ব্লগার না পাঠক হওয়ার চেষ্টায় আছি নাসায় চাকরি পাওয়া বিরাট ব্যাপার। যতদূর জানি সিঙ্গার আরাশ(সেলাই মেশিন না, গায়ক) যেমন কঠিনভাবে গান গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন তেমনি কঠিনভাবে পড়ালেখা করে নাসায় চাকরি পাওয়া যায়। তবে কোনক্রমে একবার চাকরি পেয়ে গেলে আর ঠেকায় কে। ধরা যাক, একজন অতীব মেধাবী ছেলে নাসায় চাকরি পেয়ে গেলেন। তিনি ছুটির সময় বাংলাদেশে আসলে যেসব ঘটনা ঘটতে পারে তা দেওয়া হল।
নাসা ফিরত কোন ছেলে বাংলাদেশে এসে এয়ারপোর্ট থেকে নেমে প্রথমে যে কাজ করবেন তা হল তার পরিচিতজনদের এয়ারপোর্টে খুজবেন। উনার আত্মীয়-স্বজনরাও উনাকে খুজবেন। কিন্তু, তারা নাসা ফিরত পোলাকে খুজে পাবেন না! কারণ উনার ডিজুস বেশভূষায় পরিচিতজনরা উনাকে চিনবেন না। যেহেতু উনি নাসায় চাকুরি করেন অতি অবশ্যই সাধারণ ড্রেস তিনি পড়বেন না। যা হোক, কাউকে খুজে না পেয়ে উনি মনের দুঃখে একটা কালো টেক্সি-ক্যাব ভাড়া করবেন।
যখনই তিনি ট্যাক্সিতে উঠবেন তখনই পেছন থেকে মেয়ে কন্ঠে “ভাইয়া ভাইয়া” বলে চিতকার শুনা যাবে। তবে নাসা ফেরত ভাইয়া সেই চিতকার শুনবেন না, কারণ তার কানে হেডফোন থাকবে। এরই মধ্যে ড্রাইভার বলার চেষ্টা করবেন যে কে যেন ডাকছে! কিন্তু ভাইয়া গাড়ি স্টার্ট না করার জন্য ড্রাইভারের উপর প্রচন্ড বিরক্ত হবেন এবং কিছু ১৮ পিলাচ ইংলিশ গালি দিবেন। অতঃপর ড্রাইভার মিজাজ গরম করে গাড়ি স্টার্ট দিবেন এবং বিড়বিড় করতে থাকবেন। তবে ভাইয়ার কানে হেডফোন থাকায় উনি এইসব ফাও প্যাচাল শুনতে পাবেন না।
গাড়ি চলতে থাকবে থেমে থেমে। কারন প্রচন্ড সিগন্যাল। এতে করে ভাইয়ার মিজাজ ব্যাপক খারাপ হয়ে যাবে। তিনি বলতে থাকবেন দেশ সম্পর্কে বিদেশে থাকতে যা শুনেছেন তার সবই সত্যি। এ সময় হঠাত করে তিনি দেখবেন যে সিগন্যাল শেষ হলেও গাড়ি স্টার্ট নিচ্ছে না!! বারবার দেখবেন ড্রাইভার চেষ্টা করেও গাড়ি সামান্য নড়াতে পারছেন না।
পাশ দিয়ে যেসব হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব যাচ্ছে সেগুলোর ড্রাইভাররা আনন্দে চিল্লাচ্ছে আর বলছে- সব কাইল্যারই এক দশা। ভাইয়া কিছুটা অবাক হবেন। অতঃপর তিনি রাস্তার আইল্যান্ডের উপর উঠে খাম্বার মত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এমন সময়ই বাইক সমেত এক কাপল যখন তাহাকে অতিক্রম করবেন তখনই তিনি বিড়বিড় করে বলবেন নাসায় থাকার সময়টাই ভাল ছিল। বাইকের মেয়েটা ভাইয়ার কথা শুনবেন এবং চিতকার করে তার বয়ফ্রেন্ডকে বাইক থামাতে বলবেন।
বয়ফ্রেন্ড বাইক থামাবেন এবং মেয়েটা নাসা ফেরত ভাইয়ার কাছে আসবেন। উনাদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ কথা-বার্তা হবে। এদিকে মেয়েটা নাসা ভাইয়াকে দেখে দিওয়ানা হয়ে যাবেন। আর নাসা ভাইয়াও কাপলটাকে নিয়ে কোন রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা বলবেন। কিন্তু, মেয়েটা তার বয়ফ্রেন্ডকে বলবে যে তাদের টিচার কি এসাইনমেন্ট দিয়েছিল তা ঠিক মত জেনে রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্টে আসতে।
