গাদীর দিবসে মুকুট পড়ানোঃ
বাইয়াত বা অঙ্গীকার অনুষ্ঠান শেষ হতে প্রায় তিন দিন সময় লেগেছিল। যেহেতু সবাই মহান খেলাফতের দায়িত্ব সম্পর্কে জেনে গেছেন ও রাসূলের (সাঃ) খলিফা বা প্রতিনিধিও নির্বাচন হয়ে গেছে এবং জনগণও তাঁর সাথে পরিচিতি লাভ করেছেন ও তাঁর হাতে বাইয়াত বা শপথ গ্রহণ করেছেন, তাই এখনই উপযুক্ত সময় হচ্ছে রাজ মুকুট পড়ানোর মত অনুষ্ঠানের আয়োজন করার। রাসূল (সাঃ) আমিরুল মোমিনীন আলীকে (আঃ) ডাকলেন ও স্বীয় পাগড়ীটি, যার নাম ছিল 'শিহাব' তার মাথায় পড়ালেন ও লেজ সাদৃশ্য লম্বা কাপড়টি তার গ্রীবা পর্যন্ত ঝুলিয়ে দিলেন এবং বললেনঃ "পাগড়ী হচ্ছে আরবদের মুকুট। অতঃপর তিনি তার সুন্নাতানুসারে পাগড়ী পড়ানো হয়েছে কি-না তা নিরীক্ষণ করার জন্য বললেনঃ আমার দিকে মুখ ফিরে দাঁড়াও। তিনি দাঁড়ালেন।
তিনি বললেনঃ এবার ঘুরে দাঁড়াও। তিনি ঘুরে দাঁড়ালেন। এমতাবস্থায় সাহাবীদের দিকে মুখ ফিরে বললেনঃ যে সকল ফেরেশ্তা বদর ও হুনায়নের যুদ্ধের দিন আমাকে সাহায্য করতে এসেছিল তারা ঠিক এইভাবেই পাগড়ী পড়েছিল।
তিনি আরো বলেনঃ পাগড়ী হচ্ছে ইসলামের নিদর্শন। পাগড়ী এমনই চিহ্ন যা মুসলমানদেরকে মুশরিক হতে আলাদা করে।
তিনি বলেছেনঃ ফেরেশ্তারা ঠিক এরুপে আমার নিকট আসে।
এভাবেই গাদীরের ঘটনার সমাপ্তি ঘটলো এবং হাজীগণ প্রত্যেকেই স্বীয় অঞ্চলের বা দেশের পথ ধরে জাজিরাতুল আরব হতে পরস্পরে আলাদা হয়ে গেলেন। তারা বেলায়াত বা কর্তৃত্বের হাদিসটি সমস্ত মুসলমানের কানে পৌঁছে দিয়েছেন।
যদিও সংক্ষিপ্তাকারে গাদীরের বীরত্বগাথাঁ ঘটনাটি সম্পর্কে আমরা জানলাম তারপরেও দুটি কথা উল্লেখ করা দরকারঃ-
(ক) ইতিহাসের দৃষ্টিতে গাদীরের ঘটনার সত্যতা;
(খ) গাদীর দিবসে প্রদত্ত রাসূলের (সাঃ) ভাষণের তাৎপর্য।
(ক) ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে গাদীর ঘটনার সত্যতাঃ
গাদীর একটি ঝর্ণাধারা যা হতে নির্মল স্বচ্ছ ও নির্ভেজাল ইসলাম প্রস্ফুটিত হয়েছে।
যে ব্যক্তি এই প্রকৃত সত্যকে স্বীকার করে নিল সে যেন তাঁর জীবনকে এই নির্মল প্রকৃত সত্যের মধ্যে স্নান করিয়ে নিল ও মহান নির্ভেজাল ইসলামে নিজের স্থান করে নিল। আর যে ব্যক্তি কোন ওজর, আপত্তি ও বাহানা দেখিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল বা না শুনার ভান করল তার কপালে দূরের ঘন্টার আওয়াজ ব্যতিত কিছুই জুটবে না।
শুধুমাত্র গাদীরই প্রথম পদক্ষেপ নয় যে, রাসূল (সাঃ) তাঁর প্রতিনিধিকে জনগণের সামনে পরিচয় করিয়েছেন। তিনি বহুবার অনেক অনুষ্ঠানে তার ভাষণে বিভিন্নভাবে এই সত্যতার কথা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এবং তাকে পরবর্তী রাহবার বা নেতা হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন। যারা তাঁর নিকট আসা-যাওয়া করত তারা এই ইসলামী রাষ্ট্রের উল্লিখিত ঘটনা থেকে বেখবর ছিল না, তারা জানতেন যে, আলী (আঃ) রাসূলের (সাঃ) ব্যবধানহীন খলিফা ও তাঁর সর্বাপেক্ষা প্রিয় এবং সবার চেয়ে নিকটবর্তী সাহাবী।
