সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল ঠান্ডা সর্দিতে স্বাদ বাবাজি উধাও। ইচ্ছা করে দুনিয়া খেতে। কিন্তু ওই যে! মুখে স্বাদ নেই। তাই জিবে ঠেকতেই চরম সুস্বাদু খাদ্যও অখাদ্য হয়ে যাচ্ছে। তাই ভাবলাম খেয়ালি পোলাওই আপাতত চলুক।
খেতে পছন্দ করি বলে, বিয়ের দাওয়াত ছাড়া অন্য কিছু কপালে জোটে না। পোস্ট পড়েই বলুন তো। এটা কি অন্যায় করা হয় না আমার সাথে?
এমনিতে তো আমার কুম্ভকর্নের ঘুম। ১০০ ডেসিবলের ঘুম তাড়ানিয়া শব্দ ছাড়া বিছানা নামক চরম আরামদায়ক চৌকোণা থেকে উঠতে ইচ্ছা করে না।
সেই চোখ অনিচ্ছা সত্ত্বেও খুললেও, শরীর মধ্যাকর্ষন শক্তির আবেশে চললেও, পেট বাবাজির ঘুম ভাঙ্গতে বেশ সময় নেয়।
তাই ঘুম থেকে উঠেই নাকে মুখে গোজার অভ্যাস কোনদিনও ছিল না।
তবে একবার যদি পেটের ইঞ্জিল চালু হয়, তাহলে অবশ্য সমস্যা হয় না।
সকালের নাস্তাঃ
(চা যখন প্রধান অনুসঙ্গ)
গ্যাদাকালে নাকি আমি কিছুই খেতে চাইতাম না। (বড় হয়ে অবশ্য পুষিয়ে দিয়েছি)
মায়ের মন বলে কথা। শিশু না খেয়ে থাকলে তার খাওয়া হয়? তার সবচেয়ে পছন্দের নাস্তাই ছিল চা আর টোস্ট বিস্কুট।
কৌতুহলবশত তিনি চায়ে ভিজিয়ে টোস্ট বিস্কুট আমার মুখে দিয়েছিলেন। ব্যাস ! যাবে কোথায়? শিশু মজা পেয়ে গেলো। অন্যান্য শিশুরা যখন সকালে দুধ খেতো তখন ওই চায়ে ভেজানো টোস্টই ছিল আমার পছন্দের। চা বিরোধী বাবা অবশ্য এজন্য মায়ের উপর রেগে আগুন।
কিন্তু কি করা? একেবারে অনাহারের চেয়ে যদি ওই একটা বস্তুই শিশুর ক্ষুধা মেটায়, সেই সান্তনায় নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতেন বাবা।
এর পর চায়ের মধ্যে কিছু না ডুবিয়ে চা খাওয়া আমার পক্ষ্যে সম্ভব না। তাই টোস্টের সাথে সাথে নোন্তা বিস্কুট,কেক, পাউরুটি, বাকরখানি, বাটারবন, এমনকি ডালপুরি চুবিয়েও চা খাওয়া হয়েছে।
চা যখন প্রধান অনুসঙ্গ নয় !
ছোট বেলায় সবচেয়ে অপছন্দ ছিল লুচি আর ঘি দেয়া সুজির হালুয়া। সেগুলি গেলার পর উগরে দেবার তীব্র বাসনা জাগতো। পিঠে মায়ের লুচি বেলার বেলন পড়ার ভয়ে সংযত হতাম।
তবে অন্তত একটা নাস্তা গন্ধ নাকে আসলেই পেটের ইঞ্জিন চালু হতে দুই মিনিটও লাগতো না। আর ঘুম বাবাজি? সে চোখের নিমিষে উধাও। সেটা হল মায়ের হাতে পরাটা দিয়ে গরুর ভুনা। কি গ্রীস্ম কি শীত যাই হোক না কেন। খান্দানের অভ্যাস, তুলার মত নরম মাংস হলে চলবে না।
বেশ খানিকটা শক্ত ভুনা হওয়া চাই। সেই রকমই রান্না করতেন মা।
উমম... তার ঘ্রাণেই প্রায় পুর্ণ ভোজন সম্ভব। রেসিপি চাইলে দিতে পারি। কিন্তু ঝুকি আছে।
নিজ হাতে রান্না করা ব্যাচেলাররা খেলে স্বাদের কারনে প্রতিদিন খেতে চাইবেন। সাধ্যে না কুলালে মেজাজ বিগড়ে থাকবে।
বিবাহিত ভাইয়েরা আহ্লাদ করে বৌকে খাওয়াবেন। বৌ মজা পেয়ে রান্নাঘরে নাস্তার দ্বায়িত্ব থেকে মুক্তির অজুহাত পেয়ে যাবেন।
আর বিবাহিত বোনরা জামাইকে খাওয়ালে হেসেল ঠেলতে ঠেলতে জান কালা হয়ে যাবে।
ভাবছেন এইটাই বোধ হয় আমার সবচেয়ে প্রিয় নাস্তা। প্রিয় নাস্তা ঠিকই। কিন্ত প্রিয়র মধ্যে একটি মাত্র।
চলুন, আমার প্রিয় নাস্তা খাবার জন্য স্বপ্নপুরিতে নিয়ে যাই। তবে এই স্বপ্নপুরি খুবই বাস্তব !
