আনন্দবতী মেয়ে আমি হাওয়ায় উড়াই চুল,চোখের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ মনের ভেতর নীল ঘাসফুল পূর্ণতাপ্রাপ্তি কাকে বলে ? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে রাতের পর রাত ঘুমায়নি শূণ্যতা । নতুন যুগের এস.এম.এস মেয়ে নয় । ইন্টারনেটের সাথে মাত্র বছর আট হলো পরিচিতি । যদিও আধুনিকতার থেকে কোনোভাবেই পিছিয়ে পড়া নারী তাকে বলা যায় না । অষ্টাদশীরাও লজ্জ্বা পাবে ।
কিন্তু এক অস্থিরতা গ্রাস করছে সাংসারিক জীবনে । স্বামীর ভালোবাসা , দুটি সন্তান -- রাজকন্যা এবং রোদ্দুর । তবুও কিছু একটা যেনো খোঁজে ।
নিজস্বতাকে একটু ঠেলে একদিন অন্যরকম সময় কাটাতে গিয়ে অগোচরেই আটক । হঠাৎ ফিরে পাওয়া সেই ফেলে আসা মুখ , একই রকম , চোখ সরাতে পারছে না শূণ্যতা ।
সে - ই কি ? এ কিভাবে হয় ? গ্রামের ছেলে , ইন্টারনেট - এ ? এমন কিছু মুখ থাকে শত টানাপোড়নেও বদলে যায় না । ঠিক সেই ভাসা ভাসা চোখ , ঠোঁটের কোণে ঝুলে থাকা দুষ্টু হাসি । শুধু বাইশ বছরের শরীরটা ছত্রিশে ঠেকেছে । উহু কোনোক্রমেই ভুল হবার নয় । নামও তো একই ।
আরে এসব হচ্ছেটা কি ! অদ্ভুত তো ! অফিসে বসে কাজ ফেলে ফাঁকি দেবার মতো মানসিকতা কোনোদিনই ছিলোনা । বরং অন্য কেউ ও তার সামনে করতো না । অথচ সে এমন আহামরী পদ - এ নেই, যার জন্য তাকে সবাই সমীহ করবে । এক ধরণের ব্যক্তিত্ত্বের আভরণে নিজেকে সাজিয়ে রেখেছিলো । কিন্তু আজ এদিক -ওদিক চেয়ে মেসেজ লিখে ফেললো , কিশোরী মেয়েদের লুকোনো প্রেমপত্রের মতো ।
প্রিয় নির্জন ,
আমি শূণ্যতা । হয়তো মনে পড়ছে না । আমি চাই মনের পর্দাটা একটু সরিয়ে দিতে । উঁকি দেবার প্রবল ইচ্ছায় কাজ ফাঁকি দিলাম । ভুলো মন কে জাগিয়ে উত্তর ও আশা করি ।
সেই শূণ্যতা
স্বস্তির শ্বাস পড়লো । অফিস শেষ করে যখন পথে নামলো শীতের সন্ধ্যা গ্রাস করেছে দিন । কৃত্রিম আলোয় আলোকিত জীবনযাত্রা । আজ অস্থিরতাও নেই । বরং প্রজাপতির মতো নাচতে ইচ্ছে করছে , গুনগুন করে সুরও ।
বাসায় পৌঁছাতেই কন্যা জড়িয়ে ধরলো আর রোদ জিজ্ঞাসা করেই বসলো :
"মামনি কি হয়েছে ? খুব খুশী খুশী যে ?"
