আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুখের পৃথিবী যেখানে শুধুই একার রাজত্ব...

সত্য অথবা মিথ্যা দুটোই হতে পারে। বিশ্বাস করা আর না করা আপনার ব্যপার। শাহানা বেগমের আজ মনটা অনেক হাল্কা মনে হচ্ছে। আদরের ছোট ছেলের বিয়ে দিয়ে নতুন বউ ঘরে এনেছেন। নিজে পছন্দ করে একটা লক্ষী মেয়ে নিয়ে এলেন।

স্বামী মারা গেছে ১০ বছর আগেই। একটা মেয়ে আর একটা ছেলে নিয়ে ছিল গুছানো একটা সংসার। একটু বেশি বয়সে সন্তান হওয়াতে ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়ে যেতে পারেন নি তার স্বামী। স্বামী মারা যাবার পর বুকে আগলে রেখেছিলেন বাচ্চা দুটাকে। বাচ্চা দুটার মুখের দিকে তাকিয়ে পার করলেন এতগুলা বছর।

বয়স হয়ে গেছে অনেক। শান্তি পান এই ভেবে মেয়েটাকে একটা ভাল ঘরে বিয়ে দিতে পেরেছেন। আর ছেলে আজ একটা ভাল চাকরি করে। এখন নতুন বউ এল ঘরে। তাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে বিশ্রাম নেবেন।

আর কি চাই তার জীবনে? ছেলে-মেয়ে ২টা ভাল থাকলেই তার শান্তি। মেয়েটাকে প্রথম দেখেই পছন্দ করেছিলেন শাহানা বেগম। নামটাও বেশ সুন্দর “মেঘ”,চলাফেরা আর কথা-বার্তা সব দিকেই বেশ ভদ্র বলে মনে হয়। তাই আর দেরি করেন নি। ছেলের বউ করে ঘরে নিয়ে এলেন।

বিয়ের ২/১ দিন পর সকালে মেঘ এক কাপ চা নিয়ে যায় শাহানা বেগমের ঘরে। শাহানা বেগম বলেন, মা আমিতো চা তেমন একটা খাই না। মেঘ বলে, আজ থেকে খাবেন। আমার সাথে। শাহানা বেগমের খুব ভাল লাগে।

এমন মেয়েই তো চেয়েছিলেন। এখন দুজনে মিলে রান্না করেন। শাহানা বেগম নিজে হাতে ধরে রান্না শেখান মেঘকে। ছেলে আসিফ বাসায় এসে প্রতিদিন দেখে মা আর মেঘ গল্প করছে। বউ নিয়ে তার যে ভয় ছিল সেটা আর নেই।

মেঘ কে খুব পছন্দ করে আসিফ। তার পৃথিবীটা এখন পূর্ণ। ঘরটা সারাখন ভরে থাকে মায়া, হাসি আর অনেক ভালবাসায়। একদিন শাহানা বেগম তার মেয়ে সীমানা আর আসিফকে নিজের ঘরে আসতে বলেন। তারপর তাদের নিজের কাছে থাকা সব টাকাপয়সা আর গয়নাগাটি বুঝিয়ে দেন।

বলেন, আজ আমি সকল দায় থেকে মুক্ত হলাম। এতদিন একটু একটু করে যা জমিয়েছিলাম সব তোমাদের দিলাম। তোমরা আমার সব কিছু। আমার কাছে এসব রেখে কি করব বল?? কাউকে নিরাশ করেন নি শাহানা বেগম। সবাইকে নিয়ে একটা সুখের পৃথিবীতে থাকতে চান।

কিন্তু কখনও ভাবেন নি এই সুখী জীবনে কোনও কালো মেঘ এসে তার পৃথিবীকে অন্ধকার করে দেবে... আজকাল আর শাহানা বেগম তেমন একটা রান্নার কাজ করতে পারেন না। বয়স তো আর কম হল না। বাতের ব্যথা তাকে বেশ কাবু করে ফেলেছে। মেঘ এখন একাই রান্না করে। তেমন একটা সময় পায় না শাহানা বেগমের কাছে বসার।

নাকি কাছে আসতেই চায় না? ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না শাহানা বেগম। ছেলেটাও সারাদিন পর এসে তার পাশে বসতে চায় না। বলে, এত কাজ করে এসে আর ভাল লাগে না। কিছু বলেন না শাহানা বেগম। তার খুব একা লাগে।

