আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পটা কি সত্যি?

নীল আকাশের নিচে সবুজ অরণ্য খুঁজে বেড়াচ্ছি যেখানে পাতব শয্যা, সেই দিন আর সাহসের অপেক্ষায়, মানুষে আমার বিশ্বাস অল্প। সাদিয়া এবং হাসান একে অপরকে ভীষণ ভালোবাসে। হাসান আমুদে আর রসিকতাপ্রিয় ছেলে, সাদিয়া হাস্যরস পছন্দ করলেও সবকিছু নিয়ে ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ পছন্দ করে না, হাসানও সিরিয়াস বিষয়ে মাঝেমধ্যে বেশ ভাব-গাম্ভির্য প্রদর্শন করতে পারে। প্রেম বিষয়ে হাসানের তেমন কোনও বিশেষ আকাঙ্ক্ষা নেই,কিন্তু সাদিয়ার আবার হাজারটা শর্ত, তবু এই দুটোতে কীভাবে কী যেন হয়ে গেল। হাসান ভেবে কূল কিনারা করতে পারে না বলে আজকাল আর ভাবেই না, সাদিয়া কিন্তু ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ আতংকিত, হাসানের মত ছেলে জীবনে কী করতে পারবে,তা নিয়ে সারাক্ষন টেনশন আর টেনশন, হাসান তাই তক্কে তক্কে থাকে, সাদিয়ার সাথে যত কম কথা বলা যায়, যত কম দেখা করা যায়! প্রায় দু’দিন পর হাসানের সাথে সাদিয়ার কথা হল, সাদিয়া বিকেলে হাসানকে পাহাড়িকায় আসতে বলে দিল, বরাবরের মত লেট করে হাজির হয়ে সাদিয়ার মুখের চরম গরম উষ্ণীষে অভ্যর্থনা লাভ করল সে, অতঃপর দুজনে খুনসুটি, অম্ল-মধুর ঝগড়া এসব করে কাটিয়ে দিল বেশ কিছুটা সময়, হঠাৎ বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল হাসান, ‘আচ্ছা দিয়া তুমি আমায় ভালোবাস কেন বল তো?’ সাদিয়া শুনে হাসে, ‘আরে কী পাগলের মত বকছ তুমি,এতদিন পর এই প্রশ্ন!’ না সত্যিই জানতে চাইছি, বল না, তুমি খুব সহজ, সরল, সৎ, উদার, সহানুভূতিসম্পন্ন, কো-ওপারেটিভ, এইতো এগুলোর জন্যই, আরো কিছু হয়ত আছে,থাক সেসব, এখন এসব জানবার কী কারণ বল তো, না তেমন কিছু না, আজকে তোমাকে একটা গল্প বলব, তোমাকে সেই গল্পের শেষটা বলতে হবে, সেই গল্পে আর কেউ নয় শুধু তুমি আর আমি, শুনবে? হু শুনব, তবে বুঝতে পারছি না আজ তোমার কী এমন হল, এত সিরিয়াস হয়ে গেছ, কিছু কী ঘটেছে? নাহ, nothing serious, just my curiosity? আমি কি গল্পটা শুরু করব? Sure, please sir. ধর, তুমি আর আমি দূরে কোথাও বেড়াতে গেছি, আমরা উঠেছি একটা পাহাড়ি বাংলোয়, তখন শীতকাল, পাহাড়ে খুব শীত পড়েছে, রাত নিঝুম, আমরা শুয়ে আছি একটা বিছানায়, বাইরে তীব্র শৈত্য প্রবাহ, ঘরের চালা আর বেড়ার ফাঁক দিয়ে হু হু করে ঢুকছে হিমশীতিল হাওয়া, তোমার গায়ে একটা ব্লাংকেট আছে আর আমি পাতলা একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছি, শীতে কাঁপছি, বুঝে গেছি, আর বলতে হবে না, ফাজিল, মনে মনে এই ভেবেছ, এই তোমার গল্প, আমি শেষ করব এটা, দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা, এই বলে হাসানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল সাদিয়া, আরে ছাড়, এটা তো শুরু মাত্র, বাকিটুকু বলার পর তুমি উপসংহার বলবে, নাকি? হাসান আবার গল্প শুরু করে, তারপর,শোন তারপর, তুমি আমার দিকে তাকালে, আমি তোমার থেকে কিছুটা দূরে বিছানার প্রান্তে গুটিসুটি মেরে পড়ে আছি, gradually freezing. মনে অনুভব করলে আমাকে তোমার খুব কাছে টানার, ব্লাংকেটটার ভেতরে ঠাঁই দেবার, কিন্তু হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে তুমি দেখতে পেলে কী যেন আমার সাথে জড়িয়ে আছে, অনেকটা ভূতের মত- আবছায়া, তুমি ঘুমন্ত আমার দেহের কাছে আরেকটু এগিয়ে এলে, দেখলে, একটা অবয়ব, যা আমার অতীতকে প্রতিফলন করছে, তাতে একটা মুখ তোমারই মতন অন্য কোন নারীর, অন্যপাশে মুখ ফিরিয়ে আছে কিন্তু আমার সাথেই লেগে আছে, তুমি আনমনে বলে উঠলে, কে তুমি? আমি ওর জীবনে এসেছিলাম, আমিই প্রথম, হয়ত শেষও হতে পারতাম, কিন্তু তুমি এসে গেলে, আবছায়ার জবাব শুনতে পেল সাদিয়া, ‘আমি ওকে ছেড়ে চলে গেছি বেশ আগে, কিন্তু হাসান মনে করে কাউকে ভুলে থাকা সম্ভব কিন্তু, মন থেকে, স্মৃতি থেকে মুছে ফেলা অসম্ভব, আমি ওকে অনেক বড় আঘাত দিয়েছি কিন্তু, সে ওসব মনে রাখেনি, ক্ষমা করে নতুনভাবে সব শুরু করতে চেষ্টা করেছে, তবে আমাকে সে অস্বীকার করে না, কারণ,আমি মিথ্যে নই, কোন এক সময়ে আমরা তো ছিলাম একে অপরের, আজ আর সেই দিন নেই, তবে হাসান সব সময় সামনে এগিয়ে যাবার লোক, অতীত নিয়ে কচলানোর চেষ্টা সে করে না, তার কাছে বর্তমান আর ভবিষ্যৎ অতি গুরুত্বপূর্ণ, অতীতের যেসব স্মৃতি প্রেরণা দেয়, সাহস যোগায়, গর্বের অনুভূতি জাগায় সেসবেই তার আগ্রহ আছে, বাকি সব জঞ্জালের মত ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে আস্তাকুঁড়ে’।

