আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পোলাপাইন এবং দড়ি বিষয়ের গবেষনালব্ধ ব্যর্থ প্রতিক্রিয়া

আমার এই লিখাটির শেষাংশে আছে একটি ‘বিশেষ প্রতিবেদন’! লিখছিলাম এক প্রসঙ্গে এরই মাঝে হাজির সংবাদ, তাই আর কি আপডেটেড হইলাম। টক শো এর ঝাল খেতে খেতে এখন আমার গ্যাস্ট্রিক রোগ হয়ে গিয়েছে। ব্যাপারটি এরকম- খাইলেও ভালো লাগে/না খাইলেও খারাপ লাগে। সেদিন ব্লগ এর একজন বন্ধুকে বলছিলাম রিকশায় আসতে আসতে- আচ্ছা বলেন তো – কে না জানে ভালো কথা। সুশীল কথা।

কিন্তু প্রয়োগ ঘটায় কয়জন? যতসব ভণ্ড আমরা! ব্যাপারটি এরকম- আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে, অকুল দরিয়ায় বুঝি কুল নাইরে…… গানটি বেশ মনে পড়লো লিখার এই মুহূর্তে। মাঝে মাঝে আপনার এমন কোন কিছু মনে পড়বে, যা আপনি ভুলেই গিয়েছিলেন হয়ত। আমি জানিনা কেন এমন হয়। গানটি বেশ সময়োপযোগী মনে হয়েছে। ‘লেবু কচলালে তিতা হয়ে যায়” এ প্রবাদটিও জানি।

আগেকার দিনের মতন এখন আর আমরা সে প্রবাদ দিয়ে যুক্তি-তর্ক, হাস্য-রসাত্মক ব্যঙ্গ সবই উপস্থাপন করি না কোণ আলোচনায় অথবা আড্ডায় ! কুল নাই কিনার নাই নাইকো ধরিয়ার পানি, সাবধানে চালাইয়োরে মাঝি তোমার ভাঙ্গা তরীরে। অকুল ধরিয়ায় বুঝি কুল নাইরে! এই গান মনে মনে গাহি আর ভাবি, দেশের সামনে এবং পেছনে এবং বর্তমানে শুধুই অকুল আক্ষেপ আর আক্ষেপ। কোণই কিনারা নাই! আসলেই কি তাই! তাহলে তো বলতেই হয় কর্পোরেট সে বিজ্ঞাপন এর জিংগেল এর একটি লাইন- ‘আমরা যদি না জাগি তো কেমনে সকাল হবে?’ বই মেলায় আমার মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে এসেছিলেন। সে সময় একজন বলছিলেন- এখন আর মানুষ টার্মিনেটর অথবা শোলের মতন হিট কিছু পাবে না। বলি কেন? উত্তরটা এমন- এখন দু মিনিটের একটি নিউজকেই যদি রংচং মেখে সাজানো যায়।

তা মুহূর্তেই তোলপাড় করে দেবে সারাটি দেশ। হচ্ছেও তাই। কয়দিন পর মানুষ সংবাদেরও প্যাকেজ কিনবে সিডি আকারে! এক ঘণ্টার নাটক- সিনেমার চেয়ে তো ট্রাফিকদের দড়িওয়ালা ট্রাফিক বনে যাওয়ার দৃশ্য উপস্থাপন আরও মজার। সে রিপোর্টারও খুশি, চ্যানেল মালিক খুশি। আর আমরা বে-আক্কেল জনতার চোখ ছানাবড়া! -হায় হায় এ কি অবস্থা! গত সপ্তাহে কলকাতা ঘুরে এসে সহকর্মী বলছে- বেশ এগিয়ে গিয়েছে কলকাতা! বলি কেমন? উত্তরটা উনি এক লাইনেই দিলেন- ওরা বেশ আইন এবং নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে থাকার চেষ্টা করে।

