বাংলা আমার দেশ মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা নতুন শক্তি ও ভয়ঙ্কর কদর্য রূপ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির। মানবতা, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা আজ বিপন্ন-লাঞ্ছিত। তাই নতুন লড়াইয়ের ডাক এসেছে। এই অপশক্তির পরাভব ও উৎখাত সম্ভব শুভবুদ্ধির মানুষের ঐক্যবদ্ধ স্থির লক্ষ্যমুখী লড়াইয়ে। ”
এমন প্রত্যয়ই ব্যক্ত হলো সুফিয়া কামালের ১০২তম জন্মবার্ষিকীতে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত ‘মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী আন্দোলন এবং সুফিয়া কামাল’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতায় এ বিষয়গুলো উঠে আসে।
স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে নারীমুক্তির প্রধান অন্তরায় সকল প্রকার মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে নারী সমাজকে জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হয়। সুফিয়া কামাল যেমনভাবে সকল অবরোধ ছিন্ন করে বাঙালীর বিশেষ করে নারীদের সকল সমস্যায় এগিয়ে এসেছেন তেমনি সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় স্মারক বক্তৃতা উপস্থাপন করেন লালন গবেষক অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে সুফিয়া কামাল সম্মাননা জানানো হয়।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি আয়শা খানমের সভাপতিত্বে সংগঠনের অন্য নেত্রীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কবি সুফিয়া কামালের কথা আর কাজই হবে শত্রুবধের প্রধানতম অস্ত্র - এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর স্বাধীন স্বদেশেও সক্রিয় সাহসী ভূমিকা পালন করেন তিনি। তাঁর কাজের ব্যাপ্তি সম্পর্কে বক্তারা বলেন, ভাষা সংগ্রামে ঢাকায় মহিলাদের সংগঠিত করা, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তোলা, রবীন্দ্রবর্জনের সরকারী উদ্যোগের বিরোধিতা, ঊনসত্তরের গণআন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সরকারী খেতাব বর্জন, সত্তরের প্রলয়ঙ্করী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে অসহযোগ আন্দোলনসহ নানা কর্মসূচীতে নেতৃত্বদান তাঁর সমাজ ও স্বদেশমনস্কতা ও সংগ্রামী চেতনার স্মারক।
স্বাধীন বাংলাদেশে সুফিয়া কামালের কাজের পরিধি বর্ণনায় বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর তাঁর কর্মকান্ড ভিন্ন আঙ্গিকে নতুন মাত্রা প্রকাশ পায়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি ৭৫ থেকে ৯০ পর্যন্ত স্বৈরসামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম-প্রতিবাদ কখনও থেমে থাকেনি।
লড়াই করেছেন ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু হয়েছিল দেশভাগের আগে থেকেই।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক আবুল আহসান বলেন, সুফিয়া কামাল কখনও সম্মোহিত মুসলমান হতে চাননি, বিভ্রান্ত হননি। ধর্মকে রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক স্বার্থ হাসিলের উপায় বলে স্বীকার করেননি। নারীমুক্তি হলেই মানবমুক্তি হবে- এমনটাই ছিল সুফিয়া কামালের জীবনের বীজমন্ত্র। নারীমুক্তি বিকাশে সবচেয়ে বড় বাধা ধর্মীয় মৌলবাদ এবং অন্যদিকে মানবমুক্তি ও মিলনের পথ রোধ করে আছে সাম্প্রদায়িকতা।
তাই তিনি এই দুই ব্যাধির নিরাময় চেয়েছিলেন। এর আগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের প্রবেশমুখে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মহিলা পরিষদের নেত্রীবৃন্দ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।