aurnabarc.wordpress.com বর্তমানযুগে কোন চলচিত্র বা গানের নামের সাথে সাথে কয়েকটি শব্দ লাগাতার চলে আসে তা হচ্ছে হিট, ফ্লপ, সুপারহিট, সুপারফ্লপ, সুপার ডুপার হিট প্রভৃতি। আসলে এখনকার কর্পোরেট দুনিয়ার মারপ্যাচে একটি গান বা চলচিত্র নির্মাণে প্রাথমিকভাবে টপিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোকে প্রথম গুরুত্ব দেয়া হয়। একটি গানের কথা মিলিয়ে বলতে গেলে গেল কয়েকটি মাসের মিডিয়াজগতকে কোলাভেরী ডি এর মাস বলা যায়। রাস্তাঘাটে বেড়াতে বেরুলে, শপিংমলগুলোতে, বাজারের মধ্যে এমনকি ফ্লাটের বারান্দায় চেয়ারে একটু আয়েশি ভঙ্গিতে গা এলিয়ে দিয়ে একটু চোখ মুদলে কানে ভেসে আসতে থাকে ‘ইয়ো বয়েজ, আই অ্যাম সিং সং, সুপ সং, ফ্লপ সং, হোয়াই দিজ কোলাভেরি কোলাভেরি কোলাভেরি ডি। একটি ট্যাংলিশ(তামিল+ইংলিশ)গানের এই জয়যাত্রায় আমাদের কি আসে যায় ? আসলে বলতে চাইছি দেশের নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের নতুন সিনেমা ঘেটুপুত্র কমলা প্রসঙ্গে।
মুভি রিভিউ বা এই জাতীয় লেখালেখি আমার অভ্যাসের মধ্যে নেই। হিন্দি সিনেমা থ্রি ইডিয়টস এর একটি রিভিও লেখার চেষ্টা করেছিলাম, অনেকটা মনের থেকে লেখা সেই রিভিউটি পত্রিকায় ছাপাও হয়ে যায়। আজকে আমার এই লেখার উদ্দেশ্য হুমায়ুন আহমেদের মতো নন্দিত কথা সাহিত্যিকের মুভির রিভিও করা না। সেই দু:সাহসও দেখানো আমার উচিত হবে না। শুধু কিছু বিষয় আমার কাছে মনে হয়েছে সমস্যায়িত যেগুলো তুলে ধরার প্রয়োজন মনে করছি।
আবার কলাভেরি প্রসঙ্গ। লতা, আশা, রফি, মুকেশ, জগজিত সিং প্রমুখের কালজয়ী গানের পাশাপাশি কিছু ভুইফোড় হিন্দিগান সময়ের সাথে সাথে উপমহাদেশ কাঁপিয়ে তুলেছিল। কলেজে প্রথম বর্ষে থাকাকালীন বহুশ্রুত গান সেই হিমেশ রেশামিয়ার ‘আশিক বানায়া আপনের’ কথা মনে পড়ে, আজ সেই গান আর গানটির গায়ক দুজনেই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছেন। পর পর দেখা গেছে ধুম মা চলে, ডারদ ই ডিসকো, শীলা কি জওয়ানী, মুন্নী বদনাম হুয়ী, দম মারো দম, ছাম্মোক ছালো আরো কত কি ? আজ ইয়াং জেনারেশন ক্রেজি হয়ে উঠেছে ‘কলাভেরি ডি’ নিয়ে। দক্ষিণ ভারতীয় ‘কলিউডি বা তামিল ইন্ডাস্ট্রি’ থেকে নির্মিতব্য ‘থ্রি’ সিনেমার এই মিশ্রিত তামিল ইংরেজী যাকে আমি বলেছি টাংলিশ বা ট্যাংরেজী গানটির কিছু বৈশিষ্ট একে ইউটিউবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়।
কর্পোরেট দুনিয়া এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে বানিজ্য করার সুযোগ নষ্ট করতে চায়নি। একের পর এক আত্মপ্রকাশ করেছে এই গানটিরই মেয়েকণ্ঠ, শিশু কণ্ঠ, প্যারোডিগান, একই সুরে অন্যগান কিংবা যন্ত্রসংগীত। ভারতের নন্দিত সংগীত শিল্পী সনু নিগমের শিশুপুত্র নিভানের গাওয়া এই গনাটির একটি রূপও জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে উঠে যায়। কিন্তু আমি বলতে চাইছি ভিন্ন কথা। যুব সমাজ সব সময় নতুনকে স্বাগত জানায়।
তারা কোন কিছু ভাল কি মন্দ লাভ কি ক্ষতির এটা বোঝার আগে বিচার করে এটা নতুন না পুরাতন। এক্ষেত্রেও ঘটেছে ঠিক তাই।
