Set sail, ye hearts~ into the sea of hope.. স্কুলে পড়ার সময় একটা ব্যাপার খেয়াল করতাম যে, আমাদের সাথেই কিছু ছেলে পড়ছে, যারা একটু যেন অন্যরকম , আমাদের থেকে একটু আলাদা। আমরা যেমন স্কুলে সবার সাথে কথাবার্তা বলতাম, অথবা খেলাধুলা করতাম, ওরা সেরকম কিছু করতো না। কিছু জিজ্ঞেস করলে ঠিকভাবে উত্তর দিতে পারতো না, আমাদের সাথে খেলাধুলা তো করতো-ই না, আবার স্যাররা তাদের পড়া ধরলে সেটাও তারা পারতো না। স্যাররা ওদের কখনো কোনও শাস্তি দিতেন না। কেন জানি মনে হতো ওরা কয়জন আসলে এখনো ছোট বাচ্চা, প্রকৃতির খেয়ালে হঠাৎ করে বড় হয়ে গেছে, আর সেকারণে সমবয়সীদের সাথে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছে না।
পরীক্ষাতে সবসময় ওরা টেনেটুনে পাস করতো, স্যাররা ওদের রেজাল্ট বলার সময় মুচকি মুচকি হাসতেন। আর মাঝে মাঝেই এমন হতো যে, বছরের শুরুতে নতুন ক্লাশে গিয়ে বন্ধুদের কাছে শুনেছি, অমুক এবার ফাইনাল পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি, এরপর থেকে তাকে আর দেখা যেতো না, ধীরে ধীরে সে আমাদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যেতো।
পরে যখন একটু বড় হয়েছি তখন বুঝেছি ওরা আসলে মানসিক প্রতিবন্ধী। আমাদের মতোই মানুষ, হাত পা চোখ কান সব আছে, কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেভাবে আমাদের শরীর আর মনে পরিবর্তন আসে, শরীরের তুলনায় ওদের মস্তিষ্কের বিকাশ অজ্ঞাত কোনও কারণে সেভাবে হয় নি, তাই বিশ বছর বয়সের ওই শরীরটার ভেতরে এখনো বাস করছে দুই-তিন বছর বয়সী শিশু সত্ত্বাটা।
আরও যখন বড় হয়েছি তখন একটা ব্যাপার বুঝতে পেরেছি, এই সব বড় বড় শিশুরা আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত।
তাদের দেখভাল করা কঠিন ঝামেলার একটা কাজ, পারতপক্ষে এই ঝামেলাকে কেউ মাথায় নিতে চায় না, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মা-বাবাও তাদের উটকো সন্তানের দেখাশুনা করতে অবহেলা করেন, আর যারা স্নেহের কারণে তা করেন না, তারাও আড়ালে এই বলে চোখের জল ফেলেন, “কেন যে ছেলেটা (বা মেয়েটা) এমন হলো, খোদা! কি পাপ যে করেছিলাম!”
এইসব উটকো মানুষদের ‘ঝামেলা’ থেকে কিছুটা রেহাই পেতে উন্নত বিশ্বের অভিভাবকরা ইদানিং ব্যাবহার করছেন আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানকে। হরমোন থেরাপির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদের শারীরিক বিকাশ এখন একেবারে বন্ধ করে দেয়া যাচ্ছে। যার ফলে তারা সারা জীবন-ই ছোট বাচ্চা হিসেবে থেকে যাবে, ফলে তাদের দেখাশুনা করতে সুবিধা হবে অভিভাবকদের। যেমন বিশ বছর বয়সের একজন মানসিক প্রতিবন্ধী যুবককে সামলানোর চেয়ে পাঁচ-ছয় বছরের একটা বাচ্চাকে সামলানো অনেক সহজ সাধ্য। বয়স্ক একজন মহিলার পক্ষেও সহজেই সম্ভব এরকম দুই তিন জনকে দেখাশুনা করা।
এই কাজটা পশ্চিমা বিশ্বে এখন অনেকেই করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। জানা গেছে হাই-এস্ট্রোজেন ডোজ আর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট কিছু সার্জারির মাধ্যমে সহজেই একজন মানুষকে সারা জীবনের জন্য শারীরিকভাবে শিশু করে রাখা সহজেই সম্ভব এখন।
অ্যাশলের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিলো এই প্রক্রিয়াটি..
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় অ্যাশলের কথা, সে কথা বলতে আর চলাফেরা করতে অসমর্থ। নয় বছরের শিশু থাকাকালে তার মা বাবা তাকে এই থেরাপির দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো, সেটা ২০০৭ সালের কথা। এখন পর্যন্ত তার আর কোনও উল্লেখযোগ্য শারীরিক বৃদ্ধি হয়নি।
এই অপারেশনের সাফল্যের সূত্র ধরে পরবর্তীতে আরও দশ পনেরো জনকে এরকম থেরাপি দেয়া হয়েছে। যদিও এর কার্যকারিতা নিয়ে বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণভাবে সন্দেহ মুক্ত – তা নয়, তবে এখন পর্যন্ত সেরকম কোনও অভিযোগ উঠেনি কোনও শিশুর পরিবার থেকে। বরং অ্যাশলকে নিয়ে তার মা-বাবার ব্লগ ‘ Pillow Angels ‘ থেকে সবাইকে উৎসাহিত-ই করা হচ্ছে প্রতিবন্ধী সন্তানদের এই থেরাপি দেয়ার জন্য।
কিন্তু এখান থেকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সম্পূর্ণ নতুন একটা আইনি বিতর্ক। মানুষের শরীরে স্থায়ীভাবে কোনও পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে কতটুকু হস্তক্ষেপ করতে পারে চিকিৎসা বিজ্ঞান? অথবা একজন মানুষ আর তার শরীরের উপর কি হবে অথবা কি হবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার দায় কার উপর বর্তায়? আমেরিকার অনেক স্টেটেই হাসপাতালগুলো এই ধরনের অপারেশন করতে অপারগতা প্রকাশ করছে, তবে এমন অভিভাবকও কিন্তু আছেন, এই অপারেশন করানোর জন্য দেশের গণ্ডীর বাইরে যেতেও যাদের কোনও আপত্তি নাই।
আর্থিক সামর্থ্যের দিকে না তাকিয়ে, যে হাসপাতালগুলো এটা করছে সেখানে গিয়ে ঠিকই হাজির হচ্ছেন তারা।
এখন পর্যন্ত এই ইস্যুতে আদালতের অবস্থান, বা এর পক্ষে-বিপক্ষে বড় পরিসরে কোনও জনমত গঠিত হয়নি। তবে অবস্থাদৃষ্টে যা মনে হচ্ছে, ভ্রূণ হত্যা, মানব ক্লোনিং আর স্বেচ্ছামৃত্যুর মতো এটাও খুব শীঘ্রই একটা বড় ইস্যুতে পরিণত হবে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।