[মহান বনফুল এর ভগবান গল্পের সিকুয়্যাল লিখলাম। আশা করি স্বর্গীয় বা নরকীয় বনফুল আমায় মা করবেন]
অতপর ভগবানের ঘুম ভাঙ্গলো। তিনি নাকে যে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছিলেন তা শুকিয়ে ফসিল হয়ে গেছে। প্রচন্ড গাড়ির হর্ণে এক সকালে ঘুম ভাঙ্গলো তার। তিনি শরীরটা একটু আরমোড়া দিলেন।
ডানে বামে তাকালেন। কোন কিছু না বলেই ভগবান হাটতে শুরু করলেন ফুতফাত দিয়ে। হাটতে গিয়ে টের পাচ্ছেন ঢাকার ফুতফাত দিয়ে হাটা সম্ভব না। কারন ফুতফাত হচ্ছে মটর বাইক আর হকারদের দখলে। রাস্তায় হাটলেও সমস্যা।
যদি গাড়ি যাপা দেয়। ভগবানকে গাড়ি চাপা দিয়ে মারে। এমন সাহস আছে কোন বেটার? রাস্তায় দেখা হল এক উলঙ্গ পাগলের সঙ্গে ভগবান জিজ্ঞেস করলেন ‘কেমন আছিস রে’ পাগল বেটা দাঁত কটমট করে বলে ‘ধইরা খাইয়া লামু। হারাম যাদা’। ভগবান আর সাহস করলেন না কিছু বলার।
হাটতে থাকলেন। ওঠলেন একটা বাসে। বসলেন সিটে। পাশের জনকে জিগাইলেন ভাই কেমন আছেন। লোকটা উত্তর দিলেন ‘আমাদের আর ভালো থাকা’।
ভগবান মাথা নাড়িলেন। বাসের কন্টাকটার এলে তাকেও ভগবান প্রশ্ন করেলিনে ‘কেমন আছো হে’। ‘কন্টাকটার বলে ‘চাকার উপর দিয়েই যাইতাছে জীবন। কোন উন্নতি নাই। ’ ভগবান ঠোট বাকিয়ে মুখ ভার করে নামলেন বাস থেকে।
একটা সিগারেট খেলে ভালো হয়। কিনলেন একটা সিগারেট। দোকানি কে জিজ্ঞেস করলেন ‘কি অবস্থা তোমার। ব্যবসায় কেমন?’। দোকানি পানের খিলি বানাতে বানাতে বলে ‘ব্যবসায় বালা না।
একটা বড় দোকান দিতে পারলে ভালো হইতো’। ভগবান নাকে মুখে সিগারেটের ধোয়া ছেয়ে সামনে হাটতে থাকেন। শাহবাগের আজিজ মার্কেটে এক কবির সঙ্গে দেখা। কি কবি কেমন চলছে কাব্য চর্চা। প্রশ্নটা শুনে কবি একরকম গলা শুকিয়ে বলেন ‘আর বইলেন না এ দেশে কবিতা চর্চা আর হবে না।
অকবিতে ভইরা গেছে দেশটা সবাই কবিতা লিখতে পারলে আমার আর কবিতা লেখার কি দরকার। হবে না, হবে না এদেশে সাহিত্য হবে না’। হুম বুঝলাম বলে ভগবান তার পা দুখানি সামনের দিকে এগিয়ে দেন। চারুকলায় এক চিত্রশিল্পীর সঙ্গে দেখা। বকুল তলায় বসে আপন মনে ছবি আকছেন।
ভগবান মনোযোগ দিয়ে শিল্পীর ছবি আকা দেখছেন। হঠাৎ শিল্পী বিরক্তী নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ‘আপনি কিছু বলবেন’। ভগবান বোকার মত করে কইলেন ‘না, মানে আপনার ছবিটা সুন্দর। এইসব ছবি আইকা বাংলাদেশের চিত্রকলা কোন দিকে যাবে? লোকটা বলে ‘এখন সবাই ছবি আকে। এইসব ছবি আইকা কিছু হইবো না।
হুদাই সব কারবার। দেহেন না মিডিয়ার বদৌলতে কতজনে শিল্পী হইয়া গেছেন। চিন্তা করতাছি ছবি আকা ছাইড়া দিমু। ’ একটা দীর্ঘ শ্বাস দিয়ে দ্রুত চারুকলা ত্যাগ করলেন ভগবান। অনেক হাটা হাটি হল।
এবার একটু বিশ্রামের প্রয়োজন। টিএসসির ক্যান্টিনে গিয়ে বসলেন। চা খেতে খেতে আলাপ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক টিচারের সঙ্গে। ভগবান বললেন ‘তো সব মিলিয়ে আছেন ভালো? টিচার বেটা বলতে লাগনে ‘ভালো থাকুম কেমনে। এইভাবে কি ভালো থাকা যায়।
দেশের শিা ব্যবস্থার বারোটা বাইজা আছে। আমার প্রমোশন হচ্ছে না। দলবাজি না করলে কিছুই হয় না। কিছুই হইবো না এ দেশে’। চায়ের কাপটা রেখে চুপিসারে বের হয়ে পরলেন ভগবান।