অবাক হয়ে যাচ্ছে শূণ্যতা , ছেলেটা আজকাল বেশ বুঝতে শিখেছে । বললো , জানিস ছোটোবেলার বন্ধুকে পেয়েছি রে চৌদ্দ বৎসর পরে , তাও নেটে । কথার তুবড়ী ছুটলো । ছেলে - মেয়ে মায়ের মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো । তখন যদি রায়ান এসে না দাঁড়াতো , বাংলাদেশ বেতার কি আর থামতো ? ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার শেষে নিজস্ব সময়টুকু লাইব্রেরীতে কাটায় ।
সারাদিনের মধ্যে এই সময়টুকু সবচেয়ে বেশী প্রিয় । যদিও রায়ানের শারীরিক চাহিদার কাছে সপ্তাহের দুই / তিন দিন অনুপস্থিত হতে হয় । জগদ্দল পাথরের মতো সেই রাতগুলো কাটায় ।
কম্পিউটার ওপেন করে । ই - মেইল চেক করতে গিয়ে কাঁপুনী শুরু হলো , নির্জন লিখেছে ।
নির্জনের চিঠি : স্বগোতোক্তি শূণ্যতার ।
প্রিয় শূণ্যতা ,
মনে করে কি লাভ ? বরং নতুন করে কিছু মনে করা তৈরী হোক । নতুন সময় , নতুন জীবন , নতুন বন্ধুত্ত্ব । ওই ভুলো মন ঘুম দিয়েছে । নতুন মন নিয়ে নতুন সম্পর্ক তৈরীতে নতুন একটি মেইল পেতে আগ্রহী ।
এখনকার নির্জন
নাহ্ , এই সেই নির্জন । কোনোভাবেই ভুল হবার নয় । সঙ্গে সঙ্গেই লিখে ফেললো :
প্রিয় নির্জন ,
এই এভাবে কি রে ? বয়স হয়েছে অথচ ফাজলামি যায়নি , না ? কোথায় থাকিস ? ছেলে - মেয়ে কয়টা ? তোকে দেখতে ইচ্ছে করছে । এই তোর বউ কি করে ? নাম কি ? অনেক কথা জানার ইচ্ছা । বলনা সব , ইস্ সব লিখে জানা ।
আমার ফোন নং – ০১৭১২৩২০১৭৩ । তোরটা দিস । এখনো কি আবৃত্তি করিস কথোপকথন ?
"আজকাল তুমি বড্ড বেশী সিগারেট খাচ্ছো শুভঙ্কর !"
হাসি পাচ্ছে রে । এই , এই , শোন ঘুমিয়ে পড়িস না যেনো । উত্তর এক্ষুণি চাই ।
সেই শূণ্যতা
পনেরো মিনিটে উত্তর ।
শূণ্যরে শূণ্য ,
এতো উত্তর এক সাথে ! অসম্ভব ! ফোন দিচ্ছি ।
নির্জন
একটি রাতেই আবার কিশোরী , আবার তরুণী বেলা । কতো গালাগাল : পেচী , গাধা , বাঁদর , চামচিকা , বুড়ী , গুন্ডা । হাসির হুল্লোড় , মৃদু অভিমান ।
সারাদিনের ক্লান্তি মিইয়ে গেলো । সারাটি রাত কোন ফাঁকে যে ভোরের আলোয় মুখ লুকালো । এখন তো উঠতেই হবে । আবার দৈনন্দিন কর্ম । ঘোরের মধ্যে দিয়ে সমস্ত দিন পার ।
রাত এগারোটা । শ্রান্তি নেই , নেশাগ্রস্থের মতো আবার মেইল খুলে লেখা । নির্জন বেড়াতে আসবে । কিন্তু রায়ান কিছু মনে করবে না তো ? করলে করুক । বন্ধু সে , প্রেমিক তো নয় ।
অফিসে এলো একদিন নির্জন । তখন জানি কেমন লাগছিলো শূণ্যতার ।
"এই তোর ডান হাতের কাঁটা দাগটা কোথায় রে নির্জন ?"
একটু কেঁপে গেলো মন । নির্জনের ঠোঁটের কোণের হাসিটা একটু কি বদলেছে ? সেই নির্জন তো ?
"আচ্ছা তিতিরের খবর কিছু কি জানিস ? আচ্ছা কেন জানি মনে হচ্ছে কিছু একটা ভুলের জন্ম হলো । সেই নির্জন তো ?"
অনেকক্ষণ পর মুখ খুললো :
"সেই নির্জন নই , এই নির্জন ।
পুরোনো বন্ধু নই , কিন্তু নতুন বন্ধু তো ? "
অনেকদিন পর বন্ধুহীন পৃথিবীতে পরম সুহৃদের স্পর্শ পেলো দুটি জীবন । গোপন প্রেম নয় , নির্ভেজাল ভালোবাসা :
"এই শোন সামনের শুক্রবার আসিস । ভালো রান্না করতে জানি" ---- শূণ্যতা হেসে বললো ।
"কি খাওয়াবি ? আগে তো খেয়ে দেখি , খাবার স্যালাইন নিতে হবে কি ?"
হাত উঠে এলো অনেকদিন পর শূণ্যতার ......................................... ।
**অনেক অনেক অসামঞ্জস্য আছে , কারণ জীবনে্র প্রথম গল্প লেখার চেষ্টা করেছিলাম ।
তবে চেষ্টা করছি উত্তরণের , পারবো এটা আশা করি । তাও নতূন লেখা দিলাম না । কারণ জীবনের প্রথম গল্প তাকে তো অন্ধকারে রেখে দিতে পারিনা । কঠিন সমালোচনা চাই । **
ল্যুভেন - লা - ন্যুউভ , বেলজিয়াম
১৯ জানুয়ারী , ২০১০ ইং ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।