আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ানডে ইতিহাসের সেরা অধিনায়কের বিদায়ে আমি মর্মাহত

কামনায় পৃথিবীর সকল সুন্দর দুচোখ মেলে দেখতে চাই সকলের অন্তর। আমার প্রিয় ক্রিকেটার, ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা অধিনায়ক ও সেরা তিন নম্বরের বিদায় আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। 'আগামী বিশ্বকাপের দল তৈরি করতে হবে বলে পন্টিংকে বাদ দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। এই যুগের ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হলো, তা দেখে আমি হতবাক হয়ে গেছি'- রিকি পন্টিংয়ের ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়ার পর এভাবেই নিজের ক্ষোভ জানিয়েছেন তাঁর সাবেক সতীর্থ ম্যাথু হেইডেন। পাল্টা যুক্তিও আছে।

যেমন- অধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরও পন্টিং নিজে থেকে সরে না দাঁড়ানোর সমালোচনা করলেন পন্টিংয়ের আরেক সতীর্থ ব্রেন্ডন জুলিয়ান, 'পন্টিংয়ের ওয়ানডে খেলার পেছনে কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম না আমি। গ্রীষ্মের শুরু থেকে ওর শুধু টেস্টেই মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল। ' বুঝতেই পারছেন রিকি পন্টিংকে ওয়ানডে দল থেকে বাদ দেওয়া আর এরপর তাঁর ওয়ানডে খেলার আশা ছেড়ে দেওয়া নিয়ে কেমন বিতর্ক চলছে অস্ট্রেলিয়ায়। জুলিয়ানের মতো অনেকেই বলতে পারেন, অধারাবাহিক থেকেও কেউ বাড়তি ম্যাচ খেলতে চাইলে বাড়তি অসম্মানটাও ফালতু ট্যাক্সের মতো চেপে যায়। আর এই অসম্মানটাই মানতে পারছেন না হেইডেনের মতো অনেকে।

এই দুই পক্ষের মাঝামাঝি অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর। বাদ পড়ার ঝুঁকি আছে জেনেও পন্টিংয়ের এত দিন নিজে থেকে সরে না দাঁড়ানোর যুক্তিটা দিলেন তিনিই, 'পন্টিং এখনো মনে করে আরো কয়েক বছর খেলার মতো ফিট ও। মানসিকভাবে পন্টিং অনেক দৃঢ়। যত দিন না নির্বাচকরা ওকে অকার্যকর মনে করবে ততদিন খেলাটা চালিয়ে যেতে চাইবে। এ জন্যই বাদ পড়ে ওয়ানডে থেকে সরে দাঁড়িয়েছে ও, আর মনোযোগী হতে চাইছে টেস্টে।

' যে যেভাবেই দেখুন, বাস্তবতা হচ্ছে ওয়ানডে হারাল তার সেরা অধিনায়কটিকে। ক্লাইভ লয়েডের পর অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়াকে দু-দুটি বিশ্বকাপের শিরোপা জিতিয়েছেন পন্টিং। খেলেছেন চারটি বিশ্বকাপ ফাইনালে। তবে সাফল্যের হারে লয়েড তো বটেই, পেছনে ফেলেছেন অন্যদেরও। ২৩০ ওয়ানডে-তে নেতৃত্ব দিয়ে পন্টিং অস্ট্রেলিয়াকে জয় এনে দিয়েছেন ১৬৫টিতেই।

হেরেছেন মাত্র ৫১টি। জয়ের হারটা ৭১.৭৩ শতাংশ। অধিনায়ক হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৭ ওয়ানডে জিতেছেন অস্ট্রেলিয়ারই অ্যালান বোর্ডার। ১৭৮ ম্যাচে ১০৭ জয়ের পাশাপাশি হেরেছেন ৬৭টিতে, জয়ের হার ৬০.১১ শতাংশ। অধিনায়ক হিসেবে ১০০-র বেশি ওয়ানডে জিততে পারেননি আর কেউই।

