আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! “এতোক্ষন অপেক্ষা করবা” ?
“করি ! আমার না যেতে ইচ্ছা করছে না । তুমি আসে পাশে আছো এটা ভাবতেই আমার খুব ভাল লাগছে” ।
কথাটা শুনেই শ্রাবণী চোখে পানি চলে আসে । ভাগ্য ভাল যে ফোনে কথা বলছে । তা না হলে অপু চোখের জল দেখে ফেলত ।
শ্রাবণী বলল “শোন প্রোগ্রাম কথন শেষ হয় ঠিক নাই । এতোক্ষন বসে থাকার কোন মানে নাই । তুমি চলে যাও” ।
“থাকি না ? আমার তো অসুবিধা হচ্ছে না” ।
“শোন যা বলছি কর ।
দেখতে চেয়েছিলে দেখেছ । এখন যাও” । কথাটা নিজের কাছেই খুব কঠিন শোনাল । শ্রাবণীর খারাপ লাগল । তারপর গলা একটু নরম করে বলল “বাসায় যাও প্লিজ ।
তুমি সারা রাত জার্নি করে এসেছ । তোমার বিশ্রামের দরকার আছে । আর তোমাকে এভাবে অপেক্ষা করতে দেখলে আমার খারাপ লাগবে । তুমি কি চাও আমার খারাপ লাগুক” ?
“না চাই না তো” ।
“তাহলে যাও সোনাপাখি ।
আমি কাল দেখা করবো” ।
“করবে তো” ?
“হুম করবো” ।
“আচ্ছা যাচ্ছি তাহলে । কাল দেখা করবা কিন্তু । আই লাভ ইউ” ।
“আই লাভ ইউ টু” ।
অপু ফোন কেটে দিল ।
ফোন রাখার পর শ্রাবণীর একটু খারাপই লাগছিল । বারবার অপুর ঐ অকুতিটা কানে বাজতে ছিল ।
থাকি না ? তুমি আসেপাশে আছো ভাবতেই ভাল লাগছে ।
কিন্তু খামোখা এতোটা সময় ওকে অপেক্ষা করানোর কি কোন মানে আছে ? এমনিতেও যথেষ্ট কষ্ট করে ও এসেছে । শ্রাবণী জানতোও না যে অপু আসবে । কয়দিন ধরেই ওদের অফিস প্রোগ্রামের কথা চলছিল ।
অপু যখন শুনলো বলল “তুমি কি বোরকা পরে যাবা” ?
“না” ।
“ না কেন” ?
“এমপি আসবে ।
বস বলেছে আমাকে দিয়ে এমপিকে ফুল দেওয়াবে” ।
“তার মানে সেজে গুজে যেতে বলছে” ।
“ হুম” । শ্রাবণী হাসে ।
অপু মন খারাপ করে বলল “তারমানে সবাই তোমাকে দেখবে আর আমি তোমাকে দেখতে পাবো না” ?
“না সোনাপাখি তুমি দেখতে পাবে না” ।
“না এটা হবে না । তুমি যাবে না” ।
অপুর কথা শুনে শ্রাবণী হেসে ফেলল । বলল “না গেলে আমার চাকরি থাকবে না বুঝছো” ?
যদিও চেহারা দেখা যাচ্ছে না তবুও শ্রাবণী খুব ভাল করে বুঝতে পারছে অপুর মন খারাপ হয়ে গেছে । অন্য কোন মানুষ ওর দিকে তাকাক এটা ও সহ্যই করতে পারে না ।
তার উপর সাজলে তো কথাই নাই ।
আজ সকালে যখন ও তৈরি হচ্ছিল আয়নায় নিজেকে দেখে ওর একটু মন খারাপই হল । অপু যদি ওকে এখন দেখতো কত খুশিই না হত ! বেচারা কত মত খারাপ করে । দুতিন মাস পর একবার আসে । একবার দেখা হয় তবুও তখন ও বোরকা পরে থাকে ।
বেচারা ঠিক মত দেখতেও পারে না ।
অবশ্য শ্রাবণীর কিছু করারও নাই । বোরকা ছাড়া বের হবার উপায়ও নাই । বাসায় হাজারটা কৈফত দিতে হয় । আজ একটা সুযোগ এসেছে কিন্তু অপু নেই ।
কাল রাতেও অপু ফোন দিয়ে সব কিছু জিঞ্জেস করছে । কখন প্রোগাম ! কখন পৌছাবা ! কার সাথে যাবা ইত্যাদি ইত্যাদি । তখন শ্রাবণীর মনে হয়েছিল অপু আসতে পারছে না এই জন্য এই সব কিছুর মাঝে একটু শান্তনা খুজতে চাচ্ছে ।
ও যখন প্রোগ্রামে পৌছেসে । বারান্দায় থেকে রুমে ঢুকতে যাবে তখন ফোন বেজে উঠল ।
অপুর ফোল । “বল” ।
“চলে এসেছ” ?
“হুম” ।
“বারান্দায়” ?
“হুম” ।
“রুমে ঢুকবে” ?
“হুম” ।
এই উত্তর দিয়ে শ্রাবণী একটু চমকালো । “মানে ? তুমি কোথায়” ?
অপু হাসল । বলল “পিছনে ঘুরো” ।
শ্রাবণী পিছনে ঘুরে তাকাল । অল্প কয়েক হাত দুরে অপু দাড়িয়ে আছে ।
মুখে একচিলতে হাসি । শ্রাবণী কিছুক্ষন কোন কথাই বলতে পারল না । এই ছেলেটাকি পাগল নাকি !
