গল্পের রাজত্বে বসবাস করছি আপাতত
মুক্তি : ২০০২
দৈর্ঘ : ১২৩ মিনিট
রঙ : রঙিন
দেশ : আমেরিকা, কানাডা, মেক্সিকো
ভাষা : ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফরাসী, রুশ
পরিচালনা : জুলি টেইমর
প্রযোজনা : সারাহ গ্রীন, সালমা হায়েক, জে পলস্টিন
চিত্রনাট্য : ক্ল্যান্সি সিগাল, ডায়ান লেক, গ্রেগরি নাভা, আনা থমাস
অভিনয় : সালমা হায়েক, আলফ্রেড মলিনা, এন্টোনিও বান্দারেস
সঙ্গীত : এলিয়ট গোল্ডেনথাল
চিত্রগ্রহণ : রজরিগো প্রিয়েটো
সম্পাদনা : ফ্রান্সোইস বোনাট
কাহিনী সংক্ষেপ : হেইডেন হেরেরা’র রচিত ফ্রিদা : আ বায়োগ্রাফি অব ফ্রিদা কাহলো’ গ্রন্থ অবলম্বনে এ চলচ্চিত্রের কাহিনী সাজানো হয়েছে। জীবনী ভিত্তিক এই চলচ্চিত্রে ম্যাক্সিকোর বিখ্যাত সুরিয়ালিস্ট চিত্রকর ফ্রিদা কাহলোর ব্যক্তি ও শিল্পী জীবন তুলে ধরা হয়েছে। ছবির শুরুতেই দেখা যায় ১৮ বছরের তরুণী ফ্রিদা সড়ক দূর্ঘটনায় ভয়াবহভাবে আহত হয়। তাকে প্রায় আগাগোড়া ব্যান্ডেজে মুড়ে বিছানায় ফেলে রাখা হয়। ফ্রিদার বাবা তাকে ক্যানভাস এনে দেয় বিছানায় শুয়ে ছবি আঁকার জন্যে।
ফ্রিদা সুস্থ হয়ে তার ছবি দেখাতে যায় দিয়াগো রিভেরাকে। রিভেরা শুরুতে তাকে আমলে না নিলেও পরে তার ছবি খুব পছন্দ করে। তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এমনকি তারা বিয়েও করে। কিন্তু রিভেরা কখনো সৎ ছিলো না। সে একাধিক নারী এমনকি পুরুষের সাথেও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে।
রিভেরা নিউ ইয়র্কের রক ফেলার সেন্টারে একটি ম্যুরাল আঁকার কাজ পায়। ফ্রিদাকে নিয়ে সে নিউ ইয়র্ক যায়। সেখানে ফ্রিদার আসন্ন সন্তানটি নষ্ট হয়ে যায়। এদিকে ম্যাক্সিকোতে তার মা মারা যায়। রিভেরা তার কমিউনিস্ট ভাবনা থেকে সরে না-আসায় নেলসন রকফেলারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।
তার ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হয়। ফ্রিদা ও রিভেরা দুজনেই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় ম্যাক্সিকোতে ফিরে আসে। ফ্রিদার বোন ক্রিস্টিনা তাদের সঙ্গে থাকতে আসে। সে রিভেরাকে স্টুডিওতে সাহায্য করে। কিন্তু ফ্রিদা এক সময় আবিষ্কার করে রিভেরা ক্রিস্টিনার সঙ্গেও সম্পর্ক করেছে।
সে রিভেরাকে রেখে চলে যায়। ফ্রিদা সারাদিন নেশায় বুদ হয়ে থাকে। তাদের বিচ্ছিন্ন জীবনে অবসান ঘটে যখন রাশিয়া থেকে পলাতক লিয়ন ট্রটস্কি তাদের বাড়ড়েত আশ্রয় চায়। ট্রটস্কি তাদের সঙ্গে থাকা অবস্থায় ফ্রিদার সঙ্গে সম্পর্ক হয়। দিয়াগো এ ব্যাপারটি জেনে ফেলে।
ফ্রিদা এবার প্যারিস চলে যায়। এক সময় সে ম্যাক্সিকো ফিরে আসে এবং বিবাহ বিচ্ছেদ দাবী করে। এ সময় ট্রটস্কিকে খুন করা হয়, রিভেরাকে এ খুনের জন্যে সন্দেহ করা হয়। ফ্রিদা এক রকম বন্দী জীবন যাপন শুরু করে। ইতোমধ্যে তার পায়ের আঘাত মারাত্মক আকার ধারণ করে এমনকি তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়।