এ ছাড়া দক্ষিণ অফ্রিকার হানসি ক্রনিয়ে ১৩৮ ম্যাচে ৯৯টি, নিউজিল্যান্ডের স্টিফেন ফ্লেমিং ২১৮ ওয়ানডে-তে ৯৮টি, আর দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ ১৫০ ওয়ানডে-তে জিতেছেন ৯২টিতে। সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও জয়ের হারে অবশ্য পন্টিংয়ের ঠিক সমান কাতারে ক্রনিয়ে। দু'জনেরই এই হারটা শতকরা ৭১.৭৩। অথচ এমন একটা সময়ে পন্টিং নেতৃত্বটা পেয়েছিলেন যখন ত্রিদেশীয় সিরিজের ব্যর্থতায় টালমাটাল অবস্থা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের। ২০০১-০২ মৌসুমে নিজেদের মাটিতে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে পেঁৗছতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।

স্টিভ ওয়াহকে সরিয়ে তাই আনা হয় পন্টিংকে। আর প্রথম অভিযানেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৫-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জেতে তাঁর দল। এরপর ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০০৩-এর মে পর্যন্ত নতুন রেকর্ড গড়েছিল টানা ২১ ওয়ানডে জিতে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম বিশ্বকাপেই পন্টিং স্বাদ পান শিরোপার। ভারতের বিপক্ষে জোহানেসবার্গের ফাইনালে তো রেকর্ড আটটি ছক্কাসহ ১৪০ রানের ইনিংসটি অমরই হয়ে আছে ক্রিকেট ইতিহাসে।

শুধু সেই আসরেই নয়, বিশ্বকাপ এলেই অন্য উচ্চতায় পেঁৗছে যেত তাঁর পারফরম্যান্স। 'বড় মঞ্চে চাই বড় খেলোয়াড়' প্রবাদটা প্রমাণ করেই বিশ্বকাপে গড়েছেন সর্বোচ্চ চারটি সেঞ্চুরির রেকর্ড। এ ছাড়া ৩০ ম্যাচে পন্টিংয়ের ১৩৫২ রান বিশ্বকাপ ইতিহাসেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তাঁর চেয়ে এক ম্যাচ বেশি খেলে ১৩৯৭ রান করেছেন শচীন টেন্ডুলকার। তবে গড়ে টেন্ডুলকারের চেয়েও এগিয়ে পন্টিং, টেন্ডুলকারের গড় যেখানে ৪৮.১৭, সেখানে পন্টিংয়ের ৫২.০০।

এ দুইজন ছাড়া ক্রিকেটের সবচেয়ে মর্যাদার এই টুর্নামেন্টে কিন্তু এক হাজার রান নেই আর কারো। বুঝতেই পারছেন বিশ্বকাপে কতটা কার্যকরী ছিলেন পন্টিং। ওয়ানডের রান ও সেঞ্চুরিতে টেন্ডুলকারের পরেই আছেন এই কিংবদন্তি। ৪৮ সেঞ্চুরিসহ টেন্ডুলকারের রান যেখানে ১৮১৭৯, সেখানে পন্টিংয়ের সেঞ্চুরি ৩০টি, আর রান ১৩৭০৪। পিছিয়ে থাকলেও ১০ হাজারের বেশি রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে জয়ের পেছনে বেশি হারে রান করাদের তালিকায় সবার ওপরেই আছেন পন্টিং।

১৩৭০৪ রানের মধ্যে পন্টিংয়ের ১০৭৬২ রানই এসেছে অস্ট্রেলিয়ার জয় পাওয়া ম্যাচগুলোতে, যে হারটা ৭৮.২৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জ্যাক ক্যালিসের এই হারটা ৬৯.৬৩ শতাংশ। ১১৪৮১ রানের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় পাওয়া ম্যাচে ক্যালিসের রান ৭৯৯৫। এই তালিকায় এ দুইজনের পরে থাকা ব্যাটসম্যানরা হচ্ছেন- শ্রীলংকার সনাৎ জয়াসুরিয়া (৬৬.০৬), মাহেলা জয়াবর্ধনে (৬৩.৪৪), পাকিস্তানের ইনজামাম উল হক (৬৩.৪৪), ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান লারা (৬২.৯৭), ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী (৬১.০৫), শচীন টেন্ডুলকার (৬০.৮৩), শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারা (৫৮.১৭) ও ভারতের রাহুল দ্রাবিড় (৫২.৬১)। পন্টিংয়ের ৩০টি সেঞ্চুরির ২৫টিই জিতিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে।

