আমি যা বিশ্বাস করি না... তা বলতেও পারি না! আমি জানি দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এধরনের ব্লগ লেখা বেশ ঝুকিপূর্ণ! কিন্তু তবুও লিখছি... জানি এরকম হাজার লেখা হাজার কথা ব্লগে-ফেসবুকে প্রতি নিয়ত লিখছেন জনপ্রিয় ব্লগার বা ফেসবুক ইউজাররা। সেই সব জনপ্রিয়দের ভিড়ে আমার মত নিরিহ ঘরকুনো অপরিচিত একজনের লেখার গুরুত্বই বা কতটুকু? কিন্তু তবুও লিখছি...
লিখছি কারণ, এছাড়া আর কিইবা আমি (বা আমরা) করতে পারি?
ইদানিং ব্লগ-ফেসবুকে একটা বহুল আলোচিত ইস্যু হচ্ছে আস্তিক-নাস্তিক... নাস্তিকতার পক্ষে-বিপক্ষে প্রচুর কথা প্রচুর লেখা প্রচুর আলোচনা-টকশো, মিটিং মিছিল...
এ ব্যাপারে নিজের অবস্থান বোধহয় আগেই জানিয়ে রাখা নিরাপদ! ভাই- আমি আস্তিক, তবে ধার্মিক কি না বলা মুশকিল! নবীকে সম্মান করি যদিও দাড়ি রাখা হয় না। আল্লাহকে ভয় করি কিন্তু জুম্মা ছাড়া আর নামাজগুলো পড়া হয়ে ওঠে না... মোটামুটি এভাবেই চলছে!
তাই বলে আমি কারো সাফাই গাইবো না! তবে নাস্তিকদের ব্যাপারে আমার অভিমত- একজন নাস্তিক কখনোই কোরআন-এর প্রবিত্র কালাম পড়ে নাস্তিক হয় না। সে নাস্তিক হয় আমার মত কিছু "বক ধার্মিক"দের ভন্ডামী দেখে! কারণ, আমার মত কিছু নামে মাত্র আস্তিকদের দেখে তারা গোটা মুসলিম জাতিকে আর আমার আচরণ দেখে ইসলামকে বিচার করে! চারপাশে আল্লাহর এতো এতো নিদর্শন, সূরা "আর-রহমান" এর মত চমৎকার বানী সমৃদ্ধ দিকনির্দেশনা, এতো কিছু থাকতেও কেন একজন লোক আল্লাহকে অস্বীকার করে? কারণ আর কিছুই নয়, এটা আমাদের ব্যর্থতা যে- আমরা তাদেরকে এগুলো বোঝাতে পারি নাই... (ব্যতিক্রম থাকতেই পারে যদিও!) আর হেদায়াতের মালিকও একমাত্র আল্লাহ!
আমি মনে করি- একজন মানুষ নাস্তিক, সেটা তার দুর্ভাগ্য! কারণ, আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন-এর নিয়ামত সম্পর্কে জানার সৌভাগ্য তার হয় নি!!!
অপরাধ যদি কারো হয়- সেটা আমাদের! আমরা যারা সেটা জেনেও ঐ নাস্তিক (কিংবা হয়তো মূর্খ!) লোকটাকে সেটা বোঝাতে পারি নি বা বলা উচিৎ- বোঝাই নি...
একটা গল্প বলি- ছোট বেলায় আমি একবার আমার বই (আদর্শলিপির) ওপর পা রেখেছিলাম। মা এজন্য ভিষন মারলো! আমি রাগে-জেদে আরও বেশি করে বইয়ে লাথি দিতে লাগলাম!
কারণ- তখনো জানতাম না বইয়ের কী মহিমা বরং রাগটা হলো- "ওটার জন্যই মার খেয়েছি!" মা আমাকে মারে আর আমি রাগে ক্ষোভে বইয়ে আরও লাথি দেই!
কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর আমার ছোটমামা দু'জনকেই থামালো।
অনেকক্ষণ বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমার কান্না থামিয়ে শান্ত করলো। তার পর অনেক সুন্দর করে বোঝালো- বাবা, এটা বই। বই হচ্ছে জ্ঞান-বিদ্যা, এটাকে কখনো লাত্থি দিতে নেই...
