আমার দেশ আমার সংস্কৃতি লের দাম বাড়তে পারে লিটারে ৪ টাকা; গত বছরই বাড়ানো হয়েছে ৪ বার।
চলতি মাসে আবারো সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হতে পারে। এবার জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ৪ টাকা করে বাড়তে পারে। গত বছরই সরকার মোট চারবার ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ায়। চারবারে এই চার ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি মোট ১৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর রাত ১২টার পর থেকে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। সে সময় সব জ্বালানি তেল লিটারপ্রতি ৫ টাকা করে বৃদ্ধি করা হয়। এর ফলে বর্তমানে ডিজেল ৬১ টাকা, কেরোসিন ৬১, পেট্রল ৯১, অকটেন ৯৪ ও ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানি ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আন-র্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি এবং ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকার গত ৫ মে, ১৮ সেপ্টেম্বর ও ১০ নভেম্বর তিন দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়।
গত অর্থবছরে (২০১০-১১) জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির লোকসান হয় আট হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা করে বাড়ানোর পরও চলতি অর্থবছরে এ খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে সরকারকে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, জ্বালানি তেলের ওপর থেকে সরকার ভর্তুকির বোঝা আরো খানিকটা কমানোর জন্য আবার তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে প্রস্তাবটি নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে তা কার্যকর হবে।
এর ফলে চলতি মাস থেকে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তেলের দাম লিটারপ্রতি ৪ টাকা করে বাড়ানো হলে বিপিসির তেল খাতে লোকসান প্রায় চার হাজার কোটি টাকা কমে যাবে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও বিপিসি সূত্র জানায়, গত বছর মোট চারবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরও বর্তমান আন-র্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিনে সরকারকে প্রায় ১২ টাকা ও ফার্নেস অয়েলে প্রায় ৯ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তবে অকটেন ও পেট্রলে লিটারপ্রতি ১৫ থেকে ১৯ টাকা মুনাফা হচ্ছে। বিমানের জ্বালানিতেও কিছুটা মুনাফা হচ্ছে।
এসব জ্বালানি অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ব্যক্তিরা ব্যবহার করেন বলে এ ক্ষেত্রে লাভ করার নীতি নিয়েছে সরকার।
ডিজেল ও কেরোসিন তেলের দাম বাড়ানো হলে তা কৃষক এবং গরিব মানুষের ওপর বেশি চাপ ফেলে। কারণ গ্রামে বসবাস গরিব মানুষ কৃষি খাতে সেচকাজে ডিজেল ও কেরোসিন বেশি ব্যবহার করেন। প্রতি লিটারে ডিজেলের দাম ৫ টাকা বাড়লে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনব্যয় বৃদ্ধি পায় ৩৫০ কোটি টাকা। আর কোরোসিনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণকে বাড়তি গুনতে হয় অন-ত ৩১৬ কোটি টাকা।
সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জ্বালানি খাতে গণহারে আর ভর্তুকি দেয়া হবে না, পর্যায়ক্রমে এ খাত থেকে ভর্তুকি পুরোপুরি তুলে নেয়া হবে। ইতোমধ্যে তার প্রক্রিয়াও শুরু করে দেয়া হয়েছে। চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরে এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার বাজেটে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ দেয়া রয়েছে ১৭ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা, যা বাজেটের ১০ দশমিক ৭ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ২ শতাংশ। কিন' বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম একাধিকবার বাড়ানো সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় ধরে রাখা সম্ভব হবে না। গত অক্টোবর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে যদি বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল, কৃষি উপকরণ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো না হয় তবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যগুলোর দাম বৃদ্ধিজনিত কারণে সরকারকে মোট ভর্তুকি দিতে হবে ৪৪ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা, যা এ অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের সাড়ে ২৭ শতাংশ এবং জিডিপির অংশ হিসেবে ৫ শতাংশ।
কিন' অর্থ বিভাগ থেকে বলে দেয়া হয়, কোনো অবস'ায় মোট ভর্তুকির পরিমাণ জিডিপির ২ শতাংশের ওপরে উঠতে দেয়া যাবে না। যদি তা হয়, তবে সরকারের উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে এ খাতে অতিরিক্ত অর্থের জোগান দিতে হবে অথবা অভ্যন্তরীণ খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। প্রথম দিকে সরকার ভর্তুকি টাকার জোগানের জন্য ব্যাংকব্যবস'ার ওপরই বেশি নির্ভরশীল ছিল। ফলে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যায়। চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নেয় ২১ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেই টাকা ছাপিয়েই নেয়া হয়েছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। পরে জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়। ফলে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণও কমে আসে। বর্তমানে এই ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) চাপ রয়েছে জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি পুরোপুরি শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার।
সেই চাপের কারণে গত বছরে চারবার তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। আইএমএফ আবারো সরকারকে বলেছে, তেলের দাম সমন্বয় (বাড়িয়ে) করা হোক। সংস'ার একটি মিশন আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশে আসছে। এ মিশনটির রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করছে আইএমএফের কাছ থেকে কাঙিক্ষত ইসিএফ ঋণের আওতায় ১০০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে কি না। কিন' সংস'াটি ইতোমধ্যে সরকারকে অনেক ধরনের শর্ত দিয়ে রেখেছে।
এই শর্তেরই একটি হচ্ছে জ্বালানি তেলের দাম আরো একবার বাড়ানো। ফলে ঋণ পাওয়ার উপায় হিসেবে তেলের দাম বাড়ানো ছাড়া সরকারের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা নেই। তাই চলতি মাসেই বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম।
সূত্রঃ নয়া দিগন্ত, ৫ ফেব্রুয়ারি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।