আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের ডাক্তার আলমগীর

বসন্তে মাতাল আমি এক অপূর্ণতা ... মাহতাব হোসেন : ছোটতে আমরা যখন রচনা পড়তাম ‘aim in life’ বা ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ ঠিক তখনই আমরা স্হির করে ফেলতাম বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তার হবো। ডাক্তার হয়ে গরীবের সেবা করবো, মানুষের পাশে সেবার হাত বাড়িয়ে দেবো। কিন্তু ভুলে যাওয়া আমাদের স্বভাবেরই একটা অংশ তাই ইচ্ছাটা ভুলতে গিয়ে ঠিক আরেকটা রচনা ‘অধ্যবসায়’ যখন পড়া শুরু করি তখন হারিয়ে যাওয়া সেই ইচ্ছেটা প্রবলভাবে মনে জেগে ওঠে। কেন পারবো না, আমাকে পারতেই হবে! হায় কপাল আরেকটু বড় হয়ে ওঠার পর সত্যিই মন এলোমেলো হয়ে যায়। যখন নবম শ্রেণীর বিজ্ঞানের বই গুলো নেড়েচেড়ে দেখি তখনই ইচ্ছা শক্তি মিইয়ে যায় আবার কিছু কিছু কিশোরের মনে জীবনের লক্ষ্যটা বুকের বাম নিলয়ে ইস্পাতের মত শক্ত হয়ে গেঁথে যায়।

আমি সেই সব শ্রেণীর কিশোরের কথা বলছি যাদের বুকের ভিতর দৃপ্ত ইচ্ছা- যার কারনে সে তার জীবনের সোনালী সময়গুলোকে বিসর্জন দিয়ে বইয়ের পাতায় নিমগ্ন থাকে শুধুমাত্র মানুষের সেবার কথা ভেবে। যখন তাদের থাকার কথা বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল মাঠে অথবা ‘ম্যাটিনি শো’ তে তখন তারা আত্মস্হ করে বই, জীবনের লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য। এক সময় তারা হাতেনাতে এর ফল পেয়ে যায়। এইসব তরুনরাই চান্স পেয়ে যায় মেডিকেল কলেজ কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে। মেডিকেলে চান্স পেয়ে যাওয়া মানেই জীবনের লক্ষ্যে পৌছে যাওয়া, এখানেই শুরু একজন মেডিকেল কলেজ ছাত্রের।

শুরু একটা ভয়াবহ জীবনের। পরিশ্রম কাকে বলে শুধুমাত্র একজন মেডিকেলের ছাত্রই বলতে পারবে। চোখ কান বন্ধ করে জীবনের সাধ আহ্লাদ ত্যাগ করতে হয়। কষ্টেসৃষ্টে মেডিকেল কলেজগুলোর হোস্টেলে একটা সিট পাওয়া যায় বটে কিন্তু খাবারসহ অন্যান্য ব্যাপার সম্পর্কে একজন মেডিকেল ছাত্রই ভালো বলতে পারবে। প্রতিদিন সকালে উঠে ক্লাস।

দৈনিক ৭ ঘন্টা, আবার সন্ধ্যায় ২ ঘন্টা ক্লাস এরপর রুমে ফিরে আবার স্টাডি এবং ক্লাস টেস্টের প্রস্তুতি। এভাবেই চলতে থাকে একজন মেডিকেল ছাত্রের জীবন। উচু ক্লাসে ওঠার সাথে সাথে বেড়ে যায় ধকল। এই ধকল কে অনেকে শরীরের উপর বুলডোজার চালিয়ে যাওয়ার সাথেই তুলনা করে থাকেন। দায়িত্ব ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে বেড়ানো।

রোগের সিম্পটম নির্নয় করা আর রুমে ফিরে স্টাডির উপর স্টাডি। অতঃপর ক্লিয়ারেন্স এর জন্য অধ্যাপকদের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লিয়ারেন্স হাতে পেয়ে তারা ঈদ উদযাপনের মতই আনন্দ করতে থাকে। চার পাঁচ বছরের ধকল সামলিয়ে ওঠার সাথে সাথেই শুরু হয় ইন্টার্ণশীপ। এখানে একজন ছাত্রকে ডিউটি পালন করতে হয় কখনো আটঘন্টা কখনো ষোল ঘন্টা এমনকি নির্ঘুম চব্বিশ ঘন্টা। অনারিয়াম হিসাবে ছাত্রদের হাতে কিছু টাকাও তুলে দেয়া হয়।

ইন্টার্ণশীপ শেষ করার পর ডাক্তার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার পর আবার বইয়ের মাঝে ডুবে যেতে হয়। কারন দরকার সরকারি চাকুরি, দিতে হবে বিসিএস। আবার পড় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞানের মত ভারী ভারী বইয়ে ডুব দিয়ে তারপর একটা সরকারি চাকুরি কিংবা আবার গাদা গাদা বইয়ে ডুবে ডুবে পড়াশোনা কারন এফসিপিএস করতে হবে। এভাবেই একজন বেড়ে ওঠা মানুষের গল্প বলছি আপনাদের। যিনি কিনা মানুষের জীবন বাঁচানোর মহানব্রত নিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন।

তিনি নিজেই আজ মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। হাসপাতালের বেডে যাকে চব্বিশ ঘন্টাই নেবুলাইজ করে রাখা হয়েছে। হ্যাঁ আমি সত্যিই বলছি ঠিক এভাবে মানুষের সেবাকে ব্রত হিসেবে নিয়ে মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। নিজের মেধা আর যোগ্যতায় যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নাক কান ও গলা বিশেষজ্ঞ হিসেবে। উচ্চতর ডিগ্রীর জন্যে গিয়েছিলেন সূদূর আমেরিকায়।

