আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তালাক

এলোমেলো ভাবনা সারাক্ষণ মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে ১ রাত্রি দ্বিপ্রহর, চিৎকার ধ্বনিত হয় আকাশে বাতাসে ’ওরে মারে, ওরে বাপরে, মইর‌্যা গেলাম আমি আমারে আর মাইরো না রহিমের বাপ, তোমার পায়ে ধরি ’, কোন কথাই যায় না কানে, রহিমের বাপ এখন হিংস্র জানোয়ার চোখে মুখে তার হিংস্রতা ফুটে ওঠে, চুলগুলো সব খাড়া খাড়া টেনে ধরে আরো চুলের মুঠি, পিঠে দিয়ে গোটা কয়েক কিল জোড়ে জোড়ে মারে লাথি গন্ডা কয়েক ,,,,সাথে দিয়ে বিভৎস গালি ’মাগি কই গেছিলি, ক’ আমারে, সাথে নিয়া নাং, আমারে দিয়া ফাঁকি ফিরোস রোজ দেরি কইরা ঘরে,,,মাগি তুই একজন খাটি বেশ্যা’। ২ রাত্রি দ্বিপ্রহর, চিৎকার ধ্বনিত হয় আকাশে বাতাসে ক্ষীণ কন্ঠে আনিছা বলে,’ ’একতা কইয়ো তুমি, আমি বেশ্যা নই দিনের বেলায় ইট ভাঙ্গি আমি, সন্ধায় কাম করি বাড়িওয়ালীর, তুমিতো মদ খাইয়ে ঘুরো, রাখো না কোনদিন খোঁজ হাড়ির কত কষ্ট করি টাকা আনি ঘরে, নিয়া যাও তাও টাংকের তালা ভাঙ্গি’। রহিমের বাপের কন্ঠে হুংকার ধ্বনিত হয়, ’ওরে খানকি মাগী তোর কতবড় সাহস, আমি তোর স্বামী, আমারেই শুনাস গলাবাজী ! মদ, গাঁজা খামু, বিয়াও করুম নতুন একখান, তুই বলার কে? এখনই তুই যাবি ঘরছাড়ি, আসবি না আর ত্রিসীমানায়, তোরে আজ আমি তালাক দিলাম, এক তালাক, দুই তালাক,,,,,,,,,,’। ৩ রাত্রি দ্বিপ্রহর, চিৎকার ধ্বনিত হয় আকাশে বাতাসে ’ওরে আল্লারে, আমি এহন কি করুম, আমারে দিও না তালাক তোমারে আমি বালবাসি গো , খুবই বালবাসি রহিমের বাপ এই মাটিরে খামচি ধইর‌্যা পইড়্যা থাহুম তোমারই পাশে তোমার কতা ফিরাইয়া নাও,,,ফিরাইয়া নাও, ফিরাইয়া নাও,,,’ আনিছার কথা প্রতিধ্বনিত হয় বস্তির দেয়ালে দেয়ালে। ৪ রাত্রি দ্বিপ্রহর, চিৎকার ধ্বনিত হয় আকাশে বাতাসে ’ওরে খানকি মাগী, আমার কতা তোর ভাল লাগে না ভাল লাগে তোর নাং পাড়া, যেহানে নাং থাহে কাড়ি কাড়ি’।

বনের পশুদের হিংস্রতা ভর করে রহিমের বাবার দেহে যেখানে ভালবাসা বলে কিছুই আর অবশিষ্ট নেই, আরো জোড়ে দেয় থাপ্পর গোটা কয়েক আনিছার গালে পিঠে করে লাঠির আঘাত ক্ষিপ্র গতির- থেমে থেমে, নাকের অপেলটা ছিটকে পড়ে দূরে, গড়িয়ে পড়ে রক্ত ফোঁটা ফোঁটা লুটিয়ে পড়ে মাটিতে আনিছা, নেমে আসে অন্ধকার থোকায় থোকায়। ৫ রাত্রি দ্বিপ্রহর, চিৎকার ধ্বনিত হয় আকাশে বাতাসে সাত বছরের রহিম কাঁদে, কাঁদে আরো রাতের আকাশ হুতুম পেচার ডাক থেকে যায়, বাতাস হয় কান্নার মেঘে ভারী, সব ফুলগুলো নিমিষেই ঝরে যায়, তারারা লুকায় লজ্জায়। আমিও লজ্জা পেয়েছি আনিছা, খুবই লজ্জা, এত লজ্জা কোথায় লুকাই সারা দিন-রাত ভাবি, রুখতে হবেই অত্যাচারীর কালো থাবা ভাংতে হবে বিষদাঁত, আমরা এগিয়ে আসবোই তোমাদেরই তরে যেখানে ভালবাসা আর সম্প্রীতির বন্ধনই মোদের প্রধান হাতিয়ার। নোট: আমার বাসার পাশেই বস্তি। বেশ কয়েকদিন আগে এক রাতে শুনতে পেলাম চিৎকার, গালি এবং সেইসাথে মারামারির শব্দ।

সেদিন রাতে আর ঘুমাতে পারি নাই। তার দুইদিন পর জানতে পারলাম আনিছা নামক এক মহিলাকে তার স্বামী ভীষণ মেরেছে এবং পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে মিথ্যা কথা বলে ভর্তি করিয়েছে। এখন সে বাসায় এসেছে। আনিছা তার অত্যাচারী স্বামীকে এখনো খুব ভালবাসে। তাছাড়া তার যাওয়ার কোন জায়গাও নেই।

একথা শোনার পর মনে হলো কিছু একটা লিখি) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।