ছোটকালে পত্রিকা পড়তাম তখন কোন সেলিব্রেটিদের জিজ্ঞেস করতো,কী ধরনের বই পড়তে ভালো লাগে?
তারা উত্তর দিতো, গোয়েন্দা সিরিজের গল্প।
তখন মনে মনে চিন্তা করতাম গোয়েন্দা সিরিজ আবার কারও ভালো লাগে নাকি?
সাড়ে ১৬বছর বয়সে বাংলাবাজারে গেলাম একদিন গল্পের বই কিনতে। রাস্তার পাশে দেখি ফেলুদা সমগ্র বিক্রি হচ্ছে। ভালোই লাগলো নামটা। সাড়ে তিনশ টাকা দিয়ে কিনলাম ফেলুদা সমগ্র-১ ও ফেলুদা সমগ্র-২ ।
বাসায় ফিরে পড়া শুরু করে দিলাম। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা পড়ে এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে তেরশ পৃষ্ঠার দুটো বই ১৫দিনের মধ্যে দুবার রিভিশন দিয়ে ফেলেছিলাম।
তারপর থেকে গোয়েন্দা সিরিজ হয়ে উঠলো আমার সবচেয়ে প্রিয়।
ফেলুদার পর পড়লাম Sherlock Holmes সিরিজ। তারপর তিন গোয়েন্দা তারপর বোমক্যাশ বাকশী।
এখন আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, কী ধরনের বই তোমার প্রিয়?
আমি, অবশ্যই গোয়েন্দা সিরিজ।
প্রিয় গোয়েন্দা সিরিজগুলো ক্রমান্বয়ে সাজাও?
আমি, ফেলুদা>বোমক্যাশ>তিন গোয়েন্দা>Sherlock Holmes।
সত্যি বলতে কী Sherlock Holmes আমার কাছে এতোটা ভালো লাগে নাই। শুধু বাস্কারভিল পার্টটা ভালো লেগেছিলো।
তবে ফেলুদার মত প্রিয় আমার আর কোন বইই যে লাগবে না এব্যাপারে আমি নিশ্চয়তা দিতে পারি।
সম্ভবত শেখ সাদী বলেছিলো,”খাবার রুটি নস্ট হয়ে যাবে প্রিয়ার কালো চোখ বিবর্ণ হয়ে যাবে কিন্তু বই থাকবে চিরযৌবনা”।
কথাটির মর্মার্থ এখন বুঝতে পারি।
২০১১এর শেষের দিকে কিনেছিলাম ফেলুদা সমগ্র। এ কয় বছরে কতবার পড়েছি তার হিসেব রাখিনি। আজ আবার বের করলাম ফেলুদা সমগ্র।
দেখলাম বইয়ের কাভার ছিড়ে গেছে,কিছুটা ময়লাও পড়েছে কিন্তু প্রথম যেদিন বইটা খোলার সময় যে রোমাঞ্চ অনুভুত হয়েছিলো তা আজও হলো। বুঝলাম বই আসলেই চিরযৌবনা।
এবার ফেলুদা নিয়ে কিছু বলি।
ফেলুদা
ফেলুদার লেখক সত্যজিৎ রায়(আমার প্রিয় লেখক) । উনি ফেলুদাকে নিয়ে সর্বমোট ৩৫টি গল্প লিখেছেন।
লেখার সময়কাল ১৬৫-১৯৯১।
ফেলুদাকে আমরা দেখতে পাই প্রথম “ফেলুদা’র গোয়েন্দাগিরি” গল্পে। সেখানে গল্প বলে তোপসে যার আসল নাম “তপেশ চন্দ্র মিত্র”।
আর ফেলুদা’র আসল নাম “প্রদোষ চন্দ্র মিত্র”।
“কৈলাস চৌধুরীর পাথর” গল্পে আমরা দেখতে পাই যে ফেলুদা তার কার্ডে “Prodosh C. Mitter” নাম ব্যাবহার করেন।
ফেলুদার সকল গল্পই আমরা তোপসের জবানিতে পাই। তারপর দেখতে পাই সিধু জ্যাঠাকে। যিনি অতিশয় বৃদ্ধ। অবিবাহিত। তার সারা দিন কাটে বই পড়তে পড়তে।
তার কাছে ফেলুদা প্রায়ই যান্নানা বিষয়ে জ্ঞান নিতে। সিধু জ্যাঠা এক জীবন্ত তথ্যকোষ ।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হচ্ছে “লালমোহন বাবু গাঙ্গুলী”। ইনি লেখক। জটায়ু ছদ্মনামে ইনি রহস্য রোমাঞ্চ গল্প লেখেন।
ভদ্রলোক অবিবাহিত। জটায়ুকে আমরা প্রথম দেখতে পাই “সোনার কেল্লা” গল্পে। তারপর থেকে প্রতিটি গল্পেই তার সরব উপস্থিতি পাওয়া যায়।
আর একটি চরিত্র না লিখলেই নয়। ইনি হচ্ছেন ”মঘনলাল মেঘরাজ”।
ফেলুদা’র সব থেকে বড় প্রতিদন্ধী। বেশ কয়েকটি গল্পে ফেলুদা তার সাথে প্রতিদন্ধিতা করেছেন।
ফেলুদা’র শেষ গল্প “রবার্টসনের রুবি”।
ফেলুদা যে শুধু বইয়ের পাতাতেই আটকে আছে তা নয়। ফেলুদাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে আটটি চলচিত্র।
এর মধ্যে দুটো চলচিত্র আবার সত্যজিৎ রায় নিজেই পরিচালনা করেছেন।
ফেলুদাকে নিয়ে তৈরিকৃত ছবিগুলো হচ্ছে,
সোনার কেল্লা
জয় বাবা ফেলুনাথ
বাক্স রহস্য
বোম্বাইয়ের বোম্বেটে
কৈলাসে কেলেংকারী
টিনটোরেটর যীশু
গোরস্থানে সাবধান
রয়েল বেঙ্গল রহস্য
ফেলুদা আমার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র। আমার মত হাজারো সত্যজিৎ ও ফেলুদা ভক্ত আছে। মুগ্ধ হই বারেবারে বইগুলো পড়ার সময়।
বেচে থাকো ফেলুদা
বেচে থাকো সত্যজিৎ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।