আমরা একটু খেয়াল করলেই দেখি গানটির শুরুতে বলা হয়েছে ‘ইয়ো বয়েজ, আই অ্যাম সিং সং’ এখানে প্রথমত বলা হয়েছে বালকদের কথা সেই সাথে যে ইংরেজী বলা হয়েছে সেটি ভুল। তারপর বেশ স্বার্থকতার সাথে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয় এটা ‘সুপ সং, ফ্লপ সং’। আমি বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে বলতে চাই প্রারম্ভিকায় ভুল শব্দ চয়ন আর গানের গতি প্রকৃতির প্রতি দিক নির্দেশনা গানটির কন্টেন্ট বিচার না করেই এর শ্রবনের আবেদন বাড়িয়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে গানটিকে ‘সুপ সং’ বলাও তামিল ভাষা ব্যবহারকারী যুবকদের মাঝে এর আবেদন বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। কর্পরেট জগত আর মিডিয়ার রেপ্রিজেন্টেশনে আজকের দুনিয়ায় ছেলেমেয়েদের একের প্রতি অ্রনের আবেদন বাড়িয়েছে। অন্যদিকে প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখ্যাত যুবকদের সংখ্যাও নেহায়েত মামুলি নয়। এই ‘সুপ সং’ শব্দটির ব্যবহার গানটিকে একান্তই প্রেমে প্রত্যাখ্যাত যুবকদের আপন করে নিতে চেয়েছে। ফেসবুকে পরিচিত একজন কর্ণাটকের বন্ধুর কাছ থেকে এই তামিল ‘সুপ’ শব্দটি সম্পর্কে যতদুর জেনেছি তার অর্থ কোন চিকেন বা কর্ণসুপ নয় এটির অর্থ প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া বা ছ্যাকা খাওয়া।
অন্যদিকে এই ‘হোয়াই দিস কোলাভেরি ডি’ এর অর্থও করেছে ওই ছেলেটি তার প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘ও মেয়ে কেন তোমার এই খুনে রূপ’। অনলাইনে বিভিন্নসোর্স ঘেঁটে এই মুভিটির কনটেন্ট বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি কমল হাসানের মেয়ে শ্রুতি হাসানের ফেসবুক পেজে দেয়া বিবরণ থেকে এই গানটির সম্পর্কে যা পাওয়া যায় তা হচ্ছে এই গানটি সত্যিই বেদনাবিধুর। প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর একজন ধুঁকতে থাকা যুবকের হারানোর বেদনা মূর্ত হয়ে ফুটে উঠেছে এই গানটিতে। এই বেদনা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে প্রায় পনের কোটির কাছাকাছি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ভারতীয় যুবকের। যাদের ভালোলাগা থেকে গানটির এই মাত্রার প্রচার আর প্রচারেই প্রসার যা এই গানটিকে পথ করে দিয়েছে দেশের সীমারেখা ছেড়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে।
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ‘নন্দিত নরকের’ নন্দিত পরিচালক জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পড়াশুনা করলেও নৃবিজ্ঞানে বিস্তর আগ্রহ ঐ পরিসরে পড়াশুনার গন্ডিটিও অনেক বেশি সমৃদ্ধ করেছে। ইতিহাস ও জনশ্রুতি বিশ্লেষণ করে জানা যায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী ভাটিয়ালি, জারি, সারি, ভাওয়াইয়ার মতো একটি জনপ্রিয় সংগীতের ধারা জন্ম নেয় ‘ঘেটুগান’ নমে। আজ থেকে আনুমানিক দেড়শ বছরের কিছু পূর্বে বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জে এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেটুগান প্রথম প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। জাবির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ‘প্রত্নতত্ত্ব ও লোকাচারবিদ্যা’ কোর্সের শিক্ষক ও এই হবিগঞ্জ জেলার সন্তান জয়ন্ত সিংহ রায় এর সাথে কথা বলে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করেছি।
