হেঁটে হেঁটে যতদূর চোখ যায় ইদানীং শামীম সাহেব বড়ই দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন। বউ তার কোন কথাই শুনছে না। তিনি যদি বলেন, ডানে যাও, বউ তবে যায় বাঁয়ে। তাছাড়া বউয়ের চাহিদারও শেষ নেই। শাড়ি দাও।
গয়না দাও। এটা দাও। ওটা দাও। শুধু দাও আর দাও। দিনে দিনে তার চাহিদা বাড়ছেই।
শামীম সাহেব অতি নিরীহ মানুষ। তাই বউকে কঠিন কিছু বলতেও পারছেন না, আবার সইতেও পারছেন না। একদিন বউ লাখ টাকা দামের শাড়ির কথা তুলতেই তিনি অনেক সাহস সঞ্চয় করে বলেছিলেন- না। সঙ্গে সঙ্গে বউ তার নারী অধিকার বিষয়ক একটা ছোটখাটো বক্তৃতা দিয়ে বলল, ‘বউ’ এর জন্য সর্বদা ‘হ্যাঁ’ বলুন।
এই তো গেল শামীম সাহেবের কথা।
এবার বলা যাক তার মিসেসের চিন্তাভাবনা বিষয়ে।
মিসেস শামীমের পিতৃপ্রদত্ত নাম তানিয়া বেগম। সাম্প্রতিককালে তিনি তাঁর স্বামীকে বেশ সন্দেহের চোখে দেখছেন। অবশ্য দেখবেনই বা না কেন! শামীম সাহেবের কতিপয় সন্দেহজনক গতিবিধি তানিয়া বেগমকে এমন আচরণ করতে ইন্ধন যুগিয়েছে। তানিয়া বেগম কয়েকদিন আগে তাঁর এক জ্ঞানী (!) বান্ধবীর কাছ থেকে শুনেছেন- মধ্যবয়সে নাকি পুরুষদের ভিমরতিতে ধরে।
তাছাড়া বিভিন্ন হিন্দী সিরিয়াল দেখে তানিয়া বেগমের মনে সন্দেহজনিত বাতিক ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এর মধ্যে শামীম সাহেব রাত করে ঘরে ফেরা শুরু করছেন। একেই বলে, মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তানিয়া বেগমের মধ্যে একটা ধারণা এখন স্থায়ীবাবে বসবাস করতে শুরু করেছে, যেকোন দিন তার স্বামী ভেগে যেতে পারে! তাই ওনার কাছ থেকে এখনই যতটা সম্ভব আদায় করে নেয়া অত্যাবশ্যক। তাই ডাইরেক্ট এ্যাকশন।
কিন্তু একমুখী এ্যাকশন আর কতদিন চলে! নিউটন সাহেব তো অনেক আগেই বলেছেন- প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। তাই তো লেগে গেল একদিন ধুন্ধুমার। শামীম সাহেব বললেন, তোমাকে নিয়ে তো আর পারছি না।
-তা পারবে কেন? আরেকজনকে নিয়ে তো ঠিকই পার। ইঙ্গিতপূর্ণ কথার বাণ ছুড়লেন তানিয়া বেগম।
-কি বলতে চাও তুমি?
-ন্যাঁকা। কী বলছি বোঝ না?
-তুমি কি আমাকে সন্দেহ কর?
-একেই বলে- চোরের মন পুলিশ, পুলিশ।
-কি, আমি চোর। তুমি ডাকাত।
-কী বললে আমি ডাকাত? তুমি চোর, তুমি ডাকাত।
-তোমার চৌদ্দগুষ্ঠি চোর ডাকাত।
-খামোস! মুখ সামলে কথা বল।
-কী, কী করবে তুমি? কোন কুলক্ষণে যে তোমার মতো মিন মিনে লোককে বিয়ে করেছিলাম। হায় খোদা!
-আমাকে বিয়ে করবে না তো কাকে করবে? তোমার যা চেহারা তাতে তো তোমাকে বিল গেটস বিয়ে করতে আসবে না।
-ও তাই।
এখন তো আমার চেহারা আর ভাল লাগবে না। ক’জন চেহারাওয়ারী জুটিয়েছ শুনি। চরিত্রহীন।
-কী বললে? তোমাকে আজ...। এ কথা বলেই শামীম সাহেব যেই না বউয়ের দিকে তেড়ে যেতে শুরু করেছেন অমনি তাঁদের একমাত্র মেয়ে রূপা বলে উঠল, ছিঃ ছিঃ ছিঃ আব্বু –আম্মু তোমরা এসব কি করছ? মেয়ের কথায় যেন সংবিত ফিরে পেলেন শামীম দম্পতি।
মেয়ের আদালতে বিচারপ্রার্থী আসামীর মতো এক অপরকে দোষারোপ করে বললেন, ও-ই তো আগে শুরু করেছ?
-যাই হোক। শোন আব্বু, শোন আম্মু তোমরা যদি এভাবে এক অপরকে সন্দেহ কর তাহলে আমার কী হবে? আমাদের সংসারের কী হবে? তোমাদের ছাড়া এ পরিবার অচল। তোমরা একে অন্যের সম্পূরক। প্লিজ, আর ঝগড়া কর না।
-ঠিক আছে, তোর আব্বুকে বল আর যেন রাত না করে বাড়ি ফেরে।
বললেন তানিয়া বেগম। শামীম সাহেব হ্যাঁসূচক মাথা নাড়তেই তানিয়া বেগম বললেন হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন!
অবাক চোখে শামীম সাহেব বললেন, ও আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী। ওহ তানি, ইউ আর সো ফানি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।