আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গাদীর একটি ঐতিহাসিক স্থান ও একটি ঐতিহাসিক ঈদ দিবস



গাদীরের হাদিস দু’ভাবেই বর্ণিত হয়েছে; অর্থাৎ বস্তুতঃ পক্ষে প্রসিদ্ধির দিক থেকে পরিপূর্ণ ও দলিলের দিক থেকেও পূর্ণতার অধিকারী, এছাড়াও যে সকল হাদিস শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে সবগুলোই খবরে ওয়াহেদ বা বর্ণনাকারীর সংখ্যা অতি নগণ্য, কিন্তু গাদীরের হাদিসের বর্ণনাকারীর সংখ্যা অত্যাধিক। আমরা এই পুস্তকে ঐ সকল হাদিস বর্ণনাকারীর সবার নাম উল্লেখ করতে চাই না। কারণ, না আমাদের স্থান সংকুলান হবে আর না তাতে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবো। মরহুম আল্লামা আমিনী উক্ত হাদিসের বর্ণনাকারীর জীবন ধারার ক্রমানুসারে নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি প্রত্যেক যুগের গাদীরের হাদিস বর্ণনাকারীর নাম, ঠিকানাসহ লিপিবদ্ধ করেছেন।

যারা এ বিষয়ে জানতে আগ্রহী তাদেরকে মুল্যবান গ্রন্থ “আল-গাদীর” পাঠ করার সুপারিশ করছি। রাসূলের (সাঃ) সাহাবীগণের মধ্যে ১১০ জন সাহাবী; তাবেঈনদের মধ্যে ৮৪ জন ২য় হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ৫৬ জন ৩য় হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ৯২ জন ৪র্থ হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ৪৩ জন ৫ম হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ২৪ জন ৬ষ্ঠ হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ২০ জন ৭ম হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ২১ জন ৮ম হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ১৮ জন ৯ম হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ১৬ জন ১০ম হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ১৪ জন ১১তম হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ১২ জন ১২তম হিজরী শতব্দীর আলেমদের মধ্যে ১৩ জন ১৩তম হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ১২ জন ১৪ তম হিজরী শতাব্দীর আলেমদের মধ্যে ১৯ জন আর সবাই লিখেছেন যে, এই হাদিসটি আহমাদ ইবনে হাম্মাল ৪০টি সনদ বা দলিলসহ, ইবনে জারীর তাবারী ৭০-এর কিছু বেশী সনদ বা দলিলসহ, জাজারা মাকার্‌রা ৮০টি সনদ বা দলিলসহ, ইবনে আকাদা ১১৫টি সনদ বা দলিলসহ, আবু সা’দ মাসউদ সাজেসতানী ১২০টি সনদ বা দলিলসহ এবং আবু বকর জা’বী ১২৫টি সনদ বা দলিলসহ বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাজার তার “সাওয়ায়েক” নামক গ্রন্থে লিখেছেন যে, এই হাদিসটি রাসূলের (সাঃ) ৩০জন সাহাবী হতে বর্ণিত হয়েছে এবং তার অধিকাংশ সনদ বা দলিল সহীহ ও হাসান। ইবনে মাগাজেলী তার “মানাকেব” এ লিখেছেনঃ গাদীরের হাদিসটি এত বিশুদ্ধ যে, রাসূলের (সাঃ) প্রায় ১০০জন সাহাবী, যাদের মধ্যে আশারা মোবাশ্‌শারাও (শ্রেষ্ঠ দশজন সাহাবী) ছিলেন তারা রাসূলের (সাঃ) নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন। এই হাদিসটি দৃঢ় ও কোন প্রকার আপত্তিকর কিছু নেই।

আর এটা এমনই এক মর্যাদা যার একমাত্র অধিকারী হচ্ছে আলী এবং অন্য কেউ এই হাদিসে তার অংশীদার নেই। সাইয়্যেদ ইবনে তাউস একজন ইমামীয়া শিয়া আলেম, তিনি তার “ইকবালুল আমাল” গ্রন্থে লিখেছেনঃ আবু সা’দ মাসউদ ইবনে নাসির সাজেসতানী একজন সুন্নী আলেম তিনি ১৭ খণ্ডের একটি বই লিখেছেন যার নাম “আদ দিরায়া ফি হাদিসিল বিলায়াহ”। উক্ত গ্রন্থে এই হাদিসটি ১২০ জন সাহাবী হতে বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মদ ইবনে জারীর তাবারী তার “আর-রাদ্দে আলী আল হিরা কুসিয়্যাহ” গ্রন্থে বেলায়াতের হাদিসটি ৭৫টি পন্থায় বর্ণনা করেছেন। আবুল কাসেম আব্দুল্লাহ হাসাকানী এ বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন যার নাম হচ্ছে- “দায়াউল হুদা ইলা আদায়া হাক্কুল বিলাহ”।

আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনে সাঈদ আকদাহ, তিনিও “হাদিসুল বিলায়াহ” নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং উক্ত হাদিসটি ১৫০টি পন্থায় বর্ণনা করেছেন। তিনি রাবীর (বর্ণনাকারীর) নাম উল্লেখ করার পর লিখেছেন যে, শুধুমাত্র তাবারীর বইটি ব্যতিত এ বিষয়ে সমস্ত বই আমার লাইব্রেরীতে বিদ্যমান আছে; বিশেষ করে ইবনে আকদাহ -এর বই যার জীবদ্দশায় (৩৩০ হিজরীতে) বইটি সংগ্রহ করেছিলাম। সবচেয়ে বিষ্ময়কর বিষয় হচ্ছে- দ্বিতীয় শতাব্দীর পর থেকে যে সময় মাযহাব সমূহের সীমা নির্ধারণ করা হচ্ছিল, সে সময় থেকে নিয়ে একজন বর্ণনাকারীও শিয়া ছিলেন না। শিয়াদের মাঝেও এমন আলেম খুব কমই পাওয়া যাবে যারা গাদীরের হাদিসটি বিভিন্ন সনদ বা দলিল সহ বর্ণনা করেন নি। গাদীরের হাদিসের গুরুত্ব এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, বিশ্বের অনেক আলেম, এ সম্পর্কে পৃথক পৃথক গ্রন্থ রচনা করেছেন।

আল্লামা আমিনী তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘আল-গাদীর’ এ উল্লেখ করেছেন, স্বীয় সময়কাল পর্যন্ত বড় বড় আলেমগণ গাদীরের হাদিসটির উপর পরস্পরায় প্রমাণের সাথে পৃথক পৃথকভাবে ২৬টি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। উক্ত ঘটনাটি সবার নিকট এতটা স্পষ্ট ও উজ্জ্বল ছিল যে, আহলে বাইত বা নবী পরিবারের সদস্যগণ ও তাঁদের প্রতি বিশ্বাসভাজন ব্যক্তিগণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্নভাবে এটাকে প্রমাণিত করেছেন। হাদিসের মধ্যে পাওয়া যায় যে, রাসূলের (সাঃ) ইন্তেকালের পর হযরত আলী (আঃ) বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাসূলের (সাঃ) সাহাবীদেরকে কসম দিয়ে বলতেন যে, তোমাদের কি স্মরণ নেই রাসূল (সাঃ) গাদীর দিবসে বলেছিলেনঃ আমি যাদের যাদের মাওলা এই আলীও তাদের তাদের মাওলা, তিনি নিজেও কসম খেয়েছিলেন যে, তার সেই ঘটনা স্মরণ আছে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, গাদীরের হাদিস সত্য যেটা অস্বীকার করার মত কোন সুযোগ নেই এবং হাতে গণা ক’জন আলেমনামধারী মূর্খ ব্যক্তি যারা কখনোই পারবে না গাদীরের হাদিসের সত্যতার এই বিশাল বিসতৃর্ণ এলাকাকে ঢাকতে আর দিবালোকের ন্যায় সত্যকে আবৃত করা তো অনেক দূরের কথা। সে সব কারণেই “ইমাম আলী (আঃ)” গ্রন্থের লেখক আব্দুল ফাত্তাহ আব্দুল মাকসুদ মিশরী, “আল-গাদীর” গ্রন্থের মুখবন্ধে লিখেছেনঃ গাদীরের হাদিস নিঃসন্দেহে, এমনই এক বাস্তব ও বিশুদ্ধ হাদিস যা শতচেষ্টা করলেও বাতিল বলে ঘোষণা করা সম্ভব নয়; এটা এমনই উজ্জ্বল ও প্রোজ্জ্বল যেমন দিবালোক প্রোজ্জ্বল।

এটা প্রোজ্জ্বলিত এলাহী হাকিকাতসমূহের মধ্যে একটি হাকিকাত যা রাসূলের (সাঃ) বক্ষ বেয়ে আসার কারণে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। আর তাই তিনি (সাঃ) তাঁর ভাই ও নিজের নির্ধারিত ব্যক্তিকে উম্মতের মাঝে পরিচিত করাতে পেরেছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.