পরমাণু বোমা মুক্ত বিশ্ব চাই !
পরিস্থিতি নতুন একটি দিকে গড়াচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা নজিরবিহীন। চরমতম সংবেদনশীল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আদালতের আইনগত সিদ্ধান্ত বলে পরিচিতি পাচ্ছে। সে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল কয়েক বছরের টানা সংসদ বয়কট, হরতাল, লাশ ও নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে। একটি পার্লামেন্টের জন্মই হয়েছিল একটি নবজাতকের জন্ম দিতে।
শেরেবাংলা নগরের অপারেশন টেবিল ঘিরে সে কি উত্তেজনা। সন্তান লাভই সান্ত্বনা। মাকে মেরে হলেও সন্তান পেতে হবে। বেছে নেয়া হলো সন্তান। সেই নিশীথে ত্রয়োদশ সংশোধনী নামের শিশু প্রসব হলো।
মা পার্লামেন্টের মৃত্যু হলো। এখন কলমের খোঁচায় রক্তাক্ত সেই সন্তান। সেই সন্তানের সুরক্ষায় আজ বিরোধী দল হরতাল করবে। আওয়ামী লীগ তা ঠেকাবে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিহাস ও প্রহসনের কোন অভাব নেই।
কিন্তু এবারের কমেডি কিংবা ট্র্যাজেডির যেন কোন তুলনা নেই। রাজনীতির প্রহসন নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছিল। কিন্তু এর মধ্যে মাটি ফুঁড়ে মঞ্চে উদিত হলেন এক অচেনা জন। তিনি রাজনীতি কঠিন করে দিয়ে গেলেন। এখন বোঝা যাচ্ছে না কোন পর্ব কমেডি।
কোন পর্ব ট্র্যাজেডি। এজন্য ক্রমশ সবার নজর একজনের দিকে। তিনি সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। তিনি ধীরে ধীরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিটি রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রেখে গেছেন। এমনকি তিনি তার পবিত্র কলম দিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য স্বস্তিকর ইতিহাস লিখতেও সচেষ্ট হয়েছেন।
অনেকের আশঙ্কা আজ হোক কাল হোক, তাকে আবার সক্রিয় কর্ম জীবনে হয়তো দেখা যাবে। অবশ্য গণআদালতে তার বিচারের দাবি উঠেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একজন মাত্র বিচারক এত বেশি দলীয় রাজনৈতিক এজেন্ডায় হাত দিয়েছেন যার কোন নজির বাংলাদেশের চার দশকে নেই। উপমহাদেশে নেই। বিশ্ব ইতিহাসেও হয়তো নেই।
এর চরম প্রতিক্রিয়া হিসেবে এবারই সুপ্রিম কোর্টে কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ওই বিচারক আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করেন যে, বাকশাল সঠিক ছিল। চতুর্থ সংশোধনী গণতান্ত্রিক ছিল।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, তারা ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করবে। সেটাই ঘটলো।
কিন্তু পরিহাস হলো, আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীরা মুখ রক্ষা করতে পারছেন। তারা এখন গলা ফাটিয়ে বলছেন, তারা তাদের ব্রেইন চাইল্ড কেয়ারটেকার হত্যা করেননি। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের প্রকারান্তরে বলছেন, তাদের হাতে রক্তের দাগ নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামের কিশোরের বুকে তারা ছুরি বসায়নি। একথা শুনে অনেকে স্মরণে আনছেন জেনারেল এরশাদের একটি উক্তি।
আমার হাতে কোন রক্তের দাগ নেই।
কার বিরুদ্ধে হরতাল আর কে-ই বা কি কারণে তা ঠেকাবে, সেটাও এবারের হরতালকেন্দ্রিক রাজনীতির এক বিরাট রহস্যঘেরা প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, এই হরতাল কার বিরুদ্ধে? কিন্তু আজকের হরতাল অনেকগুলো হরতালের সূচনা ঘটাচ্ছে। সরকার বলছে, তারা এই হরতালে বাধা দেবে। কারণ, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেনি।
বাতিল করেছে আদালত। আবার সংলাপ প্রশ্নেও ধাঁধা তৈরি হয়ে আছে। প্রধানমন্ত্রী বলছেন এক কথা। আশরাফুল ইসলাম বলছেন অন্য কথা। আওয়ামী লীগের অবস্থানে স্ববিরোধিতা।
তাদের হার্ডলাইন বলছে, তাদের কিচ্ছু করার নেই। যা করার তা তো আদালত করেছে। নিহত কিশোরকে কাফন পরিয়ে দাফন করা ছাড়া তাদের অন্য কাজ নেই। অন্য কিছু থাকলে তারা শুনতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্য গতকাল মিডিয়ায় ফলাও করে ছাপা হয়েছে।
তিনি অনড় নন। বিএনপিকে সংসদে গিয়ে প্রস্তাব দিতে হবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তারা এই ফাঁদে পা দেবেন না। প্রধানমন্ত্রীর কথার দু’রকম মানে চলে। তিনি একটি এস্কেপ রুট খোলা রাখবেন।
একই সঙ্গে আদালতের কাঁধে রাখা বন্দুকেও ট্রিগার টিপবেন। আর বিরোধীদলকে বলতে হবে সেই সব যুক্তি, সেই সব কথাবার্তা, যা তারা ১৯৯৩-১৯৯৬ পর্বে আওয়ামী লীগের নেতা ও তার সমর্থকদের কাছ থেকে শুনেছিলেন।
এটি এক অভূতপূর্ব কমেডি। বাংলাদেশের নিরীহ পাবলিক এর দর্শক। যারা হাসতে হাসতে হঠাৎ ঠাওরাবেন তাদের চোখ জলে ভেসে যাচ্ছে।
কমেডি হয়তো রূপান্তরিত হয়েছে ট্র্যাজেডিতে।
এখান থেকে নেয়া ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।