... ছুটির মরসুমে শীত শীত দুপরে কী করব, আর কী করবনা ভাবছিলাম। ভাবতে ভাবতে টিভির সামনে বসলাম। চ্যানেল পালটাতে পাল্টাতে চোখ আটকে গেল আর টিভি তে। নীচে একটু পর পর লেখা উঠছে, আপনারা দেখছেন, পূর্ণদৈর্ঘ বাংলা ছায়াছবি 'ত্যাজ্যপুত্র', সৌজন্যে ওমুক ওমুক ওমুক ইত্যাদি ইত্যাদি। ভগবান! আমাদের সিনেমাগুলার নাম এত এক্সট্রিম হয় কেনু...
যাকগা, খোশ মেজাজে উপভোগ করতে বসলুম।
শুরুতেই অমর প্রেমিক ওমর সানীর 2 pi r শেপের বিষন্ন মুখ, সাথে তার চিরায়ত ৪৫ডিগ্রি কোণে বাঁকানো মাথা। কপালে গুনে গুনে আধ ডজন ভাঁজ। কাঠফাটা দুপুরে তিনি ধুধু মাঠে এদিক-ওদিক চেয়ে কি খুঁজে ফিরছিলেন, সেইটা বোধকরি সানী ভাইয়া, ওপরওয়ালা, দুই কাঁধের দুই মুনকার-নেকির আর পরিচালক ভিন্ন দুনিয়ার আর সবারই অজ্ঞাত। হন্ত দন্ত হয়ে এক স্বেচ্ছাসেবী খালি গায়ে(গরিব মানুষ বোঝাতে খালি গায়ে থাকা মাস্ট, কাপড় থাকলেই সেরেছে, ডাইরেক্ট ধনীক শ্রেণীতে প্রমোশন পেয়ে যাবে) এসে বলল, সানী ভাইয়া সানী ভাইয়া, ওমুক চাচার মেয়ের বিয়েতে ঝামেলা হয়েছে! সানী ভাইয়াঃ কী? চলো তো!!
এতক্ষনে সানীভাইয়ার বিষন্ন বদনের রহস্য কিছুটা পরিষ্কার হল। যা হোক, রকেট গতিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন মুশকিল আসান সানী ভাইয়া।
হুমম, যা ধারনা করেছিলাম, তাই। খোলা বাজার অর্থনীতির কু-প্রভাব পৌঁছে গেছে একেবারে অজপাড়া গাঁয়েও। বিয়ের আসরে কাজি সাহেবের কম্ম করার ঠিক আগ মুহুর্তে ঝামেলা পাকালেন বর-এর বাবা, মানে কনের শ্বশুর মহাশয়। তিনি শুরু করলেম মুলামুলি। শবজির বাজারের দরদামের মত তিনি বার বার 'এক দাম' হাঁকাচ্ছেন।
নাছোড়বান্দা ক্রেতার মত কনের বাবাও দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছেন। আর উপস্থিত গোটা পঞ্চাশেক দর্শক উপভোগ করছল সেই টান টান উত্তেজনাময় মুলামুলি। এমন সময় হঠাৎ আবির্ভুত হলেন ঘটনাস্থলে সানী ভাইয়া। এক ধমকে থামিয়ে দিলেন দরকষাকষি। খুবই উত্তেজনাময় মুহুর্ত, সবাই অধীর আগ্রহে, এখনই বিচার করে রায় ঘোষনা করবেন বিচারপতি ওমর সানী।
নিশ্চয়ই এক ঐতিহাসিক রায় হতে যাচ্ছে। হ্যা, সানী ভাইয়া রায় ঘোষনা করলেন ঠিকই। তার আগে ঠিক ঠিক ৪৫ডিগ্রি কোনে ঘাড় বাঁকিয়ে, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের মত ভ্রু-কুঁচকে, গোটা কয়েক নীতি বাক্যও শুনিয়ে দিলেন, যৌতুক চাইবার জন্য লোভি বরের পিতৃদেবকে মৌখিক উত্তম-মধ্যমও দিলেন। তারপর এক মুহুর্তও সময় না নিয়ে কার্যকর করলেন তার সেই যুগান্তকারী বিচার, শার্টের পকেট থেকে বের করলেন ২৫,০০০ টাকার এক চকচকে বান্ডিল(সানী ভাইয়া যে ইনস্ট্যান্টলি পকেটে বান্ডল বান্ডল টাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তা যদি ঢাকার ছিনতাইকারী্রা জানত, অন্তত দুদন্ড শান্তি পেতে নাটোর যাওয়া লাগতনা এই শহরের বাসিন্দাদের), তুলে দিলেন বরের বাপের হাতে! আর কন্যাদায়গ্রস্থ পিতাকে বললেন,চাচা, আর কোনও সমস্যা নাই, নিশ্চিন্তে আপনার মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন করেন।
সাকসেসফুলি এই অপারেশন সম্পন্ন করার পর দম ফেলারও সময় হয়নি, এরই মধ্যে আরেক গরিব স্বেচ্ছাসেবক একই স্টাইলে হন্তদন্ত হয়ে হাজির।
হাঁপাতে হাঁপাতে, সানী ভাইয়া সানী ভাইয়া! ভাইয়াঃ কী? দরিদ্র ভলান্টিয়ারঃ মান্নান চাচার মেয়ে হাসপাতালে! ভাইয়াঃ চল্ তো!!