খেলাফত এমনটি ছিল না যে, দশম হিজরী পর্যন্ত নিরব নিস্তব্ধ ছিল। রাসূলের (সাঃ) খলিফা বা প্রতিনিধি সে দিনই নির্ধারিত হয়েছে যে দিন মক্কাতে ইসলাম আত্মপ্রকাশ করেছে।
উহার পর বিশেষ করে হিজরতের পরের বছরগুলিতে এই বিষয়টি এতপরিমাণ পুনরাবৃত্তি হয়েছে যে, মদীনায় প্রায় সকলেই এর সাথে পরিচিত ছিল। সকলেই "মানযিলাতে"র হাদিস "রাইতে"র হাদিস "তাইর"-এর হাদিস শুনেছিলেন। সাকালাইন-এর হাদিসটি বারংবার তাদের নিকট পঠিত হয়েছে, আয়াত সমূহের নাজিল বা অবতীর্ণ যেমন- মোয়াদ্দাত-এর আয়াত মোবাহেলাএর আয়াত ও বেলায়াত-এর আয়াত কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমিরুল মোমিনীনের ব্যক্তিত্বের সূর্য দ্বীপ্তময় হয়ে দেখা দেয়ার জন্যে।
এ সকল কারণেই গাদীরের হাদিসের প্রসিদ্ধি লাভ ছিল ন্যায় সঙ্গত। যত হাদিস এ সম্বন্ধে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই সহীহ, প্রসিদ্ধ এবং কিছু কিছু মোতাওয়াতির বা বিশ্বস্ত। কিন্তু গাদীরের হাদিস তাওয়াতুরের বা বিশ্বস্ততার সীমাও অতিক্রম করেছে।
মরহুম আলামুল হুদা সাইয়্যেদ মোরতাজা এ সম্পর্কে বলেছেনঃ- যে ব্যক্তি এর (গাদীরের হাদিসের) সত্যতার দলিল-প্রমাণ চায়, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে ব্যক্তি রাসূলের (সাঃ) প্রসিদ্ধ যুদ্ধসমূহের জন্যে প্রমাণ চায় এবং ঠিক ঐরুপ যেমন- বলা যেতে পারে সে প্রকৃতার্থে বিদায় হজ্জের প্রতি সন্দেহ পোষণ করে। কারণ, এগুলো সবই প্রসিদ্ধতার দিক থেকে সম পর্যায়ের।
কেননা, সকল শিয়া আলেমগণই এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। ঐতিহাসিকগণ ও জীবনী লেখকগণও ঠিক ঐরুপে যেভাবে প্রসিদ্ধ ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করে থাকেন, এটাকে লিপিবদ্ধ করেছেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইহা সনদ ছাড়াই বর্ণনা করেছেন এবং হাদিস বেত্তাগণ ইহাকে হাদিসের সমষ্টিতে সহীহ হিসেবে সন্নিবেশিত করেছেন। এটা খবরে মাযিয়্যাত বা শ্রেষ্ঠ হাদিসের বৈশিষ্ট্যের অধিকারী যা অন্য কোন হাদিসের এই বৈশিষ্ট্য নেই। কেননা 'আখবর' বা হাদিস দু'ধরণেরঃ
এক ধরণের হাদিস আছে যেগুলোর সনদ বা দলিলের সম্পৃক্ততার প্রয়োজন হয় না। যেমন- বদর, খায়বার, জামাল ও সিফ্ফিনের যুদ্ধের সংবাদ ও সকল প্রসিদ্ধ ঘটনা সমূহ বা সনদ যা দলিলবিহীন প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ ঐ বিষয়ে অবহিত।
দ্বিতীয় প্রকার 'আখবর' বা হাদিস হচ্ছে- সনদের বা দলিলের দিক থেকে সম্পৃক্ততার প্রয়োজন হয়। যেমন- যে সকল হাদিস শরীয়তের বিধি-বিধান সম্বন্ধে বর্ণিত হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।