পথিমধ্যে গতিরোধ। এই লোকটির নাম ডা. আলমগীর হোসেন। সদালপি এই লোকটি ভুগছিলেন শ্বাসকষ্টে। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যুক্তরাস্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন হসপিটালে। ফুসফুস পরীক্ষার পর ডাক্তাররা লিখে দেন ‘ লাং এডিনোকারসিনোমা’ ।

যারা তাদের স্বজনদের চিকিত্‍সা করতে গিয়ে এই মেডিকেল রিপোর্টটি হাতে নিয়েছিলেন শুধু তারাই এই মর্মটি উপলব্ধি করতে পারবেন। ফুসফুস ক্যান্সার। ডা. আলমগীরের স্ত্রী, যিনি নিজেও ডাক্তার- তার চোখের সামনে হয়তো সেই সময় কৃষ্ণগহবরের চেয়ে অধিক কালো মেঘ এসে ভর করছিলো। এই রোগ শুধু মানুষ কে মানসিকভাবেই পঙ্গু করে দেয় না, দেয় অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে। ডাক্তারের পরামর্শে রেডিও থেরাপি দিয়ে চিকিত্‍সা শুরু হয়।

কিন্তু সেই রোগ আবার আগের পর্যায়ে ফিরে যায়। ডাক্তাররা এবার কেমো শুরু করেন ইতোমধ্যে পরিবার অর্থনৈতিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি’র জর্জ ওয়াশিংটন হসপিটালের বেডে শুয়ে বেঁচে থাকার আকুতি জানাচ্ছেন। যার মুখে চব্বিশ ঘন্টাই লাগানো রয়েছে অক্সিজেন মাস্ক। অথচ এই লোকটিরই আজ মানুষকে বাঁচানোর মহান দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার কথা ছিল, ছিল আর্তমানবতার সেবায় এগিয়ে যাওয়া।

হয়তো এই লোকটির গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা অপেক্ষা করে আছে, কবে আসবে আমাদের ডাক্তার বাবু, আমাদের ফ্রি চিকিত্‍সা করবে, আমাদের ওষুধ দিয়ে টাকা নেবে না’ হয়তো তারা এখনও জানে না তাদের ডাক্তারবাবু অদৌ তাদের মাঝে ফিরবেন কি না! ডাঃ আলমগীর তার এক ফেসবুক বন্ধুকে যে ম্যাসেজটি দিয়েছেন তা আমাদের পাঠকদের জন্যে হুবহু তুলে দিচ্ছি: Dear Salma apa, I am Dr. Md Alamgir Hossain, MBBS,MS(DMC)FCPS(BCPS) was working as an ENT specialist in BSMMU( Formerly known as IPGMR Hospital). Me, my wife Dr Samsun Nahar and our 5 year old daughter came to USA last year through immigration visa. After coming to USA I developed respiratory distress and was admitted to George Washington Hospital, in Washington DC. After performing extensive tests I was diagnosed with Adenocarcinoma of the lungs. I have received radiation therapy and my oncologist has now recommended chemotherapy. After radiotherapy we have been waiting to hear from insurance for chemotherapy coverage, which is extremely expensive which we cannot afford, and in the mean time my health condition is deteriorating. Now I am under oxygen all the time. Through facebook I have asked for help to save my life. Our family fund came to an end fighting the lung adenocarcinoma for more than a year that started from Bangladesh. We need urgent help to go through this financial crisis . My family will highly appreciate your help either personally and or through any association therein. bank account–MD ALAMGIR HOSSAIN/SAMSUN NAHAR TD BANK a/c-4261595933 routing no:054001725(if neccessary) address-2727 ADAMS MILL ROAD NW APT-105 WASHINGTON DC ZIP-20009 cell- 202-704-2143. My wife Dr. Samsun Nahar:202-710-4144 Thank You Dr. MD ALAMGIR HOSSAIN MBBS,MS,MCPS (ENT ) ENT SPECIALIST & HEAD NECK SURGEON প্রিয় পাঠক, ডা: আলমগীরের ফেসবুক লিংক যেখানে তার অধ্যাবসায়ের কিছুটা পাওয়া যাবে, আপনরা ইচ্ছে করলে তার ওয়ালটা দেখার জন্যে নিচে ক্লিক করলেই হবে https://www.facebook.com/dralamgirh?ref=ts –আমরা তো অন্ধকার যুগের মানুষ নই। আমরা সভ্য যুগের সভ্য মানুষ। সভ্য মানুষ হিসেবে আমরা উচ্চারণ করি - “মানুষ সামাজিক জীব”। সামাজিক জীব হিসেবে আমরা একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধ, পরস্পরের সাথে সুখ-দুঃখের সাথী। আপদে-বিপদে আমরা পরস্পরের প্রতি সমব্যথী ও সহযোগী।

আপদে-বিপদে পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়াই মানবতা। এই মানবতা জিনিসটা না থাকলে আমরা সমাজে একসাথে বসবাস করতে পারতাম না। তাই তো কালজয়ী শিল্পী প্রয়াত ভুপেন হাজারিকা মানবতার জয়গান গেয়ে সুর সেধেছেন, “বলো কি তোমার ক্ষতি, জীবনের অথৈ নদী, পার হয় তোমাকে ধরে, দুর্বল মানুষ যদি। ” আসুন না। আমরা সমাজের একজন মানবসেবার কারিগর, ডাঃ আলমগীরের পাশে দাঁড়াই।

বাড়িয়ে দেই, যার যেটুকু সামর্থ্য আছে- তাই দিয়ে সহায়তার হাত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.