কত কিছু যে করতে চাই, তবুও কিছু করতে না পারার দায়ে মাথা খুঁটে মরি ।
আমার খুব কাছে এক দোস্ত, যার বাসাও আমার খুব কাছাকাছি তাকে “হিপহপ” রোগে ধরছে। মানে, দোস্ত দারুণ স্লো মেলো গাইত এক সময়, হঠাৎ করে মাস ছয়েক আগে থেকে সে র্যাপ গান ধরছে। নিজেকে সে দাবী করে “এমসি” যার মানে হইল “হিপহপার”, পাবলিকের ভাষায় র্যাপার।
ঘটনা হইল ঘটনা এখানেই শেষ না।
তার এই রোগের কারণ বের করলাম। সেটা হল হিপহপ সোসাইটি। বালাদেশের আনাচেকানাচে এখন হাজার হাজার র্যাপার। এরা যে শুধু র্যাপ করে ব্যাপারটা সেখানে শেষ না। এরা গ্যাংস্টার র্যাপ করে।
এদের এই বিশেষ র্যাপ খালি অমুক ব্যাক্তি তমুক ব্যাক্তিকে পঁচানো আর বিশেষ বিশেষ অশ্লীল গালি বেইজড। এমিনেম আর ৫০ সেন্টের মত আরকি ! একেকজন একেকজনকে পঁচাইতেই থাকে। দুইদিন পর পর ট্র্যাক বের করে আর কার ফ্লো কত বেশি সেটা দিয়ে রিসপেক্ট লেভেল পরিমাপ করা হয়।
শুনতে খারাপ লাগে না। তবে কী না, আই কান্ট লিভ অনলি অন দিজ থিংস।
কিন্তু তারা পারে। শুধু গলায় না মননে আর আচরণে আর অতি অবশ্যই বেশভূষায়।
ত ঘটনা হল দোস্ত আর কিছু পোলাপানের(এরা দোস্তের দোস্ত, আমার পূর্ব পরিচিত) সাথে রাস্তার ঘুরতে ঘুরতে দোস্ত আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল তার আরেক র্যাপ পার্টনারের সাথে। তার নাম হল, এমসি স্যাম। আমি বললাম, “ত, স্যামভাই কী করেন? কই পড়েন?” হঠাৎ দেখি পোলাপান চুপ।
বুঝলাম না কিছু। সবাই দেখি আমার দিকে ঘুরে তাকাইছে। আমি ত ডরায়া গেলাম, হায় হায় কী না কী করে ফেলসি। তখন এমসি স্যাম আমার দিকে ক্রুদ্ধ চোখে তাকিয়া বলতেছে, “ স্যামভাই মানে কী? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই স্যামভাই? আই এম দি এমসি স্যা এয়া এয়া এয়া এয়া ম। ” ভরা রাস্তায় এহেন গর্জনে আমি মোটামুটি টাশকি।
পরে সরি টরি বলে সেবারের মত পার পেলাম। ওরা একবার একটা কনসার্ট করছিল সেখানে ওদেরকে সাউন্ড আমি সাপ্লাই দিছিলাম আর ওদের কিছু গানে মাস্টারিং করে দিছিলাম বলেই শুধু সরি টরি বলে সেবারের যাত্রা রক্ষা পেলাম আর কি ! নইলে এই ভরা রাস্তায় পোলাপান আমারে পঁচায়া একটা র্যাপও গেয়ে দিতে পারত বলা যায় না !!
ত ফেরত আসার সময় আমার দোস্ত আর অন্যান্য পোলাপানরে বললাম, “স্যামভাই এমন করল ক্যান?” এইবার দেখি পোলাপান পুরা চ্যাতা আমার উপর। পারলে আমারে রিকশা থেকে ফালায়া দেয়। আমি আবারও কেন স্যামভাই বললাম !! আমাকে সবাই জ্ঞান দিল একজন এমসি কে এমসি না ডেকে সরাসরি তার নাম নেয়াটা নাকি তার বাপ মাকে তুলে গালি দেয়ার সমান। আমি হতভম্ব হয়ে টাশকি খেয়ে বসে রইলাম।
পোলাপান ডুবছে ভালমতই। এরা শুধু গানেই না, ঐ যে, মননে আর আচরণেও এখন গ্যাংস্টার র্যাপার হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে, এমিনেম, টুপ্যাকদের মতন।
কয়দিন আগে আবার গেছি সেই দোস্তের সাথে দেখা করতে। হঠাৎ খেয়াল হওয়াতে জিজ্ঞাসা করলাম, “কী রে মাম্মা, এমসি স্যাম এর খবর কী তা?” এইবার দেখি আমার দোস্ত চুপ। আমি এইবারও টাশকি খেয়ে ভাবতে লাগলাম যে এখন আমার কী করলাম ! দোস্ত চ্যাইতা মেইতা আমার দিকে তাকায়া চিবায়া চিবায়া বলে, “ আরেকবার যদি এমসি স্যাম কইয়া ডাকস তাইলে খুনাখুনী হইব।
ঐ শ্লা কোন কিছুই না, ওর নাম জামিল। ও আমার টাকা মাইরা দিসে। শ্লারে আমি খাইছি। জামিল জামিল জামিল। ও আমার কীসের এমসি? ”
উফফফ, সারাজীবনে এমন হাসা হাসি নাই।
কোথায় এমসি স্যাম আর কোথায় ওর সত্যিকারের নাম জামিল !! দোস্ত তার টাকার মায়ায় আমার দিকে করুণ চোখে তাকাইলো, তাতে কী!! আমি পেট ধরে হাসতে হাসতে রাস্তাতে গড়াগড়ি খাইতাছি ততক্ষণে। হা হা হা।
তবে, সেইদিন এমসি স্যাম ছেলেটাকে আমার খারাপ লাগে নাই। ভালই লাগছে। ভয়েসটাও ভাল।
আহারে জামিল বস, বাপ মার দেয়া নামটার সাথে এমন না করলেও পারতা মিয়া।
© আকাশ_পাগলা
(এই সিরিজের এটা ৮ নাম্বার প্যাকেজ পর্ব সম্ভবত। )
বাকি পর্বগুলা এখানে দেখতে পারেন http://www.somewhereinblog.net/blog/aakash_paglaa/category/14991
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।