আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ-প্রিয় ঋতু হেমন্ত আর আত্মস্বীকৃত খুনীগো বিচারের অজুহাত...

কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...

আমার মা যখন সংসার ধর্ম পালনে ব্রতী হওনের লেইগা স্কুল মাস্টারী ছাড়লেন তখন থেইকা জীবনানন্দ নামের এক কবির লগে পরিচয় ঘটলো। চাকরী স্থলে ছাত্রীগো আয়োজনে দেয়া এক ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠানে তারে খান ব্রাদার্স প্রকাশিত জীবননান্দ দাশের কবিতা সংগ্রহ উপহার দেওয়া হয়। নিতান্তই বালক আমি সেই থেইকা সবুজ মলাটের বইটারে আকড়াইয়া বড়ো হইছি। আমার মা'রে সর্বক্ষণ কাছে পাওয়ার সমার্থক হইয়া উঠছিলো এই বই। স্বার্থপর বালক আর কি ভাবতে পারে ক'ন! সম্ভবতঃ রনেশ দাসগুপ্ত সেই সংগ্রহের একটা ভূমিকা লিখছিলেন।

সেই ভূমিকায় তিনি একটা বড় অংশ উৎসর্গ রাখছিলেন হেমন্ত ঋতুরে। যেমনটা ফিরা ফিরা আসে জীবনানন্দের কবিতায়। শৈশবের সেই বানান কইরা পড়ার ফাকেই আমার প্রিয় ঋতু হয় হেমন্ত; যখন 'হেমন্ত ফুরায়ে যায় পৃথিবীর ভাঁড়ারের থেকে' আমার তখন নিজেরে নিঃস্ব মনে হয়, ক্রমশঃ হতাশাগ্রস্ত হইয়া পড়ি। ভাবতে থাকি 'শীত এসে নষ্ট করে দিয়ে যাবে তারে'। হেমন্তের বিষাদ আমারো প্রাণে বেজে ওঠে।

এমনই এক হেমন্তরে হঠাৎ আমার অচেনা লাগতে শুরু করে। কোথায় কি পাল্টে গেলো তবে? সেই সুন্দর চিরল পাতার মতোন মেঘের সারি কতোটা আয়েশে ভেসে থাকে...নীলাভ হয়ে ফুটে থাকে সরোবর...তবু আজ আমারই নিকট হেমন্ত কেরম ভিন্নতায় ধরা দেয়! শীতের শব্জী বাজারে উঠতেছে হরদম। প্রকাশের বাড়াবাড়িতে এইসব শব্জীর ফলনের সময়কাল শীত হইলেও আসলে হেমন্তেই শুরু মহার্ঘ্য এই প্রত্যাশার। হেমন্তে কৃষকেরা-আড়তদারেরা-খুচরা বিক্রেতারা শব্জীর সরবরাহ স্বল্পতার সুযোগে যদিও দাম বাড়াইয়া রাখে অনেক। আমরা তবুও কাড়াকাড়ি কইরা সাধ্যের অতীত দামেই একবেলা দুইবেলা ফুলকপি আর সীমের চচ্চরি খাই।

হেমন্তে উল্লাস বাড়ে আলোকচিত্রীগো। তারা দলে দলে বাইর হয় আকাশের বিচিত্রতা ফ্রেমবদ্ধ করনের তাগীদে; হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটে। হেমন্তরে নবান্নের মাস কওয়া হয়। সারা বছরের চাইলের একটা বড় সরবরাহ ভান্ডার এই সময়েই গইড়া উঠে...সোনালী হয় বাতাস...মসৃন দোলা খেয়ে ভূমির সাথে তার খেলা...কৃষকের উৎসব চলে দুইমাস...অস্তিত্ব সরব রাখতে পারেন তারা এই সময়... এমন এক হেমন্তের সমাপনী কালে আমি হঠাৎ শংকিত হই। সপ্তাহের মধ্যবর্তী কালেই।

যখন আজ অথবা আগামীকাল সরকার তার নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করবো বইলা জানতে পারি পত্রিকা মারফত। এই দুই লাইনের ভাব প্রকাশ একান্তই বালখিল্য হইয়া গেলো। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী কিম্বা সর্বনিম্ন মজুরী ঘোষণার বিষয়টারে আমি আদৌ বিরোধীতা করতেছি না...কখনোই করতে চাই না। কিন্তু সামাজিক চরিত্রের লগেতো আমারো গা ভেসে চলে স্রোতে...আমিও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনায় ভীত হই। ভাবি জীবনযাত্রার মান লিখিত ভাবে আরো একবার বাড়লো বইলা... এমনিতেই আওয়ামি লীগের সরকার তাগো নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হইয়া স্বভাবজাত আচরণের প্রকাশ ঘটাইতে শুরু করছে।

দোষ চাপানো হইতেছে বিরোধী দলীয় ব্যবসায়িগো বা বিরোধী দলের ক্ষমতাকালীন অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার উপর। আওয়ামি লীগবর্তী ব্যবসায়িরা এবং সন্ত্রাসীরা আসলে ফারিশতা টাইপ কোন সত্ত্বা। তারা কখনো কোনো অন্যায় করনের ইচ্ছাপ্রকাশও করতে পারে না। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির লগে সরকারি আমলাতন্ত্রের কোন যোগাযোগ যেনো থাকতে পারে না। এই দেশে কেবল বিরোধী শাসকেরা লেগে আছে ব্যবহার্যের মূল্য বাড়ানের খেলায়।

ক্ষমতায় যারা থাকে তারা কেবল সমাধান খোঁজে... সমাধানও মনে হয় একটা আছে। কয়দিন আগে একজন শেখ পরিবার ঘনিষ্ঠ সাংসদের উপর বোমা হামলা হওনের পর শুরুতে তদন্ত কর্মকর্তারা সরকারী দলের নির্দেশ মোতাবেক পাইলো শেখ মুজিবের হত্যাকারীগো আত্মীয়স্বজনেরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটাইছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীগো বিচার হইলেই কেবল এই হামলার বিচার হইবো। কিছুদিন চললো এরে ওরে ধড়পাকরের খেলা। হঠাৎ তদন্ত কর্মকর্তারা নতুন ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা দেখলেন তদন্তকালে।

উন্মোচিত হইলো তরুণ সেনা কর্মকর্তাগো যোগসাজশের কাহিনী। আজকে এই হেমন্তের শেষভাগের খবরের কাগজে দেখলাম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কইছেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীগো বিচার হইলেই কেবল এই প্রবণতারে নস্যাৎ করা যাইবো। বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাগো হয়তো শুইনা যাইতে হইবো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-বাণিজ্যমন্ত্রী-শিল্পমন্ত্রী-শ্রমমন্ত্রীগো এই অজুহাত কথন। দ্রব্যমূল্য-শ্রমিক অসন্তোষ-রফতানী স্বল্পতা সব হয়তো বঙ্গবন্ধুর খুনীগো ষড়যন্ত্র...'বাকি সব মানুষেরা অন্ধকারে হেমন্তের অবিরল পাতার মতন/কোথাও নদীর পারে উড়ে যেতে চায়'...উড়ে যাবে...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.