একাত্তরের চেতনা - পক্ষ বা বিপক্ষ, নাস্তিক ব্লগার, ইসলাম বিরোধী, ইসলাম রক্ষাকারী/জিহাদী আন্দোলন, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুদ্ধাপরাধী - এই শব্দগুলো শুনছি খুব ঘন ঘন। শব্দগুলো খুব ঘুরপাক খাচ্ছে মাথায়। বিক্ষিপ্ত কিছু চিন্তা বা উপলব্ধি যার পুরোটাই হয়ত বক্তব্যহীন। তবুও লিখছি।
একাত্তরের চেতনা - বিষয়টা কি? "একাত্তরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দেয়া - এটাই একাত্তরের চেতনা - সেই সময় যে বা যারা এর বিরোধীতা করে তারা এই চেতনার বিরোধী" - আজকে আমার এক সহকর্মীর দেয়া এই উত্তরটা ভাল লেগেছে।
যারা সেই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে বা সাধারন মানুষের উপর অত্যাচার করেছে তারা যুদ্ধাপরাধী বা মানবতা বিরোধী অপরাধে অপরাধী। আমরা এখন স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক - কেউ যদি এই দেশের অস্তিত্ব অস্বীকার করে সে এই দেশে থাকার অধিকার হারাবে, কেউ যদি এর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করে সে রাস্ট্রদ্রোহী হবে। আর সেই শাস্তি বা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দেশের সরকার। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করার ঘোষণা দেয়াটা মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করা। আর যাকে তাকে রাস্ট্রদ্রোহী বলাটাও ঠিক না।
এই সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পূনরুজ্জ্বীবিত করা ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝি না। আমরা স্বাধীন দেশ - আবার পাকিস্তান হয়ে যাব বা কেউ আমাদের হঠাত দখল করে নেবে - এই আশংকা হাস্যকর।
৭১এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার দায়িত্ব সরকারের। যা এতদিনের কোন সরকার করেনি এমনকি আগেরবারের আওয়ামিলীগ সরকারও। এইবারের সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল তা করা।
শেষ পর্যন্ত কি হয় না দেখে মন্তব্য করছি না।
ধর্মনিরপেক্ষ মনে হয় শুধু তারই হওয়া সম্ভব যার ধর্ম নেই। যদি কেউ কোন ধর্ম গ্রহণ করেন - তাহলে তার পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া কিভাবে সম্ভব? এখানে সঠিক শব্দটি মনে হয় হবে - অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তাদের ধর্ম পালণে বাধা না দেয়া।
ব্লগার মানে যারা ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে লিখেন - প্রতিষ্ঠিত পত্রপত্রিকার বাইরে নিজেই নিজের কথা - চিন্তা - ভাবনা ইন্টারনেটে প্রকাশ করেন। সেইসব লেখার দায়দায়িত্ব নিতান্তই তার নিজস্ব।
এইসব লেখার সত্যতা কোন প্রতিষ্ঠান যাচাই করে না বা দায়িত্বও নেয়না। কাজেই যিনি পড়বেন এবং লিখবেন উভয়ই নিজ দায়িত্বে পড়বেন এবং লিখবেন। কারও অনুভুতিতে আঘাত লাগলে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের/ওয়েব সাইটের এ্যাডমিনের কাছে অভিযোগ করবেন। নির্দিস্ট সংখ্যক অভিযোগ আসলে তারা লেখাটি সরিয়ে নেবেন। সব থেকে বড় কথা - ব্লগ সবসময়ই ব্যাক্তিগত মতামত - এর কোন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই - জনপ্রিয়তা থাকতে পারে।
পত্রিকার বা টিভির মিথ্যাচার আর ব্লগের মিথ্যাচার এক কাতারে ফেলা যায় না। পত্রিকা ছাপার বা টিভি চ্যানেল শুরুর সময় সরকারী অনুমতি নিয়ে বিধিমালা মেনে ছাপতে এবং সম্প্রচার করতে হয়। কাজেই এখানে প্রকাশিত খবর মানুষ বিশ্বাস করে। কাজেই পত্রিকা বা টিভির দায়িত্বহীনতার মূল্য অনেক।
নাস্তিক বলতে আমি বুঝি - যিনি সৃস্টিকর্তা, দেব দেবী বা কোন ঐশ্বরীক শক্তিতে বিশ্বাসী নন।
আর ইসলাম বিরোধী হলেন যিনি ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেন। ব্লগার শব্দের সাথে বাধ্যতামূলক নাস্তিক বা ইসলাম বিরোধী বলাটা নিতান্তই উদ্দেশ্যমূলক বা বেউকুফী।
ইসলাম রক্ষাকারী ব্যাপারটা আমি ঠিক বুঝি না। আমার জানা মতে ইসলাম দাওয়াতের কথা বলে - দাওয়াত মুসলিম হিশাবে আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু সশস্ত্র দাওয়াতের কথা আমার জানা নেই।
বিশেষ ক্ষেত্রে ইসলামী রাস্ট্রে রাস্ট্রপ্রধানের নির্দেশে রাস্ট্রের প্রয়োজনে সশস্ত্র জিহাদে যেতে হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইসলামের নামে নাশকতা স্রেফ সন্ত্রাস - এর কোন ইসলামী দিক নেই। আর ইসলামের নামে যার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরছেন - সেও কিন্তু মুসলিম ভাই।
বাংলাদেশের রাস্ট্রধর্ম ইসলাম - কাজেই এই দেশ সাংবিধানিকভাবে ইসলামের প্রতি দূর্বল। আবার সাংবিধানিকভাবেই এটি ইসলামী রাস্ট্র নয়।
সাংবিধানিকভাবেই সব ধর্মাবলম্বীর ধর্মপালণে বাধা না দেয়ার অঙ্গীকার রাস্ট্রের। সাংবিধানিকভাবে জাতীয় পতাকা, জাতীয় ফুল/প্রতীক এইসব অবমাননার মত রাস্ট্রধর্মের অপমানও একই মাত্রার অপরাধ।
আমার এই বুঝাগুলি ঠিক কি না তা বুঝতে পারছি না। কারণ আজকে হেফাজতে ইসলামের ইসলাম রক্ষা ব্যাপারটা আমার কাছে যেমন পরিস্কার নয় - তেমনি আটক ব্লগাররা যদি সত্যিই ইসলাম বিরোধী কথা বলে থাকেন তাদের মুক্তির দাবিতে গনজাগরণ মঞ্চ কেন আন্দোলন করছে তাও আমার কাছে একটি প্রশ্ন। আর এই দুইয়ের সাথে সরকারের যুদ্ধাপরাধীর বিচার কেন আটকে থাকছে তাও আমি বুঝি না।
গনজাগরণ মঞ্চই বা কেন নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ দেখাতে চাচ্ছে - যেখানে নিশ্চিতভাবে বলা যায় মঞ্চেরও নব্বই ভাগ মানুষ মুসলমান। আমরা মুসলমান - প্রগতিশীল হতে মুসলমান হওয়াটা কোন বাধা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার ভন্ডামীর আশ্রয় নেয়াটা জামাতের ইসলামকে ব্যবহারের মতই একটা ব্যাপার। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।