১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এম এ মান্নান। সে সময় হজের টাকা নিয়ে অনিয়মের কারণে তাঁকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। দুই দশক আগের ওই ঘটনা এখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এ ছাড়া মান্নানের নামের আগে ‘অধ্যাপক’ লেখা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ-সমর্থকেরা বলছেন, হজের টাকা নিয়ে যিনি অনিয়ম করেন, তাঁকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করলে সিটি করপোরেশনেও তিনি লুটপাট শুরু করবেন।
তবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নানের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে সৌদি আরবে হাজিদের বাড়িভাড়ার অন্তত ৫০০ কোটি টাকার অনিয়ম করেছেন মান্নান। তাঁরা বলেন, সাধারণত কাবা শরিফ ও মদিনা শরিফের কাছাকাছি হাজিদের জন্য বাড়িভাড়া করতে হয়। কিন্তু ১৯৯২ সালে কাছাকাছি বাড়িভাড়ার কথা বলে টাকা নেওয়া হলেও তিন-চার কিলোমিটার দূরে বাড়িভাড়া করা হয়। এতে হাজিদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ওই ঘটনায় সৌদি আরব ও বাংলাদেশে হাজিরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেন।
গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাংসদ আ ক ম মোজামেঞ্চল হক বলেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে এম এ মান্নান হাজিদের বাড়িভাড়ার টাকা নিয়ে যে দুর্নীতি করেছিলেন, সেই তথ্য সরকারের কাছে আছে। এমন বিতর্কিত একজন মানুষকে ভোট দিলে গাজীপুরের কী অবস্থা হবে, সেটা সবাই বুঝতে পারে। আর আলেমরা তো বলছেন, হজের টাকা নিয়ে যিনি অনিয়ম করেন তাঁকে ভোট দেওয়া অন্যায়।
সরকারি দলের নেতারা আরও বলেন, শুধু হজের টাকা নয়, স্থানীয় আজিমউদ্দিন কলেজের শিক্ষক থাকাকালেও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কমিটির মাধ্যমে ওই ঘটনার তদন্ত করা হয়। এরপর মান্নানকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। প্রভাষক পদে থাকা অবস্থায় চাকরিচ্যুত হলেও পরে তিনি ‘অধ্যাপক’ লেখা শুরু করেন।
আজিমউদ্দিন কলেজের কয়েকজন প্রবীণ শিক্ষক জানান, ১৯৮২ সালে প্রভাষক হিসেবে এই কলেজে যোগ দেন তিনি। এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ওঠায় ১৯৮৯ সালের ২৭ মার্চ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ওই বছরেরই ২৭ জুন তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক এম এ মান্নান ১৯৮৪ সালের অক্টোবর থেকে ’৮৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ৬২৩ কার্যদিবসের মধ্যে ২২৯ দিন কলেজ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া আরও ৩৫০ দিন তিনি ক্লাস না নিয়েই খাতায় সই করেছেন। এটি পেশাগত অসদাচরণ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ছাড়া তিনি কলেজের প্রভাষক পদে থাকলেও সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দিতেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মান্নান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ব্যক্তিগতভাবে হেয় করার জন্যই এ ধরনের প্রচার চালানো হচ্ছে। আর আমি যদি হজ নিয়ে দুর্নীতি করতাম, তাহলে তো ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ তার তদন্ত করত, বিচার করত। কিন্তু তারা তো তেমন কিছুই করেনি। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।