শ্রাবণী হঠাৎ লক্ষ্য করল অদ্ভুদ এক ভাল লাগা ওর ছাড়া দেহ মনে ছড়িয়ে পড়েছে । ওকে দেখে কি যে ভাল লাগছে ! অনেক ক্ষন পর শ্রাবণী বলল “তুমি” ?
“কি করবো বল ? তুমি বোরকা ছাড়া বাইরে আসবে সবাই তোমাকে দেখবে তোমার হাসি দেখবে আর আমি তোমাকে দেখবো না তা তো হয় না , তা তো হবে না” ।
“তাই বলে এই টুকু দেখার জন্য তুমি এতো দুর থেকে এতো কষ্ট করে আসবে” ?
“টিয়াপাখি তোমাকে এক পলক দেখার জন্য আমি কি করতে পারি তুমি ভাবতেও পারবে না” ।
শ্রাবণী কিছু বলতে পারে না । কেবল এই পাগল ছেলেটার দিকে তাকিয় থাকল । শ্রাবণীর মনে হল এখন যদি অপুর সরাসরি কথা বলা যেত !
কিন্তু উপায় নেই । চারিপাশে সব পরিচিত লোকজনে ভর্তি । ওর সাথে সরাসরি কথা বলার কোন উপায়ই নাই ।
যে কেউ দেখে ফেলতে পারে । ফোনেই কথা বলতে হবে ।
অবশ্য অপুকে এতেই খুশি মনে হচ্ছে । ও কি মুগ্ধ চোখেই না তাকিয়ে আছে ।
মাঝে মাঝে শ্রাবণীর মনে হয় ও তো এতোটা সুন্দর না কিন্তু তবুও অপু ওকে এভাবে কেন দেখে ! অপুর চাহনী দেখলে বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা কাঁপুনীর সৃষ্টি হয় ! কি দেখে ও অমন করে !!
“কি দেখছো ওমন করে ? আমার লজ্জা লাগছে” ।
শ্রাবণীর সত্যি সত্যি লজ্জা লাগছিল ।
“তোমাকে দেখছি । মনে হচ্ছে স্বর্গের কোন দেবী পৃথিবীতে নেমে এসেছে” ।
শ্রাবণীর গালটা যেন আরো একটু লাল হয়ে উঠল । বলল “আচ্ছা ঠিক আছে অনেক দেখেছ এখন যাও ।
আমার প্রোগ্রাম এখনই আরাম্ভ হয়ে যাবে । তুমি বাসায় যাও । বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নাও গিয়ে” ।
“আর একটু থাকো না । তোমাকে আর একটু দেখি” ।
কিন্তু আর থাকা সম্ভব হল না । শ্রাবণীর এক কলিক এসে ওকে নিয়ে গেল । যাওয়ার পথে বারবার ও ফিরে তাকাচ্ছিল । অপু ওখানেই দাড়িয়ে আছে । এক ভাবে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে ।
শ্রাবণী ফোন করে আবার ওকে । “অপু তুমি বাসায় যাও আমায় অনেক দেরি হবে” ।
“হোক । আমি অপেক্ষা করি । এতোক্ষন অপেক্ষা করবা” ?
“করি ।
তুমি আসেপাশে আছো এটা ভাবতেই আমার ভাল লাগছে” ।
প্রোগ্রাম শেষ হতে হতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেল । শ্রাবণী বেশ ক্লান্ত হয়ে বের হল অফিস থেকে । এখন একটু ফোন দেওয়া যাক অপু কে ।
“প্রোগ্রাম শেষ” ?
“হুম” ।
“খুব ক্লান্ত” ?
“হুম” ।
“ আমিও খানিকটা । আমিতো ভেবেছিলাম তোমার প্রোগ্রাম হয়তো আর শেষই হবে না । আর হয়তো দেখাও হবে না” ।
“মানে ? তুমি যাও নি” ?
অবাক বিশ্ময়ে শ্রাবণী অপুকে দেখল ।
ঠিক ওর সামনেই দাড়িয়ে আছে ।
“তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে ? সেই সকাল থেকে তুমি এখানে আমার জন্য দাড়িয়ে আছে” ?
অপু বোকার মত হাসল ।
“কি করবো তোমাকে আরো একবার দেখতে ইচ্ছা করল যে” ।
“তোমাকে না থাপড়ানো দরকার । একবার না দেখলে তখন ।
এভাবে চার পাঁচ ঘন্টা এখানে বসে থাকার কোন মানে আছে” ? শ্রাবণী খুব রাগ করতে চাইল অপুর উপর । কিন্তু পারল না । এরকম একটা পাগলের উপর কি রাগ করা যায় ?
শ্রাবণী লক্ষ্য করল ওর চোখ দুটো সিক্ত হয়ে উঠেছে । যেকোন সময় জল গড়িয়ে পড়বে ।
ও আবার বলল “বল!! সকালবেলাই না দেখলে ? আবার দেখার কি আছে ।
এতোক্ষন অপেক্ষা করার কি কোন মানে আছে” ?
অপু আবার হাসল । বলল “তোমাকে বলিনি টিয়াপাখি যে তোমাকে একটা বার দেখার জন্য আমি কি যে করতে পারি তা তুমি ভাবতেও পারবে না । এইটুকু অপেক্ষা তো কোন ব্যপারই না” ।
অপু একভাবে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে । সেই মুগ্ধ চোখে ।
টুপ করে শ্রাবণীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল ।
ও আর আটকানোর চেষ্টা করল না ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।