পথ্য তো রোগীরও লাগে না ভালো! যদিও এটা তার রোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করবে,তথাপিও! বিলেতের অকশন পল্লিতে একদিন-সেখানে নাকি সবধরণের সামগ্রী পাওয়া যায় খুব সস্তায়; সস্তা শব্দটিই আমাকে ত্বাড়া করে নিয়ে গেল সেখানে। সত্যিই নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বিশাল সমাহার, পুরাতন-নতুন-অব্যবহৃত-ব্যবহৃত পণ্যের ছড়াছড়ি। এই ধরুন, পাথরের পুতলা হতে স্বর্ণের সংগ্রহ, পুরাকালের নিদর্শন, দূর্লভ বস্তু, গৃহ-সাজানোর সামগ্রী ইত্যাদি ইত্যাদি। অকশনের নিয়ম মতে যে সর্ব্বোচ্চ দাম দিতে সম্মত হবে সেই উক্ত দ্রব্যটি পেয়ে যাবে। সেইমুহুর্তে বাগান ও গৃহ-সজ্জিতকরণ পণ্যের অকশন চলছিল- শতশত ভাস্কর্য্য-পশুপাখির মূর্তি, ফটো ফ্রেমের মাঝে হাতির আকৃতি একটি ভাস্কর্য্যের উপর চোখ পড়ল।
একজন জনাব উক্ত মূর্তিটি এইমাত্র অকশনে জিতেছেন যার জন্য তাকে মূল্য দিতে হয়েছে ৩ পাউন্ড (বাংলায় টাকায় ৩৬০)। সে এটা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেনা-তাকে যখন এর দাম জিজ্ঞেস করলাম-সে বলল: জানিনে এটার মূল্য কত হওয়া উচিত ছিল তবে ৩ পাউন্ডে পাওয়াতে খুব বেশী লোকসান হবে না হয়ত! আর এ নিয়ে তেমনটি আপসোসও করছিনে-হঠাৎ করেই হাতটা তুলেছিলাম- বিশেষত্ব এটার নির্মাণ শৈলী কিংবা অদ্ভূতাকৃতিই আমাকে আকৃষ্ট করেছিল; এরপূর্বে এমনটি চোখে পড়েনি; ইউনিক বলেই এতটা দাম দিতে রাজি হয়ে গেলাম। আমি বললাম আপসোস! করার কি আছে? মাত্র ৩ পাউন্ডে এমন কিছু পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার- আপনি তো ভগবান কিনেছেন জনাব; ভগবানের মূল্য এত কম কিসে হল সেটাই তো আমি ভেবে পাচ্ছিনে। তিনি শুনে রীতিমত চমকে গেলেন- নিশ্চিত হবার জন্য আবারও বললেন আমি কি সত্যই গড (ভগবান) কিনেছি! এটা কোন ভগবান? তিনি জানতে চাইলেন আর অমনি আমিও বিভিন্ন পুরাণ থেকে তাকে সবিস্তারে বললামঃ
"স্কন্দপুরাণ-এ গণেশের জন্ম বিষয়ে একাধিক উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। এই পুরাণের গণেশ খণ্ডে আছে, সিন্দূর নামে এক দৈত্য পার্বতীর গর্ভে প্রবেশ করে গণেশের মস্তক ছিন্ন করে।
কিন্তু এতে শিশুটির মৃত্যু ঘটে না, বরং সে মুণ্ডহীন অবস্থাতেই ভূমিষ্ট হয়। জন্মের পরে, নারদ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে গণেশ তাঁকে ঘটনাটি জানান। নারদ এরপর তাকে এর একটি বিহিত করতে বললে, সে নিজের তেজে গজাসুরের মস্তক ছিন্ন করে নিজের দেহে যুক্ত করে। " (স্কন্দপুরাণ- গণেশ খণ্ড ও ১২। ১৮)
এ কাহিণী শুনার পর জনাবের আগ্রহটা আরো বেড়ে গেল।
আচ্ছা, মাতৃগর্ভে দৈত্য প্রবেশ করলো কি করে? আর গর্ভে নবজাতশিশুটির মস্তক ছিন্ন করার জন্য যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা হয়েছিল সেটি কিরুপে প্রবেশ করানো হল? তাছাড়া মুণ্ডহীন শিশু জীবিতাবস্থায় প্রসব হয় কি করে? তাছাড়া, মুনি নারদ মুনণ্ডহীন শিশুটিকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উক্ত মুণ্ডহীন শিশু মুখের অবর্তমানেই কিভাবে নাদরকে গর্ভাবস্থায় ঘটিত কাহিনীটি জানা? মুখ তো মুণ্ডের সাথেই সম্পর্কিত-তাই নয় কি?
