আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঐতিহাসিক নিদর্শন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি

কোনো এক শুক্রবার পড়ন্ত দুপুরে বাড়ির ছোট্ট সোনামণিরা বায়না ধরল মামা ঘুরতে যাব। কোথায় যাবে—শিশুমেলা। কোনো এক কারণে ওইদিন আমাদের বাড়িতে দুই হালি শিশু জড়ো হয়েছিল। শিশুরা আমাকে আবার খুব মানে, তাই তাদের বললাম পার্কে তো অনেক গিয়েছ, আগামীতে আরও নিয়ে যাব, কিন্তু আজ চল তোমাদের দূরে কোথাও নিয়ে যাই। তোমরা অনেক মজা পাবে।

বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই আমার একটা পরিকল্পনা ছিল সাটুরিয়া বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে যাওয়ার। তাই আজ আর সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। বিশেষ করে শিশুরা ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে। চটজলদি দে ছুট ভ্রমণ সংঘের সমন্বয়কারী ধামরাইর অধিবাসী নাসিরুদ্দিন কচিকে ফোন দিলাম। সে প্রস্তুতি নিল শিশুদের ভ্রমণ নিরাপদের জন্য।

কোনো রকম দুপুরে খেয়ে ছুট দিলাম ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বালিয়াটি জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে। মাইক্রো চলছে দ্রুতগতিতে। কালামপুর বাজার থেকে কচি তার সহযোগীকে নিয়ে মোটরবাইক স্টার্ট দিল। প্রায় দেড় ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম জমিদার বাড়ির গেটে। বাড়িটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে।

ভেতরে প্রবেশ করে একে একে ঘুরে দেখলাম বাড়ির স্থাপত্য, নকশা, কারুকার্য। ছাদের ওপর উঠে পুরো বাড়িটি দেখলাম। জমিদারদের ব্যবহৃত তৈজসপত্রের ছোট্ট জাদুঘরটি দেখে মুগ্ধ হলাম। জাদুঘরটি এক সময় রংমহল ছিল। দেয়ালে করা প্রায় দেড়শ’ বছরের পুরনো রঙের প্রলেপ ও নকশা এখনও বিদ্যমান।

বালিয়াটির জমিদাররা শুধু ভোগ-বিলাসিতায় জীবন কাটাননি, তারা বংশ পরম্পরায় বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক ও বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে গেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ঢাকার কেএম জুবলি হাইস্কুল ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ছাত্রছাত্রী সংখ্যায় বৃহত্ আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বাড়ির জমিদার কিশোরিলাল শিক্ষা বিস্তারে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে গেছেন। বংশানুক্রমে জমিদাররা বালিয়াটি হোমিওপ্যাথিক দাতব্য চিকিত্সালয় ও তত্কালীন ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে বালিয়াটিতে ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। এছাড়া তারা অনেক মঠ ও মন্দির স্থাপন করে গেছেন, যেখানে আজও হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজা আর্চনা করে থাকেন।

তাদের অতীত কর্ম আজও দেশবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। কালের পরিক্রমায় আজ আর বালিয়াটিতে জমিদারদের বংশের কেউ নেই। তবে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে ভগ্নদশায় বাড়িটি এখনও দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির শান বাধানো পুকুরঘাটে গিয়ে বসলে আপনিও নিজেকে জমিদার ভাবতে শুরু করবেন। বালিয়াটির জমিদারদের উজ্জ্বল ইতিহাসের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া মন হঠাত্ টনক ফিরল বিশাল উঠানে শিশুদের হৈচৈয়ে।

তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে শিশুদের মাঝেমধ্যে কম্পিউটার ও ল্যাপটপের মনিটর হতো অন্তত একটা দিনের জন্য ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সখ্য গড়ার জন্য সরেজমিন দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শনে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এতে তারা বিনোদনের পাশাপাশি মানসিক উত্কর্ষকতা লাভ করতে পারবে। যাতায়াত : ঢাকা থেকে সাটুরিয়াগামী বাস যায় গাবতলী থেকে অথবা নিজস্ব গাড়িতে ধামরইর কালামপুর হয়ে মাত্র দেড় ঘণ্টায় যাওয়া যায়। সূত্রঃআমার দেশ  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.