ফেইসবুক, পত্রিকা সব জায়গাতেই এখন রাজাকারদের ফাসির দাবিতে উত্তেজনা চলছে। আমি আর বাকি সবার মত রাজাকারদের ফাসি নিয়ে উদ্বিগ্ন্ নই। যারা পড়ছেন তারা আমাকে জামায়াতি বলার আগে বলে নিচ্ছি যে আমি ও তাদের বিচার চাই। ৪২ বছর হয়ে গেছে, এখন তারা সবাই বয়স্ক। আজকে ফাসি না দিলেও কালকে এইগুলা এমনিতেও মরবে।
এইগুলা মরলেও দেশের কোনো কিছু হবে না। কারণ এইগুলা ছাড়াও অনেক রাজাকার আমাদের আছে।
আমরা বাংলাদেশীরা পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তম জাতি আবার এই আমরাই পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতি। ৫২ বা ৭১ এ যেসব বাংলাদেশী ছিল তারা প্রথম ক্যাটাগরিতে পরে আর ৭১ এর পরে যা আছি আমরা তা নিকৃষ্ট ক্যাটাগরির। প্রিয় পাঠক, মাথা গরম করবেন না।
আমি এখনো শেষ করি নি। নিকৃষ্ট কেন বলব না? আমরা ৭১ এর এই রাজাকারদের ফাসির জন্য যেভাবে এক হয়েছি তা দেখলেই বোঝা যায় আমরা মুক্তিযোদ্ধ্যাদের প্রতি কতটা কৃতজ্ঞ। আসলেই কি তাই? ৫২'র ভাষা শহীদদের প্রতি ও অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ। এর জন্যই তো তাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভাষায় আমরা এখন কথা বলি না, গান শুনি না, নাটক দেখি না। তাই না? আর মুক্তিযোদ্ধ্যাদের রক্তের বিনিময়ের যে দেশ সেটাকে সরকার নামক হায়েনার হাতে ছেড়ে দিয়ে নিজেরা নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদ গড়তে ব্যস্ত।
সেটা ঘুষ হোক, চোরাচালানি হোক বা পরের জিনিস মেরে খাওয়াই হোক বা যাই হোক তা দিয়ে কোনো কিছু যায় আসে না। আসে। যায় আসে।
পাকিস্তানিরা যদি আমাদের শাসক হত তাহলে দেশটা যেমন চলত তার চেয়েও মনে হয় খারপ চলছে এই দেশটা এখন। পাঠক আবারও অসন্তোষ প্রকাশ করবেন এখন আমি পাকিস্তান এর দালাল বলে।
আমাদের অনেক পাকিস্তানি এবং ভারতীয় দালাল আছে। আমি তাদের ও রাজাকার বলছি। আমাদের যানজট সমস্যা, নিরাপত্তার অভাব, ধর্ষণ এসব নিয়ে সরকার কি করেছে? পাকিস্তানিরা থাকলেও তো আমাদের এসব ভয় ই থাকত তাই না? তো আমাদের নিজেদের সরকার দিয়ে কি ঘোড়়ার ডিমটা হলো? ক্রিকেটে পাকিস্তান কে সমর্থন দেয়া, ভারত কে সমর্থন দেয়া এগুলা কি রাজাকার এর কাজ নাকি বাংলাদেশীর? পাকিস্তানি দেখলে তাদের সাথে তাদের ভাষায় কথা বললে কি রাজাকার হয় না? যেই ভাষায় কথা বলার জন্য জীবন দিলাম, যারা আমাদের জীবন নিল। তাদের সাথে আমরা তাদের ভাষায় কথা বলছি। এটা কি রাজাকারী নয়?
আমাদের দেশের পণ্য বাদ দিয়ে আমরা ভারতীর পণ্যের জন্য মুখিয়ে থাকি।
ঈদ এ তাদের ডিজাইেনের জামা কিনি। ভারতের থেকে কত কোটি টাকার দ্রব্য আমদানি হচ্ছে। ভারতের ব্যবসা উন্নত হচ্ছে আমরা যা মরা তাই রয়ে যাচ্ছি। আর আমাদের যেসব ব্যবসায়ী আছে তারা নামমাত্র কোয়ালিটি'র জিনিস তৈরী করছেন। বেশি লাভের আশায়।
ফরমালিন দিচ্ছে খাবারে। এইসব কি রাজাকারী না? রাজাকার রা তো পাকিস্তানি দের সাথে হাত মিলিয়েছিল কিন্তু এদের তো কারো সাথে হাত মিলানোর দরকার পরে নি। তারা স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষকে এমনিতেই মারছে। মানুষ কাজের জন্য বের হচ্ছে ঘর থেকে বাসায় আসছে লাশ হয়ে হয়ত ছিনতাইকারীর হাতে খুন হয়ে নয়তো গাড়ি চাপা পড়ে। আসলেই কি মানুষের জীবন এত নগন্য? আমাদের বাংলাদেশী সরকার কি করে? শাহবাগে এমন অনেক ক্যাটাগরির রাজাকার আবার ওই রাজাকারদের ফাসি চাচ্ছে।
কেউ কি কখনো এইসব নিয়ে চিন্তা করেছে? যে দেশে কিভাবে উত্পাদন বাড়ানো যায়? দেশের টাকা দেশের থাকুক। না। কেউ ভাবলেও হয়ত আর ভাবতে পারেনি বা ভাবার বাস্তবায়ন হয়নি।
আমরা এখন সবাই এক হয়েছি রাজাকারদের ফাসির দাবিতে। তারেক মাসুদ যখন মারা গেল তখন আমাদের এরকম ঝলসে ওঠার দরকার ছিল।
সরকার পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হত। আমাদের মৌলিক চাহিদা খাদ্য, বাসস্থান, চিকিত্সা, শিক্ষা, নিরাপত্তা এগুলা এতগুলা সরকার যখন ৪২ বছরে নিশ্চিত করতে পারে নাই তাহলে এই ফাসি তো আরো ৫০ বছর লাগবে। আমাদের মৌলিক চাহিদার জন্যে আমাদের এভাবে গর্জে ওঠা দরকার। কিন্তু আমরা যারা ইন্টারনেট এ সামু তে লেখালেখি করি তাদের মৌলিক জিনিসগুলো আছে আর যাদের নাই তাদের ঐগুলা নিশ্চিত করার জন্যে হয়ত খাটতে হচ্ছে বা চুরি, ছিনতাই করতে হচ্ছে। যদি জাগতেই হয় তবে যথাযথ কারণে জাগুন।
এখনকার এই সময়কে ৭১ এর সাথে তুলনা যখন করছেন তখন আসলেই একটা বাংলাদেশ গড়ে তুলুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।