কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
এই সিরিজটা কন্টিনিউ করতে আমার খুবই মন চায়। কিন্তু চাইলেই সম্ভব না, কারণ ঘটনা ত ঘটে না। আর যখন ঘটে তখন মনেও হয় না যে এটা বলার মত কিছু। অনেক পরে যখন নিজে নিজে মনে আসে, তখন খেয়াল করি, আরে এইটা ত “বলার মত বিশাল ঘটনা।
”
এরকম অনেকদিন পরে লেখার কিছু পাওয়া গেলো।
মাস খানেক আগের ঘটনা। আমরা ক্লাসের পোলাপান ধুমধাম করে ডিসিশান নিয়ে ফেললাম যে সেমিস্টার ফাইনালের আগে ঢাকার কাছাকাছি কোথাও ১ দিনের জন্যে ঘুরে আসি। একেবারে সেকশানের সবাই মিলে। কুইক প্ল্যান অনুযায়ী তার পরের দিন সবাই বের হয়ে গেলাম সেই ভোরে।
কোথায় যে যাচ্ছি সঙ্গত কারণেই সেটা এখন বলা যাবে না।
আমাদের ৪০টা ছেলের সাথে ২-৩ জন মেয়েও ছিলো। এখন ওরা ত রাত পর্যন্ত রাস্তায় থাকবেনা। সুতরাং ওদের জন্য পুরা প্ল্যান অনেক শর্ট করা হল। এমনভাবে সব কিছু ঠিক করা হল যেন রাত ৮টার মধ্যে ওরা বাসায় পৌঁছাতে পারে।
ত অনেক ঝামেলা করে ভোরে ঘুম থেকে উঠে লোকাল বাস আর লোকাল ট্যাম্পুতে করে আমরা এত্তগুলা পোলাপান সেই জায়গাতে পৌঁছালাম। কিন্তু এরপরে ত বিশাল ঝামেলা, কারণ আমরা পৌঁছেছি সকাল ১১ টায়। আর উনারা গেট খুলবেন ২ টা ৩০ মিনিটে। কী আজব ব্যাপার, অথচ এই সাড়ে ৩ ঘণ্টা মিস গেলে ত ঘোরাঘুরি শেষ হতে অনেক সময় লেগে যাবে। তাড়াহুরার প্ল্যান আর আগে যারা বেড়াতে এসেছিলো এখানে কেউই এইরকম কোন নিয়মের কথা বলেনি।
আমরা জেনেছিলাম গেলেই নাকি ঢোকা যায়। এখন ত পুরা ধরা ।
গেইটে আমরা অনেক রিকোয়েস্ট করলাম। অনেক ভাবে বললাম, বুঝালাম কিন্তু কিছুতেই কাজ হল না। সবার সব রকম কেরামতি শেষ কিন্তু লাভ হল শূণ্য।
হঠাৎ পোলাপান আমাকে আর আমার এক বান্ধবীকে দেখিয়ে গেটম্যানকে বলে যে, এই দুইটা আমাদের টিচার। আমাদের নিয়ে আসছে। আপনাদের ম্যানেজমেন্টে যারা আছেন তাদের সাথে উনাদের একটু কথা বলিয়ে দেন। আমি আর সেই বান্ধবী ত পুরা থতমত। এখন কী আর করা, যা ডুবার ডুবে ত গেছিই।
তাছাড়া বাইরের লোকদের সামনে ওই ছেলেগুলাকে ধরে পিটানীও ত দেয়া যায় না।
ত আমি গেটে যারা ছিলো আর কেয়ারটেকার/ম্যানেজার এর সাথে ভুং চুং বললাম। কোনভাবেই উনারা গেট খুলতে রাজি না। উনাদের নাকি চাকরি চলে যাবে। অনেক ভাব গম্ভীরতার সাথে ভাব টাব মেরে অনেক বুঝিয়ে টুঝিয়ে একটা চুক্তিতে আসলাম যে আমাদের অন্তত ১ টায় ঢুকতে দিবে।
তার আগে কোন মতেই না। তাও হিসব অনুযায়ী ২ ঘণ্টা আমাদের শুধু বসেই থাকতে হবে। পোলাপান খুবই হতাশ।
