আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধুত্বের গল্পটা

হারব বলে আসিনি,কাঁদব বলে হাসিনি

মুখের সামনে একের পর একের ধোয়ার কুন্ডলী ছেড়েই যাচ্ছে নীল । কেমন জানি ড্যাম কেয়ার একটা ভাব । তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আসিফ । নীল হচ্ছে আসিফের বেস্ট ফ্রেন্ড । বেস্টেস্ট ফ্রেন্ড ।

মাঝে মাঝে ওর মুখেও ধোয়ার কুন্ডলী ছেড়ে দিচ্ছে নীল। এভাবে নিজের মুখের উপর আরেকজনের ধোয়া ছাড়ার ব্যাপারটা তাকে প্রচন্ড বিরক্ত করছে। সিগারেট যে আসিফ খায় না তা না। তবে ওর একটা লিমিট আছে, দিনে একটার বেশি খায় না । এর জন্য দায়ী অবশ্য নীলা,নীলের মোটামুটি পিঠাপিঠি বোন ।

(বয়সের পার্থক্য ঠিক দুই বছর চার মাসের । ) ওর কঠোর নিষেধ, ‘একের অধিক সিগারেট নয়, না খেলেই ভাল হয় । ’ নীলা এমন একটা মেয়ে যে ওর কোন কথাতেই আসিফ না করতে পারে না । দেখতে অপ্সরীর মত সুন্দর । আর গলার স্বরও অনেক বেশিই মিস্টি ।

নীল ও কি কম সুন্দর নাকি? রাজপুত্রের মতই তো লাগে । ছাত্র হিসেবেও সে অসাধারণ । অথচ শালা এখনো একটা প্রেমও করল না । বলে মেয়ে টেয়ে আমার ভাল্লাগে না । মেয়েরা তো ওর সাথে সম্পর্ক করতে মুখিয়েই ছিল ।

মেয়েরা ওর কাছে পড়া বুঝার নাম করে আসত । বুঝেও কখনো কখনো না বুঝার ভান করে আরো কিছু সময় বসে থাকত। কিসের কী?শালা কোন পাত্তাই দিত না ওদের । আসিফের কি জেলাস লাগত না? লাগত তো ঠিকই । কিন্তু ওর জন্য তো ওইসব মেয়েদের চাইতে একশো গুণ সুন্দর আর ভাল মেয়ে অপেক্ষা করছে,এসব ভেবেই সে জেলাসি টাকে দূরেই রাখত।

ওরা দুইজন যেভাবে ছোট বেলা থেকেই একসাথে ছিল, এমন বোধ হয় আর কোন বন্ধু থাকে নাই । হাই স্কুলের দশ বছর একসাথে । তারপর কলেজ আলাদা হয়ে গেল । তাতে কি?দুই বছরই তো । তারপর তো ওরা বুয়েটে একসাথেই পড়বে ।

এই ভেবে মনকে বুঝ দিয়েছিল ওরা । কিন্তু হল আর কই? আসিফ তো পারল না । চাচার একগাদা টাকা খরচ করিয়ে সে আহসান উল্লাহ তে ভর্তি হল। ওর চাচা ওকে খুব আদর করতেন। করতেন বলছি একারণে যে আসিফ ভর্তি হবার কয়েকদিন পর চাচা মারা গেলেন।

আসিফ আর তার অবিবাহিত চাচা একসাথেই থাকত। এজন্যেই হয়ত মায়া একটু বেশি । এত কিছুতেও কিন্তু আসিফ নীলের বন্ধুতে এতটুকু চিড় ধরে নি । বরং যতই দিন যাচ্ছিল ওদের সম্পর্ক ততই ভাল হচ্ছিল । আর অন্য একটা দিকেও ওদের সম্পর্কটা গড়াচ্ছিল।

সম্পর্কটা শালা দুলাভাইয়ের । নীল মাঝে মাঝেই বলত,সত্যি সত্যিই তো তোর শালা হয়ে গেলাম রে । আসিফ ওই সময় খুব লজ্জা পেত । কিন্তু ওর আর নীলার সম্পর্কে নীলের অবদান সবচাইতে বেশি । বাবা মাকে রাজি করিয়েছিল ও ।

তাও ইউনিভার্সিটির লাস্ট ইয়ারে এসে,যখন নীলা ঢাকা মেডিকেলের থার্ড ইয়ারে পড়ত । ব্যাপারটা খুব অদ্ভুত,সেদিনও নীল আর আসিফ মাঠের মাঝখানে বসে ছিল। হঠাৎ আসিফ নীলের হাত চেপে বলে -দোস্ত একটা কথা রাখবি? -নাহ -আরে শালা কথা তো শুন। -আচ্ছা আচ্ছা বল বল । -বলেই তো ফেলসি ।

-মানে? -আমি তোকে আমার শালা হিসেবে দেখতে চাই । -ফাইজলামি করস কেন?থাপ্রায় দাঁত ফালায় দিব । তুই তো নীলাকে ছোট বোনের মতই দেখস। -এতদিন দেখতাম , কারণ আমরা ছিলাম অপরিণত । রিলেশনে গেলে পাগলামি করে বসতাম ।

এখন মনে হচ্ছে একটু একটু পরিণত হয়েছি । -সত্যি কি তাই? -তোর কি মনে হয়? -আচ্ছা ঠিক আছে,আমি আমার ফ্যামিলিতে বলে তোকে প্রেম করার পারমিশন নিয়ে দিচ্ছি । -নীলার কি মত? -ও মনে হয় না অমত করবে। সারাক্ষণই তো আসিফ ভাইয়া আসিফ ভাইয়া করতে থাকে। ওইদিন আর ওই বিষয়ে কথা বলে নাই আর কেউই ।

