আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাদীর একটি ঐতিহাসিক স্থান ও একটি ঐতিহাসিক ঈদ দিবস



আমি সম্প্রতি একটি ছোট বই অনুবাদ করেছি। আর বইটা আমার কাছে এত ভাল ও তথ্য বহুল মনে হয়েছে তাই আমি চাই এমন বইটি যেন আমার ব্লগার বন্ধুরা পড়তে পারে। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে এই ব্লগে উক্ত বইটি ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরতে চাই। ঈদঃ আভিধানিকগণ "ঈদ" কে "আওয়াদ" মূল ধাতু হতে গৃহীত হয়েছে বলে মনে করেন। আর "আওয়াদ" এর অর্থ হচ্ছে প্রত্যাবর্তন।

সুতরাং প্রত্যেক ঈদকে তার প্রত্যাবর্তনের কারণেই উৎযাপন করা হয়ে থাকে। বারংবার প্রত্যাবর্তন যা ধনুকে রক্ষিত তীরের নিম্নগামীতা উর্ধ্বগমনেরই চিহ্ন বহন করে ও তার উর্ধ্বগমনের পরিক্রমকে শুরু করে। যেমনভাবে নববর্ষকে জীবনের নতুন করে ফিরে আসা প্রকৃতিকে সম্মান করে থাকি, সেই জীবন যা হেমন্ত কালের শীতল আবহাওয়া ছুঁয়ে যায় ও শীতকালের বেইনসাফী শীত যা সীমা ছাড়িয়ে যায় তার ঘটে আগমন মনে হয় যেন কখনোই ছিল না এবং তখন আবার দেখা দেয় বসন্তকালের পদযাত্রা ও উর্ধ্বগমনের উদ্যোগ। (এখানে লেখক স্বীয় দেশের ঋতু বা কালের চিত্র তুলে ধরেছেন। তাই অন্যান্য দেশের ঋতু বা কালের সাথে মিল বা অমিল থাকাটা অতি স্বাভাবিক।

) এই প্রত্যাবর্তনকে অবশ্যই সম্মান দিতে হবে ও এটা শক্তি সাহসীকতার প্রান্ত পাঠশালা যা সবচেয়ে বেশী মূল্য দান করে থাকে এই বিশ্ব প্রকৃতিকে। এখন যদি আমরা চাই এই আদর্শকে উক্ত পাঠশালার সাথে তুলনা করতে, যিনি সমস্ত বিশ্বজগতকে মানুষের অস্তিত্বের ভূমিকা ও চূড়ান্ত সৃষ্টি, মানুষের ইবাদত হিসেবে জানে তাহলে অবশ্যই তাঁর ঈদকে মানুষের ধর্মীয় জীবনের মহা প্রত্যাবর্তন হিসেবেই জানবো। এ ধরণের পাঠশালায় মানুষের নববর্ষ এমনই এক দিন যে, সে নিজেই তার নিজের মাঝেই প্রত্যাবর্তন করে ও তার হারানো জিনিসকে সে ফিরে পায়; ইহা এমনই দিন, যে দিনে প্রকৃতির আলোয় আলোকিত হয়ে উর্ধ্বালোকের পর্যায়ে পৌঁছায়। যেদিনে সাফল্যতা অর্জন করে তার পবিত্র চেহারার উপর থেকে মাটির পর্দাকে সরানোর ও আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তনের। পবিত্র রমজান মাস এমনই এক সময়, যে সময়ে রোজাদার আধ্যাত্মিক সাধকগণ সফলতা অর্জন করে অবাধ্য বায়ূসমূহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ও আল্লাহর প্রতি ভালবাসার আগুনকে যা প্রকৃতির বরফের মাঝে নির্বাপিত হয়েছিল পুনরায় তাকে জ্বলন্ত করে তোলার।

সতর্ক হয়ে যায় যেন তার সমস্ত অস্তিত্বই উত্তপ্ত হয় ও তার অস্তিত্বের সকল প্রকার অস্বচ্ছতা গলে পানি হয়ে যায় যাতে নিখাদ নির্ভেজাল ইবাদতের দুতি ছড়ায় এবং তাকে সৃষ্টির যে উদ্দেশ্য যেন তা সম্পূর্ণ করতে পারে। আর তখনই তার জন্য ঈদুল ফিতর। হজ্জও তেমনি একটি সুযোগ, হাজীগণ বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করার পর সফল হয় জবাইয়ের স্থানে তার বন্ধু নয় এমন কারো গলায় ছুড়ি চালাতে ও তার বন্দী আত্মাকে মুক্ত করে পদদ্বয় মনুষ্যের উর্ধ্বালোকে গমনের দিকে বাড়াতে এবং ইবাদতের শীর্ষ স্থানে অবস্থান করতে। আর তখনই তার জন্য ঈদুল আযহা। এখানেই ঈদ এবং প্রত্যাবর্তিত উৎসবের মধ্যে বিদ্যমান পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

