আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তথাকথিত আহলে হাদীসের আসল রূপ - পর্ব ০৩

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল-মাদানী নাম পরিচিতিঃ গাইরে মুক্বাল্লিদ্দের বিচিত্র নাম ও এর রহস্যঃ ১। নবজাত শিশুর যেমন প্রথমেই কোন নাম থাকে না, কিছু দিন পর তার একটা নাম রাখা হয়, পছন্দ না হলে প্রয়োজনে তাও আবার পরিবর্তন করা হয়, অনুরুপভাবে ভারতবর্ষে নবজন্মা গাইরে মুক্বাল্লিদ নামক বিদ্‌য়া’ত ও ভয়াবহ ফিৎনাটিরও প্রাথমিক পর্যায়ে কোন নাম ছিল না। তাদের ভ্রান্ত তৎপরতা লক্ষ্য করে জনগণ যখন তাদেরকে “ ওহ্‌হাবী ” বা “ লা-মায্‌হাবী ” বলতে থাকে তখন তারা নিজেদেরকে “ মুহাম্মদী ” বলে ঘোষণা করে এবং পর্যায়ক্রমে সুবিধামত “ মুয়াহ্‌হিদ ” “ গাইরে মুক্বাল্লিদ ” “ আহ্‌লে হাদীস ” ইত্যাদি নাম বরাদ্দ করতে থাকে। সউদী আরবে তেল, পেট্রোলের পয়সা জমজমাট হওয়ার মুরাদে আরবীদেরকে ধোঁকা দিয়ে পেট পালার ব্যবস্থা হিসেবে বর্তমানে তারাই “ সালাফী ” নামে আত্নপ্রকাশ করেছে। ২।

এ ব্যাপারে গাইরে মুক্বাল্লিদ্‌দেরই অন্যতম ব্যক্তি মৌলভী মুহাম্মাদ শাহজাহানপুরীর উক্তি ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া তাদের অনেকেরই বই-পুস্তকে এর অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। তন্মধ্য হতে গাইরে মুক্বাল্লিদ আলিম মৌলভী আসলাম জিরাজপুরী তার বিশিষ্ট রচনা “ নাওয়াদিরাতে ” লিখেন, “ প্রথমত এ জামাত নিজেদের বিশেষ কোন নাম রাখেনি। মাও: ইসমাইল শহীদ (রহ.) এর শাহাদাতের পর প্রতিপক্ষের লোকেরা যখন দুর্নাম করা জন্য তাদেরকে ওহ্হাবী বলতে শুরু করে, তখন তারা নিজেরদেকে “ মুহাম্মাদী ” বলতে থাকে, অত:পর এ নামটি পরিহার করে “ আহলে হাদীস ” উপাধি চয়ন করে যা আজ পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। ” (নাওয়াদিরাতঃ পৃ: ৩৪২) একই দলের বিচিত্র নাম ভ্রষ্টতারই পরিচায়ক ১।

একটু লক্ষ্য করলেই বুঝা যাবে যে, গাইরে মুক্বাল্লিদ্‌দের নিজেদেরই অনুভূতি নেই যে তারা কি? কখনো তারা নিজেদেরকে “ মুহাম্মাদী ” বলে কখনো “ মুয়াহ্‌হিদ ” কখনো “ গাইরে মুক্বাল্লিদ ” কখনো “ লা-মায্‌হাবী ” কখনো “ আহলে হাদীস ” আবার কখনো “ আসারী ” আবার কখনো “ সালাফী ” ইত্যাদি। যে দলটি নিজের নাম নিয়েই আজ পর্যন্ত সংশয়ে নিপতিত (!) তারাই জানে তাদের ধর্ম ও দ্বীন নিয়ে কেমন সংশয় ও সন্দেহে আপতিত। আর যে ধর্ম ও মতবাদে এত সংশয় ও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে তা গ্রহণ করা নিঃসংশয় নিঃসন্দেহযুক্ত তথা হক্ব হওয়ার নিশ্চয়তা কোথায় ? ২। সম্মানিত পাঠকবর্গ নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, নির্বাচনের সময় কোন কোন চরিত্রহীনা মহিলা তার প্রকৃত নাম, স্বামীর নাম ও বোরকা পরিবর্তন করে বিভিন্ন পরিচয়ে পালাক্রমে ভোট প্রদান করে থাকে। কিন্তু সময়-সুযোগে গণধোলাই আর কিছু উত্তম মাধ্যম দিলে তার মূল পরিচয় বেরিয়ে আসে।