রিভেরা আবার তার কাছে ফিরে আসে, আবার বিয়ের কথা বলে। ফ্রিদা রাজী হয়। ম্যাক্সিকোতে ফ্রিদার একক চিত্র প্রদর্শনী হয় এবং তার কিছুকাল পরেই সে মারা যায়।
বিশেষত্ব : ফ্রিদা শিল্প ও শিল্পী বিষয়ে একটি যথার্থ শৈল্পিক ছবি। এই ছবির অসাধারণ চিত্রায়ণ আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয় চিত্রকলা ও চলচ্চিত্রের স্বার্থক যুগল বন্দী কতো স্বার্থক হতে পারে।
২০০২ সালে ভেনিস আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফ্যাস্টিভালের উদ্বোধন হয় এ ছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে। অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটায় সালমা হায়েক সেরা অভিনেত্রীর মনোনয়ন পান। নিঃসন্দে ফ্রিদা কাহলোর চরিত্রে অভিনয় তার জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি কাজ। অস্কারে এ ছবি সেরা মেকআপ ও সেরা সঙ্গীতের পুরস্কার পায়। এলিয়ট গোল্ডেনাথ গোল্ডেন গ্লোবেও সেরা সঙ্গীতের পুরস্কার অর্জন করেন।
অন্যদিকে বাফটাতেও এ ছবি সেরা মেকআপের পুরস্কার পায়। আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিট্যুট এটিকে ২০০২ সালের মুভি অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত করে। ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ সে বছর একে সেরা দশটি ফিল্মের মধ্যে ঠাঁই দেয়।
বিশেষ তথ্য :
১. সালমা হায়েক ছবিতে পঞ্চাশেরও বেশি পোশাক পরেছিলেন। অনেক পোশাক ম্যাক্সিকোর ফুটপাথ থেকে কেনা হয়েছে।
২. বিখ্যাত পপ গায়িকা ও অভিনেত্রী ম্যাডোনা ব্যক্তি জীবনে ফ্রিদা কাহালোর ভক্ত। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে ফ্রিদা’র আঁকা একাধিক ছবি আছে। তার খুব ইচ্ছা ছিলো এ ছবিতে ফ্রিদার চরিত্রে অভিনয় করার। অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী মেরিল স্ট্রিপও ফ্রিদার চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলেন। জেনিফার লোপেজেরও ইচ্ছা ছিলো ফ্রিদার চরিত্রে অভিনয় করার।
লরা স্যান গিয়াকোমো এ চরিত্রের জন্যে নির্বাচিত হন। কিন্তু ফ্রিদা’র ভক্তরা আপত্তি জানায়, তারা কোন অ-ম্যাক্সিকানকে এই চরিত্রে মেনে নিতে রাজী ছিলো না। শেষ পর্যন্ত সালমা হায়েকের ভাগ্যে চরিত্রটি জুটলো। সালমাও স্বদেশি এই চিত্রকরের একজন অনুরাগী ছিলেন। এবং তিনি নিজেও ভাল ছবি আঁকেন।
চলচ্চিত্রের বেশ কয়েকটি দৃশ্যে তিনি নিজে ছবিও এঁকেছেন।
৩. ফ্রিদা কাহলোর এই ছবি দেখে তার এক ভাগ্নী ভীষণ আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে। সে সালমায় হায়েককে ফ্রিদার একটি নেকলেস উপহার দেয়।
৪. দিয়াগো চরিত্রে অভিনয় করার জন্য আলফ্রেড মোলিনা ২৩ কেজি ওজন বাড়িয়েছিলেন।
৫. বাস ও ট্রলির মধ্যে দূর্ঘটনার দৃশ্যটিতে যতো যাত্রী ছিলো তাদের সবাইকে ফ্রিদা কাহলোর আঁকা ১৯২৯ সালের ‘দ্য বাস’ চিত্র অনুযায়ী সাজানো হয়েছিলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।