আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মৌলবাদ @ আইইউটি (IUT)

মেন্টাল উন্ডস নট হিলিং লাইফ'স আ বিটার শেইম আই এম গোইং অফ দ্যা রেইলস অন আ ক্রেজি ট্রেইন !! ক. বিল মার তাঁর সাড়া জাগানো মকুমেন্টারি "রেলিজুলাস" এ দারুণ একটা উদাহরণ দেখিয়েছিলেন। বাইবেল একটা গ্রন্থ। গ্রন্থটিকে পেছন ফেলে সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিছু মানুষ। এদের মধ্যে একদল ভালো, একদল খারাপ। ভালো মানুষরা যখন ভালো কাজ করে, তখন সে উৎসাহ পায় বাইবেলের ভালো কিছু বাক্য দ্বারা।

অপরদিকে খারাপ মানুষেরাও খারাপ কাজটি করার আগে বাইবেলের সাথে পরামর্শ করে নেয়। খারাপ মানুষদের জন্যও সেখানে কিছু বাক্য রাখা আছে। বাইবেল বলুন আর কুরআন বলুন, সব গ্রন্থের জন্যই এই কথা সত্য। আজকে কুরআন পড়ে অনেকেই চমৎকার সুন্দর একটা জীবন কাটাচ্ছেন। আবার অনেকেই কুরাআনের আয়াতে মোটিভেটেড হয়ে আত্মঘাতি বোমা হামলায় লিপ্ত হচ্ছেন।

যেহেতু লেখাটা আইইউটি কেন্দ্রিক, তাই প্রাসংগিক একটা উদাহরণ দেই। একবার এক রুমে বাকবিতন্ডা হচ্ছে। তাবলীগ ভার্সেস শিবির। শিবিরের দুইজন তাবলীগের ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, আরে তোদের তো কিছু হয়না। খালি নামাজ পড়লেই হবে? তুই দেখস না আজকে বাংলাদেশের মেয়েরা কীভাবে ওড়না উঁচায়ে হাঁটে।

আমাদের উচিত এদের জোর করে বোরখা পড়ায় দেওয়া। বাংলাদেশে এইজন্যই ইসলামী শাসন কায়েম করা দরকার। তাবলীগী স্টাইলের ভালো কথায় কাজ হবেনা আর, আইন করে সবাইকে ধর্ম মানাতে বাধ্য করতে হবে। কুরআন থেকে ধারণা নিয়ে একদিকে তাবলীগের ছেলেটা নিজেকেই শুধরাচ্ছে শুধু। অপরদিকে শিবিরের মতাবলম্বীরা নিজের পাশাপাশি অন্যকে দিয়েও একই কাজটা করাতে চাচ্ছে।

আর এই চাওয়া থেকেই জন্ম নিচ্ছে ধর্মীয় মৌলবাদ বা জঙ্গীবাদের। খ. স্বাধীনতার ৩৮ বছর পর কালও যদি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয় (!!) তাতে লাভের লাভ কী হবে? অপরাধী নিজামী, গোলাম আজমকে আমরা ফাঁসিতে ঝুলাবো। কিন্তু এই ৩৮ বছরে উনারা যে কয়েক হাজার নিজামী, আজম বানিয়ে দিয়ে গেলেন সেই ক্ষতি পোষাতে পারবো আমরা? বছরখানেক আগে আমি যখন আইইউটিতে ঢুকি তখন নিয়ম ছিল ভার্সিটিতে সকল ধরণের সংগঠন নিষিদ্ধ। একগুচ্ছ পোলাপান বিতর্ক করতো, তারা নিজেরা নিজেদের পরিচয় দিতো IUTDS (ডিবেটিং সোসাইটি) এর সদস্য হিসেবে। তারপর সময়ের পরিক্রমায় অথোরিটির অনুমোদন পেলো ডিবেটিং সোসাইটি।

