আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবাহ-

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা

সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো বিভীষিকার মতো মনে হয় ইদানিং, চতুর্থ বাক্যে এসেই আমার সামাজিকতা স্থগিত হয়ে যায়। কেমন আছেন? কেমন আছো? বাসার সবাই ভালো? সব ঠিক ঠাক চলছে? ঠিক এই প্রশ্নের পরেই আমার সামাজিক জীবনের সমাপ্তি। অনেক মাথা চুলকিয়েও এরপরের উপযোগী কোনো বাক্য তৈরি করতে পারি না। সুতরাং সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছি, অনেকটা ঘরকুনো টাইপ হয়ে যাওয়া যাকে বলে। অনেক অনেক দিন পরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলাম।

অনুরোধের ঢেঁকি গেলা নয়, বরং উৎসাহ নিয়েই গেলাম। গিয়ে অবশ্য করবার কিছুই নেই। এইসব সামাজিক অনুষ্ঠানের নাড়ি-নক্ষত্র বুঝে উঠবার চেষ্টা বাদ দিয়েছি আমি। পান চিনি/ কাবিনের অনুষ্ঠান। বিয়ের পরে আনুষ্ঠানিক আংটি বদল হবে- যদিও আমার ধারণা ছিলো আংটি পড়ানোর অনুষ্ঠান পূর্বে হয় পরে বিয়ের অনুষ্ঠান, তবে ইদানিং সব কিছুই বদলে যাচ্ছে, আমার পরিচিত পৃথিবী অনেক বদলে গেছে, এই নতুন পৃথিবীর স্টাইল অসামাজিক আমি বুঝি না।

ছেলে বিয়ে উপলক্ষে দেশে এসেছে, ৩ সপ্তাহের ছুটিতে, বোধ হয় সবেতন এর চেয়ে বেশী ছুটি কোথাও দেওয়া হয় না। সুতরাং ব্যস্ততা একটু বেশী। তবে অনেক চেষ্টা করেও ঈদের ছুটি, ছেলের যাওয়ার তাড়া, সব মিলিয়ে উঠ ছুড়ি তোর বিয়ে টাইপ একটা বিয়ে হবে- ছেলের যেদিন যাওয়ার টিকেট সেদিনই ছেলের গায়ে হলুদ। অবশ্য ছেলে যাওয়ার দিন পেছানোর জন্য টিকেট বদল করবে আশা করা যায়। এই নিয়েই আদতে কথা হচ্ছিলো।

দিনটা কেমন হয়ে গেলো, যে দিন গায়ে হলুদ সেদিনই যাওয়ার টিকেট, যদি না বদলায় তাহলে কি হবে? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর হয় না। তবে নিজের গায়ে হলুদে নিজে উপস্থিত থাকতে নাপারবার মতো মর্মান্তিক কিছু হতে পারে না- আমার সুচিন্তিত অভিমত এটাই। এমন কি নিজের বর যাত্রা আর নিজের বৌ ভাতেও উপস্থিত থাকতে না পারাটা রীতিমতো দুর্ভাগ্যজনক। আমি অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখলাম আমার বয়সী কেউ নেই, এক বন্ধুর আসবার কথা, যথেষ্ট ব্যগ্র হয়েই বন্ধুর আগমনের প্রত্যাশা করছি। ও আসলেঅন্তত সামাজিকতার খাতিরে চুপচাপ বসে না থেকে কিছু কথা বলা সম্ভব হবে।

ছেলে বিয়ে উপলক্ষে ডায়মন্ডের আংটি নিয়ে এসেছে। আমি ডায়মন্ড দেখি নি তা বলবো না, তবে ডায়মন্ডের আংটি কিনে নিজের আংটি বদলের অনুষ্ঠান করবার মতো আর্থিক সামর্থ্য আমার কখনই হয় নি। যে মেয়েকে পছন্দ করতাম, যখন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার কথা তখনও আমার হতদরিদ্র অবস্থা, এবং আমার বন্ধু চমৎকার বলেছিলো, বুঝলে , আসলে বন্ধু থাকাই ভালো, প্রেম হলে মেয়েরা মাত্র দুটো কথাই বলে- এই চলো না বিয়ে করে ফেলি। কবে আসছো আমাদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে। কথাটা হাড়ে হাড়ে সত্য- সুতরাং এমন সময়ে বললাম- আমার তো সমস্যা নেই কোনো তবে আমার যে আর্থিক সঙ্গতি তাতে আমার চোরকাঁটা দিয়ে আংটি বানিয়ে এনগেজমেন্ট করতে হবে।