এদিকে এ প্রস্তাবে বয়ফ্রেন্ডেরতো মাথায় হাত। কিন্তু, উহার জিএফ এক আজীব চীজ। কোন কথাই শুনবেন না। শেষ পর্যন্ত বয়ফ্রেন্ডটি তাহার জিএফকে নাসা ফিরত ভাইয়ার কাছে সমর্পন করে মনে মনে বলতে থাকবেন- ব্যাটা তুই নাসায় চাকরি করস ত কি হইছে আমিও আশায় পড়ি। অতঃপর নাসা ভাইয়া এবং ওই মেয়ে রেস্টুরেন্টে কিছু সুন্দর মুহূর্ত পার করবেন।
এদিকে রেস্টুরেন্টে ওনাদের সাথে দেখা হবে মেডিকেল থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া ইঞ্জিনিয়ার … খানের। ওই ইঞ্জির সাথে থাকবেন এক ডিজুইস পরিচালক। পরিচালক নাসার ভাইয়াকে দেখেই পুরাই পাগল হয়ে যাবেন। সাথে সাথে তিনি নির্মাণ করবেন ডিজুস মুবাইল ফুনের বিজ্ঞাপণ। বিজ্ঞাপনে দেখান হবে বাংলার সব মেয়েরা নাসার ছেলেদের প্রতি কেন এত দিওয়ানা থাকে।
এদিকে নাসা ভাইয়াকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না দেখে উনার আত্মীয়-স্বজনরা পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দিবেন। সাধারণত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে টাকা লাগে। তবে সব পত্রিকাই এই বিজ্ঞাপণ ফ্রিতে দিবে। আর অপরাধ কন্ঠ এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন নাসা ভাইয়ার আত্মীয়-স্বজনদের উলটো টাকা দিবে।
যা হোক, ওই মেয়ের সাথে কথা-বার্তা দ্রুত শেষ করতে নাসা ভাইয়া খুব চেষ্টা করবেন।
তবে ওই মেয়ে কথা শেষ হলেও নিজের দায়িত্বে ভাইয়াকে ধানমন্ডি লেক, জিয়া উদ্যান ইত্যাদি দেখিয়ে সিনেপ্লেক্সে ৭ টার সময় ছবি দেখাতে নিয়ে যাবেন। ছবি-টবি দেখা শেষ করে জ্যামট্যাম পার হয়ে নাসা ফিরত ভাইয়া বাসায় আসবেন ১০ টার পর। এদিকে তার বাসায় আসার খবরে সকলের মধ্যে শান্তি ফিরে আসবে। তার বাসায় আসার খবরে বাসায় স্বস্তি ফিরে আসবে। সবাই খুব খুব খুশি হবে।
দেশের মাথা দেশে হারিয়ে গেলে যে দেশের কি হত!! যা হোক, আত্মীয়রা সবাই পত্রিকা আপিসে ফুন দিবেন ওই হারানো বিজ্ঞপ্তিটি না ছাপানোর জন্য। কিন্তু, অলরেডি ১২টা বেজে যাবে এবং অনেক পেপার হারানো সংবাদ ছাপিয়ে ফেলবে।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নাসা ফিরত ভাইয়া বাসায় বিরাট লাইন দেখতে পাবেন। তিনি তার বাবা এবং ভাইকে এইসব লাইনধরা মানুষকে সামলাতে দেখবেন এবং তার মাকে ক্রমাগত মাথা থাপড়াতে দেখলেন। ঔ তার মামাকে ল্যান্ডফুনে অবিরাম কথা বলতে দেখবেন।
লাইনে দাঁড়ানো মানুষদের সাথে কথা বলে নাসা ভাইয়া জানতে পারবেন উনারা সবাই মেয়ের বাবা এবং উনাদের মেয়েকে নাসা ফিরত ভাইয়ার সহিত শুভ বিবাহ দেওয়ার জন্য তাহারা পত্রিকা আপিস থেকে ঠিকানা নিয়ে এখানে হাজির হয়েছেন। অতঃপর নাসা ভাইয়া কাউকে কিছু না বলে দেশ ত্যাগ করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।