তবে নীল মা বাবাকে সত্যিই কথাটা বলেছিল । নীলের বাবা মার ও আপত্তি করার কোন কারণ নাই । ওনারা ছোট বেলা থেকেই আসিফের প্রতি আলাদা টান অনুভব করেন । করবেন নাই বা কেন?স্কুল জীবনের সবসময়ের ফার্স্ট বয় ছাড়াও ও ছিল একটা আদর্শ ছেলে। নামাজী কালামীও।

ওর বাবা মা খুব ছোট বেলাতেই এক্সিডেন্টে মারা যান । তাই ওর প্রতি মায়া ওদের আরো বেড়ে যায় । নিজের ছেলেই তো ভাবতেন । ওনারা নীলার জন্য মনে মনে আসিফকেই ভেবে রেখেছিলেন । যে ছেলেটিকে তারা চিনেন জানেন অনেক ভালমত,তাকে বাদ দিয়ে অন্য একটা সম্পূর্ণ অপরিচিত ছেলের হাতে কিভাবে মেয়েকে তুলে দেন? যাই হোক ,সেই থেকে নীল আসিফের শালা হয়ে গেল ।

আর তিন মাস পর আসিফ নীলার বিয়ে । এমুহুর্তে ওরা শাহবাগের একটু সামনে,ওভারব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। না না,দুই জনেই তো খাচ্ছে না। শুধু নীল খাচ্ছে,আর আসিফ দেখছে । অনেকক্ষণ ধরেই ওরা খুব চুপচাপ ।

দুই জনেরই মন খুব খারাপ । কালকে নীল চলে যাবে,স্কলারশিপ পেয়েছে। আমেরিকা যাবার সুযোগটা তাই হাত ছাড়া করতে চায় নি ওর মা বাবা । পাঠিয়ে দিচ্ছেন ছেলেকে ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে। যদিও নীলের একদমই ইচ্ছা ছিল না।

তবু সে মা বাবার কথা শুনে । বেশ ভালো মতই শুনে। আর এর জন্যেই হয়ত ওর বাবা একবার ওর পকেটে সিগারেট দেখেও কিছুই বলেন নি । নীল ধোঁয়া ছেড়ে যাচ্ছে,আসিফ নির্লিপ্ত চোখে আকাশের দিকে তাকায়। মাথার উপর খোলা আকাশ ।

আকাশে চিল উড়ে যাচ্ছে,অনেক অনেক উপর দিয়ে। এই জায়গায় চিল আসবে কোত্থেকে! এই ভেবে সে আরেকটু ভালমত তাকায় । বুঝতে পারে সেটা চিল না । একটা কাক । একাকী,নিঃসঙ্গ।

নীল কি কয়েকদিন পর ওই কাক টার মতই একা হয়ে যাবে?বিদেশে গিয়ে নিশ্চয়ই ওর বন্ধু বান্ধব হবে । হতেই হবে। নাহলে একা একা ছেলেটা তো টিকতে পারবে না। নীলকে সে অনেকদিন ধরে চেনে । আর চেনে বলেই ভয়।

ছেলেটা ততটা মিশুক না । হঠাত তার ভাবনায় ছেদ পড়ে। -দোস চল একসাথে শেষ সিগারেটটা ধরাই। -শেষ সিগারেট মানে? আঁতকে উঠে আসিফ । -আর তো তোর বিয়ের আগে তোর সাথে দেখা হচ্ছে না।

-তুই সত্যি আসবি তো,তিন মাস পর? -একটু কষ্ট হবে। তবে আসবই আমি । একটু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বুঝি নীল । সেটাও দেখতে দেয় না আসিফকে । সিগারেট ধরায় একসাথে।

ধোয়ার মাঝেই যেন আসিফ দেখতে পায় ভবিষ্যত । আশানুরূপ কিছু না পেয়ে অজানা ভয়ের আশঙ্কায় সে কি শিউরে উঠল? নাকি তা চোখের ভুল? পরের দিনঃ নীল কে ফ্লাইটে তুলে দিয়ে আসিফ ওর বাসার দিকে যাচ্ছে। চাচার সেই বিশাল বাসায় । যেটায় এখন ও একাই থাকে । পুরো একা ।

মনটা বিষণ্ণ হয়ে উঠে । অনেক দূরের পথ । আসিফ যেতে পারবে তো? পরদিন খুব ভোরে ভোরে উঠে আসিফ। উঠেই পত্রিকার পাতায় খুঁজতে থাকে। কেন জানি অজানা আশঙ্কা থেকে ।

নীল রওনা দেবার দুই দিন আগে সে একটা স্বপ্ন দেখছিল। খুব খারাপ স্বপ্ন । ওইটা যদি সত্যি হয়ে যায়? নীলকে একবার বলেও ছিল সে কথা । হেসে উড়িয়ে দিয়েছিল সে । পত্রিকা খুব ভালমতই খুঁজতে থাকে সে ।

কোথাও কোন প্লেন ক্রাশের নিউজ এসেছে কিনা তা খুঁজতে থাকে। প্রথম থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত খুঁজে যায় সে । নাহ । কোথায় কিচ্ছু নেই । অজানা আশঙ্কা ভূল প্রমাণিত হওয়ায় স্বস্থির নিশ্বাস ফেলতে পারে সে ।

এবার ফোনের দিকে হাত বাড়ায় ,অনেকক্ষণ নীলার সাথে যোগাযোগ হয় নি । ওর ও তো একটু খোঁজ খবর নেয়া দরকার,নাকি?হাজার হোক,বউ বলে কথা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।