একটানা বলে আবছায়া যেন অদৃশ্য হয়ে গেল, সাদিয়া হাসানের মুখের দিকে তাকাল, কী অদ্ভূত এক মায়া খেলা করছে তার মুখে, আবছা আলোয় কিছুটা ম্লান যেন, তবে আভাটুকুন হারিয়ে যায় নি, সাদিয়া বুঝে উঠতে পারে না, কী ঘটল, কেমন যেন উদ্ভ্রান্তের মত দেখায় তাকে। হাসান গল্প শেষ করে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, এবার বল, কেমন লাগল, আর শেষটা কেমন করতে চাও তুমি, ছেলেটা কী তোমার ব্লাংকেটের বাইরেই থাকবে, শীতে কষ্ট করবে, মরেও যেতে পারে, আবার তুমি তাকে পুরো ব্লাংকেটটা দিয়ে দিতে পার, ছেড়ে চলে আসতে পার, কিংবা সব জেনে তুমি আপন করে ধরে রাখতেও পার, যেমন তোমার ইচ্ছে, তবে ছেলেটাকে বুঝতে হবে ভালো করে, হুট করে ডিসিশন নেবার দরকার নেই, ছেলেটা যাই হোক না কেন মেনে নেবে, প্রতিবাদ, অভিযোগ করবে না, সেটা হয়ত গল্প থেকেই কিছুটা বুঝে গেছ, এবার বল তবে কী তোমার আর্জি। সাদিয়া জিজ্ঞেস করে ছেলেটা কে? তুমি? হাসান বলল, ছেলেটা কে সেটা কোনও বিষয় নয়, তোমার মত কী সেটাই important, আর গল্পটা খুব সিরিয়াস কিছু নয়, জানতে ইচ্ছে করছিল, তাই। আমি শেষটা পরে আরেকদিন বলি। No problem, Madam, আপনার যেমন ইচ্ছে।

হাসান দেখল, সূর্য ডুবে গিয়ে নীল আকাশের পশ্চিম্ভাগ বেশ লাল হয়ে উঠছে, সাদিয়ার মুখ অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা ভার, ভ্রু ঈষৎ কুঞ্চিত, কপালে ভাঁজ অস্পষ্ট, হাসানের মনে কিছুটা তৃপ্তিবোধ হচ্ছে, ভাবটা সযতনে লুকিয়ে রেখেছে, বুঝতে চাইছে সাদিয়ার মনোজগতে গল্পটা কতখানি তোলপাড় তুলেছে, ‘ তো যাওয়া যাক এবার, কী বল’, ‘উ, হু চল, উঠি’, দু’জন উঠে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে পা বাড়াল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।