মেঘ আর আসিফের মাঝে কি নিয়ে যেন ঝগড়া হচ্ছে। শাহানা বেগম কাছে যেতেই শুনতে পারেন মেঘ বলছে, কিছু তো করেন না সারাদিন শুধু তসবি নিয়ে বসে থাকা। মানে কি? আমি কি শুধু কাজ করতে এসেছি এ বাড়িতে? আসিফ তারাতারি মেঘকে বলে, আস্তে বল। মা শুনতে পেলে কষ্ট পাবে। মেঘ আরও কি কি বলতে বলতে নিজের ঘরের দিকে চলে যায়।

আসিফ ও পেছন পেছন চলে যায়। শাহানা বেগম বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। দিন যায়। আজকাল এসব ঝগড়া শাহানা বেগমের কাছে সাধারন ব্যপার। তিনি বুঝতে পারেন এখন আর তার দরকার নেই।

তিনি বোঝা হয়ে গেছেন তার ছেলের কাছে। কিন্তু কি করবেন? যাবার যায়গাও যে নেই। মেঘ নামের যে মেয়েটিকে তিনি পরম ভালবাসায় নিয়ে এসেছিলেন, তাকে এখন আর চিনতে পারেন না। আজ অনেক দিন পর আসিফ আর মেঘ মায়ের কাছে এসে বসে। এটা সেটা নিয়ে কথা বলতে থাকে।

শাহানা বেগমের খুব ভাল লাগে। মন খুলে কথা বলতে থাকেন ছেলের সাথে। হঠাৎ আসিফ বলে, মা একটা কথা বলি কিছু মনে করো না। মেঘ পাশে চুপ করে দাড়িয়ে আছে। শাহানা বেগম ২ জনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

ছেলে তো তার। বুঝতে পারেন কি বলতে চাচ্ছে। আসিফ বলে, মা বুঝতেই তো পারছ আমরা আজকাল খুব ব্যস্ত হয়ে পরেছি। তোমার আর ঠিকমত সেবা যত্ন হচ্ছে না। তাই ভাবছিলাম... শাহানা বেগম বলেন, বল বাবা।

বলে ফেল। আসিফ চুপ করে থাকে। মেঘ বলে, মা আমরা চাইছি আপনি আমাদের ধানমণ্ডির ফ্লাটে গিয়ে থাকেন। একটা পার্মানেন্ট বুয়া দিয়ে দিব আপনার জন্য। আপনার আর কোন কষ্ট হবে না।

শাহানা বেগম শুধু এটুকু বলেন, আসিফ বাবা... তুমি ও কি তাই চাও?? আসিফ বলে, মা মেঘ চায় একটু নিরিবিলি থাকতে। তাই আর কি। মেঘ বলে, মা এখন আর ঐসব পুরনো দিন নাই। আর আপনারও বোঝা উচিত আমাদের এখন নিজের সংসার গুছানো দরকার। শাহানা বেগম এখন সেই ফ্লাটের জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকেন।

তিনি আছেন তার সুখের পৃথিবীতে। যেখানে তার কেউ নেই। তিনি একা। শুধু একার রাজত্ব সেখানে... এমন অনেক শাহানা বেগম আমরা আমাদের চারপাশে দেখতে পাই। তারা একটা কোনে পড়ে থাকেন।

তাদের সারাজীবনের কষ্ট আর ভালবাসার বিনিময় আমরা ছেলে-মেয়েরা এভাবেই দিয়ে থাকি। আমরা ভাবি না তাদের কথা। দেখতে পাই তারা দিব্যি ভালই আছেন। খাচ্ছেন, চলছেন। তাদের মন বলে যে কিছু আছে, সেটা তো আমরা কেউ ভাবি না।

তাদের আবার মন কি? মন আছে শুধু আমাদের। আমরা অনেকেই ভাবি, বয়স হয়ে গেলে মানুষ বেশি কথা বলে। তাদের কথা শুনার সময় কই আমাদের? তারা আর পারে না নিজেরা রান্না করতে। আমাদের কি দরকার আছে তাদের এক কাপ চা বানিয়ে দেয়ার?? তারা পুরনো দিনের মানুষ। পিঠা খাইয়ে দিতে ভালবাসেন।

আরে এটা এখন চাইনিজের যুগ। এখন কি আর আগের মত পিঠা খায় কেউ?? আমাদের এত সময় কই যে বাসায় এসে আবার তাদের ঐ সব ফালতু কথা শুনব?? আমাদের সময়ের দাম আছে। লজ্জা লাগে যখন দেখি বৃদ্ধাশ্রমের সেই মানুষ গুলোকে। কষ্ট পাই যখন দেখি আমার পাশের বাসার কেউ এসে মায়ের কাছে কান্না করে বলছে, আমার একটাই ছেলে সেও আজ বউ নিয়ে চলে গেল। ভয় পাই এই ভেবে যে আমার মায়ের কি হবে?? আমরাও কি তেমন হয়ে যাব? ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।