আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবাহ

অবিনশ্বর প্রেমের জন্য প্রার্থনা চুল নিয়ে ফাহাদ দুশ্চিন্তায় পড়েছে। পড়বেই না কেন? বয়স যে মাত্র ২৮ বছর। এখনই তার মাথায় স্টেডিয়াম আকৃতির টাকের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তার উপর বিয়ের কথাও চলছে। যদিও ফাহাদের এই মুহূর্তে বিয়ে নিয়ে আগ্রহ নেই।

জীবনটা তার কাছে এলোমেলোই ভালো লাগে। কেউ এসে তার উপর খবরদারী করবে, সেটা সে মোটেও সহ্য করতে পারেনা। আর বিয়ে নিয়ে তার একটু “ফোবিয়া” আছে। এই পর্যন্ত কোনও সংসারে সুখ দেখেনি ও। শুধু ঝগড়া আর মারামারি।

ভালোবাসা যেন আকাশের চাঁদ। ইদানীং জেগে জেগে দুঃস্বপ্নও দেখা শুরু করেছে। দুঃস্বপ্নগুলো এমনঃ- দেরি করে বাসায় আসার জন্য তার বউ তাকে রাতে খাবার দেয়নি। আর দিলেও তাতে প্রচুর লবন ঢেলে দিয়েছে। লবন ফাহাদ ঘৃণাই করে বলা যায়।

রেগে গিয়ে তার বউ তার দিকে ঝাড়ু ছুড়ে মেরেছে। আর পাশের বাড়ির ভাবি তা জেনে গিয়ে সবাইকে বলে দিয়েছে। এখন সবাই তাকে দেখেলে মিটিমিটি হাসে আর আড়ালে বলে “ফাহাদের বউ তো ওকে ঝাড়ুপেটা করে!” তবে ফাহাদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হল টিভি দেখা নিয়ে। হিন্দি সিরিয়াল দেখলে তার বমি আসে। আর আজকালকার মেয়েরা তো সারাদিন রাত এই করে।

নতুন বউ যদি সিরিয়ালের ভক্ত হয়? তেমনি এক বিকেলে জেগে জেগে দুঃস্বপ্ন দেখছিল ও। তখনি ছোটবোনের ডাক। “ফাহাদ, তোকে মা ডাকে” মেজাজ বিগড়ে গেলো ফাহাদের। ৯ বছরের ছোট হয়েও তাকে তুই করে ডাকে। আজকালকার পিচ্চি একেকটা বিচ্ছু।

“কি বলবে মা” ফাহাদ জানে নতুন কোনও মেয়ের সন্ধান পেয়েছে মা। তবুও জিজ্ঞাসা করলো। “দেখতো, তোর পছন্দ হয় নাকি” বলে একটা ছবি ভর্তি খাম এগিয়ে দিলেন মা। “খুবই ভালো মেয়ে” যোগ করলেন তিনি। “এত ভালো মেয়ে হলে বিয়ে ঠিক করে ফেল।

আর আমাকে মনে করে দাওয়াত দিও” “আরে বোকা ছেলে বলে কি! তোর বিয়ে তুই মেয়ে পছন্দ না করলে হবে নাকি?” “হুহ , ছবি দেখার সময় নেই”। “ঠিক আছে, কাল মেয়েকে দেখতে যাবো, তুইও যাবি” মা আদেশ দিলেন। “জি না” “হ্যা, যাবি। সন্ধায় বাসায় থাকবি কাল। আর জ্বালাস না তো” মা একটু বিরক্ত হলেন না।

তার পর ফাহাদ আর মানা করতে পারল না। পরের সন্ধায় তারা পাত্রি দেখতে গেলো। ফাহাদের জন্য এই প্রথম। মা, বোন আর সে। কি অবাক কাণ্ড।

ছোটবোন তানিয়া আজ তাকে তুমি বলেই ডাকছে। মেয়েটা কিছু আদব কায়দা শিখেছে তাহলে, মনে মনে ভাবল ফাহাদ। পাত্রির বাড়ি সবাই জামাই আদর পেল। ফাহাদ চিন্তা করলো “মন্দ না, একটার পর একটা পাত্রি দেখবো আর ডিনার করবো” খাবার শেষে মুরুব্বীরা বসে আলাপ করছেন। এর মাঝে তারা ফাহাদ আর পাত্রির ভাইভা নেওয়া শেষ করেছেন।