জয় পাওয়া ম্যাচে সেঞ্চুরির এই হারটা ৮৩.৩৩ শতাংশ। এই তালিকায় তাঁর চেয়ে এগিয়ে কেবল মাহেলা জয়াবর্ধনে (৯৩.৩৩) ও ব্রায়ান লারা (৮৪.২১)। জয়াবর্ধনের ১৫ সেঞ্চুরির ১৪টিতেই জয় পেয়েছে শ্রীলংকা, আর লারার ১৯ সেঞ্চুরির ১৬টিতে জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শচীন টেন্ডুলকারের ৪৮ সেঞ্চুরির ৩৩টিতে জয় পেয়েছে ভারত, সাফল্যের এই হারটা ৬৮.৭৫ শতাংশ। তিন নম্বর পজিশনটাকে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয় ব্যাটিংয়ে।

ওপেনাররা দ্রুতগতিতে রান তুললে তিন নম্বর ব্যাটসম্যানের দায়িত্ব হয় সেই ধারাটা ধরে রাখা। আবার ওপেনাররা ব্যর্থ হলে সেটা কাটানোর বাড়তি দায়িত্বও তার। এমন কঠিন একটা পজিশনে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান পন্টিংই। তিন নম্বরে পন্টিংয়ের চেয়ে বেশি রান ও সেঞ্চুরি পাননি আর কেউই। তার ৩০ সেঞ্চুরির ২৯টিই এসেছে এই পজিশনে ব্যাট করে।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের শেষ পাঁচ ম্যাচে ৩.৬০ গড়ে মাত্র ১৮ রানই করেছেন পন্টিং। এটা তাঁর পুরো ক্যারিয়ারের ছবি বোঝাচ্ছে না কোনোভাবেই। ১৬ বছরের ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় তিনি ছিলেন ধারাবাহিকতার প্রতিমূর্তি। ছয়-ছয়টি বছর তো করেছিলেন এক হাজার বা এর চেয়ে বেশি রান। যে জন্য হয়েছেন ৩২ বার ম্যান অব দ্য ম্যাচ, ওয়ানডে ইতিহাসে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।

বিদেশের মাটিতে সফল হওয়াও তাঁর ক্যারিয়ারের অন্যতম আলোচিত একটা অধ্যায়। উপমহাদেশের মাটিতে বরাবরই ভোগেন অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। অথচ শ্রীলংকা আর পাকিস্তানে পন্টিংয়ের ওয়ানডে গড় ৫০-এর বেশি, আর ভারতে ৪৫.৯৪। অথচ তাঁর ক্যারিয়ার গড় ৪২.০৩। অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচকরা ওয়ানডে-তে পন্টিংয়ের ডেথ সার্টিফিকেটে সই করে দিলেও এসব সাফল্যে ওয়ানডের চিরকালীন ইতিহাসে সেরাদের একজন হিসেবেই জ্বলজ্বল করবেন তিনি।

ওয়েবসাইট * ১০ হাজারের বেশি রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে জয়ের পেছনে বেশি হারে রান করাদের তালিকায় সবার ওপরেই আছেন পন্টিং। ১৩৭০৪ রানের মধ্যে পন্টিংয়ের ১০৭৬২ রানই এসেছে অস্ট্রেলিয়ার জয় পাওয়া ম্যাচগুলোতে, যে হারটা ৭৮.২৬ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জ্যাক ক্যালিসের এই হারটা ৬৯.৬৩ শতাংশ। * তিন নম্বরে পন্টিংয়ের চেয়ে বেশি রান ও সেঞ্চুরি পাননি আর কেউই। তার ৩০ সেঞ্চুরির ২৯টিই এসেছে এই পজিশনে ব্যাট করে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।