কখনও কোনো কথাই বলেনি। ফলে এ অভিযোগ অস্বীকার করতে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। ’ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.