এখন তাকে একটি রুমে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। “আসসালামালাইকুম”- সালাম জানিয়ে রুমে পাত্রির প্রবেশ। ফাহাদ একটু অবাক হল। ডিজিটাল জুগের মেয়ে এসে সালাম দিবে সে ভাবতে পারেনি। আশা করেছিল মেয়ে এসে বলবে, “হেই বাডি, কি অস্তা?” যাই হোক, মেয়ে তার সামনের চেয়ারে বসলো।

জানাল তার নাম লিয়া। ৪৫ মিনিট আলাপ করলো তারা। মেয়েকে বেশ খুশি মনে হল। হবেই বা না কেন? ফাহাদ অত্যন্ত ভালো এবং যোগ্য ছেলে। বাসায় ফিরেই মা জিজ্ঞাসা করলেন মেয়ে পছন্দ হয়েছে কিনা।

“না, পছন্দ হয়নি। ” “কেন ! আমাদের সবার তো ভালো লেগেছে” বেশ বিস্মিত হয়ে মা জানালেন। ফাহাদ একটু আতংকিত হল। মনে মনে অজুহাত খুঁজতে লাগলো। “মা, মেয়েটা মোটেও ফর্সা না” “আরে বাবা, ফর্সা হলেই কি ভালো মেয়ে হয় নাকি?” “তার উপর হাসলে কেমন জানি টোল পড়ে”- ফাহাদ অভিযোগ জানাল।

“আরে বোকা ছেলে, টোল পড়লে তো আরও সুন্দর লাগে মেয়েদের !” “আর মেয়েটা তো রান্নাবান্না তেমন পারে না” “কি যে বলিস না বাবা, রান্না শিখতে কতো দিন লাগে? আমার বিয়ের সময় আমিও তো তেমন কিছু পারতাম না। ” “যাই বল মা, আমার মেয়ে পছন্দ হয়নি” সাফ জানিয়ে দিল এবার ফাহাদ। বিয়ে ভেঙ্গে গেলো। কিছুদিন পর। বারান্দায় বসে ভাবছে ফাহাদ।

মা আবারো পাত্রি দেখা শুরু করেছেন। এবং নতুন একটা মেয়ের সন্ধান এনেছেন। কিন্তু ওর কেবল লিয়ার কথাই মনে পড়ছে। বিয়ে না করার জন্য মুখে যাই বলুক না কেন, মেয়েটা ভালোই ছিল। কথা বলতে ইচ্ছে করছে ওর সাথে।

“তানিয়া, এদিকে আয় তো”- চিৎকার করে বোনকে ডাকল। “কি? ডাকছিস কেন? তাড়াতাড়ি বল, আমার সিরিয়াল শুরু হয়ে গেলো” “একটু হেল্প লাগে যে আপু” “কি হেল্প?” “লিয়ার নাম্বার আছে তোর কাছে?” “কোন লিয়া !” “ওই যে, সেদিন দেখে আসলাম” “আরে , তুমি তো মেয়েটাকে পছদ করনি” “তা করিনি, একটু জরুরী কথা ছিল” “কি জরুরী?” “নাম্বার থাকলে দে, না দিলে ভাগ”- রেগে গেলো ফাহাদ। “নেই” বলে চলে গেলো তানিয়া। ফাহাদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কি করা যায়? “এই নে নাম্বার” বলে এক টুকরো কাগজ ছুড়ে দিল তানিয়া।

“তোর কাছে না নেই?” “সিরিয়াল শুরু হয়ে গিয়েছিলো”- ভিলেন মারকা হাসি দিল তানিয়া। আবার চলে গেলো সিরিয়াল দেখতে। রিং হচ্ছে। কেউ ধরছেনা। ৫ম বারের মাথায় ধরল।

“হ্যালো, আমি ফাহাদ.....................” ১ মাস পর। “কিরে ফাহাদ, এত সেজেগুজে কোথায় যাস?” মা প্রশ্ন করলেন। “এইতো মা, ফ্রেন্ডের বাসায়। ” “ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি আসিস, একটা মেয়ের খোঁজ পেয়েছি” ফাহাদ হাসল মনে মনে। লিয়ার সাথে প্রেম হবার পর যতই মেয়ে নিয়ে এসেছে মা, সব মানা করে দিয়েছে ও।