শুরু হলো আইইউটির নতুন কাল, এখানেও ক্লাব সোসাইটি করা যাবে। কয়েকদিন পরেই জন্ম নিলো কম্পিউটার সোসাইটি এবং ইসলামী স্ট্যাডিজ সোসাইটি (IUTISS)। সবার উদ্দেশ্যই মহৎ। ডিবেটিং সোসাইটি ডিবেটে ফাটায়ে দিয়ে আইইউটির নাম করতে থাকলো, কম্পিউটার সোসাইটি ICT ফেস্ট নামক অতি দারুন একটা অনুষ্ঠান করতে থাকলো প্রতি বছর। আর ইসলামী স্ট্যাডিজ সোসাইটি ছেলে পেলেদের সঠিক ইসলাম ধর্ম শিক্ষা দিতে লাগলো।

ঝামেলাটা বাঁধলো আইইএসএস নিয়ে। কিন্তু কেন? গ. সবসময়ের জন্যই আইইউটিতে রাজনীতি নিষিদ্ধ। তারপরও অনেক ছেলে পেলে এখানে ঢুকে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ধর্মীয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল আগে থেকেই। অন্যান্য ব্যাচগুলোয় এই ছেলেপেলেগুলো কী করতো আমি জানিনা তবে ০৫ ব্যাচের খবর জানি। এই ব্যাচের একজন প্রথমবারের মতো শিবির মতালম্বী সবাইকে একত্রিত করলো।

শুরু হলো আইইউটিতে শিবিরের যাত্রা। প্রতিষ্ঠাতা ০৫ ব্যাচ। প্রতিষ্ঠাতার সাথে বুয়েটের শিবিরের এক ভাইয়ার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল, উনি এখন ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়ায়। বুয়েটের জনের সাথে ওনারা প্রায় প্রতি সপ্তাহান্তে মিটিং করতো। কীভাবে আইইউটিতে শিবিরের কর্মপরিধি বিস্তৃত করা যায়।

প্রতিষ্ঠাতা ছেলেটার সহযোগী ছিল বেশ কয়েকজন। এর মধ্যে প্রত্যেকেই শিবিরের বিভিন্ন পোস্ট পাওয়া (আপনি হয়তো জেনে থাকবেন শিবিরের বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। সিলেবাস আছে, বই পড়ে পড়ে বিভিন্ন ধাপ পেরুতে হয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার মাধ্যমে)। এরা সবাই বেশ উচ্চ পদস্থ শিবির। এখন ওদের কাজ কি? কাজ অবশ্যই তারা যেটা বিশ্বাস করে সেটা মানুষের মধ্যে ছড়ানো।

আরও মানুষকে দলে টেনে দল ভারী করা। শিবির ছাড়াও তখন আরও এক সংগঠনের মানুষ আইইউটিতে আছে। সেটা হলো হিজবুত তাহরির। শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা ছেলেটির সাথে হিজবুত তাহরিরের মতাদর্শী ছেলেটার পরিচয় হলো। সে হিজবুত তাহরিরের জিহাদ, ইসলামিক ডেমোক্রেসি সংক্রান্ত বেশ কিছু বই ধরিয়ে দিলো।

এই বিশাল ইতিহাস এখানে বলার উদ্দেশ্য হলো, পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠাতা ছেলেটা নিজের ভুল বুঝতে পেরে সব ছেড়ে চলে আসে। কিন্তু ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে। ধর্ম ভিত্তিক আদর্শে অনুপ্রানিত সবাই এক হয়ে গেছে। এই হিজবুত তাহরিরের ছেলেটাই পরবর্তীতে আইইউটি ইসলামী স্ট্যাডিজ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা, ওর পেছনে আছে সেই শিবির পার্টি। এখন আপনি বলতে পারেন, তাতে কী! ওরা বাইরে যা ইচ্ছা তাই করুক, আইইউটির ভেতরে ও নিশ্চয়ই শুধু নামাজ পড়ার কথাই বলে।

হতে পারে। তবে নাও হতে পারে। একটা প্রমান দেখাই তাহলে। ঘ. গত রমজানে আইইউটিতে ইফতার পার্টি আয়োজন করলো ইসলামিক স্ট্যাডিজ সোসাইটি। ইফতারের আগের দিন দুপুরে জানা গেলো এই অনুষ্ঠানের স্পন্সর মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক একটি জঙ্গিগ্রুপের মদদ/ অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান WAMY (ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অফ মুসলিম ইয়ুথ)।