অনুরূপ ভাবে, গাইরে মুক্বাল্লিদরাও সুবিধামত বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন পরিচয়ে আত্নপ্রকাশ করে থাকে। তাই, আহ্‌লে হকের পক্ষ থেকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলেই তাদের আসল রূপ ও মূল উদ্দেশ্য বেরিয়ে আসবে। মুহাম্মাদী কে? ১। ইতিপূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, ১২৪৬ হিজরীর পর এই উপমহাদেশে সৃষ্ট বিদ্‌য়া’ত ও নতুন ফিরক্বাটিকে মুসলমানগণ যখন ওহ্‌হাবী বলে আখ্যায়িত করতে থাকেন তখন তারা নিজেদেরকে মুহাম্মাদী বলে দাবী করে। সে হিসেবে মৌলভী আব্দুল হক্ব বেনারসী ও মৌঃ নজীর হুসাইন ভারতবর্ষের প্রথম মুহাম্মাদী নামের দাবীদার।

অনুরূপ ভাবে তাদের তদানীন্তন অনুসারীরাও মুহাম্মাদী নামেই আত্নপ্রকাশ করতো। এ ধারায় নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান ১২৮৫ হিজরীতে মৌঃ আব্দুল হক্ব বেনারসী থেকে লিখিত ভাবে মুহাম্মাদী উপাধি লাভ করেন। ( মায্‌হাবে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াহঃ পৃ – ৩৬ ) মুহাম্মাদী নামের রহস্য ১। মুহাম্মাদী বলে তারা বুঝাতে চায় যে, তারা সরাসরি নবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর অনুসারী, তারা কোন মায্‌হাবের তাক্বলীদ বা অনুসরণ করে না তাই তারা হানাফী নয়, নয় শাফেয়ী, মালেকী বা হাম্বলী; বরং তারা মুহাম্মাদী। কিন্তু প্রশ্ন জাগে মুহাম্মাদ (সঃ) এর সত্যিকার অনুসারীদেরকেই যদি মুহাম্মাদী বলতে হয়, তাহলে হযরত সাহাবায়ে কিরাম (রঃ) ও তাবেয়ীনই তো এর সর্ব প্রথম ও সর্বাধিক উপযুক্ত ধারক ও বাহক, তাঁরা কেন তা গ্রহণ করেননি? তাঁদের উপাধি মুহাম্মাদী নয় কেন? এ শব্দের ব্যবহার ও প্রয়োগের সূচনা ১২০০ হিজরীর পরে কেন? ২।

নবাব ছিদ্দিক্ব হাসান খান অবশ্য এ প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে চতুর্থ শতাব্দীর শেষার্ধের মুহাদ্দিস আবু হাফস উমার বিন আহমদ ইবনে শাহীন এর কথা উল্লেখ করেছেন যে, ইবনে শাহীনের নিকট কোন মায্‌হাবের আলোচনা আসলে তিনি বলতেনঃ “ আমি মুহাম্মাদী মায্‌হাবের ”। ( তাযকিরাতুল হুফ্‌ফাজঃ পৃ – ৩/১৮৪; হেদায়াতুল মাসাইল ছিদ্দিক্ব হাসান খানঃ পৃ - ৫২৫) কিন্তু মুহাদ্দিস ইবনে শাহীনের এ উক্তি নকল করার দ্বারা তাদের কী লাভ? তিনিও তো ৪র্থ শতাব্দীর শেষার্ধের লোক। তাঁর মৃত্যু ৩৮৫ হিজরীতে। আর চার ইমামের অনুসরণের ধারা তো এর অনেক পূর্বেকার। সুতরাং তাদের বক্তব্য অনুযায়ী তারাই ৪র্থ শতাব্দীর শেষার্ধে বিদ্‌য়া’তের সূচনাকারী দল।

এ ছাড়া, ইবনে শাহীন তো কেবল মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ আলিম ছিলেন। শরীয়তের সর্বক্ষেত্রে অনুসরণ যোগ্য হিসেবে মুসলিম উম্মাহ তাকে গ্রহণ করেননি। হাফেয যাহাবী (রহঃ) তাঁর অসংখ্য ভুল ত্রুটির এক বিরাট দাস্তান উল্লেখ করেছেন। ( তাযকিরাতুল হুফ্‌ফাজঃ পৃ – ৩/১৮৪ ) তিনি তো কোন সাহাবী ছিলেন না, তাবেয়ীও ছিলেন না। গাইরে মুক্বাল্লিদ্‌রা কি কোন সাহাবী বা তাবেয়ী অথবা হুজুর (সঃ) এর পবিত্র হাদীসে উল্লেখিত উত্তম যুগ তথা স্বর্ণযুগের কারও উপাধি মুহাম্মাদী প্রমাণ করতে পারবেন? সকল মুহাম্মাদী নামের ধব্জাধারীরা একত্রিত হয়েও যদি সক্ষম হবেন বলে মনে করেন তবে প্রমাণ করে দিন।

(চলবে ইনশাল্লাহ) ২য় পর্বঃ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.