তখনকার রক্ষণশীল সমাজে ছেলেমেয়ে একসাথে মেলামেশা করা, গান ও নৃত্য করা অনেকটাই অসম্ভব ছিল। এখনকার মুন্নি শিলার মতো খুল্লাম খুল্লা পোশাক দুরে থাক ছেলে মেয়েদের একসাথে কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণই তখনকার দিনে ছিল গর্হিত অপরাধ। তাই বলে সংস্কৃতির চর্চা থেকে থাকেনি। মেয়েদের অনুপস্থিতে তাদেরই পোশাক পরে, আলতা নুপুর সহযোগে, জবড়জং মেকাপ-পাউডার লাগিয়ে কিছু রূপবান কিশোর অভিনয় ও নৃত্যগীতিতে অংশ নিতো। এদেরকেই বলা হতো ঘেঁটু।
যদিও তাদের গাওয়া নৃত্য ও গীতি ছিল অনেকটাই সাধারণ প্রচলিত ধারার। এখানে অনেকটা রাগ সঙ্গীত ও উচ্চাঙ্গ ধারার সুস্পষ্ট প্রভাব ছিল। নারীর আদলে একই পোশাক ও সাজসজ্জায় সুদর্শন কিশোরদের উপস্থিতি এই সংগীত ঘরানাকে কলুষিত করে। বিকৃত রুচির জমিদার ও বিত্তবান লোকজন বাইজীর পাশাপাশি এইসব কিশোরদের তাদের লালসা চরিতার্থ করা ও প্রমোদে ব্যবহার করার ঘৃণ্য মনোবৃত্তি প্রকাশ করে। একইসাথে এই কিশোরদের যৌনসঙ্গী হিসেবে বিছানায় দেখার জন্য অনেক বিকৃত রুচির বিত্তবানকে লালায়িত হতে দেখা যায়।
সামাজিকভাবে বিষয়টা অনেক ধিক্কার ও ঘৃণার সাথে দেখা হলেও জোর যার মুল্লুক তার এই নীতির ভিত্তিতে বৃহত্তর হাওর অঞ্চলের বিত্তবান কুরুচিপূর্ণ মানুষ জলবন্দি সময়টায় কিছুদিনের জন্যে হলেও একজন ঘেটুপুত্র নিজের কাছে রাখবে এই বিষয়টা স্বাভাবিক মনে করতে থাকে। ইতিহাসের কলংকিত এই বিকৃত রুচির কাহিনী আবার নতুন করে ভাষা পেল হুমায়ুন আহমেদের হাত ধরে। রক্ষণশীল অনেকের মতো আমি কখনই বলতে চাইবো না এই মুভি আমাদের দেশের সংস্কৃতিক অঙ্গনকে কলুষিত করবে। তারপরেও কিছু আশংকা রয়েছে সেগুলো বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি।
আমি হুমায়ুন আহমেদের মতো একজন নন্দিত কথাসাহিত্যিকের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু বলার সাহস দেখাবো না।
কারণ এটি পাঠকরা এবং আমি নিজেও কমবেশি জানি। প্রতিক্রিয়া, অভিরুচি ও মতামত প্রত্যেকের যার যার মতো রয়েছে। শুধু উনি আর তাঁর বিজ্ঞ কলকৌশলীদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। মানুষ অনুকরণ প্রিয় তাদেরকে অনুকরণ করার মতো একটি অস্বাভাবিক বিষয়ের সম্মুখীন না করলেই কি নয় ? আপনি তো এর আগেও অনেক মুভি বানিয়েছেন, সেগুলো কিন্তু জনপ্রিয়তার দিক থেকে খুব একটা্ খারাপ ছিল না। আজ আপনি এমন একটি স্থানে চলে গেছেন যেখানে আপনার নামই একটি ব্রাণ্ড।
এই ধরণের একটি মুভি আজকের দিনে তৈরী না করলেই কি নয়।
