বাংলা আমার দেশ অনেকের মতে, ৪০ বছরের পুরনো রাজাকার শীর্ষক একটি বাসি বর্জদুষ্ট শব্দ আমাদের সমাজ এবং রাজনীতি থেকে এখন বিস্মৃত হওয়াই উচিত। ৪০ বছর আগে সুদূর পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে একটি অনিবার্য সংঘাতময় পরিবেশে, লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে, দেড় হাজার মাইল বিচ্ছিন্ন ভৌগোলিক অবস্থানে, (যা বাস্তবেই একটি পৃথক ভুখন্ড বা দেশ। ) পূর্বপাকিস্তান নামক ভূখন্ডটি বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়। এ ছিল পাকমিলিটারি জান্তার বোকামির দন্ড। না হয়, একে অবিচ্ছিন্ন রাখা, বা শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিচ্ছিন্নতা মেনে নেয়ার পথটি আরো সহজ ছিল।
সে, শান্তির পথ অনুসরণ না করায় জগতব্যাপী তারা শুধু কলঙ্কিতই হয়নি। এদেশে স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তাদের সমর্থক রাজাকার নামক একটি দলও সৃষ্টি করে গেছে। ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। এর স্বাধীনতার ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ বা দ্বিধা সংশয়ের অবকাশ ছিলনা। কিন্তু এ দেশের ভালে রয়ে গেল একটি স্থায়ী কলঙ্ক।
তা হচ্ছে সেই রাজাকার নামক দলটি।
আরবি ও ফার্সির শঙ্কর শব্দ রাজাকার (রেজাকার)। এর আরবি অংশ রেজার অর্থ সন্তুষ্টি বা আনুগত্য। ফার্সি কার অংশটির অর্থ ‘করে যে’। দুটি অংশে মিলে এর পরিপূর্ণ অর্থ আনুগত্য বা সন্তুষ্টি বিধান করে যে।
রাজাকার মূলত দালাল বা অনুগত বাহিনী। আলবদর, আলশামস বিভিন্ন নামে পাকবাহিনীর আনুগত্যে আরো অনেকেই ছিল। কিন্তু রাজাকার শব্দটির মত অন্য কোন শব্দের প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়নি। ‘রাজাকার’ পাকবাহিনীর আনুগত্যের প্রতীকী রূপ। শব্দটি বাংলাদেশ পন্থীদের চোখে প্রথম থেকেই বীভৎসতম ঘৃণার প্রতীক।
ক্রমান্বয়ে তা বুলি থেকে গালিতে পরিণত হয়েছে। এ দেশে একজন আরেকজনকে গালি দিতে গিয়েও ‘শালা রাজাকার’ বাক্যটি উচ্চারণ করে থাকে। উচ্চ নীচ নির্বিশেষে সমাজের সর্বক্ষেত্রে গালিটি প্রচলিত। বিগত ৪০ বছরের ব্যবধানেও সমাজ থেকে নেতিবাচক অর্থে হলেও রাজাকার শব্দের প্রভাব ম্লান হয়েছে, এমনতো মনে হয়না। শুধুমাত্র স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তির প্রচার মাহাত্ম্যই এজন্য দায়ী, এমন মনে করারও কোন কারণ নেই।
আরো বহুবিধ কারণে ‘রাজাকার’ সমাজের মর্মমূলে বিষ-বৃক্ষের মত জড়োমূলে বাসা বেঁধেছে। এর প্রভাব, সময়ের ভাটিস্রোতে একদিন এখান থেকে অপসৃত হবে না এর উল্টো প্রতিক্রিয়া সমাজের মর্মমূলে আরো গভীরভাবে প্রোথিত হবে, এ মুহূর্তে তা ও কারো পক্ষে বলা মুশকিল। আমার বক্তব্যে কেউ যদি দূরাগত বিপরীত বাঁশীর সুর শুনে থাকেন তা যত অপ্রিয়ই হোক তাই যদি একদিন সত্য হয়ে যায়, তা হলেও কিছুই করার নেই। শুধু কবিগুরুর অমর অমৃত বাণীর কোলে শিশুসুলভ আশ্রয়ের সান্তনা লাভ করা যায় সত্য যে কঠিন কঠিনেরে ভালবাসিলাম। হ্যাঁ কঠিনেরে ভালবাসাই ভাল।
না বেসে যে উপায় নেই।
হ্যাঁ, স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরও এদেশে রাজাকার শক্তির উপস্থিতি টের পেতে কষ্ট হয় না। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের একেবারে অজ্ঞ, অশিক্ষিত লোকটিও তা টের পায়। এ টের পাওয়ার ইতিবাচক দিকটা হলো যে, সাবধান তোমরা কি করছ, তা কিন্তু আমাদের অজ্ঞাত নয়। যা করার সীমিত অধিকারের মধ্যে থেকে করবে।
আর নেতিবাচক দিকটা হল তাদের কর্মকা-কে সক্রিয় সমর্থন দান করে শুধু? দৈহিকভাবে নয়, আদর্শিকভাবেও তাদের পাতাল থেকে আকাশ মার্গে উঠিয়ে দিচ্ছি। তাই বিগত ১২/১৪ বছর আগে থেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যারা তাদের পক্ষে এ গীত গাইছেন এবং এর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকেও যোগ করছেন যে তিনি স্বাধীনতা বিরোধীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু কথাটা বেমালুম চেপে যান যে, শেখ মুজিব শুধু চুনু পুটিদের ক্ষমা করেছিলেন, রাঘব বোয়ালদের বেলায় তা প্রযোজ্য নয়। অথচ এখন তাদেরই প্ররোচনায় এবং নেতৃত্বে দেশের শান্তিস্থিতি হুমকির সম্মুখীন।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির দাবিদার এখন অনেকেই।
তবে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে বিশ্বব্যাপী একটি দল এবং এর দলনেতার স্বীকৃতি। এ ব্যাপারে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিবৃতিটি প্রনিধানযোগ্য। তার মতে এখন আমরা যে যাকে যেখানেই ওঠাই বা নামাই না কেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ই বিশ্বসংস্থাগুলোতে এর নির্ঘন্ট?তৈরি হয়ে গেছে। দল হিসেবে এর সর্বোচ্চ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফ্ফর) এবং চাকরিজীবী, আমলা, আর্মি, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবী ও কৃষক জনতা বাঙালী জাতীয়তাবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ বা সক্রিয় সমর্থন দান করে।
তবে তাদের সবাই পরে আওয়ামী লীগ বা তার নেতা শেখ মুজিবের আনুগত্যে বহাল থাকেননি। এমনকি বঙ্গবন্ধুর একান্ত দক্ষিণ হস্তরূপে পরিচিত দু’চারজনও তার প্রকাশ্য বা গোপন, অন্তর্ঘাতক শত্রুর সঙ্গে হাত মিলায়। এরাই প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া রাজাকার শক্তিকে রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করে। এরাই ঘরের শত্রু বিভীষণ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।