দূরে অাছি......তার্হ ফেরা সহজ....কাছের মানুষ কখনো ফেরে না......... ভিড় কমলেই হোটেলের কোনো এক কোণা হতো পাঠশালা, আর ঠোঙা বা পত্রিকার ছেড়া পাতা ছিলো পড়ার পুস্তক আর টিস্যু ছিলো খাতা। কলমটি? ওটাও ছিলো কুড়িয়ে পাওয়া। এ দিয়েই সোহেলের চলতো লেখাপড়া। একদিন বিষয়টি দৃষ্টি কাড়লো হোটেল মালিক এএনএম আরিফের। হৃদয়বান পিতার যোগ্য ছেলের মতোই হোটেলমালিক আরিফ কিশোর সোহেলকে লেখাপড়ায় উদ্বুদ্ধ করলেন।
সোহেল এসএসসি পাসের পর এখন এইচএসসি পাসের স্বপ্নে বিভোর।
অনেকটা বানে ভাসার মতোই ফরিদপুরের হাসানদিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গায় এসে নোঙড় করেছিলেন অসহায় প্রিয়া বেগম। সাথে ছিলো দু সন্তান। সেই দু সন্তানেরই এক সন্তানের নাম সোহেল ও অপর সন্তানের নাম সাথী। সোহেল ও সাথীর দুজনকেই পড়াশোনা কাছে টানে।
সংগ্রাম করেই এরা দু সহোদর লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। হোটেলবয় হিসেবে কাজ করে সোহেল এবার এসএসসি পাস করেছে। আর সাথী দ্বিতীয়বর্ষের কলেজছাত্রী। মা প্রিয়া বেগম তার শিশু দু সন্তানকে নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় আসেন ২০০১ সালে। প্রথমে তিনি কোর্টের একটি ক্যান্টিনে গড়ে তোলা চাইনিজে রাধুনি হিসেবে কাজ শুরু করেন।
সেই চাইনিজ রেস্টুরেন্টটি বন্ধ হয়ে গেলে সন্ধান পান ভোজন বিলাস নামক হোটেলের। তখন তার ছেলে সোহেল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। আর মেয়ে সাথী দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী। ভোজন বিলাস হোটেলের রাধুনী হিসেবে কাজ শুরু করেন প্রিয়া বেগম। একদিন তার কিশোর ছেলেকেও হোটেলেবয় হিসেবে কাজে লাগিয়ে দেন।
তখনও হোটেলমালিক বোঝেননি সোহেলের মধ্যে লেখাপড়ার অদ্যম ইচ্ছা। সোহেল কাজে পাকা। চটপটে। হোটেলে খেতে বসা নারী-পুরুষ সকলকেই সে মুহূর্তেই আপন করে নিতে জানে। কাজ না থাকলেই সে হোটেলের এক কোণে বসে আপন মনে ছেড়া কাগজ পড়তে শুরু করে।
কখনও কখনও সে কোথাও থেকে গল্পের বই সংগ্রহ করে রাখে। আর কলম দিয়ে হোটেলের মোটা টিস্যুতে লেখালেখি করতে থাকে। একদিন টিস্যুতে তার হাতের লেখা দেখে হোটেলমালিক আরিফ চমকে ওঠেন। ওতোটুকু বয়সে অতো সুন্দর হাতের লেখা? তুমি লেখাপড়া জানো নাকি। আগে বলোনি তো? এতোসব প্রশ্নের জবাবের মধ্যেই খুঁজে পান সোহেলের লেখাপড়ায় অদম্য ইচ্ছের সন্ধান।
কি করা যায়? বিষয়টি ভাবনায় ঠাঁই পাওয়ার কয়েকদিনের মাথায় হোটেলে খাওয়ার জন্য প্রবেশ করলেন এক শিক্ষক। শিক্ষকের সাথে হোটেলমালিক পরামর্শ করলেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তির পরামর্শ দিলেন। হলো না। এরপর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সর্বদা মুখে হাসিমাখা শিক্ষক মহসিন আলীর সাথে আলোচনা করলেন।
তিনিই নবম শ্রেণিতে ভর্তির পথ দেখালেন। ভর্তি হলো। রেজিস্ট্রেশন হলো। হোটেলবয় হিসবে কাজের ফাঁকে তার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষক মহসিন আলীর যেমন সহযোগিতা, তেমনই হোটেলমালিকের উৎসাহসহ সার্বিক সুবিধা করে দেয়া। ফলে গতবার সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ ২ দশমিক ৯৫ পেয়ে পাস করেছে।
এখন সে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় নাকি কলেজে ভর্তি হবে? এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য সোহেলের কাছে এখনও স্পষ্ট নয়। সে ভর্তি হয়ে রেজিস্ট্রেশন করে সামনের বছরে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলে স্বস্তি মিলবে। এরকমই ধারণা সকলের।
কেনো সোহেল ও সাথীকে নিয়ে সেই ফরিদপুর থেকে চুয়াডাঙ্গায় ভেসে আসা? সে অনেক কথা। ফরিদপুরের বোয়ালমারীর হাসানদিয়া গ্রামের ওহিদ শেখের স্ত্রী প্রিয়া বেগম।
ওহিদ শেখ দ্বিতীয় বিয়ে করেন। একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে যান তিনি। শিশু দু’সন্তান নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন। কে দেবে খাবার, কোথায় থাকবে তারা? এসব নিয়ে প্রিয়া বেগম পড়েন অথই সাগরে। দিশেহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত নিজ এলাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি তার দুসন্তানকে নিয়ে সিনেমাহলপাড়ায় বসবাস করেন। তিনি বললেন, ভোজন বিলাসের মালিকপক্ষের মতো মানুষ খুঁজে পেয়েছি বলেই দুসন্তানকে লেখাপড়া শেখাতে পারছি। তিন বেলা খেয়ে বেঁচে আছি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।