দেখলাম উনার মুখটাও বিষাদ, অভিব্যক্তিটা এরকম- আমদের দেশে নেই কেন সে অবস্থা! বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ বিদ্যায় শিক্ষিত এবং কর্পোরেট কর্মজীবীর চোখে দেখা কলকাতার সে বর্ণনা আমার কাছেও ভালো লাগেনি। দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলাম শুধু। আমরা পারছি না তাহলে? কেন? দেশ কে আমরা পিছিয়ে রেখেছি। দোষ যদি ধরি আগে নিজেকেই ধরি। নিজের সুবিধার জন্য আমি যখন দায়িত্ব-রত ট্রাফিককে বলছিলাম নীলক্ষেত এর মোড়ে- আমাকে যেতে দিন।

একজনকে দিলে খুব একটা ক্ষতি হবে না। আমার অনেক কষ্ট হবে। উত্তরে উনি আমাকে বলেছিলেন- আপনি না হয় একজন। কিছুক্ষণ পর আপনার চেয়েও বেশি কষ্টের কেউ এসে পড়লো। তখন হবে দুজন।

এরপর তিনজন এরপর…। আইন অমান্য করে আমি এসেছিলাম, কিন্তু আসলেই ভালো লাগেনি নিজের কাছে। সবাই একদিক দিয়ে আসছে আর আমি উলটো দিক দিয়ে যাচ্ছি! আর কলকাতায় নাকি রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল এর নির্দিষ্ট চিহ্নের বাইরে দাড় করায় না একচুলও। উদাহরণ দিতে হলে তো ভাই কানাডা যাওনের দরকার নাই। আর আমরা পারলে ট্রাফিক কে ভেঙ্গে বেরিয়ে যাই! অবশ্য কেনই বা অপেক্ষা করবো।

গনতন্ত্রবাহী আমরা- এই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। আমার টাইমের দাম আছে না! সেদিন ইলেকট্রনিক্স মাধ্যমে সংবাদ দেখছিলাম। ব্যঙ্গাত্মক ভাবে বাংলাদেশের ট্রাফিকদেরকে রিপোর্টার বলছিল, ব্যাপারটি যেন এরকম – দড়ি আর বাঁশ বাহী একজন অথর্ব সরকারী কর্মচারী!!! তার রিপোর্ট করতে গিয়ে পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থাকেই হাস্যকর এবং ফেলনা ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল! সে রিপোর্টার অথবা নিউজ চ্যানেলটিকে বলতে ইচ্ছে করেছিল- আগে কি হয়েছে এইডা বাদ দেন, এখন কি হইবো কন? মিয়া আধুনিক যন্ত্রপাতি যদি না থাকতো তাহলে ঝকঝকে নিউজ আধুনিক ভাবে আপনি কিভাবে কাভার করতেন? গ্রহণকারী এবং প্রদানকারীদের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় না থাকলে তো ভেজাল থাকবোই। তবে আর সে ট্রাফিক এর কি দোষ! এই ট্রাফিকদের সুযোগ-সুবিধা আর আইন-কানুন মেনে চলতে হলে দেখা যাবে- সে রিপোর্টার এর প্রায় সবকটি যানবাহনই জরিমানা খাবে। গাড়ি আর রাস্তায় নামানো লাগবে না।

এ আমি নিশ্চিত। উনার রিপোর্ট শেষ হয়েছে- এই হচ্ছে অবস্থা বলে! এর পরের কথা আমার ব্লগার এরশাদ ভাইর কাছ থেকে ধার করা- তিরিশ বছর পরের প্রজন্মও কি আমাদের দোষ দিবে না একই ভাবে- আজ থেকে তিরিশ বছর আগেও যদি ট্রেনের জন্য ওভার পাস-আন্ডার পাস বানানো হতো তার জন্য কতই বা খরচ হতো? এক একটা ওভার পাসের জন্য অতিজোরে বিশ-ত্রিশ লাখ টাকা? না সেটা না বানিয়েই আমরা শুনে যাই উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে দেশ। এখনও কি উন্নতি হচ্ছে। আমরা বোকা জনতা তো দুর্নীতি বলেই যা হবে সেটাও হারাচ্ছি! হাস্যকর কাহিনি হল যত কিছুই হোক- খোদ ভালো ভাবে চলা পার্শ্ববর্তী ভারতেও দুর্নীতি আছে শ শ হাজার হাজার কোটি টাকার। কিন্তু উন্নয়নের নামে ফ্লাইওভার বানানো কিন্তু বন্ধ হয় না, ঠিকই কিন্তু হচ্ছে।

