আমি একজন ফাউ ইঞ্জিনিয়ার.। । । লক্ষ্মীপুরের সেই আলোচিত ‘খুনি’ এ এইচ এম বিপ্লবের আরও দুটি খুনের সাজা আংশিক মাফ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বিপ্লব লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা আবু তাহেরের ছেলে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরের কামাল হত্যা ও মহসিন হত্যা মামলায় বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। এখন এই সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেছেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি জারি করা এক আদেশে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমার কথা জানানো হয়।
এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে বহুল আলোচিত আইনজীবী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মাফ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি।
‘দুটি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি নং ২০০৯/এ, এ এইচ এম বিপ্লবের সাজা মওকুফ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা শাখা থেকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি [স্ব:ম: (কারা-২)পি-২০/২০১১/৩১] জারি করা আদেশে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি সদয় হয়ে বর্ণিত দুটি মামলায় আরোপিত যাবজ্জীবন দণ্ড হ্রাস করে জেল ওয়ারেন্ট জারির তারিখ হতে ১০ বছরের আরআই দণ্ড আরোপিত করেছেন।
’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ১০ বছরের বেশি সময় পলাতক থেকে বিপ্লব গত বছরের ৪ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তাঁর বাবা আবু তাহের ছেলের দণ্ড মাফের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান প্রথমে নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মাফ করেন, যা গত বছরের ১৪ জুলাই কার্যকর হয়।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, তিনটি হত্যা মামলার দণ্ড মাফের আবেদন ও প্রক্রিয়া প্রায় একই সময় শুরু হয়। এর মধ্যে গত বছর নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ড মাফের পর দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ফলে কামাল হত্যা ও মহসিন হত্যা মামলার বিষয়ে লম্বা সময় নেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি আদেশ জারি হয়। এরপর এ আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়ার কথা।
গতকাল জানতে চাইলে কারাগারের চট্টগ্রাম বিভাগের উপমহাপরিদর্শক মো. ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ এইচ এম বিপ্লবের বাকি দুটি মামলার দণ্ড মওকুফ বা সাজা কমানোর কোনো চিঠি আমাদের কাছে আসেনি। ’ তিনি বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইতিপূর্বে একটি হত্যা মামলায় বিপ্লবের সাজা মওকুফ করেছেন।
বাকি মামলাগুলোতে আসামি বর্তমানে লক্ষ্মীপুর কারাগারে সাজা ভোগ করছেন। কারাগারে ঢোকার মুহূর্ত থেকে তাঁর সাজা চলছে। ’
নথিপত্রে দেখা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে সই করেছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি আদেশে সই করার পর নিয়মানুযায়ী তা ডেসপাস (বিতরণ) শাখায় গেছে। সেখান থেকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে চলে যাওয়ার কথা।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারা শাখার উপসচিব মোজাক্কের আলীও প্রথম আলোকে বলেন, সই হওয়ার পর এ রকম আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাতে এত দিন সময় লাগার কথা নয়।
কামাল হত্যা: মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, বিপ্লবের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপির কর্মী কামাল উদ্দিনকে নিজ বাড়িতে মা-বাবার সামনে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর থানায় মামলা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলাটির বিচার হয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। আদালত এই মামলায় বিপ্লবের অপর দুই ভাই এ কে এম সালাহ উদ্দিন ওরফে টিপু ও আবদুল জব্বার লাবলু ওরফে লাবুর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।
আর বিপ্লব, তাঁদের বাবা আবু তাহের ও দলীয় কর্মী খালেক, বাবর এবং মারজুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। পরে বিপ্লব ও খালেক ছাড়া বাকিরা হাইকোর্ট থেকে খালাস পান।
ছেলের খুনির সাজা কমানোর প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করা হলে কামালের বৃদ্ধ মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবা, আমাদের নিরিবিলি বাঁচতে দাও। আর ঝামেলায় পড়তে চাই না। ’ আর কামালের বাবা আলাউদ্দিন বলেন, ‘দুনিয়ায় পেলাম না।
দেখি, আল্লাহর আদালতে বিচার পাই কি না। এটা নিয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না। ’
কামালদের এক প্রতিবেশী জানান, এর আগে গত জানুয়ারিতে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলে ঝামেলায় পড়েছিল কামালের পরিবার।
মহসিন হত্যা: ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে লক্ষ্মীপুর শহরের আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে শিবিরকর্মী এ এস এম মহসিনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই মামলার বিচার হয় লক্ষ্মীপুর জেলা ও দায়রা আদালতে।
ওই মামলায় আদালত বিপ্লবের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন।
মহসিনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আমিন উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ রকম খুনিকে সরকার কীভাবে ক্ষমা করল? এটা খুনিদের আরও উৎসাহিত করবে। ’ ৮০ বছরের বৃদ্ধ এই বাবা বললেন, ‘ছেলের খুনিদের শাস্তি দেখে মরতে চেয়েছিলাম। ’
জানতে চাইলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, ‘বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকলে সেটা একটা বার্তা হতো যে, এ রকম নৃৃশংস খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকলে শাস্তি পেতে হয়। ’
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বিগত (১৯৯৬-২০০১) আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আবু তাহের ও তাঁর ছেলেদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনীর নানা অপরাধমূলক তৎপরতার কারণে লক্ষ্মীপুর ‘সন্ত্রাসের জনপদ’ নামে পরিচিতি পায়।
বিপ্লব ছিলেন তখন এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক। তাঁর বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুরে সন্ত্রাসের অনেক অভিযোগ থাকলেও তিনটি হত্যা মামলায় তাঁর সাজা হয়
Source ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।