কিছু বলার নেই। নিচের লেখাটার একটা বাক্যও আমার নিজের নয়। এটা লিখেছেন ইউরোপে থাকা এক বাংলাদেশি চিকিৎসক। আমি শুধু কপি করে দিলাম।
"ইউরোপ এর ডাক্তাররা কত ভাল এই নিয়ে দেশের মানুষের আক্ষেপ দেখে দেখে আমি ক্লান্ত।
আমি যে দেশে থাকি সেখানে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সরকারী। কেউ যদি ডাক্তার দেখাতে চান তাহরে তাকে ফোন করে আগে সিরিয়াল নিতে হবে। লোকাল হেলথ সেন্টারে একজন ডাক্তার দিনে ৬ জন রোগী দেখবেন। বেশি দেখার জন্য বাধ্য করতে পারবেনা তাকে সিস্টেম। আগে ফোন করলে আগে সিরিয়াল।
আপনি কতটুকু মরনাপন্ন সেটা দেখার দায়িত্ব আমার না। সিরিয়াল নিয়ে আসতে পেরেছেন, আপনার সাথে কথা বলার জন্য আমার হাতে ১ ঘন্টা সময় আছে। সারা দিনে দেখবই তো ৬ জন। দেখে একটা এক্স রে প্রয়োজন মনে হল। পরামর্শ দিলাম করার জন্য।
কোথায় কিভাবে কয়দিনে করে আসতে পারবেন তা সিস্টেমের ব্যাপার ৭ দিন থেকে কয়েকমাস ও লেগে যেতে পারে আপনার পরীক্ষার সিরিয়াল আসতে। এমন ও দেখেছি রিপোর্ট আসতে আসতে রোগী মরনাপন্ন। বছরে রোগী দেখার একটা কোটা থাকে। ৬ মাসেই যদি পুরোটা শেষ করি বাকি ৬ মাস রোগী না দেখলেও চলে। আয় জানতে চান? যতটুকু লিখলাম এতে আমার আয় দিয়ে দেশে একটা হেলথ কমপ্লেক্স এর সব ডাক্তার এর বেতন দিয়েও আরো থাকবে।
অতিরিক্ত কাজের আয় বাদই দিলাম।
আপনার খুব বেশি খারাপ অবস্থা হলে হাসপতালের ইমারজেন্সিতে যেতে পারেন। ট্রায়াজ সিস্টেমে আপনাকে অবস্থার গুরুত্ব ভেদে আপনাকে দেখা হবে। ভাঙ্গা হাত নিয়ে ৮ ঘন্টা বসে থাকতে দেখেছি আউটডোরের চেয়ারে। আপনি কোন নেতার কর্মী বা কোন ভি,আই,পি'র স্বজন তা দেখা আমার দায়িত্ব না।
সিস্টেম অনুসারে আপনাকে দেখার যখন সময় হবে তখন দেখবো।
কথায় কথায় জানিয়ে রাখি, সরকারী বা বেসরকারী, ৫ মিনিটের আলাপ আর ১ ঘন্টার, শুধু পরামর্শ দেয়া বা অপরেশন করা, যাই করি না কেন, টাকা আমার টা আমি পাবই পাব। প্রধানমন্ত্রীও ঠেকাতে পারবেনা। টাকা হয় আপনি দিবেন আর আপনি অসহায় হলে আপনার হয়ে সরকার পেমেন্ট করবে। ক্যাশ টা আমি পেয়েই যাবো।
ইউরোপের সেবার সাথে আমাদের দেশের সেবা তুলনা করা যাবে না। যে দেশের রিকশা চালক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সবাই পঁচে আছে, সেখানে আপনি ইউরোপীয় সেবা পেতে পেরেন না। এক হাত দূরের কথা, আপনারা এক আঙ্গুলে তালি বাজানোর কথা বলছেন।
ডাক্তার দের বলছি, দলে দলে দেশ ছাড়ুন আর সরকার যত টাকা খরচ করে আপনাকে ডাক্তার বানিয়েছে বলে বোদ্ধারা বলে বেড়ায়, সে টাকা টা রেমিটেন্স হিসেবে পাঠিয়ে দিয়ে বা দান করে নিজেকে দায়মুক্ত করেন অতি সহজেই। পাবলিক ওই টাকায় বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিয়ে আসবে।
যারা ডাক্তার দের আচার আচরন আর নানা বিষয়ে বিরক্ত তারা বয়স থাকলে এখনি মেডিকেল কলেজ এ ভর্তি হয়ে যান নইলে নিজের আত্বীয় স্বজন, ছেলে মেয়েদের মেডিকেল এ ভর্তি করান। সরকারীতে না পারলে বেসরকারীকে করান। দেশের বিশিষ্ট নেতা নেত্রীরা আর সমাজ সেবী ব্যবসায়ীরা আপনাদের জন্য খুলে রেখেছে চিকিৎসক বানানোর কারখানা। দলে দলে যোগ দিন, আদর্শ ডাক্তার হোন বা বানান। মানবতার হোলসেল নেন।
টানা ৫ বছর চেষ্টা করেছিলাম দেশের দূর্নিতির মাঝেও বেঁচে থাকার। আমি পারি নি। দেশে যে পরিমান কষ্ট করে ডাক্তারী পাশ করেছি এখানে তার ১০ ভাগের এক ভাগে পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করেছি। ভালই আছি। সম্মান নিয়ে বেঁচে আছি।
ক্লাস ৫ ও পাশ না করা উপজেলা চেয়ারম্যান কে আমার কাজের কৈফিয়ত দেই না। তার সঙ্গী আর এক লোফারের রোগীকে কেন আগে দেখছিনা সেই জন্য সেই লোফারের হাতে থাপ্পর খেতে হয় না। খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে অন্যদের থাপ্পড় মারা শুরু করে মনের সাধ মেটাতে হয় না।
মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে হয়, বাংলার জনগন ভাল কিছু ডিজার্ভ করে না, করবে না ততদিন, যতদিন স্বজনপ্রীতি, দূর্নিতি আর পরিবারতন্ত্র কে লাথি মেরে দেশ থেকে বের করতে না পারবে। " ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।