বোদ্ধাদের জিজ্ঞেস করি- ওরা কিভাবে পারছে? আচ্ছা ধরে নেন- রাস্তায় দাঁড়ানো ট্রাফিক এর বেতন মাসিক বিশ হাজার টাকা, উনাকে উনার পরিবার নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। সরকার থেকে সব সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। কেউ আইন অমান্য করলে অথবা নির্দিষ্ট নিয়ম ভেঙ্গে অনিয়ম করার চেষ্টা করলে উনারই ক্ষমতা থাকবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার। তখন কি আর আমরা আইন ভাঙ্গতে সাহস পাবো। ঠিক এর উলটো চিত্রটাই দেখেন তো- ট্রাফিক এর বর্তমান নিয়ম-কানুনের মধ্যেই ট্রাফিক-গন নিয়ম বহাল রাখার চেষ্টায় অবিরত।

আপনি-আমি কি ট্রাফিক সিগন্যাল এর নির্দিষ্ট চিহ্নের মধ্যেই আমার যানবাহনটি দাড় করাবো? বেশিরভাগই তা করেন না! সিগন্যাল ব্যর্থ, হাত ব্যর্থ তবে আর দড়ি দিয়ে বাধা ছাড়া আপনাদের জন্য আর কিই বা করতে পারে সাধারণ একজন ট্রাফিকের তরফ থেকে মিডিয়াওয়ালাদের? গণমাধ্যম বেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখছে তা অনস্বীকার্য। কিন্তু এরই মাঝে বেশিরভাগই যে খবর চটকদার করতে অভ্যস্ত হতে গিয়ে নিজেদেরকেই হাস্যকর করছে। তা নিয়েই যত ভয়। ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করতে হলে আগে তো ট্রাফিক এর সুযোগ-সুবিধা এবং ক্ষমতা বাড়াতে হবে, তার সাথে সাথে আমাদেরকেও শ্রদ্ধাশীল হতে হবে তাদের প্রতি, সাথে সাথে তাও খেয়াল রাখতে হবে- সবকিছুই যেন নিয়মমাফিক প্রক্রিয়ায় হয়। না হলে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলাপাইনগো মতে- গুজব হুনছি তো লাগি মারামারি।

হেই অবস্থাই হইবো। আর সুযোগ বুইঝা এই বিষয়ের মানে হালের হিট সংবাদ সাউথইস্ট এর পোলাপাইন বনাম প্রাইম এর পোলাপাইন এর মধ্যকার মারামারির ফলশ্রুতিতে পুরো প্রথম আর শেষ পৃষ্ঠা ব্যাপী এই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট না তবু উপকারী বিষয় নিয়ে হাজির হবে বদলে যাও বদলে দায় শ্লোগান নির্ভর পত্রিকায়। এত দিন তাইলে কি করছিলেন সম্পাদক মহোদয়। এই বোকা জনতার উত্তর- তেনা-গো নিউজ দরকার তাই সমস্যাগুলো পুষিয়ে রেখেছিলেন। আপডেটে-ড থাকতে হবে না! ভালো খুবই ভালো সচেতনতা।

ভণ্ড কি আমি নাকি আমি সময়ের ভণ্ড! করতে চাইছিলাম দু’মিনিটের নিউজ, বানাইয়া ফালাইলাম দেহি নয়শ নব্বই শব্দের একখান ফ্লিম! বিঃ দ্রঃ -টিভি সংবাদে একজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলছিল- অমুক ভার্সিটির পোলাপাইনরা আমাগো ভার্সিটি আক্রমন করছে। আমি বোকার প্রতিক্রিয়া- তাইলে ছাত্র-ছাত্রী কে?  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.