স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ২০০২ সালের দিকে কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার ‘টেড বান্ডি’ এর জীবনের উপর নির্মিত হলিউডি মুভি ‘টেড বান্ডি’ মুক্তি পায়। এখানে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন মিচেল রেইলি বার্কে এবং তার হতভাগ্য বান্ধবীর চরিত্রে অভিনয় করেন বটি ব্লিস। মুভিটির কাহিনীতে দেখানো হয় টেড বান্ডি একজন খুবই স্মার্ট, হ্যাণ্ডসাম ও সুদর্শন যুবক। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সে ওয়াশিংটন, কলোরাডো, উতাহ,মিশিগান, ফ্লোরিডা সহ নানা স্থানের তরুনীদের বোকা বানিয়ে প্রায় একশ হত্যা করে।
পরে টেড বাণ্ডি এই সকল হত্যাকাণ্ডের কথা অকপটে স্বীকার করে নেয়। ২০০২ সালে মুভিটি মু্ক্তি পাওয়ার পর আমেরিকা সহ পৃথিবীর নানা স্থানে প্রেমে প্রত্যাখ্যাত বা ধোঁকাপ্রাপ্ত যুবকদের মাঝে বান্ধবীদের হত্যা ও নির্যাতন করার প্রবণতা বেড়ে যায়। আরে একটি উজ্জল উদাহরণ দিতে পারি রাকেশ রোশনের বিখ্যাত ক্রিশ মুভিটি মুক্তির পর বাজারে শিশুদের জন্য এই একই ধরণের ক্রিশ মুখোশ পাওয়া যেতো। ক্রিশের অলৌকিক শক্তির ধেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক শিশু ছাদ থেকে বা উচু স্থান থেকে ঐ ক্রিশ মুখোশপরে লাফ দেয়। তিনজন শিশুর মৃত্যুর খবর পত্রিকার পাতায় আমি নিজেই দেখেছি।
সম্প্রতি সালমান খান অভিনীত বডিগার্ড মুভিতে ব্যবহৃত বিশেষ হেডফোনটিও বাজারে আসতে দেখা গেছে। আমি একদিন মারাত্বক ধোকা খাই নিউমার্কেটে। দেখি ফুটপাতে হেডফোন ব্রিক্রি হচ্ছে। অবাক হয়ে ভাবলাম ব্লু-টুথ হেডসেট হয়তো। কিন্তু কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখি এটি আর কিছু না বডিগার্ড হেডফোন।
যেটি ক্রমে হয়ে ওঠে বস্তির বালকদের আর শিশুদের অন্যতম স্টাইল। বিটিভিতে প্রচারিত আলিফ লায়লার বিশেষ বিচ্ছু আকরামের মতো প্লাস্টিকের বিচ্ছু বাজারে বের হতে দেখা গেছে। আর ঈদের মার্কেটে ফানা, বীরজারা, মাহিয়া, সাভারিয়া সহ বিভিন্ন মুভির নামে পোশাক বিক্রির ঘটনা নতুন কিছু নয়। এমনকি মেয়েদের উপরে এসিড নিক্ষেপের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনাও প্রচলিত হয়েছে হলিউডি মুভি থেকে।
এখন দেশের সবেচন জনগণের পক্ষে আমার প্রশ্ন হচ্ছে সমকামী জীবন নিয়ে এই মুভিটি বাংলাদেশের মানুষের প্রচলিত সমাজ সংস্কৃতির সাথে কতটুকু খাপ খায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এধরনের উদ্ভট কাহিনী নির্ভর চলচিত্রের যৌক্তিকতা কতটুকু। হয়তো অনেক তথাকথিত প্রগতিবাদী বলবেন মানব সমাজের সবচেয়ে বড় কাজ চোখের পর্দা টেনে অন্যায় আড়াল করা। আর অপরাধকে লূকিয়ে রেখে তার নিরাপদ বসতস্থান নিশ্চিত করা। আমি বিষয়টি বিশ্লেষণ করার আগে বলবো আপনারা এই সকল অপরাধ জনগণের সামনে এনে প্রচার করতে চাইছেন তখন এর বাইনারী অপোজিশান হিসেবে ভাল-মন্দ, ঠিক-বেঠিক দুটি দিকই বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। যেটি দেখাতো দুরে থাক এর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে তার মুখ বন্ধ করার সার্বক্ষণিক চিন্তায় মগ্ন হতে দেখা গেছে।