আগেই বলেছি আমাকে ঘুম থেকে উঠানো খুব কঠিন কাজ।
ফজরের নামাজ পড়েই আধা ঘুমন্ত আমাকে বগলদাবা করে ঢাকার একপ্রান্ত থেকে সোজা চকবাজারে। চারিদিকে আধা আধা আলোর একটা পরিবেশ। লোকজন নেই বললেই চলে। চারিদিকে বাতাস খুব নির্মল পবিত্র স্বচ্ছ। স্বপ্নের মত পরিবেশ বলা চলে।
প্রথম বিরতিতেই চকবাজার শাহি মসজিদের নীচের মাঠা আর মাখনের দোকানে।
হাতের চেটোর সাইজের একদলা মাখন গেলার পর ছোট এক গ্লাস মাখন পেটে চালান। এর মোজেজাটা বুঝেছিলাম আরো অনেকদিন পর।
এর পর প্রধান গন্তব্যে। বাবার হাত ধরে আজব এক মার্কেটের ভেতরে প্রবেশ।
অদ্ভুত এক গোলক ধাধা। প্রথমে তো ভয়ই পেয়েছিলাম। আধা অন্ধকার, দুজন মানুষ পার হতে পারবে কিনা সন্দেহ। এমন ঘুপচিতে বাবার হাত ধরে এই মিনিট খানেক পরেই যে গন্ধ নাকে লাগলো, তাতে ঘুম বাবাজি বাপ বাপ করে উধাও।
আহা।
পোলাও এর গন্ধ যে এত মোহজাগানীয় হতে পারে, সেটা যে না শুকেছে সে কোনদিনও বুঝতে পারবে না। একটা দোকানের চাতালে শশ্রুমন্ডিত টুপি আর সাদা লুঙ্গি পড়ে বিশাল ডেক নিয়ে বসে আছেন একজন মানুষ। তাকে ঘিরে ছোট ছোট টুলে বেশ কিছু লোক বসা। এনামেলের ছোট ছোট বাটিতে করে গরুর বিরিয়ানি আর কাগজি লেবু গ্রাহকদের দেয়া হচ্ছে। তবে মনে হচ্ছিল না, কেউ একাধিক প্লেট সাবার না করে সেখান থেকে উঠার নাম নিচ্ছে।
বিরিয়ানির গন্ধ তো তেমন, এমন কি বিরিয়ানির মধ্যে যে কাচামরিচ দেয়া আর পাশে কাগজি লেবু, এই দুটার গন্ধও মন ভরিয়ে দিতে ১০০ ভাগ সক্ষম।
জ্বি এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় নাস্তা। কিন্তু যেহেতু সেই সাত সকালে ছাড়া এই বস্তু পাওয়া যায় না, সেহেতু জীবনে হাতে গোনা মাত্র কয়েকবার এটা খাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। ঘুমের কারণে
প্রিয় বস্তুকে কোরবানি করতে হয়েছে। (দুঃখের ইমো হবে)
আরেকটা কথা ! সকালে বিরিয়ানি ভক্ষণের কথা শুনলে অনেকের ভ্রু কুঞ্চিত হতে পারে।
একবার খেয়েই দেখুন। (তবে সেটা বিয়ে বাড়ির বাসি পোলা/রেজালা বা বিরিয়ানি হতে হবে। নতুবা আমার সেই স্বপ্নপুরির সেই বিরিয়ানি। এর পর আর ভ্রু কুঞ্চনের সুযোগই আসবে না। )
এর পড়ে মনে করেন পাউরুটি দিয়ে জ্যাম, রুটি ভাজি, পরোটা ডিম ভাজি, এই সবের কোনকিছুতেই অরুচি নেই।
হ্যা ! শীতে দিনে মা, গোল চাকচাক করে আলু, টমেটো পাচফোড়ন দিয়ে একটা টকঝাল ভাজি করতেন। পরাটা দিয়ে খেতে ঠিক সেই রকম ! রেসিপি চাইলেই পাবেন। কিন্ত ওই যে ! ঝুকি আছে।
পিঠা পুলির কথা কি বলবো? শীতের সকালে গরম গরম ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, পাটিসাপটা। উল্লেখ করার দরকারই নেই।
অনেকে গুড়ের রসে ভিজানো চিতই পিঠা খেতে ভালোবাসেন। সকালে মিস্টিটা ঠিক মুখে রোচে না। তাই সাদা চিতই পিঠা কলিজার তরকারি সহযোগে নাস্তাটাই বেশি কাম্য। না খেলে খেয়ে দেখেন।
এই তো গেলো নাস্তার কথা।
বাকি থাকলো দুপুরের খাবার, বিকালের নাস্তা, আর রাতের খাবারের কথা। সে সব না হয় আরেকদিন ! কি বলেন? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।