এই দুই ঘণ্টা আমরা বনে বাদারে, মাটির ঘরে, দোকানে চা খেয়ে, রাস্তায় ঘুরে টুরে কাটালাম। পরে যখন ফেরত আসছি, আমার ত আর খেয়াল নাই যে আমি টিচার !! এতক্ষণ অপেক্ষা করে ঢোকার সুযোগ পেয়েছি; সুতরাং ভিতরে যেয়েই হই হই রই রই করে চেচামিচি শুরু করে দিছি।
ত ম্যানেজার আর বাকিরা দেখি তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার একটু অবাক লাগলেও পাত্তা দেই নি আর।
কিন্তু ঘটনা হল, আমার ফাজলামি ত তখনও শুরুই হয় নাই। ভিতরে দারুণ প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাথে সাথে প্রচুর মূর্তি/ভাস্কর্য। খুবই আর্টিস্টিক আর সুন্দর কারুকাজ করা।
ছেলে আর ছেলের মা, পরী, দানব, ডাইনোসর এইসব মূর্তিতে ভরা। চারিদিকে খালি ক্যামেরার ক্লিট ক্লিট আওয়াজ। এর মধ্যে আমি একটা “পরকীয়া” পোজ দিলাম । মানে হলো, সেই যে ছোট ছেলে আর তার মায়ের মূর্তি আছে না; ঐখানে দাঁড়িয়ে ঐ ইয়েতে হাত দিয়ে কয়েকটা ছবি তুললাম। এরপর ত পোলাপানের মধ্যে এইসব ছবি তোলার জোয়ার এসে গেল।
খালি ক্যামেরার আওয়াজে আকাশ বাতাস কাপতেছে তখন। এরপর দিঘীর পাশে পরী দাঁড়িয়ে। হাতে লাইট। আমার সাথে ৪-৫ টা বিটলা পোলাপান সেইখানেও পরীদের ইয়েতে হাত দিয়ে, মাথা দিয়ে, মুখ দিয়ে কয়েকটা অশ্লীল ছবি তুলে ফেলল । এখন সিরিয়ালে আমি শেষে।
অবশেষে একেকজনের দুর্লভ ফটোসেশনের পর একসময় আমার পালা আসে। আমি দু একটা ছবি তুললাম। এরপর যখন পিছন ঘুরে মূর্তির ইয়ে ধরে একটা ইয়ে মার্কা পোজ দিয়ে ছবি তুলতে গেছি, সামনে দেখি কেউ নাই। আরে কী আজব ত, ১ মিনিটে সবাই কই গেলো !!
দেখি ঘটনা তা না, আমার পিছে কেয়ারটেকার/ম্যানেজার আর গেটের ওই লোকেরা দাঁড়িয়ে আছে। ওহ, ঠিক একই সময়ে মনে পড়ল উনারা ত জানে আমি টিচার !!!!!!
আআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআআ।
(উফফফ, সেই সময় টিচার সাজার কথা আমার মনে না পড়লে এমন কিছু খারাপ লাগত না। )
মানে পালানোরও উপায় নেই, চেহারা ঢাকারও উপায় নাই। পোলাপান আমাকে বলারও সুযোগ পায় নাই, আগেই সব ভাগছে। আর আমি নিজে পোজ দিচ্ছিলাম বলে টের পাইনি।
আমি ভাবতেছি ওই ব্যাটারা কী ভাবতেছে যে এই টিচার কী করতেছে !! ওহ।
আমার মান ইজ্জত সাগর সমান। বালতি বালতি গেলেও তাই গায়ে লাগে না, কারণ আরও এক সাগর বাকি। তবে সেই দিন মনে হয় কয়েকশত বালতি মান ইজ্জত ধুলায় মিশে গেছিল !! নইলে এত লাগত না !!
। Shame on me !!! আমি পুরাই খারাপ !!
এই সিরিজের বাকি লেখা গুলা দেখতেঃ Click This Link
এইটা ১৬ তম পর্ব।
নতুন লেখাগুলোর খবর পেতে লাইক দিতে পারেন Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।