হৃদয়ের কথা কহিয়া কহিয়া গাহিয়া গাহিয়া গান.... আগের লেখাটিতে ফিজিক্স ল্যাব নিয়ে লিখেছিলাম। আজ একটু রসায়ন নিয়ে লিখতে চাই।
রসায়ন ল্যাব বললেই প্রথমে যেটা স্মৃতিতে আসে তাহলো লোহার তৈরী কতগুলো গ্যাসের বার্নার, কেমিক্যালের জ্বালায় জ্বলে যাওয়া পরীক্ষাগারের বেসিন আর কর্কশ ল্যাব ব্রাদাররা। আর যেটা মনে পড়ে অমর চাঁদ দাশ তালুকদার স্যারের সেই বিখ্যাত উক্তি "এই চেলেরা তোমরা কি কচ্ছ?"
প্রথম বর্ষের কেমিস্ট্রি প্র্যাকটিকাল ক্লাশ এ তেমন সমস্যা না হলেও প্রবলেম টা শুরু হলো দ্বিতীয় বর্ষে উঠেই। সবাইকে লবন দেয়া হবে।
লবনের গ্রুপ পরীক্ষা করে লবনটি কি টা লিখে জমা দিতে হবে। ১২ ক্লাশে ৬ টা লবন মিলাতে হবে। প্রথমে শুনে বেশ সহজই মন হয়েছিল। কিন্তু পরপর তিন সপ্তাহ ল্যাব করার পর যখন একটিও লবন মিলাতে পারলাম না তখন তো মনে হইল এর জন্য কি আরও একবছর বেশি এই কলেজে কাটাইতে হবে?
ঠিক তখনই আশার আলো নিয়ে হাজির হইলো আমার এক ফ্রেন্ড। সে পাশের মেস এ থাকতো।
সে বললো লবন গুলির একটা সিরিয়াল আছে। সিরিয়াল অনুযায়ী লবন দেয়া হয়। সে আরো বললো তাদের মেসের এক ছেলের লবনের সাথে আমার লবনটির গুণগত মিল লক্ষ্য করা যায়। সেই ছেলেটির লবনটা মিলেছে এবং তা হলো এমোনিয়াম সালফেট। পরের সপ্তাহে লবনটা হাতে নিয়েই সবার আগে এমোনিয়াম আর সালফেট এর গ্রুপ পরীক্ষা করলাম।
বাহ্, কি চমত্কার দেখা গেলো। সব একেবারে মিলে গেলো।
তারপর শুরু হলো লবন মিলানো। ওই ছেলের কাছে থেকে কোনটার পরে কোন লবন আসবে তা শুনে নিতাম আর লবন মিলাতাম। লবন তো আগে থেকেই জানতাম তাই ক্লাশে ইচ্ছামতন পরীক্ষা করতে পারতাম।
তাইতো কখনো নাইট্রেট মূলক পড়লে বারবার সেই বলয় তৈরী করতাম আর টার মাঝে আকাশের রংধনুকে খুঁজে বেড়াতাম।
বি:দ: বাকি আট ক্লাশে আমি আটটি লবন মিলিয়ে সসম্মানে এইচ.এস.সি পাশ করিয়াছি।
এরপর আশা যাক বায়োলজি ল্যাব এ। ল্যাব এ ঢুকেই প্রথম যে জিনিসটা অন্য রকম লাগলো সেটা হলো কতগুলো মৃত বিষধর সাপ কে ফরমালিন দিয়ে কাঁচের জারে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দুনিয়ায় এত জীব-জন্তু থাকতে এই সাপগুলি কেন এটা আমি কখনই বুঝিতে পারিনাই।
বায়োলজি ল্যাব এ ছিলো ডেমো মিজান আর তার বিখ্যাত হাসি। তার বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর আর কর্মস্পৃহার জুড়ি মেলানো ভার। একদিন সে বলিলো তোমরা বাসা থেকে তেলাপোকা ধরে নিয়ে আসো। সেই তেলাপোকা দিয়ে প্রাকটিক্যাল করা হবে। যার তেলাপোকা নাই, তার প্রাকটিক্যাল ও নাই।
আমি তখন ঢাকা শহরের একটি ময়লাযুক্ত ব্যাচেলার মেসে থাকিতাম। তাই সেখানে তেলাপোকা প্রাপ্তিতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। কিন্তু কিভাবে সেই তেলাপকাটিকে ধরিব আর ধরার পরে তাকে জীবন্ত কিভাবে কলেজ পর্যন্ত পরিবহন করিব ইহা ভাবিয়া সপ্তাহটি বেশ চিন্তায় গেলো।
প্রাকটিক্যালের দিন দুপুরের গোসল করিবার আগেই মেসের চাল রাখিবার জায়গায় আশ-পাশেই পেয়ে গেলাম সেই কাঙ্খিত তেলাপোকা আর ধরেও ফেললাম। কিন্তু কিভাবে নিয়ে যাবো ভাবতেই চোখের সামনে পরলো লাক্স সাবানের খালি প্যাকেট।
বাস, তাতে তেলাপোকাকে ঢুকিয়ে দুপুরের খেয়ে সদ্য চালু হওয়া সিটি বাস (মো:পুর-মতিঝিল) এ উঠে রওনাদিলাম কলেজের উদ্দেশ্যে। সিটিকলেজের কাছে গিয়ে হটাত খেয়াল করলাম প্যাকেটের মাঝে কোনো শব্দ নাই। খুলে দেখি তেলাপোকা নাই। একপাশ একটু ছিদ্র করে পালিয়ে গিয়েছে।
আমি তো পরলাম নিথুয়া পাথারে।
ল্যাব এ এসে দেখি কিছু এক্সট্রা তেলাপোকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে আমার মতো ব্যর্থ জনগনের জন্য।
আরেকদিন দেখি কি সুন্দর কৃষ্ণচূড়া ফুল টেবিলে সাজানো আর তার পাশেই নতুন শার্প ব্লেড রাখা। ডেমো মিজান বললো ফুলের ব্যবচ্ছেদ করো। ঠিক মাঝখান দিয়ে কেটে দুভাগ করে ফেলো। তারপর অনুবীক্ষণে দেখো কি দেখা যায়।
এদিকে মেসে আবার তখন সদ্য জগন্নাথ পাশকৃত বড়ভাই চাকুরী খোঁজে আর বাসায় থাকলেই "এই সেই কৃষ্ণচূড়া, যার নিচে দাড়িয়ে হাতে হাত , চোখে চোখ কথা যেত হারিয়ে " গান শোনে। ফুল তো দ্বি-খন্ডিত করতে হবেই, তার আগে আমার মনে হলো এই কি সেই কৃষ্ণচূড়া? তার নিচে যাওয়ার আগেই তারে কেটে ফেললাম।
(চলবে) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।