তুমি রাজী থাকলে বলো, আমি যে কোনো দিন এসে পড়িয়ে দিয়ে যাবো। বিষয়টা যথেষ্ট রোমান্টিক মনে হয়েছিলো- ভালোবাসা যদি থাকে তবে আর্থিক সমস্যা তেমন বড় বিষয় হতে পারে না মানুষের জীবনে, কিন্তু দেখা গেলো সামান্য ২ আনার সোনার আংটিও অনেক বড় ফারাক তৈরি করে দিতে পারে। তবে হীরা দেখেছিলাম আমি যখন, তবে ছবির ফ্রেমের কাঁচ কাটবার জন্য হাইড্রোফ্লোরিক এসিড সহজলভ্য ছিলো না, হীরাই সম্বল। একরত্তী হীরা লাগানো থাকতো কাঁচ কাটবার যন্ত্রে। সেই হীরা দেখেই শান্তি, অন্তত হীরা চোখে দেখতে পারছি আমি।

ইদানিং মানুষ কথায় কথায় হীরা-মোতি- প্লাটিনাম নামিয়ে ফেলে। এগুলো সস্তা হয়েছে না মানুষের সামর্থ্য বেড়েছে কে জানে? আমার ছেলে অবশ্য সুযোগ পেলেই রান্নার অনুষ্ঠান দেখে। তার প্রিয় তারকা সিদ্দিকা কবির। সিদ্দিকা কবিরের অদ্ভুত গলা শুনলেই সে ছুটে গিয়ে টেলিভিশনের সামনে দাঁড়ায়। এবং তার নিজে নিজে খেলবার অন্যতম উপকরণ এই রান্নার অনুষ্ঠানের আদলেই তৈরি, এরপর একটু পিঁয়াজ দিয়ে ২ মিনিট ঢেকে রাখুন।

গরম তেলে ভেজে নিন। আহঃ কি মজা। চমৎকার রং। একটু মরিচ দিতে হবে। বিভিন্ন রেসিপি সারাক্ষণ রান্না হচ্ছে ওর রান্না ঘরে।

ছানার সন্দেশে মরিচ দিয়ে ডুবো তেলে ভেজে খাওয়াচ্ছে আমাকে। আজ শুনলাম নতুন রান্না। টেবিলে বসে ছেলে রান্না করছে- ডায়মন্ড নিতে হবে- ডায়মন্ডে একটু পিয়াজ, একটু হলুদ দিয়ে দুই মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। তার পর ডায়মন্ডে একটু তেল দিয়ে সিদ্ধ করে নিলেই হয়ে গেলো- গরম গরম পরিবেশন করুন। কিছুক্ষণ হাসলাম নিজে নিজেই, পরে মনে হলো, পৃথিবীতে আদতে হীরা, জহরতের তেমন মূল্য নেই, নিজের পেট ভর্তি থাকলে এইসব লাগে না।

----------------------------------------------------------------------------- বিয়ের অনুষ্ঠানে আগে একটা উৎসব উৎসব বিষয় ছিলো। এক একটা বিয়ের আয়োজন দেখে ভালো লাগে। প্রত্যেকেই নিজের বিয়ে নিয়ে কত রকমের স্বপ্ন দেখে এটা ভাবলেই অবাক হতে হয়। ছেলে- মেয়ে নির্বিশেষে এখন নিজের বিয়ের আয়োজন নিয়ে ভাবে, অন্তত কৈশোরের পর পরই নিজের বিয়ের ভাবনা শুরু হয়ে যায়। বিয়েতে এই গয়না পড়বো, এই গান হবে, এই অনুষ্ঠান হবে, হলুদের স্টেজ এই ভাবে সাজানো হবে, আমাদের যাবতীয় নান্দিক বোধ সেহষ পর্যন্ত বিয়ের খাওয়ার টেবিল আর হলুদের স্টেজেই সমাপ্ত হয়ে যাচ্ছে।