আসলে আপনার বুঝলেন না পুজিঁবাদ কতো ভয়ানক জিনিস যেটি পুজিঁবাদবিরোধীদের নিজের কাজে ব্যবহার করে। কেন দেখেননা কি সুন্দর ভাবে মহান চে’র ছবি আকা টি-শার্ট, ব্যাগ, টুপি এগুলোর বানিজ্যিকীকরণ ঘটেছে। তখন আপনারাই এগুলো ব্যবহার করেন। এগুলো নিয়ে বানিজ্য করেন আর পরে চেচামিচি করে গলা ফাটান পুজিঁবাদ নিপাত যাক। আসলে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ যেটি সবার সামনে তুলে আনতে চাইছেন এটি অনেক আগেই বর্বর ইউরোপের মধ্যযুগে বিশেষত ক্যাথলিক চার্চ গুলোতে প্রচলিত হয়েছিল।
জঘন্য এই অত্যাচার প্রতিনিয়ত চললেও পোপের সীমাহীন ক্ষমতার কাছে মাথা নুইয়ে এমনকি লোকলজ্জার ভয়ে কিছু বলতনা। কিন্তু হুমায়ুন আহমেদ মুভিটি বানিয়েছেন বাংলাদেশে। আমরা খুব ভালকরেই জানি বাংলাদেশ ও ইউরোপের সমাজ সংস্কৃতির দায় এক নয়। সেটি হুমায়ুন আহমেদের মতো নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও অভিজ্ঞ সিনেমা পরিচালক ভাল করেই জানেন। তবে তিনি এও জানেন কি করলে একটি মুভি হিট হয়, আরেকটু রস-কষ লাগিয়ে দিলে কিভাবে এটি হিট থেকে সুপারহিট কিংবা সুপার ডুপারহিট হয়।
এই চিন্তাটিই তো তিনি করেছেন। তাঁর মতো একজন ব্যক্তিত্বের কাছে জাতির চাওয়া পাওয়ার পারদটা অনেক উচ্চে থাকলেও আমার মনে হয় মুভিটি প্রকাশের পর সেটি নেমে শূন্যের কোঠায় স্থান করে নেয়া অবাক হওয়ার কিছু হবে না।
আমরা জানি তরুণ সমাজ সবসময় নতুনকে স্বাগত জানায়। নতুনের জয়গান গায়। কিন্তু তারা নতুনের প্রতি অধিক আগ্রহ দেখাতে গিয়ে অনেক অপরাধও করে বসে প্রতিনিয়ত।
নতুন আবিষ্কারের নেশা যেমন জাতির ভবিষ্যত আলোকিত করে তেমনি নেশার জগতে নতুনত্বের স্বাদ নিতে গিয়ে এই তরুণ সমাজই জাতির ভবিষ্যতকে ঠেলে দেয় ঘোর অমানিশায়। অনেকে বলবেন ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ বাংলার আবহমান সংস্কৃতিকে নতুন করে আবিষ্কার করেছে। এটি সামাজিক সচেতনতা তৈরীতে ভূমিকা রাখবে। আমি ক্রিশ, টেড বাণ্ডি কিংবা সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত বডিগার্ড মুভির রেফারেন্স টেনে বলতে চাই তরুন সমাজ এই ঘেটু কমলায় ফুটে ওঠা নতুনত্বের অনুশীলন শুরু না করলেই হয়। কারণ হতাশা, ব্যর্থতা, যোগ্যতার উপযুক্ত মূল্যায়ন না পাওয়ায় তরুন সমাজের মাঝে অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।
অন্যদিকে বার বার প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া তরুণদের সমকামী হওয়ার একটা প্রবণতার কথা গবেষকরা বলেছেন। অন্যদিকে ইউরোপীয় দেশগুলোত মেয়েদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যার পাশাপাশি ছেলেদের সমাকামিতাও বাড়ছে। বাংলাব্লগ ও পত্রিকার পাতায় খোদ বাংলাদেশেই যখন সডোমীর ঘটনা ঘটেছে এমন খবর প্রকাশিত হয় সেখানে এই মুভিটি প্রচারের আলোয় আসলে কি হবে তা বলা মুশ্কিল। এই সকল দিকগুলো মাথায় রেখে আমাদের দেশে প্রচলিত সমাজ সংস্কৃতির সাথে অনেকটাই বেমানান কাহিনীর এই সিনেমা নিয়ে চকিতে কোন মন্তব্য না করাটাই শ্রেয় বলে মনে হলেও একটি অজানা আশংকা থেকেই যায়।
মোঃ আদনান আরিফ সলিম অর্ণব
ব্লগার ও কলামিস্ট
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।