আনন্দ উৎসব আনন্দের জন্য একটি অজুহাত মাত্র। কিন্তু ঈদ হচ্ছে মানুষের পূনঃজীবন। এটাও একটা প্রমাণ যে, আনন্দ উৎসবের বিপরীতে ঈদ হচ্ছে ধর্মীয় বিষয় এবং ইসলামী ঈদ সমূহ দ্বীনের মৌলিক হিসেবে পরিগণিত হয়। সুতরাং ইসলামী ঈদের হাকিকাত বা বাস্তবতা হচ্ছে- দ্বিতীয় বার জীবন লাভ করা ও তা নির্ধারণের দায়িত্ব পবিত্র শরীয়াত বা ধর্মের উপর। আমরা ইহাতে বিশ্বাসী যে, গাদীর দিবসটি ইসলামী ঈদ সমূহের বৈশিষ্ট্যের সাথে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ তেমনি ইসলামী আইন প্রণেতা মহান রাসূলও (সাঃ) উহাকে ঈদ হিসেবে মুসলিম উম্মতের নিকট তুলে ধরেছেন।

বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী (যা পূর্বে বিবরণ দেওয়া হয়েছে) দু'দিক থেকে উক্ত ঈদ প্রমাণিত হয়েছে। এই বিবরণগুলির বিভিন্ন অধ্যায় পাঠ করে এই বিশ্বাসে উপনীত হয়েছি যে, ঈদে গাদীর দিবসটি ইসলামের মহান ঈদ সমূহের একটি, যেটাকে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ঈদ বলা যেতে পারে এবং যদি পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে দেখি তাহলে উপলব্ধি করতে পারবো যে, এটা মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ঈদ। গাদীরঃ আভিধানিক অর্থে ক্ষুদ্র জলাশয়, পুকুর বা ডোবাকে বুঝানো হয়। ঐ সকল গর্ত যেগুলি মরুভূমিতে অপেক্ষায় থাকে যে, কখন বৃষ্টি হবে আর নিজেকে সেই বৃষ্টির পানিতে পূর্ণ করবে এবং তা পরিস্কার ও স্বচ্ছ করে দিবে যাতে মরুভূমির তৃষ্ণার্ত পথিকদেরকে এই সর্বদা বিস্তৃর্ণ দস্তরখান হতে পরিমাণ মত মহা মূল্যবান নেয়ামত বা অনুদান দ্বারা আপ্যায়ণ করতে পারে ও তাদের শুষ্ক মশককে পূর্ণ করে দিতে পারে, এমন ধরণের গর্তকে গাদীর বলা হয়। গাদীরে খুমঃ যে সকল পথিক মদীনা হতে মক্কার দিকে যাত্রা করে, তাদের পথটির দূরত্ব হল পাঁচশ' কিলোমিটারের চেয়ে হয়তো একটু বেশী।

এই পথিকগণ ২৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রান্ত করার পর যে স্থানে উপস্থিত হয়, সে স্থানটির নাম হচ্ছে"রাবেগ"। "রাবেগ" জোহফার নিকটবর্তী একটি ছোট শহর আর জোহফা হচ্ছে- হজ্জের পাঁচটি মিকাত বা ইহরাম বাঁধার স্থান সমূহের মধ্যে একটি; যেখানে শামের (সিরিয়ার) হাজীগণ ও যারা সড়ক পথে মক্কায় যেতে চায়, তারা উক্ত স্থানে মোহরিম হয় বা ইহরাম বাঁধে। জোহফা হতে মক্কার দূরত্ব হচ্ছে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার ও রাবেগ পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার। সেখানে একটি জলাশয় ছিল যার পানি দূর্গন্ধ, বিষাক্ত ও পথিকদের জন্য ব্যবহার অনোপযোগী এবং কাফেলা বা পথিকরা সেখানে দাঁড়াতো না। বলা হয়ে থাকে সে কারণেই "খুম" নামকরণ করা হয়েছে।

কারণ, "খুম" ঐ সমস্ত নষ্ট জিনিসকে বলা হয়ে থাকে যা দূর্গন্ধযুক্ত। তাই মুরগীর খাঁচাকেও উক্ত দলিলের ভিত্তিতেই খুম বলা হয়ে থাকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.