বিশ্বব্যাপি ওয়ামির কু-কীর্তি নিয়ে গুগল করলেই অনেক খবর পাওয়া যাবে সেটুকু কষ্ট আপনি করে নিন। তবে গুগল ঘাটলেও যেটা জানা যাবেনা, সেটা হলো বাংলাদেশে ওয়ামি মানে শিবির। বিভিন্ন জায়গায় শিবির নিজ ব্যানারে ঢুকতে পারেনা, সেখানে তারা ব্যবহার করে ওয়ামির ব্যানার। উত্তরায় ওয়ামির অফিস আছে, সেখানে নিয়মিত শিবিরের মিটিং হয়। শিবিরের দলত্যাগী একজনের সূত্রমতে, বাংলাদেশে এখন ওয়ামির উচ্চপর্যায়ের সবাই এককালের জামাত নেতা।

এখন এইরকম একটা প্রতিষ্ঠান যখন স্পন্সর এবং যারা স্পন্সর পেলো তারা সবাই চিন্থিত শিবির, তখন ইসলামী স্ট্যাডিজ সোসাইটিকে শিবির/ হিজবুত তাহরিরের মগজ ধোলাই কারখানা বললে সেটা কী খুব ভুল হয়ে যাবে? প্রতিবাদ করা হয়েছিল ০৫ ব্যাচ ও ০৬ ব্যাচের পক্ষ থেকে। পরবর্তীতে আইএসএস এর সিনিয়র ও জুনিয়র সবাই মিলে এদের শায়েস্তা করে। ০৫ ব্যাচের একজন ওয়ামির মতো একটি মহতপ্রাণ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কেন ইহুদি নাসারাদের সাইটের রেফারেন্স বিশ্বাস করে পোস্টারিং করা হয়েছে এই অপরাধে তার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলে। ঙ. আইইউটি যদি কখনও ধ্বংস হয় তাহলে সেইটাই মূল দায় থাকবে ০৫ ব্যাচের। আজকে ০৫ ব্যাচের ইলেক্ট্রিক্যালে যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন তারা সবাই শিবির বা শিবির মনষ্ক!!! অথচ ঢুকার সময় এই নিয়োগ পাবে এমন চারজনের একজন ছিল শিবির।

তিনি কী করলেন, ধীরে ধীরে ভালো ছাত্রদের মাথায় চেপে বসলেন। বিএনপি আওয়ামীলীগের মতো ওনারা আজকে একটা কাজ করে কালকেই সেটার প্রতিদান চাননা, সুতরাং খুব সময় নিয়ে এই ভালো ছাত্রদের মগজ ধোলাই প্রক্রিয়া চালাতে থাকলো ঐ একজন। বের হয়ে যাবার সময় দেখা গেলো উনি সফল। এখন ওরা আরও সময় নিয়ে আরও ভালোভাবে অনেকের মাথায় জেঁকে বসতে পারবে। অলরেডি প্রতিব্যাচের অনেক ভালো ভালো ছাত্রই তাদের দলে।

কিন্তু সমস্যাটা কোথায়। টিচার হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া ছেলেরা কি জঙ্গি? তত্ত্বীয়ভাবে, অবশ্যই না। তবে ওরা সবাই ইসলামী রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ওরা শুধু নিজেরা ধর্ম পালন করে খুশি না, ওরা সবাইকে দিয়ে সেইটা করাতে চায়। আচ্ছা এই দেশে কী অন্য কোন ধর্মের মানুষ নেই।

চিন্তা করে দেখুন তো আপনি খ্রিস্টান সংখ্যাধিক্যের এক দেশে মুসলমান হিসেবে আছেন। এখন সেই দেশকে যদি খ্রিস্টান রাস্ট্র হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় তখন আপনার কেমন লাগবে। আপনার বোনের যদি বোরখা পরার ইচ্ছা না থাকে, কিন্তু কেউ যদি তাকে জোর করে বোরখা পরিয়ে দেয় তখনই বা আপনার কেমন লাগবে? আর আগেই বলেছি এভাবেই চরম পন্থা/ জঙ্গীবাদের জন্ম হয়। চ. আইইউটির পাকিস্তানী এক ছেলে (সুফিয়ান) ধরা পড়েছে জঙ্গী সন্দেহে। ফেসবুকে এই খবর শেয়ার করলো কয়েকজন।

