মহাবিশ্বের মহাকাশ ফাড়ি' চন্দ্র সূর্য্য গ্রহ তারা ছাড়ি' ভূলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর! পারিবারিক উৎসব পালন করল লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা 'গডফাদার' আবু তাহেরের পরিবার। তাহেরের মেজো ছেলে সালাহ উদ্দিন টিপুর যমজ দুই সন্তানের জন্মবার্ষিকী আর বড় ছেলে এ এইচ এম বিপ্লবের মামলা প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে ঢাকঢোল পিটিয়ে বুধবার এ উৎসব পালন করা হয়। এখানেই শেষ নয়, ঢাকা থেকে নর্তকী ভাড়া করে তাদের অর্ধনগ্ন শরীরে নাচ-গান করানো হয়েছে ঈদগাহ মাঠেই। পবিত্র ঈদগাহ ময়দানে নাচ-গানের আয়োজনে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে তাহেরের ছেলে এ এইচ এম বিপ্লবের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন হওয়া একটি হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপতি সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেছেন।
আর অন্য একটি বিচারাধীন হত্যা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে এ-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি।
বুধবার ছিল মেয়র তাহেরের ছেলের ঘরের যমজ দুই নাতনির জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে শহরে অবস্থিত মেয়রের বাসভবনে সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয় খাওয়া-দাওয়ার এবং তমিজউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে কনসার্টের নামে নর্তকীদের অর্ধনগ্ন নৃত্যের। খাওয়ার পর্ব শেষে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ উপভোগ করেন কনসার্ট। এ সময় অর্ধনগ্ন হয়ে একের পর এক গান-নাচ পরিবেশন করেন ভাড়াটে নর্তকীরা।
এতে অংশ নেয় পাঁচ শতাধিক লোক। যাত্রাপালার মতো নর্তকীদের নৃত্য আর সংগীত উপভোগ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। এ সময় অনেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাদের মতে, মেয়রের বড় ছেলে বিপ্লবের মামলা প্রত্যাহার আর মেজো ছেলে টিপুর কন্যাসন্তানদের জন্মবার্ষিকীর দুটি অনুষ্ঠানে নর্তকী এনে ঈদগাহের মতো জায়গায় আয়োজন করে ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত হানা হয়েছে।
জানা গেছে, এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পূর্বানুমতির প্রয়োজন রয়েছে।
কিন্তু কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে শহরের তমিজউদ্দিন ঈদগাহ মাঠে আয়োজন করা হয়েছে নর্তকীদের অর্ধনগ্ন নৃত্যের।
এদিকে মেয়রের ছেলে বিপ্লবের বিরুদ্ধে হওয়া হত্যা মামলা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রত্যাহার করায় নিহতের পিতা হতাশায় ভুগছেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার প্রথম বছরই রাজনৈতিক বিবেচনায় দুটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু তা প্রকাশ পায়নি। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলা, অপরটি অগি্নসংযোগের মামলা।
আদালত সূত্র জানায়, বিগত ১৯৯৬-২০০১ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা স্কুলছাত্র আহমদ জাহেদ হত্যা মামলা ও দারুল আমান একাডেমী নামে একটি এতিমখানায় অগি্নসংযোগের মামলায় আসামি ছিলেন বিপ্লব। 'রাজনৈতিক হয়রানিমূলক' বিবেচনায় এ-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি ২০০৯ সালে বিপ্লবের বিরুদ্ধে করা মামলা দুটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। মামলা দুটি আর না চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে মর্মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও সরকারি কেঁৗসুলিকে (পিপি) বলা হয়।
এ ছাড়া লক্ষ্মীপুরের বহুল আলোচিত আইনজীবী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ হয়। কিন্তু বিপ্লবের রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সেই রাষ্ট্রপতি পুরোপুরি মাফ করে দেন।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। পরে কিন্তু কামাল ও মহসীন হত্যা মামলায় বিপ্লবের পৃথকভাবে যাবজ্জীবন সাজা হয়। এবারও উভয় মামলায় বিপ্লবের সাজা মাফ করেন রাষ্ট্রপতি। তবে পুরো নয়, সাজা কমিয়ে ১০ বছর করা হয়েছে। বাকি রইল ফিরোজ হত্যা মামলা, যা বর্তমানে বিচারাধীন।
কিন্তু এ মামলাটিও 'রাজনৈতিক হয়রানিমূলক' বিবেচনায় এ-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ১৭ অক্টোবর লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসককে ওই অনুমোদনের বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। রাষ্ট্রের সর্বাত্দক প্রচেষ্টায় লক্ষ্মীপুরের তাহেরপুত্র এইচ এম বিপ্লব এখন অনেকটাই মামলামুক্ত। তার বিরুদ্ধে থাকা খুনের সর্বশেষ মামলাটি প্রত্যাহারের সুপারিশের খবরে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন নিহতের বাবা।
জাহেদ হত্যা মামলা সম্পর্কে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৯ সালের আগস্টে লক্ষ্মীপুর শহরের চকবাজার জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে ছাত্রশিবির মিছিল বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
বিপ্লবের নেতৃত্বে শিবিরের ওপর হামলা চালানো হয়। এ সময় নবম শ্রেণীর ছাত্র আহমদ জাহেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। অন্যদিকে ২০০০ সালের ১৯ অক্টোবর তাহের বাহিনীর সন্ত্রাসীরা বিপ্লবের নেতৃত্বে দারুল আমান এতিমখানায় হামলা চালিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। দুটি মামলাই বিচারাধীন অবস্থায় বর্তমান সরকার প্রত্যাহার করে নেয়। ফিরোজ হত্যা মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ১ অক্টোবর রাতে ছাত্রদলের কর্মী ফিরোজ আলমকে ঘর থেকে ডেকে নেওয়া হয়।
পরে পৌর শহীদ স্মৃতি বিদ্যালয়ে নিয়ে বিপ্লবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি দিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর ফিরোজের লাশ মার্কাজ মসজিদের পাশে ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা। নিহত ফিরোজ আলমের বাবা আবুল কাসেম বলেন, 'পরকালের বিচার ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার নেই। '
প্রসঙ্গত, বিগত (১৯৯৬-২০০১) আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আবু তাহের ও তার ছেলেদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লক্ষ্মীপুর 'সন্ত্রাসের জনপদ' হিসেবে পরিচিতি পায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক নেতা বলেন, সন্ত্রাসী বিপ্লবের প্রতি রাষ্ট্রীয় এমন নেতিবাচক অবস্থানের ফলে আবারও শঙ্কিত হয়ে পড়েছে এলাকার রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এখনো লক্ষ্মীপুর 'গডফাদার' তাহেরের হাত থেকে মুক্ত হতে পারেনি। তারা তাহেরপুত্র বিপ্লবের প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের অভাবনীয় প্রীতিতে আতঙ্কিত ও বিস্মিত।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।