আর এখন এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? সামনে পহেলা ফাল্গুন না? রাতে বাসায় এসে বাবার সামনে পড়লো ফাহাদ। “আর কতো মেয়ে দেখবো তোর জন্য? কিছু একটা বল” “জানাব আমি” বলে রুমে চলে এলো ফাহাদ। তানিয়াকে সব জানাল। “ঠিক আছে, আমি মাকে জানাব, আমাকে কি দিবি?” তানিয়া জানতে চাইলো? “যা চাস তাই পাবি। প্লিজ বোন আমার, সব মেনেজ কর” “আচ্ছা, দেখি।

” রাতেই তানিয়া মাকে সব জানাল। খাবার টেবিলে মা মুখ খুললেন, “লিয়াকে না তোমার পছন্দ হয়নি?” “না মা, আসলে ভেবে দেখলাম, মেয়েটা খারাপ না। তাছাড়া, এর চেয়ে ভালো মেয়ে পাবে কোথায়?” “কিন্তু ফাহাদ। আমি আর তো বাবা ভেবে দেখলাম, মেয়েটা আসলেই ফর্সা না” “মা, তুমিই তো বলেছিলে, ফর্সা কোনও ব্যাপার না। ” “তাও যদি মেয়েটা রান্নাবান্না করতে পারত.........” “শিখতে কতদিন লাগে মা?” “যাই হোক, মেয়েটাকে আমার পছন্দ করছিনা, তুমি বরং এই মেয়েটা ছবি দেখ”- আলোচনার ইতি টানলেন বাবা একটি খাম এগিয়ে দিয়ে।

“কিছু হল?”- লিয়া জানতে চাইলো। “নাহ, বাবা মা এখন রাজি না। তোমার বাসায়?” ফোনে কথা বলছে দুজন। “অনেক কষ্টে মাকে বলেছিলাম। মা মানা করে দিল।

বলল যে প্রথমে তুমি রাজি ছিলে না, এখন কেন?” “এখন উপায়?” “তুমি জানো, আমি কিচ্ছু জানি না” জানিয়ে দিল লিয়া। দুজনই চুপ করে গেলো। আর কি করতে পারে তারা? পরদিন। পহেলা ফাল্গুন। খুব ভোরে ফোন করে লিয়ার ঘুমা ভাঙ্গাল ফাহাদ।

“ব্যাগ গুছাও” জরুরী কণ্ঠে বলল ফাহাদ। “কেন?” “আমরা পালাবো” “কি !” “হ্যা” “কেন?” “পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। আর একবার পালালে সবাই না মেনে যাবে কোথায়?” “আমাকে জীবনেও বাবা বাসায় ঢুকতে দিবে না”- লিয়া একটু যেন ভয় পাচ্ছে। “আরে দেবে দেবে, না দিয়ে যাবে কোথায়?” সবাইকে ঘুমে রেখে লিয়া-ফাহাদ পালিয়ে গেলো। তবে ফাহাদ যাবার আগে তানিয়াকে সব বলে গেলো।

পালিয়ে একদম কক্সবাজারে। এর মাঝে দুজনের মোবাইলে বাসা থেকে ফোনের পর ফোন। বিকেলে ফোন ধরল দুজনই। জানাল কেউ তাদের বিয়ে না মানলে তাদের কিচ্ছু আসে যায় না। তারা বিয়ে না করেই থাকবে।

একথা শোনার পর লিয়ার মা অজ্ঞান হয়ে গেলেন। অবশেষে রাতে দুই পক্ষের সবাই এসে কক্সবাজার উপস্থিত হলেন। প্রথমে রাগারাগি করলেও মেনে নিলেন। সবাই একমত হলেন যে সবাই জানার আগেই, কাল তাদের বিয়ে দিতে হবে। না হলে আর ইজ্জত থাকবেনা।

ভালোবাসা দিবসে বিয়ে হবে, এটা শুনে লিয়া খুব খুশি হল। তবে ফাহাদ একটু মন খারাপ করে আছে। সবার সামনে বাবা তার গালে ৫ কেজি ওজনের চড় বসিয়ে দিয়েছেন। কি লজ্জা ! কি লজ্জা !!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।