জনাবের কথায় কর্ণপাত না করে অপর একটি পুরাণ থেকে কাহিনীটি বর্ণনা করলাম এই ভাবেঃ
"পদ্মপুরাণ মতে, হরপার্বতী ঐরাবতের বেশে বনে বিহার করছিলেন, তাঁদের সেই মিলনের ফলে গজমুণ্ড গণেশের জন্ম হয়। "
হর-মহাদেব শিব, পার্বতী- মহামায়া দূর্গা। ঐরাবত অর্থাৎ হাতীর বেশধারণ করে বনের মধ্যে বিহার (সঙ্গম) করছিলেন, তাদের সেই মিলনের ফলে গজমুণ্ড গণেশের জন্ম হয়! তবে, মহাদেব শিব ও মহামায়া পার্বতী যেরুপ ধারণ করে বিহার করিছেলন সেরুপে গণেশ কেন সম্পূর্ণ হাতি না হয়ে অর্ধেক মানব-অর্ধেক হাতি হলেন? তবে কি বিহার কালে হরপার্বতী সম্পূর্ণরুপে হাতিরুপ ধারণ করেননি? তাছাড়া, জন্তু-জানোয়ারেররুপে বাহার করারই বা কি দরকার? তবে কি হাতীদিগকে বিহার প্রক্রিয়া শিক্ষা দেবার জন্যই এমনটি করা? এ পর্যায়ে জনাব কে থামিয়ে দিয়ে বললামঃ মানুষকে দিগ-নিদের্শনা দেবার জন্য যুগে যগে ভগবানরা যদি মানুষরুপ ধারণ করে আসতে পারেন তবে অপরাপর জাতিকে দিগ-নিদের্শনা প্রদানকরত ভগবান এসমস্ত জন্তু-জানোয়ার হেয় আসাতে আপনির সমস্যা কোথায়? জনাব মুচকি হেসে বলে উঠলেনঃ তবে কি স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটারের যে স্রষ্টা তিনিও কি উক্ত যন্ত্রটিকে নিদের্শনা দেবার জন্য যুগে যুগে যন্ত্র হয়ে আসবেন-আসার দরকার আছে কি? এবারও আমি কোন উত্তর করলাম না। পদ্মপুরাণ থেকে দেবী পুরাণে টেনে আনলাম।
"দেবীপুরাণ মতে, শিবের রাজসিক ভাব দেখা দিলে তাঁর দুই হাত ঘামতে থাকে এবং সেই ঘাম থেকে গজাননের জন্ম হয়।
"
হাতের ঘামে যদি এমনটি হত তবে হাতীরুপধারণ করে বিহার করার কি দরকার ছিল? এখন তো দেখছি আমার তিন পাউন্ডও বৃথা গেল। আমি বললামঃ তা হবে কেন জনাব, বরং এভাবে ভাবুন-এমন অলৌকিক জন্মা ভগবান কতজনের কপালে মিলে তাও আবার তিন পাউন্ডে? আপনি তো সত্যিই ভাগ্যবান। তিনিও আমার সাথে সাথে বলে উঠলেন- সত্যিই আমি ভগবান! আমি তাকে বললাম-ওটা আপনি নয়; আপনি ওটাকে পেয়ে ফরচুনেট মানে ভাগ্যবান! এই বলে সেখান থেকে উঠে চলে আসছিলাম-তিনি হাতখানা চেপে ধরে বললেন- আমি কি আপনাকে একটা অনুরোধ করতে পারি? আমি বললাম- নিশ্চয়। তিনি বললেন- এসব কথা অণ্য কারো আছে না বলতে। আমি বললাম কেন? তিনি জবাবে বললেন- কেননা , কালই আমি এটাকে আবার বিক্রী করার জন্য এই অকশনে তুলবো, এমন ঘটনা জানলে হয়ত সঠিক দাম নাও পেতে পারি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।