আবারও একই গল্পের পূনরাবৃত্তি। এখানেও দানশীল সানী ভাইয়া নগদ ৫০,০০০ টাকা খসিয়ে আসলেন আর্ত মানবতার সেবায়।
সানী ভাইয়া খুউউউবই দানশীল দানেশ। সংবেদনশীল অন্তরের মহামানব। অসহায় দরিদ্র মানুষের সেবাই তাহার ধর্ম...
ছবিঃ অনন্ত প্রেমের সাগর, ওমর সানী ভাইয়া।
অথচ তিনি জমিদারের একমাত্র শাহজাদা। জমিদার সাহেবের অর্থ তিনি রবিনহুড গিরি করে বিলিয়ে দিচ্ছে। প্রতাপশালী জমিদার হলেন গোলাম মোস্তফা। তিনি পুত্রের এই হাজি মুহসিনগিরিতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। দানশীল পুত্র, মাটির মানুষ, ওমর সানীকে বললেন, যাও, কালথেকে শহরে যাও, ছোট একটা চাকরি কর।
তিলে তিলে অর্থ উপারজন কর, তখন বুঝবা। নীতিবান পুত্র, একালের মহামানব, ওমর সানীর উত্তর, বাবা! তোমার আদেশ শিরোধার্য্য। তুমি যদি মনে কর, বিদেশ থেকে এত এত ডিগ্রি নিয়েও আমি শহরে গিয়ে কোনও ছোট চাকরি করি, তবে তাই হবে। কিন্তু মনে রেখ, (আঙ্গুল উচিয়ে, চৌধুরী সাহেব স্টাইলে), তুমি যদি মনে কর, কষ্ট করে উপার্জন করলেই গরীব দুঃখিদের প্রতি আমার ভালবাসা-মমতা কমে যাবে(আমরাও বিশ্বাস করিনা, অমর প্রেমিক সানী ভাইয়ার প্রেম কখনও শুকাবে না, এর চাইতে প্রশান্ত মহাসাগর শুকায়া কাঠ হয়ে গেলেও বিশ্বাস করব), তাহলে তুমি ভুল!!
জমিদার সাহেবঃ ভেরি গুড! আর তুমিও শুনে রেখ, কাল থেকে তুমি তোমার নিজের পরিচয়ে পরিচিত হবে, কোথাও আমার নাম ব্যাবহার করতে পারবে না। কাল সকালের ট্রেনেই তুমি যাচ্ছ।
আমার গাড়িও নিতে পারবে না।
পরের দৃশ্যে সানি সরাসরি শহরে। এক ইন্ডাস্ট্রির ম্যানেজারের কক্ষে ডাইরেক্ট। ম্যানেজার হলেন এটিএম শামসুজ্জামান উইথ হিটলার গোঁফ। ATM সাহেবের রুমে বিনা অনুমতিতে ঢোকায় কিঞ্চিত বিরক্ত, বললেন কী চাই।
সানী ভাইয়া একটা চিঠি ধরিয়ে দিলেন। জমিদারের ম্যানেজারের চিঠি। ATM সাহেব বরাবর লেখা, সেখানে আছে, আমার গ্রামের এই গরিব ছেলেটাকে পাঠালাম, একতা চাকরির ব্যাবস্থা করে দিও। ATM সাহেব বিরক্ত বদনে শেষমেষ বললেন, পিয়নের চাকরি করবে হে ছোকরা? সানী ভাইয়া সানন্দে রাজি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।