হঠাৎ দেখি এক্স আইইউটিয়ান অনেকের মধ্যে ত্রাহি ত্রাহি রব। ওই তোরা চুপ কর, রেপুটেশন শেষ করে দিচ্ছিস তো! এই জিনিস কী ফেসবুকে আলোচনা করার জিনিস? হাবিজাবি, হাবিজাবি। গ্রুপে মেইল আসলো, যতক্ষণ পর্যন্ত না গ্রেফতার হওয়া ছাত্র সুফিয়ানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হচ্ছেনা ততক্ষণ পর্যন্ত ও ইনোসেন্ট। এটা ক্যামন কথা। উত্তরা থেকে ধরা পড়া এক জঙ্গীর আইইউটিতে নিয়মিত যাওয়া আসা ছিল, গ্রেফতারের আগের রাতে সুফিয়ানের মোবাইলে সেই ছেলের পঁচিশটা কল।

ডিবি পুলিশের কাছে এতো কলের কারণের কী এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেনাই সুফিয়ান। সুতরাং সুফিয়ানকে কীভাবে ইনোসেন্ট বলা যায়? বলা যায়, আইইউটির রেপুটেশনের স্বার্থে। "এইভাবে আমরাই যদি ভেতরের খবর বাইরে ফাঁস করে দেই, তাহলে ক্যামনে হবে। ইউএসএ , কানাডার ভিসাই তো পাবো না শেষে!" আমাদের এই যে বাইরে খবর প্রকাশের অনীহা এটা শিবির পন্থিদের জন্য বিরাট প্লাস পয়েন্ট। ছ. সচলে ঘুরাঘুরি করে বুঝতে পাই, এখনে অনেক আইইউটির বড় ভাইরা আছেন।

তাদের কাছে একটা অনুরোধ। আইইউটি শিবির/ হিজবুত তাহরিরের ঘাঁটি হবার আগে কিছু একটা করুন। আমি জানি আপনারা সবাই ব্যস্ত, হয়তো নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়েই ব্যস্ত, হয়তো পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত। এইসব ভাবার টাইম নেই, তাও বলি কিছু একটা করুন। কারণ আপনার এই "কিছু না করা" বা অলসতার সুযোগ নিয়ে কিন্তু একদল কিন্তু কাজ করে যাচ্ছে।

কথায় আছেনা, ...the only thing necessary for the triumph of evil is for good men to do nothing ... আইইউটির শর্টটাইম রেপুটেশন নিয়ে ব্যস্ত না থেকে আমরা দেশটার কথাও ভাবি। শিবিরের আস্তানা হবার হাত থেকে আইইউটিকে বাঁচাই দেশের স্বার্থেই। তথ্যসূত্রঃ এটাকে মিথ্যা প্রপাগান্ডা হিসেবে অনেকেই চালানোর চেষ্টা করবেন, তথ্যসূত্রের অভাবে। দুঃখজনক ব্যাপার হলো আমার কাছে ভিজিবল কিছুই নেই। শিবিরপন্থিদের ঢাকায় এবং আইইউটির ভেতরে মিটিং এর ছবি নেই, কোন গোপন অডিও ক্লিপও নেই।

তবে এখন যদি আইইউটির ভেতরে আপনারা সবাই থাকতেন, তাহলে বলতে পারতাম এই রূমের এই বিছানাটা উলটিয়ে দেখুন- শিবিরের লিফলেট পাবেন, এই লকারটি খুলে দেখুন, হিজবুত তাহরিরের বই পাবেন। সেটা তো সম্ভব নয়। আমি দুঃখিত। - কাক বালক (ইমেইলঃ kak.balokএটgmail.com) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।