পাঁচ মিনিট সুন্দর করে 'যুক্তি দিয়ে' বোঝানোর পর আমি বুঝলাম। সেদিনের পর থেকে আমি বইকে সালাম করতে শিখেছি... আজও আমি পড়া শেষে (গল্পের বই হলেও!) বই সালাম করে রাখি! লাথি দেবার তো প্রশ্নই ওঠে না! (গল্পটা থেকে কি কিছু বোঝা গেল?)
আমরা প্রতিদিন ১০টা করে নাস্তিক জবাই করলে ইসলাম/দেশের যতটুকু না উপকার হবে তারচেয়ে বোধহয় অনেক বেশি উপকার হচ্ছে ডঃ জাকির নায়েক যখন তার লেকচারে একজন নাস্তিককে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে সক্ষম হন- আল্লাহ/ইসলাম/মুসলিম কী?
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য হলো, (আমি সহ!) প্রায় সবাই কোরাআন-হাদিসের সেই সব আয়াত বা বানীগুলোই রেফারেন্স হিসেবে ব্যাবহার করি যেটা আমার বক্তব্যের পক্ষে যায়! অর্থাৎ- নিজের জন্য সুবিধাজনক আয়াত/বানী/নির্দেশনাগুলোই আমরা ব্যবহার করছি... যেটাকে বলে "ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা"!
কিন্তু, সত্যিকারে পূর্ণাংগভাবে ধর্ম/কোরআনের চর্চা কই?
নবীর আর কোনো সুন্নত মানলাম না- চারটা বিয়ে করে দিব্যি ধর্মের দোহাই দিয়ে ফেললাম! এটাই কি "বক ধার্মিক" চরিত্র না?
আর আমাদের এহেন চরিত্র দেখে যখন একজন মানুষ ভেবে বসে এটাই হচ্ছে ইসলাম আর এই হচ্ছে মুসলমান তখন সে ইসলাম বা মুসলমান এমন কি আমাদের নবী-রাসুল এবং স্বয়ং আল্লাহকে গালাগাল দেয়! মূলতঃ তারা গালাগাল দেয় আমাকে- ইসলামকে নয়! আমার ভন্ডামীকে- আমার আল্লাহকে নয়!
কারণ আমি কখনোই বিশ্বাস করি না- একজন মানুষ যদি পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলাম বা রাসুল (সঃ) জীবনী স্টাডি করে, তার কোন সুযোগ আছে এগুলোকে অবমাননা করার।
কিন্তু বাস্তবে তারা আসলে এগুলো কিছুই করে না।
তারা একজন "বাংলাভাই"কে দিয়ে মুসলমান বোঝে কিংবা জামায়াতে ইসলাম আর (ধর্ম) ইসলামকে গুলিয়ে ফেলে (আমি "জামাত"কে কটাক্ষ করার জন্য বলছি না!)
ব্যাপারটা আমার কাছে অনেকটা অন্ধকে দুধ চেনানোর মত!
দুধ খাবি?
দুধ কেমন?
দুধ সাদা!
সাদা কেমন?
সাদা বকের মত!
বক কেমন?
বক হচ্ছে ঘাড় বাঁকানো একটা পাখি!
বাঁকা কেমন?
বাঁকা হচ্ছে কাস্তের মত!
কাস্তে কেমন?
(উত্তরদাতা বিরক্ত হয়ে অন্ধের হাতের কবজি বাকিয়ে ধরে) বললঃ কাস্তে হচ্ছে এরকম!
(অন্ধ ব্যাথা পেয়ে) উঁহ! তাহলে খাব না- গলায় বিঁধবে!