এবার একটু মুক্ত বাতাস খাওয়ার জন্য সোরওয়ার্দী উদ্যান দিয়ে হাটা শুরু ুকরলেন। পথে দেখা হয়ে গেল এক পতিতার সঙ্গে। ভগবান তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসিলেন ‘কি রে কেমন চলছে তোদের ব্যবসায়’। পতিতা থুক করে মুখ ফেকে পানির পিক ফেলে একটু চুন জিহবার ডগায় লাগিয়ে বেলা ‘ব্যবসায় মন্দা। বেডাইন আর আমগোর লগে শোয় না।
মাগির পুতেরা সুন্দর মাং খুঁজে। অহন লাইনের নাম কইরা মাগির পুতেরা সুন্দরী মাইয়াগোরে লাগায়। দুই একটা রিকশাওয়ালা আসে মাঝে মধ্যে। ’ ভগবান হাটতে শুরু করে। ভগবানের মাথার চান্দি থেকে ঘাম ঝরা শুরু হয়েছে।
ছবির হাটে খুঁজে পেলেন এক নাট্য নির্মাতাকে। ভগবান দাত কেলিয়ে বললেন ‘কেমন চলছে আপনাদের নাটক ফাটক’। নির্মাতা বেশ বুদ্বিজীবী ভঙ্গিতে বলিলেন ‘আমরা এখন একটা অস্থির সময় পার করছি। সময়টা আমাদের নিয়ন্ত্রনে নেই। যে যেভাবে পারছে।
নাটক বানাচ্ছে। কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝি না। এখন সবাই নাটক বানাইতে পারে। আপনেও পারবেন’। নির্মাতা চোখের পালক ফেলতেই উধাও হয়ে যান ভগবান।
রুপসী বাংলা হোটেল লবিতে ভগবান গরম কফি খাচ্ছেন এক ব্যবসায়ী নেতার সঙ্গে। নেতা কফির মগটা টেবিলে রেখে ভগবানকে জিজ্ঞেস করলেন। ‘বলেন আপনার কি প্রশ্ন’। ভগবান বললেন ‘তেমন কিছু না। আপনি কেমন আছেন সেটাই জানতে আইলাম’।
ব্যবসায়ী নেতা একটু আরাম করে বসে বলেন ‘কিভাবে ভালো থাকবো বলেন। শ্রমিক অসোন্তষ, বাজার মুল্য বৃদ্ধি, শেয়ার বাজার মন্দা, আর্ন্তজাতিক বাজারেও ঝামেলা। ভালো নাইরে ভাই। ঠেলার উপর আছি সারাণ’।
রুপসীবাংলা পার হয়ে সাকুরার সামনে দাড়ালেন ভগবান।
এক মাতাল বের হয়েই ভগবানের সঙ্গে ধাক্কা খেলো। ভগবান মাতালকে বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন করলেন ‘ভালো আছেন’। মাতাল নিজেকে সামলে নিয়ে ‘কে বাপ তুমি। তুমি তো ভালো নাই। আমি মদ খাইছি আমি ভালো আছি।
চলো তোমারে মদ খাওয়াই। দেখবা। সব ভালো লাগতাছে। হা হা হা। ’ মাতালের হাসি শেষ হবার আগেই ভগবান পৌছে গেলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
ভগবান প্রধানমন্ত্রীকে জিগাইলেন ‘কেমন আছেন আপনি?’ প্রধানমন্ত্রী বললেন ‘বিরোধী দল, নিজের দলের ষড়যন্ত্র, জঙ্গি, শেয়ার বাজার, প্রশানষন, বিশ্ব ব্যাংক, এডিপি, ওবামা, ওফ আল্লাহ জীবন শেষ আমার। কে যে কইছিল প্রধানমন্ত্রী হইবার। একবেলা ঘুমাইতে পারি না ঠিক মত। ’ ভগবান দেখলেন রেগে যাচ্ছেন প্রাধানমন্ত্রী। চুপ করে বের হয়ে পরলেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের সামনে আম গাছটার নিচে দাড়িয়ে আছেন একজন আর্মি। ভগবান বলেন ‘ভাইজান কেমন আছেন’। আর্মি বলল এইখানে আইসা টানা আট ঘন্টা দাড়াইয়া দেখ কেমন লাগে। তখন টের পাইবা কেমন আছি’। ভগবানের মাথাটা টনটন করে বেথা করছে।
হাটতে হাটতে ফুতফাতের পাশে বসে পরলেন। আর ভাবতাছেন তার ঘুম থেকে ওঠাটা ঠিক হয়নি। এই মাথা ব্যথা নিয়ে এখন ঘুমানোও মুশকিল। শর্ষে তেল হাতে নিলেন ভগবান নাকে তেল দিবেন। এমন সময় সেই উলঙ্গ পাগলটা এসে ভগবানকে জিজ্ঞেস করলো কিরে কেমন আছিস।
‘ভগবান ক্ষেপে গিয়ে বলেন যা হারামযাদা তুই আর জালাইস না। আমারে ঘুমাইতে দে। ঘুমাইয়া ছিলাম ছিলাম ভালো। ’ ভগবান নাকে তেল দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরলেন।
২৬ অক্টোবর ২০১১
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।