হিন্দি ছবি আর সিরিয়াল দেখে দেখে সবাই বিয়েটাকে জাকালো একটা কিছু করে ফেলছে চাইছে। বিষয়টা কৃত্রিম হয়ে উঠছে দিন দিন, তবে এটাই ট্রেন্ডি। বিয়ের অনুষ্ঠানে মেয়ে পক্ষের ছেলেরা অপেক্ষায় থাকে, ছেলে পক্ষের মেয়েরা আসবে,তাদের ভেতর থেকে একজনকে বাছাই করে নিতে হবে, তার সাথে ভাব ভালোবাসাও হয়ে যেতে পারে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রেমের সূচনাই হয় হলুদের স্টেজের পাশ থেকে। এমন ভাবেই ছেলে পক্ষের কিশোর, তরুন অপেক্ষা করে মেয়েদের বাসার কন্যাদের জন্য, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাদের ভার লাঘবের মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই ছেলেরা বিয়ের অনুষ্ঠানে আসে। তবে আমার এখন যে অবস্থা- তাতে খুব সহজেই বিচলিত হওয়ার সুযোগ নেই।

অন্তত তেমন তাড়া কিংবা তাড়না নেই, অনেক বেশী স্থির হয়ে গেছি, মেয়ে দেখি না একদম এমন সাধুত্ব প্রকাশ করছি না- তবে ঠিক দিশেহারা হয়ে হঠাকারী হয়ে উঠবার মতো মেয়ে আদতে দেখি না। তাই আমার অবিবাহিত বন্ধুরা যেই মেয়েকে দেখে আহা মরি মরি , আহা কি সুন্দর বলে- তাদের দিকে তাকিয়ে ঠিক বুঝতে পারি না, সৈন্দর্য্য আসলে কোথায় লুকানো। বিচলিত হয়ে উঠবার মতো তেমন মার মার কাট কাট সুন্দরীর দেখা পাওয়া যায় না সব সময়। বুনো সৈন্দর্য্যের প্রতি একটা মোহ থাকে একটা বয়েসে, একটা বয়েসে বন্যতাকে চরম কামনীয় মনে হয়, তবে পোষ মানানোর আগ্রহ কিংবা তাগিদ এখন আমার নেই, আমার এখন অনেক বেশী আশ্রয় আর স্নিগ্ধতা চাই। আমি স্থির হয়ে এখন তেমন রমনীয় নারী খুঁজি না, বরং শীতল স্নিগ্ধতা খুঁজি।

যেই মেয়েকে দেখে ধীর স্থির মনে হয় ইদানিং তাদের পরম কাম্য মনে হয়। তবে এমন পোতাশ্রয় নারী খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে, যার লাবন্য এবং স্নিগ্ধতা আছে। এমন গুণাবলী সম্পন্ন নারীরা ইদানিং বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মনে হয়। - বিয়ের অনুষ্ঠানে সবার উৎসাহ দেখি। আমি উৎসাহে সামিল হতে পারি না, বরং ছেলে কোথা থেকে ছুটে এসে বলে বাবা বাবা বাইরে যাবো।

চলো। আশেপাশের মানুষজন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। অবশ্য আমার মতো সাদামাটা মানুষের একটা ছেলে থাকতে পারে এবং সেই ছেলে যে আমাকে বাবা ডাকতে পারে, এমন প্রত্যাশাও বোধ হয় অধিকাংশ মানুষের নেই। আমার চেহারা নিয়ে অনেক বদনাম শুনেছি- এমন কি যেকোনো দোকানে গেলেই ক্রেতা আসে আমাকে দাম জিজ্ঞাসা করে। বিয়ের অনুষ্ঠানেও গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, একজন অনায়াসে এসে বললো- এই গেট খুলে দাও- সেই মানুষটাকেও দেখছি আমার দিকে তাকিয়ে আছে এখন।

শালার যা তা অবস্থা- প্লাস্টিক সার্জারি করবো।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।