বাস্তবতা হচ্ছে- দুধ গলায় বিঁধে না। এটা উত্তরদাতার অপারগতা যে সে অন্ধকে সঠিকভাবে বোঝাতে পারেনি। আর আংশিক সত্য দিয়ে কখনও কাউকে সঠিকভাবে বোঝানো যায়ও না।
মানুষ কিতাবের সুন্দর বানী বা মুখের সুন্দর কথা আগে দেখে/শুনে না- আগে দেখে ঐ কিতাবওয়ালার ব্যাবহার, দোষ-গুণ! যত লোক রাসুল (সঃ) এরর ওপর নাজিলকৃত কোরআন পড়ে ইসলামে এসেছে তারচেয়ে অনেক বেশী লোক ইসলামে এসেছে তাঁর আচার-ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে। আজকে যদি প্রশ্ন তোলা হয় আমার মত তথাকথিত মুসলমানের কি গুণ আছে যা দেখে লোকে আমার মত (মুসলমান) হতে চাইবে? কি উত্তর আছে আমার? যখন আমি মুখে দাড়ি রেখে অবলীলায় মিথ্যা বলি- তখন মানুষ কি সেই দাড়ি কে সম্মান করবে? আর এভাবেই আমার মত কিছু বক ধার্মিক নষ্ট করে ধর্মের মর্যাদা!
যারা ভাবছেন নাস্তিকদের পক্ষে অনেক সাফাই গাইলাম তাদের কথা মাথায় রেখে এবারে আসা যাক নাস্তিক ভাইদের দিকে।
আমি মানছি আপনি নাস্তিক কারণ আস্তিক হবার মত যথেষ্ট যুক্তি আপনি পাননি যতটা যুক্তি হয়তো আপনি নাস্তিক হবার পেছনে খুঁজে পেয়েছেন! কিন্তু আমার জানা মতে প্রতিটি নাস্তিকই নিজেকে একজন মুক্তমনা মানুষ দাবী করেন। আমাকে একটি প্রশ্নের জবাব দেবেন কি? আপনি কি মনে করেন আপনি যা জানেন তার বাইরে এই মহা বিশ্বে আর কোন জ্ঞান নেই? যদি থেকে থাকে তাহলে কোন যুক্তিতে আপনিই বা নাস্তিকতার পক্ষে এতোটা গোড়ামী করেন?
গোড়ামী যদি খারাপই হয় তাহলে সেটা নাস্তিকতার বেলায়ই বা ভাল হবে কেন?
সবচেয়ে বড় কথা- একজন মুক্তমনের মানুষের প্রথম গুণ হবে সে সব মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে। তাহলে আপনি যখন কোন ব্যক্তিকে বা তার ধর্মীয় অনুভূতিকে বা যে কোন সামাজিক-রাজনৈতিক মতাদর্শকে আঘাত করেন তখন সেটা আপনার কেমন তর "মুক্তমন"-এর বহিঃপ্রকাশ?
আপনি যদি স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারে বিশ্বাসই হন তবে একজন ধর্মীয় অনুভূতি সম্পন্ন মানুষকেই বা আপনি আক্রমন করছেন কোন যুক্তিতে?
পারস্পারিক শ্রদ্ধা-ভালবাসার মূল্যবোধ তো একজন "মুক্ত মন"এর মানুষ হিসেবে আপনারই থাকার কথা ছিল আগে!!!
একজন চরম পন্থী নাস্তিক কিভাবে আশা করেন কোটি কোটি ধর্মীয় অনুভুতি সম্পন্ন মানুষের মনে আঘাত দিয়ে কথা বললেই বা বলার পরেও সমাজে আপনার গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হবে?
বাক স্বাধীনতা মানে কি অন্য কারো স্বাধীন চিন্তাকে আক্রমন করার অধিকার???
সর্বপরি আমি মনে করি ব্লগ-ফেসবুক বা যে কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা যদি শুধু মাত্র একটা সাধারণ মূল্যবোধ বজায় রাখি, একটু মানবতা বোধ থেকে শুধু যদি পরস্পর আরেকটু সহিষ্ণু হই, একে অপরের প্রতি আরেকটু শ্রদ্ধাশীল হই, আরেকটু যদি ভালবাসা তৈরী করতে পারি দল-মত-জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের প্রতি, তাহলেই বোধহয় অনেক সমস্যা তৈরীই হতো না এই সমাজে...
(আস্তিক-ধার্মিক-নাস্তিক সবাই কি বিবেচনা করবে কথাগুলো???)
- সফিক এহসান
৪ এপ্রিল '১৩
(রাত ২:৩০) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।